আপডেট : ২৪ আগস্ট, ২০২৩ ১২:১৮
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুট: সরকারি ব্যবস্থাপনায় আয় বেড়েছে
তৌফিকুল ইসলাম

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুট: সরকারি ব্যবস্থাপনায় আয় বেড়েছে

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে আট জোড়া ট্রেন চালিয়ে বিগত সময়ের চেয়ে আয় বেড়েছে। ছবি: দৈনিক বাংলা

ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ যাতায়াতে যাত্রীদের একটি বড় অংশ ব্যবহার করে ট্রেন। ভাড়া কম এবং স্বল্প সময়ের পৌঁছানোর নিশ্চয়তা যাত্রীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে এই রুট। বর্তমানে রেলের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে আট জোড়া ট্রেন চালিয়ে বিগত সময়ের চেয়ে আয় বেড়েছে। কিন্তু ২০১৯ সালে বেসরকারি ব্যবস্থাপনার ১৬ জোড়া ট্রেন চালিয়েও আয় কম ছিল রেলের।

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়কপথে বাসের ভাড়া ৮৫ টাকা, সেখানে কমিউটার ট্রেনের ভাড়া ২০ টাকা। সড়কপথে বাসে যেতে ৩ ঘণ্টা সময় লাগে, যেখানে ট্রেনে যেতে লাগে ৪৫ মিনিট। ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন এনে বেসরকারিকে বাদ দিয়ে সরকারিভাবে ট্রেন পরিচালনার কারণে এই রুটের আয় বেড়েছে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় লোকাল ট্রেন চলাচল করত। রেলের সে সময় ১৬ জোড়া (৩২টি) ট্রেন চালিয়ে গড়ে দৈনিক আয় প্রায় ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। চুক্তির মেয়াদ শেষে ২০১৯ সালের জুলাই থেকে রেলওয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় লোকাল ট্রেন পরিচালনা করে যাতে রেলের আয় বৃদ্ধি পায়। এরপর ২০২০ সালের মার্চ মাসে করোনার কারণে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দেশব্যাপী করোনার দোলাচলে লোকাল কমিউটার ট্রেন চলাচল বেশ ঝিমিয়ে পড়ে। ২০২১ সালেও ছিল করোনার প্রভাব। এরপর ২০২২ সালে পুরোদমে আবারও এই রুটে রেলের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় লোকাল ট্রেন চালিয়ে গড়ে দৈনিক ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা আয় হয়েছে।

এদিকে আবার ২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে গেন্ডারিয়া অংশে তিনটি পৃথক রেললাইন নির্মাণকাজের জন্য ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয় রেল কর্তৃপক্ষ। তিন মাসের মধ্যে ট্রেন চলাচল চালুর কথা থাকলেও তা প্রায় আট মাস পরে ২০২৩ সালের ১ আগস্ট থেকে এই রুটে কমিউটার ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। বর্তমানে নিয়মিত এই রুটে ট্রেনে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে।

রেলের বাণিজ্য বিভাগ সূত্র জানায়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ২০২২ সালে আট জোড়া (১৬টি) লোকাল ট্রেন চালিয়ে গড়ে দৈনিক আয় ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা। সেই হিসাবে ২০২৩ সালে কমিউটার ট্রেন চালিয়ে গড়ে দৈনিক প্রায় ১ লাখ ৫১ হাজার টাকা করে আয় হচ্ছে, যা আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে বেসরকারি ব্যবস্থাপনার চেয়ে রেলের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ট্রেন চালিয়েও আয় বাড়ছে।

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে আয় বৃদ্ধির সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) শাহ আলম শিশির দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘তদারকিটা বাড়িয়েছি। সেবার মান বেড়েছে। টিকিট ছাড়া যাত্রী যেতে পারেন না, সে জন্য নিয়মিত চেকিং ও মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। ফলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের আয় বাড়ছে। তবে যাত্রীসেবার মান বাড়াতে যা যা করা দরকার সেগুলোও আমরা করছি। তারই অংশ হিসেবে দেখবেন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের কমিউটার ট্রেনে নারীদের জন্য আলাদা বগির ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত বছর রেলের ঢাকা বিভাগ রেকর্ডসংখ্যক প্রায় ৬৯০ কোটি টাকা আয় করেছে। আমাদের টার্গেট পূরণ করেও ২২ কোটি টাকা বেশি রেভিনিউ সরকারকে দিতে পেরেছি আমরা।’

সাশ্রয় হচ্ছে যাতায়াতে সময়

এদিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে আগে চলত লোকাল ট্রেন। বর্তমানে এই রুটে লোকাল থেকে কমিউটার ট্রেন চালানো হচ্ছে। এতে ট্রেনের সার্ভিস বেড়েছে। ফলে আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলে ট্রেন। যাত্রীরা ২০ টাকার বিনিময়ে মাত্র ৪৫ মিনিটে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ যাতায়াত করতে পারছেন। প্রতিদিন প্রায় আট হাজার যাত্রী যাতায়াত করছেন এই রুটে।

গতকাল বুধবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের শহরতলি প্ল্যাটফর্ম সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ভোর থেকে সারা দিন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল করে। অফিস টাইমে সকালে এবং বিকেলে যাত্রীর চাপ বেশি থাকে। প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের আগেই টিকিট কেটে প্রবেশ করতে হচ্ছে। টিকিট না থাকলে জরিমানাসহ ৪০ টাকা দিয়ে টিকিট কাটতে হচ্ছে। এই কমিউটার ট্রেনের মধ্যে একজন ট্রাভেল টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) দায়িত্ব পালন করেন, টিকিট না কেটে ট্রেনের মধ্যে কেউ ভ্রমণ করছেন কি না, সেটি নিশ্চিত করার জন্য। এ ছাড়া প্ল্যাটফর্মেও টিকিট কালেক্টর (টিসি) দায়িত্ব পালন করেন টিকিট ছাড়া কেউ প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করছেন কি না, সেটা দেখার জন্য।

স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে দায়িত্বে থাকা এক টিকিট কালেক্টর (টিসি) দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘মাত্র ২০ টাকার ভাড়াও অনেকে যাত্রী দিতে চান না। টিকিট না কেটে বিনা পয়সায় যেতে চান অনেকেই। তবে আমরা কঠোরভাবে নজরদারি করি। চেকিং চালাই যাতে কেউ টিকিট ছাড়া না যেতে পারেন।’

ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে যাওয়া আজাদুল হক নামের এক যাত্রীর সঙ্গে কথা হলে তিনি দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘ব্যবসার কাজে নিয়মিতই নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসতে হয়। এই পথে ট্রেনে করে যাতায়াতে সময়টা সাশ্রয় হয়। ট্রেন ছাড়া অন্য পরিবহনে ঢাকা গেলে তিন থেকে চার ঘণ্টা পথেই নষ্ট হয়। তাই ঢাকা নারায়ণগঞ্জের জন্য ট্রেনই সবচেয়ে ভালো। তবে এই রুটে ট্রেনের সংখ্যা আরও বাড়ানো উচিত। বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ যাতায়াত করেন ট্রেনে। কিন্তু ট্রেনে আগে ভাড়া ছিল ১৫ টাকা, এখন করা হয়েছে ২০ টাকা। যদিও বাসে যেতে আরও বেশি খরচ হয়।’

এদিকে নারায়ণগঞ্জ রুটের ট্রেনটি আগে লোকাল ট্রেন হিসেবে চলত। কিন্তু ট্রেনের কোচে ফ্যান ও পর্যাপ্ত আলোর সুবিধা থাকায় সেটিকে এখন কমিউটার ট্রেনে রূপান্তরিত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাই ভাড়াও কিছুটা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন রেলের কর্মকর্তারা।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘ট্রেন যখন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান লিজ নিয়ে চালাচ্ছে, তখন যাত্রীর ভাড়ার টাকা চলে যাচ্ছে বেসরকারি কোম্পানির পকেটে। সরকার পাচ্ছে কম। যদি সরকারি ব্যবস্থাপনায় চালানো হয়, তাহলে আমার টাকা সরকারের পকেটেই থাকছে। তাই সরকারি ব্যবস্থাপনায় ট্রেন চালানোর ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো সমাধান করে, যাত্রী সেবার মান আরো বাড়ানো উচিত।’