আপডেট : ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ২০:২৫
চোর সন্দেহে মধ্যযুগীয় কায়দায় পিটিয়ে শিশু আজাদ হত্যায় গ্রেপ্তার ৫

চোর সন্দেহে মধ্যযুগীয় কায়দায় পিটিয়ে শিশু আজাদ হত্যায় গ্রেপ্তার ৫

শিশু আকাশকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার তিনজন (আরও দুজন গ্রেপ্তার হয়েছে পুলিশের হাতে)। ছবি: দৈনিক বাংলা

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে নির্মাণাধীন ভবনে চোর সন্দেহে সাইট ইঞ্জিনিয়ারের নিদের্শে শিশু আকাশকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নিহত শিশু আকাশ (১৪) স্থানীয় একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

এ ঘটনায় শুক্রবার ওই সাইট ইঞ্জিনিয়ারসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। আর দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে মোহম্মদপুর থানা। গ্রেপ্তাররা হলেন-সাইট ইঞ্জিনিয়ার মো. মীর মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে প্রান্ত, মো. ফিরোজ, মো. মোস্তাফিজুর রহমান, জহিরুল ইসলাম বাবু ও আবদুল বারেক বাবু।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তার তিনজনের বিষয়ে বিস্তারিত জানান র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ‘গত ৬ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে মোহাম্মদপুরের টিক্কাপাড়ায় একটি স্কুলের নির্মাণাধীন জায়গায় ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আকাশসহ তার বেশ কয়েকজন বন্ধু প্রবেশ করে। এ সময় নির্মাণাধীন সাইটের শ্রমিকরা তাদের ধাওয়া করলে আকাশের বন্ধুরা পালিয়ে গেলেও শ্রমিকরা তাকে আটক করে। পরে মোয়াজ্জেমের নির্দেশে লোহার রড চুরির অপবাদ দিয়ে আকাশকে মধ্যযুগীয় কায়দায় হাত-পা বেঁধে বাঁশে ঝুলিয়ে লাঠি, লোহার রড ও স্ট্যাম্প দিয়ে নির্মমভাবে মারধর করে শ্রমিকরা। ভুক্তভোগীকে সারারাত পৈশাচিক ও নির্মমভাবে লাঠি, লোহার রড ও স্ট্যাম্প দিয়ে ব্যাপক মারধর করা হয়, যাতে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক জখম হয়।’

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘পরদিন ভোর সোয়া ৬টার দিকে ভুক্তভোগী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে গ্রেপ্তার আসামিরা তার ফুফুকে ফোনের মাধ্যমে জানায়। পরে আকাশের ফুফু ঘটনাস্থলে এসে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে যান। ওইদিন সকাল ৮টার দিকে আকাশের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তার ফুফু মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। আকাশের মৃত্যুর সংবাদ শুনে সাইট ইঞ্জিনিয়ার ও শ্রমিকরা নির্মাণাধীন ওই জায়গা থেকে পালিয়ে রাজধানীর মগবাজার ও রমনাসহ বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করেন।’

কমান্ডার মঈন আরও জানান, মোয়াজ্জেম ওই নির্মাণাধীন স্কুলের সাইট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তার নির্দেশে ভুক্তভোগীকে বাঁশের সঙ্গে ঝুলিয়ে নির্যাতনসহ মোবাইলে পুরো ঘটনার ভিডিও ধারণ করা হয়। গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

এদিকে, পুলিশের মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (ডিসি) মৃত্যুঞ্জয় দে সজল বলেন, ‘বরাবো সরকারি প্রাইমারি স্কুলের নির্মাণাধীন ভবনের নিরাপত্তাকর্মী ও নির্মাণশ্রমিকরা শিশু আকাশকে চোর সন্দেহে আটক করে মারধর করেন। এতে শিশুটি মারা যায়। তার ফুফুর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আকাশ গত বুধবার রাত ১০টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে আর বাসায় ফেরেনি। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে অভিযুক্ত জহিরুল শিশুটি ফুফুকে ফোন করে বলেন—আকাশকে বরাবো সরকারি প্রাইমারি স্কুলের নির্মাণাধীন ভবন থেকে নিয়ে যেতে। ফুফু সেখানে গিয়ে দেখতে পান, আকাশ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্নসহ আহত অবস্থায় পড়ে আছে। কিছুক্ষণ পর আকাশের শরীর ঠাণ্ডা, নিথর ও নিস্তেজ হয়ে মৃত্যু হয়।’

মৃত্যুঞ্জয় বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সিরাজগঞ্জ সদর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জহিরুল ও বারেককে গ্রেপ্তার করা হয়। একই সঙ্গে আকাশকে হত্যায় ব্যবহৃত লাঠি, লোহার রড ও ক্রিকেট স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়। আকাশ হত্যার ঘটনায় জড়িত অন্য অভিযুক্তদের প্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।’