রাজশাহীগামী বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী তাসরিফা আক্তার। গতকাল শনিবার সকাল ৮টায় তিনি ট্রেনে চড়তে জয়পুরহাট রেলস্টেশনে আসেন। তিনি ট্রলিব্যাগ নিয়ে এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেডের নিচে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এমন সময় মুষুলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। শেড দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে তাসরিফার পরনের কাপড় ভিজে যায়। শুধু তাসরিফা একা নন, তার সঙ্গে আরও অনেক ট্রেনযাত্রীকে বৃষ্টির সময় এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হয়।
মেরামতের দেড় বছরেই জয়পুরহাট স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেডের টিনে মরিচা ধরে বড় বড় ছিদ্র হয়েছে। বৃষ্টি হলেই শেডের টিনের ছিদ্র দিয়ে অঝরে বৃষ্টির পানি পড়ে। বৃষ্টির পানিতে ট্রেনযাত্রীদের পরনের কাপড় ভিজে যায়। যাত্রীদের শেডের নিচে দাঁড়িয়ে-বসে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়ে। নতুন স্টেশন মাস্টার যোগদানের পরপরই শেডটি মোরামতের জন্য রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট শাখায় পত্র দিয়েছেন। পত্র দেয়ার দেড় মাস অতিবাহিত হলেও সাড়া মেলেনি।
জয়পুরহাট রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, এক নম্বর শেডের টিনের চালার গায়ে নিচের রং এখনো চকচকে রয়েছে। শেডের ওপরে চালার টিনে মরিচা ধরছে। শেডের পানি গড়িয়ে চালার ১০-১২টি স্থানে মরিচা ধরে ভেঙে বড় বড় গর্ত হয়েছে। একটি বড় গর্তে ইট দিয়ে রাখা হয়েছে। আর সেসব ছিদ্র দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ছে। এতে ট্রেনযাত্রীরা প্ল্যাটর্ফমে বসে থাকতে পারছেন না।
স্টেশনের দোকানি ও ট্রেনযাত্রীরা জানান, দেড় বছর আগে এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেডের চালা মেরামত করা হয়। তখন পুরাতন টিনের চালা বদলিয়ে নতুন রঙিন টিনের চালা লাগানো হয়। ৪-৫ মাস পর রঙিন টিনের চালায় মরিচা ধরে ছিদ্র হয়। বর্ষার সময় শেডের চালার ছিদ্র দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে। বৃষ্টি হলে প্ল্যাটফর্মের শেডের চালার নিচে দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। বৃষ্টির পানিতে প্ল্যাটফর্মের মেঝে ভেজে নোংরা হয়। যাত্রীদের শরীর বৃষ্টির পানিতে ভিজে যায়। তারা বর্ষার মৌসুমে প্ল্যাটফর্মের দুর্ভোগের কথা স্টেশন মাস্টারকে জানিয়েছেন। কিন্তু তারা কোনো সুফল পাননি। যতই দিন যাচ্ছে ততই শেডের চালার ছিদ্র বাড়ছে। এখন এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেডের চালার বেশির ভাগ স্থানই ছিদ্র। একটু বৃষ্টিতেই প্ল্যামফর্মে দাঁড়িয়ে-বসে থাকা কষ্টকর হয়ে যায়।
স্টেশনের চা-স্টলের দোকানি রেজাউল করিম বলেন, ‘দেড় বছর আগে এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেড বর্ধিতকরণ ও মেরামত করা হয়েছিল। এত দ্রুত শেডের চালায় মরিচা ধরে নষ্ট হবে তা ভাবতে পারছি না। বর্ষা মৌসুমে শেডের চালা দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে প্ল্যাটফর্ম একাকার হয়ে যায়।’
যাত্রী সাব্বির হোসেন বলেন, ‘জয়পুরহাট রেলস্টেশনটি গুরুত্বপূর্ণ। নওগাঁর ধামুইরহাট, দিনাজপুরের হিলি ও জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার ট্রেনযাত্রীরা জয়পুরহাট রেলস্টেশনে এসে ঢাকায় যাতায়াত করেন। স্টেশনটি আধুনিকায়ন করা হয়েছে। তবে শেডের চালা দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে।’
আরেক যাত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘জয়পুরহাট রেলস্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেডের চালা দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে। বৃষ্টির সময় প্ল্যাটফর্মে বসে থাকা যায় না। এতে ট্রেনযাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আমরা দ্রুত শেডটি মেরামতের দাবি করছি।’
জয়পুরহাট স্টেশনের মাস্টার রেজাউল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমি এখানে দুই মাস আগে যোগদান করেছি। এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেডের পানি গড়িয়ে চালায় মরিচা ধরে ছিদ্র হয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে। এটি দেখার পর শেডটি মেরামতের ব্যবস্থার উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগে পত্র দিয়েছি। তবে পত্রের সাড়া মেলনি। তবে দ্রুত শেডের চালা মেরামত করা হবে। যতদূর জানি এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের চালা মেরামতের সময় বেশি দিন হয়নি। এত অল্প সময়ে কেন শেডের চালায় মরিচা ধরল, তা রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগের (ব্রিজ) শাখা ভালো বলতে পারবেন।’
রেলওয়ের সান্তাহার কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী (কার্য) আব্দুর রহমান দৈনিক বাংলাকে বলেন, জয়পুরহাট রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মের শেড দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ছে। শেডটি পরিদর্শন করেছি। দ্রুত শেডটি মেরামত করা হবে।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা