আপডেট : ৬ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০
বেসরকারি খাতে ঋণ বেড়েছে ১১.১০%
এ এস এম সাদ

বেসরকারি খাতে ঋণ বেড়েছে ১১.১০%

বাংলাদেশ ব্যাংক

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা অনিশ্চয়তার মধ্যে দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটি সুখবর দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। আর সুখবরটি হচ্ছে, বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বেড়েছে ১১ দশমিক ১০ শতাংশ।

বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের যে তথ্য প্রকাশ করেছে তা ঘেঁটে দেখা যায়, ২০২২-এর মে মাসের তুলনায় ২০২৩ সালের মে মাসে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বেড়েছে ১১ দশমিক ১০ শতাংশ। এর অর্থ হলো, ২০২২ সালের মে মাসের চেয়ে এই বছরের মে মাসে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১১ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি ঋণ পেয়েছেন। আবার গত বছরের এ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, ২০২১-এর মে মাসের চেয়ে ২০২২ সালে মে মাসে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদরা দেশের বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম নিয়ামক বলে অভিহিত করেন বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহকে। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলেছেন, উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ বিতরণ বৃদ্ধি ছাড়াও দেশের বাজারে ডলারের দাম বাড়ার কারণে গ্রাহককে এলসি (ঋণপত্র) খুলতে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়েছে। এ কারণেও ঋণ বেড়েছে। এ ছাড়া চলতি বছর এপ্রিলের চেয়ে মে মাসে শূন্য দশমিক ৮৯ শতাংশ ঋণপ্রবাহ বেড়েছে।

নতুন মুদ্রানীতিতে আগামী ছয় মাসের জন্য (জুলাই-ডিসেম্বর) বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ। জানুয়ারি-জুন মুদ্রানীতিতে প্রাক্কলন করেছিল ১৪ দশমিক ১ শতাংশ। মে পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি ১১ দশমিক ১০ শতাংশ। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। তবে অর্জিত হয় ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরেও একই প্রাক্কলন থাকলেও ঋণ প্রবৃদ্ধি হয় মাত্র ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, করোনার প্রকোপ কমে আসার পর থেকেই বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ছিল। সঙ্গে প্রণোদনা ও এলসি বড় ভূমিকা রেখেছে। সব মিলিয়ে বেসরকারি খাতে গতি এসেছে।

ঋণের বিভিন্ন তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, বাংলাদেশের বর্ধিষ্ণু অর্থনীতিতে ব্যাংকের ঋণ বাড়তেই থাকে। ২০০৯-১০ অর্থবছর শেষে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ২৪ শতাংশের বেশি। বছরওয়ারি হিসাবে এর পর তা সব সময়ই ১০ শতাংশের বেশি ছিল। এমনকি একপর্যায়ে তা ২৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তা দুই অঙ্কের নিচে (ডাবল ডিজিট), ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশে নেমে আসে। এরপর দুই বছর বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি এক অঙ্কের নিচে (সিঙ্গেল ডিজিট) অবস্থান করে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, মহামারির ছোবলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি কমে ৮ দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে আসে। এরপর সরকারের প্রণোদনা ঋণে ভর করে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এই প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৯ দশমিক ২০ শতাংশ হয়। আগস্টে তা আরও বেড়ে ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশে এবং সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশে ওঠে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘দেশে এখন বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকেই দেশে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছিল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় ফেব্রুয়ারিতে কিছুটা হোঁচট খেয়েছিল। মার্চে ফের বাড়ে। এপ্রিলেও বাড়ল।’

তিনি বলেন, ‘নতুন শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনি যন্ত্রপাতি বা ক্যাপিটাল মেশিনারি, শিল্পের মধ্যবর্তী কাঁচামালসহ শিল্প খাতের অন্য সব সরঞ্জাম আমদানি বাড়ছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেলের কাজ শেষের দিকে। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ আরও কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। এসব প্রকল্প ঘিরে দেশে বিনিয়োগের একটি আবহ তৈরি হয়েছে।’

আগামী দিনগুলোতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন এই অর্থনীতিবিদ।