মুলপিপাড়ার এক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কের কথা পরিবারকে জানিয়েছিলেন রোয়াংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের পানখিয়ং পাড়ার বাসিন্দা বমরামসাং বম (২৩)। ওই মেয়ের পরিবারকে সহযোগিতার কথা বলে গত ডিসেম্বরে বাড়ি ছেড়েছিলেন তিনি। এরপর আর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। এপ্রিলে যখন তার খোঁজ মিলল, পরিবারের কাছে ফিরল তার মরদেহ। আরও জানা গেল, বমরামসাং যোগ দিয়েছিলেন পাহাড়ি সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সামরিক শাখায়।
মঙ্গলবার ভোরে কেএনএফ ও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে কেএনএফের সশস্ত্র শাখার কেএনএর এক সদস্যের মৃত্যুর তথ্য জানা যায়। তাকে মুলপিপাড়ার পাহাড়ের নিচে গভীর জঙ্গলে মাটি চাপা দেয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবার মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সেটি রুমা থানায় পৌঁছালে সেটি বমরামসাংয়ের মরদেহ বলে শনাক্ত করেন তার মা সুনরেম বম।
চার মাস কোনো খোঁজখবর না থাকার পর ছেলের মরদেহ দেখে সুনরেম বম কান্নায় ভেঙে পড়েন। বলেন, ওই মেয়ের পরিবারকে কাজে সহযোগিতার কথা জানিয়ে ক্রিসমাসের আগেই ঘর ছেড়ে মুলপিপাড়ায় চলে যায় বমরামসাং। বাড়িতে তখন ঘরের কাজ চলে। বলেছিল, ঘরের কাজ শেষ হলে ফেব্রুয়ারিতে নতুন বৌ নিয়ে আসবে।
সুনরেম বম বলেন, ছেলেকে বলেছিলাম, তোমার বাবার হাত ভাঙা। একা ঘরের কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করতে পারবে না। তুমি দুয়েক দিনের মধ্যে ফিরে এসো। ছেলে বলেছিলেন, আসবে। কিন্তু ছেলের আর খোঁজ পাইনি। পরে শুনলাম, মুলপিপাড়ায় ওই মেয়ের পরিবারের সঙ্গে জুমে আদা চাষ করছে। শুনে ভালো লেগেছিল। কিন্তু মঙ্গলবার বিকেলে প্রতিবেশীরা জানায়, বমরামসাং নাকি গুলিতে মারা গেছে। শুনেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।
শুরুতে অবশ্য প্রতিবেশীদের কথা বিশ্বাস করেননি সুনরেম বম। ছেলে যে কেএনএফে যোগ দিয়েছে, এ তথ্যও তার জানা ছিল না। ফেসবুকে অস্ত্র হাতে কেএনএফের ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় ছেলের ছবি দেখানোর পর আর অবিশ্বাসের সুযোগ ছিল না।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে সুনরেম বম বলেন, ‘আমাদের পবিত্র বাইবেলে কোথাও বলা হয়নি, অস্ত্র নিয়ে এভাবে যুদ্ধ করতে হবে। ছেলে আমার কীভাবে সেই দলে যোগ দিল, জানি না। আর কোনো ছেলে অস্ত্র হাতে যেন এভাবে জঙ্গলে না যায়। আর কোনো মায়ের কোল যেন খালি না হয়।’
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাঈদ মাহবুবুল হক ও রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) মো. আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে রুমা থানার পুলিশ বমরামসাংয়ের মরদেহ উদ্ধার করে।
ওসি আলমগীর হোসেন বলেন, দুই সন্ত্রাসী সংগঠনের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় একজনের গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধারে যায় পুলিশ। পরে মুলপিপাড়ার গভীর অরণ্যে কবর থেকে একজনের মরদেহ তোলা হয়। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বান্দরবান হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে কেএনএফের তাণ্ডবে গত ২০ এপ্রিল মুলপিপাড়া থেকে পালিয়ে রুমা সদরে আশ্রয় নেয় মারমা সম্প্রদায়ের ৪৯ পরিবারের ২৩৬ জন। সেনাবাহিনীর সার্বিক সহযোগিতায় ও পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে তারা বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন।
সেনাবাহিনীর রুমা অঞ্চলের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহরিয়ার ইকবাল বলেন, যতদিন কেএনএফের সশস্ত্র সদস্যরা নিশ্চিহ্ন হবে না, মুলপিপাড়াবাসীর নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীর টহল অব্যাহত থাকবে।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা