আপডেট : ২৮ মে, ২০২৩ ১৬:২২
ভোটের লড়াইয়ে এরদোয়ান-কিলিচদারোগ্লু
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ভোটের লড়াইয়ে এরদোয়ান-কিলিচদারোগ্লু

রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান ও কামাল কিলিচদারোগ্লু

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আজ রোববার রান অফ বা দ্বিতীয় দফা ভোটগ্রহণ চলছে। আজকে জনতার ভোটেই চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হবে দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান নাকি কামাল কিলিচদারোগ্লু হবেন।

বিবিসি জানায়, রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় শুরু হয়েছে ভোট। চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। ভোটগ্রহণ শুরুর আগেই কেন্দ্রে কেন্দ্রে লাইন দেখা যায় ভোটারদের। এমনকি গত ১৪ মে অনুষ্ঠিত প্রথম দফার ভোটের চেয়েও এবার ভোটারদের ভিড় বেশি দেখা গেছে। ৮০ বছরের এক নারী আগেভাগে কেন্দ্রে পৌঁছাতে ভোর ৫টায় অ্যালার্ম সেট করেছেন বলে জানিয়েছেন বিবিসিকে।

সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, এবার দ্রুতই ফলাফল পাওয়া যাবে। মধ্যরাত নাগাদই নির্বাচনের সিদ্ধান্ত জানা যেতে পারে।

ভোটারদের টানতে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দেন বতর্মান প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এবং বিরোধী জোটের প্রার্থী কিলিচদারোগ্লু। জাতীয়তাবাদীদের ভোট টানতে তুরস্কে আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ সিরিয়ার শরণার্থীকে ফেরত পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কিলিচদারোগ্লু। তার এই বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন এরদোয়ান। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে কিলিচদারোগ্লুর জয় হবে সন্ত্রাসীদের বিজয়।’

তুরস্কের রাজনীতিতে টানা ২০ বছর আধিপত্য ধরে রেখেছেন এরদোয়ান। তিনি আরও পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার প্রত্যাশায় এবারের নির্বাচনে লড়ছেন। প্রথম দফার ভোটে এরদোয়ান পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ২ শতাংশ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কিলিচদারোগ্লু পান প্রায় ৪৫ শতাংশ ভোট।

এর আগে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রথম রাউন্ডেই জিতেছিলেন এরদোয়ান। গত ১৪ মে প্রথম দফার নির্বাচনে কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট পাননি। এতে দেশটিতে প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

প্রথম দফার ভোটে এগিয়ে থাকায় জয়ের ব্যাপারে বেশ আত্মবিশ্বাসী এরদোয়ানপন্থিরা। তুরস্কের ইস্তাম্বুলের ২২ বছর বয়সী ছাত্র ওসমান চাকির আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আমার মনে হয়, তুরস্কে আগামী পাঁচ বছরের জন্য এরদোয়ানকেই ক্ষমতায় ফিরে আসতে দেখব।’

তুরস্কে অর্থনৈতিক সংকট, গত ফেব্রুয়ারিতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু, ভূমিকম্প মোকাবিলায় সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রবল সমালোচনার পরও ভোটাররা প্রথম দফায় এরদোয়ানকে কেন প্রত্যাখ্যান করেননি সে প্রশ্ন আলোচনায় এসেছে।

এ ব্যাপারে ইস্তাম্বুলের কাদির হ্যাস ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সোলি ওজেল বিবিসিকে বলেন, ‘এরদোয়ানের যে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করার ক্ষমতা রয়েছে, এটা আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না। তার শরীর থেকে ক্ষমতার আভা বের হয়। এটা এমন এক জিনিস যা কিলিচদারোগ্লুর নেই।’

এদিকে প্রথম দফায় এরদোয়ানের চেয়ে অন্তত ২৫ লাখ ভোটে পিছিয়ে পড়েন বিরোধী জোটের প্রার্থী কিলিচদারোগ্লু। তবে তিনি হাল ছাড়তে নারাজ। তিনি মনে করেন, দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনের ফলাফল বদলে যেতে পারে। এর জন্য তার প্রথম দফায় তৃতীয় স্থানে থাকা অতি-জাতীয়তাবাদী প্রার্থীর সিনান ওগানের ২৮ লাখ ভোটারের সমর্থন লাগবে। অন্যথায় প্রথম দফায় অংশ না নেয়া প্রায় ৮০ লাখ ভোটারের এবার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে হবে।

বিবিসি জানায়, নির্বাচনের শেষ সপ্তাহে ৪ ঘণ্টা বাবালা টিভি নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হন কিলিচদারোগ্লু। তুরস্কের ২ কোটি ৪০ লাখ মানুষের কাছে এই ইউটিউব সম্প্রচারটি পৌঁছেছে।

তরুণ নির্বাচনী প্রচারক মেহেটেপের মতে, তুরস্কে প্রথম দফার ভোটে অংশ না নেয়া অনেক তরুণ ভোটারের ওপর বাবালা টিভির প্রচারণা বেশ প্রভাব ফেলবে।

রিপাবলিকান পিপলস পর্টির নেতা কিলিচদারোগ্লু তুরস্কের নির্বাচনে প্রধান বিরোধী নেতা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। ছয়টি বিরোধী দলের জোট তাকে সমর্থন দিয়েছে।

তবে প্রথম দফায় এরদোয়ানকে এগিয়ে থাকতে দেখে বিরোধী দলগুলোর অনেক সমর্থক হতাশ হয়ে পড়েছেন। তেমনই একজন ভোটার হলেন ইস্তাম্বুলের চিহানগির এলাকার একটি কাপড় ব্যবসায়ী ওলজাই। তিনি বলেন, ‘১৪ মে প্রথম দফা ভোটের দিন আগে আমি খুবই আশাবাদী ছিলাম। মনে হচ্ছিল, এরদোয়ানের হাত থেকে আমরা মুক্তি পাব, তবে এখন মনে হচ্ছে তাকে হারানো যাবে না।’

৩৪ বছর বয়সী ওলজাই বলেন, ‘ফের আগের মতো উদ্দীপনা নিয়ে ভোট দেয়া কঠিন। কারণ মনে হচ্ছে বিষয়টির সুরাহা হয়ে গেছে, তবে অবশ্যই আমি ভোট দেব। কারণ এটা আমার দায়িত্ব।’

এদিকে আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সত্যিকার অর্থে ভোটারদের নিজস্ব পছন্দ থাকতে পারে। কিন্তু তুরস্ক গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের মৌলিক নীতিমালা পূরণ করেনি।