নতুন সংস্কার করা পুকুরে ফুটে আছে নানা জাতের শাপলা। পুকুরের চারপাশে ছোট-বড় হিজল-মেহগনি গাছ। পাড়ে গোলপাতার ছাউনি দেয়া ঘর। সেই ঘরের কাছে গেলেই শোনা যাবে কচিকাঁচাদের কলকাকলি।
যশোর শহরের নব কিশলয় স্কুলের পেছন দিকে দেখা মিলবে এই ঘরের। শিশুদের প্রকৃতির সান্নিধ্যে রেখে পাঠদানের সুযোগ করে দিতেই গড়ে তোলা হয়েছে এই ঘরটি। তার পাশেই একটু উঁচু সমতল জায়গায় বসার জন্য রাখা সুদর্শন পিঁড়ি। সেই পিঁড়িতে বসেই পড়ালেখায় মনোযোগী শিশুরা। আর সামনে থাকা সাদা বোর্ডে পাঠদানে নিয়োজিত শিক্ষক।
ইট-পাথরের যান্ত্রিকতার মধ্যে শিশুদের প্রকৃতির মধ্যে আনন্দময় পরিবেশে পড়ালেখা করানোর জন্য যশোর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে এই পাঠশালা। এর নামও দেয়া হয়েছে ‘প্রকৃতির পাঠশালা’।
গত বুধবার এই শিক্ষা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘নব কিশলয় স্কুলের পেছনে শহরের মধ্যেই প্রাকৃতিক পরিবেশ দেয়ার চেষ্টা করেছি। পাঠশালার পাশেই একটি পুকুর আছে। পুকুরের মধ্যে ফুটেছে শাপলা ফুল, পাড়ে রয়েছে হিজলগাছ। এমন নান্দনিক পরিবেশে শিক্ষার্থীরা পরিবেশ থেকে যেন কিছু শিখতে পারে, সেটিই আমরা চেয়েছি। তাই এই পাঠশালায় কোনো চেয়ার-টেবিলও নেই। এতে শিক্ষার্থীদের প্রকৃতিপ্রেম বাড়বে, উদারতা বাড়বে।’
সহকারী শিক্ষক স্বর্ণপাল তুলি বলেন, ‘একদম নতুন উদ্যোগ এটি। শিক্ষার্থীরাও এটি পছন্দ করছে। পাঠশালা কী, এখনকার শিক্ষার্থীরা জানত না। এখন তারা জানতে পারছে তাদের পূর্বপুরুষরা কীভাবে পড়ালেখা করত। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যেও আগ্রহ দেখছি।’
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারহান তানিসা ও তাসজিয়া জান্নাত জানায়, তারাও চাইত প্রকৃতির মাঠে আনন্দদায়ক পরিবেশে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম হোক। কিন্তু তাদের বদ্ধ রুমে পাঠ দেয়া হতো। এখন প্রকৃতির মধ্যে পাঠ নিতে পেরে তারা খুশি।
অভিভাবক হামিদুল হক শাহীন বলেন, ‘অভিভাবক হিসেবে চাইব আমার সন্তান থাকুক প্রকৃতির সান্নিধ্যে। যান্ত্রিকতার এই যুগে শিক্ষার্থীরা মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস করছে। স্মার্টবোর্ডে ক্লাস করছে। এগুলোর প্রয়োজন আছে। তবে প্রকৃতি থেকেও তারা বঞ্চিত হচ্ছে। এই উদ্যোগে তারা কিছুটা হলেও সেই প্রকৃতিতে ফিরতে পারছে।’
‘প্রকৃতির পাঠশালা’নির্মাণের দায়িত্বে থাকা যশোর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এই উদ্যোগটি ছিল একজন স্থপতির। যশোরের জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় এটি দেশের মধ্যে এ রকম দ্বিতীয় স্কুল। সুন্দরবনের গোলপাতা, গাবগাছ, মাটি ও বাঁশ দিয়ে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা প্রকৃতির পরিবেশ থেকে শিখতে পারবে, এটাই লক্ষ্য।’
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা