বাংলাদেশ ৩: ১ নেপাল।
নেপাল ৩: ১ বাংলাদেশ।
সাত দিন আগে-পরের দুই ম্যাচ। ফলে ১৮০ ডিগ্রি বৈপরীত্য!
ভেন্যু একই, যুযুধান দুই দলের নামও। মঞ্চটা ভিন্ন শুধু। সাত দিন আগে মেয়েরা যে মাঠে সাফের ফাইনালে ইতিহাস গড়েছে, নেপালের সে দশরথ স্টেডিয়ামে নেপালের কাছেই কাল ৩-১ গোলে হেরে ছেলেদের দলের ‘উপহার’ একরাশ হতাশা।
অবশ্য বছরটাই তো হতাশায় মোড়া। সালতামামির সময় এখনো আসেনি, তবে ছেলেদের ফুটবল দলের বার্ষিক প্রতিবেদন বাফুফে চাইলে এখনই করে ফেলতে পারে। নেপালের বিপক্ষে ম্যাচটিই যে বছরে ছেলেদের দলের শেষ। বার্ষিক প্রতিবেদন বলবে, এ বছরে বাংলাদেশের ফুটবলে আলো যতটুকু তা মেয়েদের ঘিরেই, ছেলেদের ফুটবলে ঘুটঘুটে অন্ধকার! কাঠমান্ডুর সন্ধ্যা কাল এসেছে সেটিরই প্রতীকী হয়ে।
৩৮ মিনিটের মধ্যেই যে গোল তিনটি খেয়েছে বাংলাদেশ, সেটিকে যথার্থ মনে করিয়েছে বাংলাদেশের ছন্নছাড়া ফুটবল। তিনটিই নেপালের ফরোয়ার্ড অঞ্জন বিস্তার, তিনটিই চোখে বিঁধে থাকার মতো ভুলে। ৫৫ মিনিটে যে সাজ্জাদ হোসেনের সৌজন্যে একটা গোল ফেরত দিতে পেরেছে বাংলাদেশ, মিছে হলেও ক্ষণিকের আশা জাগিয়েছে প্রত্যাবর্তনের- এটিকেই বরং উজ্জ্বল ব্যতিক্রম ধরে নিতে পারেন।
না বাংলাদেশ কৌশলে কুলিয়ে উঠেছে নেপালের সঙ্গে, না ছিল ফুটবলারদের পায়ে ঝলক। না মাঝমাঠের অস্বিত্ব ছিল, না ছিল রক্ষণে দৃঢ়তার ছিটেফোঁটা। আর ফুটবল দর্শন? বাংলাদেশ দল সে নিয়ে কখনো ভেবেছে বলে মনে হয় না। বল যেখানে, হৃদয় সেখানে।
দিন পাঁচেক আগে কম্বোডিয়ার বিপক্ষে হাঁচোড়পাঁচোড় পাওয়া জয়ের একাদশে কিছু অদলবদল করেছেন বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। তা তিনি করারই কথা, প্রীতি ম্যাচে না করলে আর কখন! কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে ইব্রাহিম-ফাহিমরা নামার আগ পর্যন্ত লেফট উইং অস্বিত্বহীন রেখে কী কৌশলে আক্রমণ সাজানোর চেষ্টা করেছেন কাবরেরা, তা বোঝা সাধারণ্যের সাধ্যের বাইরে।
আর মাঝমাঠ? বাংলাদেশ আক্রমণে গেলেই নেপাল চার ডিফেন্ডারের সামনে পাঁচ মিডফিল্ডারকে রেখে মাঝমাঠ থেকেই ব্যুহ তৈরি করেছে। যেন চক্রব্যুহ, যা ভেদ করার মতো বল পায়ে দক্ষ ফুটবলার বাংলাদেশের নেই।
কিন্তু শুধু কাবরেরার কাঁধে দোষ চাপানো শুধু দায় এড়ানোই হবে। ১৪ মিনিটে জামাল ভূঁইয়ার ফ্রি-কিক বার কাঁপিয়ে দেয়ার পর থেকে বিরল হয়ে পড়া আক্রমণে যখন বারবার শেষ পাসটা উদ্দেশ্যহীন হয়, কিংবা ৩৬ মিনিটে দুই উইঙ্গারকে উঠতে দেখেও ‘থ্রি ভার্সেস টু’ পরিস্থিতিতে বল পাস না দিয়ে স্ট্রাইকার সাজ্জাদ হোসেন ৩৫ গজ দূর থেকে উদ্দেশ্যহীন শট নেন, সে দায় তো কোচের নয়।
১৮, ২৭ আর ৩৮ মিনিটে তিন গোলেই অঞ্জনকে বক্সে অরক্ষিত রেখে দিয়েছে বাংলাদেশের রক্ষণ। বিশেষ করে তৃতীয় গোলে ভুলটা তো চোখে বিঁধে থাকার মতো। ফ্রি-কিক থেকে ভেসে আসা ক্রসে আক্রমণ করার মতো নেপালি ফরোয়ার্ড বলতে এক অঞ্জনই ছিলেন বাংলাদেশ বক্সে, বিপরীতে তার মার্কার টুটুল হোসেন বাদশাসহ বাংলাদেশের ডিফেন্ডার ছিলেন ৫-৬ জন। এরপরও উচ্চতায় বাদশার চেয়ে খাটো অঞ্জনই যখন হেডে বল জালে জড়ান, সেটিই বুঝিয়ে দিয়েছে ম্যাচটা বাংলাদেশের নয়।বছরটাও।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা