আপডেট : ৬ জুলাই, ২০২৩ ১৫:২১
আবেগে মোড়ানো সংবাদ সম্মেলনে বারবার কাঁদলেন তামিম
প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম

আবেগে মোড়ানো সংবাদ সম্মেলনে বারবার কাঁদলেন তামিম

সংবাদ সম্মেলনে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন তামিম। ছবি: দৈনিক বাংলা

১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারকে বিদায় জানালেন দেশের ক্রিকেটের অন্যতম নক্ষত্র তামিম ইকবাল। ৩৪ বছর বয়সী তামিম ক্রিকেট আরও কিছুদিন খেলবেন বলেই প্রত্যাশা ছিল সবার। তবে ফর্মহীনতা আর ফিটনেস ইস্যুতে কদিন ধরেই সমালোচনার মুখে ছিলেন। আফগানিস্তানের সঙ্গে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে পুরোপুরি ফিট না থেকেও খেলায় সেই সমালোচনা আরও গতি পায়। পরদিনই জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন।

‘সময়ের আগে’ই অবসর বলেই হয়তো জরুরি সেই সংবাদ সম্মেলনে ভীষণ আবেগাক্রান্ত ছিলেন তামিম। নিজের কথা, পরিবারের কথা, ক্রিকেটের কথা বলতে বলতে বারবারই তামিম কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানা এলাকার হোটেল টাওয়ার ইনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে।

অবসরের ঘোষণা দিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠেই তামিম বলেন, বুধবার আফগানিস্তানের সঙ্গে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচটিই তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। অর্থাৎ সিরিজের শেষ দুটি ম্যাচ আর খেলবেন না তিনি। স্বাভাবিকভাবেই মাস তিনেক পর অনুষ্ঠেয় ওয়ানডে বিশ্বকাপেও দল পাচ্ছে না তামিমকে।

‘আমি সবসময় একটা কথা বলেছি যে আমি খেলাটি খেলেছি...’- সংবাদ সম্মেলনে কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন টাইগার ওয়ানডে দলের ক্যাপ্টেন। প্রায় মিনিটখানেক কোনো কথাই বলতে পারেননি তিনি।

আবেগ নিয়ন্ত্রণে এনে তামিম বলেন, ‘আমি সবসময় বলেছি, আমি ক্রিকেট খেলি আমার বাবার স্বপ্নপূরণ করার জন্য।’ এ পর্যায়ে বাবার প্রসঙ্গ উঠতেই ফের কান্নায় ভেঙে পড়েন তামিম।

কান্না সামলে তামিম বলেন, ‘আমি জানিনা আমি ১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে কতটুকু তা পূরণ করতে পেরেছি। অসংখ্য মানুষকে আমার ধন্যবাদ জানানো প্রয়োজন।’

চট্টগ্রামের বনেদি খান পরিবারের সদস্য তামিম। চাচা আকরাম খান দেশের ক্রিকেটের অন্যতম এক নায়ক। ভাই নাফিস ইকবালও জাতীয় দলে খেলেছেন একসময়। তবে ক্রিকেটে তামিমের হাতেখড়ি তার ছোট চাচা প্রয়াত আকবর খানের হাত ধরে। ধন্যবাদ জ্ঞাপনে প্রথমেই তার প্রসঙ্গটিই উঠে এসেছে তামিমের কণ্ঠে।

তামিম বলেন, ‘আমার সবচেয়ে ছোট চাচা, যিনি ইন্তেকাল করেছেন, ওনার নাম আকবর খান। ওনার হাত ধরেই আসলে আমার প্রথম ক্রিকেট বলের টুর্নামেন্ট খেলা। তিনি এবং তার পরিবারকে ধন্যবাদ।’

ছোটবেলার কোচের প্রসঙ্গও তামিমের চোখে জল এনেছে। ‘এমএ আজিজে তপন দা নামের একজন কোচ আছেন, তার কাছে আমি ছোটকাল থেকে...’ বলতে বলতে ফের কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন। একটু সামলে নিয়ে বলেন, ‘...যার কাছে আমি ছোটবেলা থেকে প্র্যাকটিস করেছি। তাই ওনাকে ধন্যবাদ।’

যাদের সঙ্গে খেলেছেন, তাদের সবাইকেও ধন্যবাদ জানিয়ে তামিম বলেন, ‘আমি যাদের সঙ্গে খেলেছি তাদের ধন্যবাদ। আমি অনূর্ধ্ব ১৩, ১৫, ১৭, ১৯, ১৮, প্রিমিয়ার লীগ, ন্যাশনাল লীগ, ন্যাশনাল টিম যাদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলেছি, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। বিশেষ করে ন্যাশনাল টিমে যারা আমার কলিগ, তাদের (ধন্যবাদ)। অবশ্যই ক্রিকেট বোর্ড, দীর্ঘ সময় ধরে তারা আমাকে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ করে দিয়েছে এবং ক্যাপ্টেনকেও (ধন্যবাদ)।’

‘আমার আসলে খুব বেশি কিছু বলার নেই। একটা বিষয় আমি বলব, আমি আমার সর্বোচ্চটা চেষ্টা করেছি।’ বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন দেশের নির্ভরযোগ্য এই ব্যাটার।’

আবেগাক্রান্ত কণ্ঠে তামিম বলেন, ‘সম্ভবত আমি যথেষ্ট ভালো করিনি। কিন্তু আমি যখন মাঠে ছিলাম, আমি আমার শতভাগ দেয়ার চেষ্টা করেছি। অনেকগুলো বিষয় আছে, আমি কিছু বলতে চাই আসলে। আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, আমি প্রায় কথা বলতে পারছি না। কিন্তু আমি আশা করি, আপনারা পরিস্থিতিটা বুঝবেন।’

‘এই পরিস্থিতি কথা বলার মতো সহজ না। আমি এত বছর যখন খেলেছি, হঠাৎ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শেষ করে দেয়া আমার জন্য এত সহজ না। আমি আশা করি, আপনারা বুঝবেন।’

ক্রীড়া সাংবাদিকদের উদ্দেশে তামিম বলেন, ‘আমি শুধু একটি অনুরোধ করব, যারা সামনে ক্রিকেট খেলবে, আপনারা তাদের কথা ভালো লিখবেন, খারাপ লিখবেন, কিন্তু ক্রিকেটই যেন হয়, ক্রিকেটের বাইরের সীমানা যেন না পেরোয়। যদি তারা ভালো খেলে, ভালো বলবেন। খারাপ খেললে সমালোচনা করবেন। আশা করি আপনারা সবাই বুঝবেন যে আমরা মাঝে মাঝে সীমা অতিক্রম করে ফেলি।’

তামিম আরও বলেন, ‘আমি আবারও বলব, আমি সবদিকে আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। আমি আবার রিপিট করি, আমি খেলা শুরু করেছি বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য। জানি না কতটুকু পেরেছি। কিন্তু আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছি। একজন মানুষ ও ক্রিকেটার হিসেবে নিজেকে গড়তে যারাই আমাকে সাহায্য করেছেন, আমি সবাইকে অন্তরের অন্তস্তল থেকে ধন্যবাদ জানাই।’

পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তামিম বলেন, ‘আমার মা, আমি তাকে ভুলতে পারব না। আমার ভাই, আমার স্ত্রী, আমার দুই সন্তান- আমার এই জার্নিতে তারা অনেক কষ্ট করেছে। একইভাবে তাদের আনন্দেরও অনেককিছু ছিল। আমি তাদেরও ধন্যবাদ জানাই।’

নিজের নেয়া অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে যেন খুব বেশি আলোচনা না হয়, সে আহ্বানও জানান তামিম। বলেন, ‘এর চেয়ে বেশি আসলে আমার কিছু বলার নেই। এটাই অনুরোধ করব, আমার (অবসরের) টপিকটা এখানেই শেষ করে দেন। এটি গুরুত্বপূর্ণ, অন্তত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য। একে নিয়ে আর বেশি গুতাগুতি করবেন না। কেন কেন, কী, আরও কী হতে পারত বা না হতে পারত- (এসব আলোচনা) শেষ করে দিন।’

‘আমি সবসময় বলি, টিম যেকোনো ব্যক্তির চেয়ে বড়। টিমে ফোকাস করুন। এই সিরিজের আরও দুটি খেলা বাকি, আমি আশা করি আমরা জিতব,’- এটুকু বলেই সংবাদ সম্মেলন শেষ করেন তামিম ইকবাল খান।