ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড গাজা উপত্যকা আধুনিক বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংস বর্বরোচিত গণহত্যা চালাচ্ছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। প্রতিদিনই এই জনপদে অবিরাম বোমাবর্ষণে ক্ষয়বিক্ষত হচ্ছে অসহায় নারী ও শিশুদের দেহগুলো। আর এসব দৃশ্য নাড়িয়ে দিচ্ছে প্রতিটি বিবেকবান মানুষের হৃদয়। এই বর্বরতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলের নির্মম হামলার প্রতিবাদ ও গাজাবাসীর ডাকা হরতালের সমর্থনে গতকাল সোমবার রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে প্রতিবাদ সমাবেশ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় ওই এলাকার চারদিকে বিক্ষোভকারীদের ঢল নামে। সংসদ ভবনের সামনে বিক্ষোভকারীদের হাতে বিভিন্ন ফটোকার্ড ও ব্যানার নিয়ে মিছিল নিয়ে সমবেত হন শত শত মানুষ। দেশের বিনোদন অঙ্গনের তারকারও প্রতিবাদমুখর। সোশ্যাল মিডিয়ায় তারা এমন মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধের আহবান জানান-
দেশীয় চলচ্চিত্রের শীর্ষ তারকা শাকিব খান, তুখোড় অভিনেতা মিশা সওদাগরসহ বহু তারকা এ নিয়ে তাদের অনুভূতি শেয়ার করেছেন। নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করে অনেক তারকা জানিয়েছেন, এ যুদ্ধ বন্ধ হোক। শান্তি ফিরে আসুক গাজার বুকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে চিত্রতারকা শাকিব খান লিখেছেন, ‘গাজা শুধু একটি ভৌগোলিক নাম নয়, এটি যেন আজ নির্যাতিত মানুষের প্রতীক! দুঃখজনক হলেও বাস্তবতা হচ্ছে, সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করা ছাড়া আর কিছু করতে না পারা! তাদের পাশে আছি- ভালোবাসা, সংহতি, আর শান্তির প্রত্যাশায়।’
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও খল অভিনেতা মিশা সওদাগর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে সব থেকে দুর্বল ইমানের মুসলিম মনে হয় আমরাই।’ চিত্রনায়ক আফরান নিশো লিখেছেন, ‘গাজায় চলমান সহিংসতা, শিশুহত্যা ও সাধারণ মানুষের ওপর আক্রমণ দেখে মন ভেঙে যাচ্ছে। মানবতার পক্ষে কথা বলা আমাদের সকলের দায়িত্ব। যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই। ধর্ম, জাতি বা ভৌগোলিক অবস্থান নির্বিশেষে যেকোনো নিরীহ মানুষের ওপর নিপীড়ন বন্ধ হোক। গাজার মানুষগুলোর কান্না যেন আমাদের বিবেক নাড়িয়ে দেয়। সহিংসতা কখনোই সমাধান হতে পারে না। আমরা চাই না আর কোনো শিশু বোমার শব্দে ঘুম ভাঙুক। গাজায় শান্তি ফিরিয়ে আনুন।’
কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর লিখেছেন, ‘বিদায় রাফা-গাজার জান্নাতি শহীদরা। শ্রেষ্ঠ ধর্মের অনুসারী আর তাদের নিকৃষ্ট শাসকরা আনন্দে থাকুক জ্বলন্ত জমিনের দোজখে।’ অভিনেত্রী জয়া আহসান লিখেছেন, ‘দক্ষিণ গাজায় ইসরায়েলি সেনারা ১৫ জন জরুরি চিকিৎসাকর্মীকে হত্যা করেছে। গাজায় যে নিষ্ঠুর আর হৃদয়হীন গণহত্যা ইসরায়েল চালিয়ে আসছে, এটা তারই অংশ। পৃথিবীকে তারা ফিলিস্তিনিশূন্য করার নিয়ত নিয়ে নেমেছে।’
চিত্রনায়ক আরিফিন শুভ লিখেছেন, ‘গাজার আকাশে যে ধোঁয়া আর অশ্রুর বৃষ্টি, সেই নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে আমরা শুধু প্রার্থনা করতে পারি, কাঁদতে পারি আর চিৎকার করতে পারি। এই মানুষগুলোর অপরাধ কি শুধু এই যে তারা নিজেদের মাটিতে বাঁচতে চায়?’ চিত্রনায়িকা তমা মির্জা লেখেন, গাজায় ইসরায়েলি হামলার একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘এটা গোটা মুসলিম দেশের মুসলমানদের শাহাদতের চিত্র!’ গাজা নিয়ে লিখেছেন এ সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মানও।
চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদ তার ফ্রি প্যালেস্টাইন স্যুটের একটি ছবি প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘আমি যখন এই পোস্ট লিখছি, ততক্ষণে গাজার অস্তিত্ব কী মুছে গেছে? আমরা কি পারলাম না এই শহরটা, এই দেশটাকে বাঁচাতে? ফিলিস্তিনের এই ধ্বংসাবশেষের দায় কি আমরা কেউ এড়াতে পারব? ফিলিস্তিনের জন্য আমার মনের কান্না কখনো থামাতে পারিনি। যখন ‘জংলি’র গল্প লেখা হচ্ছিল তখনো পাখির জায়গায় আমি বারবার ফিলিস্তিনি শিশুদেরই কল্পনা করতাম। আমরা কি শিশুদের জন্য একটা সুন্দর পৃথিবী উপহার দিয়ে যেতে পারব না? যখন যুদ্ধবিরতি চলছিল তখনো আমি শান্তি পাচ্ছিলাম না। শুধু মনে হতো, এই বিরতি কতক্ষণের? কতক্ষণ এই মানুষগুলো বাঁচবে আসলে?’
মডেল, অভিনেতা আব্দুন নুর সজল বলেন, ‘ঈদের ঠিক পরপরই গাজাবাসীর ওপর এ ধরনের অমানবিকতা, পশুত্ব, নির্যাতন, এটা কোনো মনুষত্বের পর্যায়ে পড়ে না। মানুষ কী করে তাদের মানবতা হারায় এবং কতটা হিংস্র হতে পারে সেটা ইসরায়েলকে দেখে বোঝা যায়। তবে এখানেই শেষ নয় বিচারক একজন আছেন এবং তিনি সুনিপুণ বিচার করবেন যথাসময়ে।’ শিল্পী সমিতির সদস্য ও অভিনেত্রী রত্না কবির বলেন, ‘গাজার বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছে এক একটা তাজা প্রাণ। ফেসবুকে গাজার নির্মমতা দেখে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ছি। নিজের মনকে সান্ত্বনা দিতে মনকে বোঝাতে চাচ্ছি আমি এটা কল্পনায় দেখছি। আমি ভাবতে পারছি না সন্তানের সামনে মায়ের, মায়ের সামনে সন্তানের মৃত্যু। আসলে এগুলো নিয়ে কিছু বলার ভাষা নেই শুধু আল্লাহর কাছে এটুকুই প্রার্থনা করি আর যেন কোনো রক্তপাত না হয় বাকি জীবনগুলো যেন রক্ষা পায়।’
চিত্রনায়িকা প্রার্থনা ফারদিন দিঘি বলেন, ‘গাজায় মুসলমানদের জন্য দোয়া করা ছাড়া কিছুই যেন করতে পারছি না। কতটা নির্মম হলে মানুষ এভাবে নিরপরাধদের হত্যা করতে পারে, সেটা ভাবলে শরীর কেঁপে ওঠে। পৃথিবীর এই নীরবতা আরও বেশি কষ্ট দেয়। গাজার মানুষ যেন আমারই ভাইবোন। আল্লাহর কাছে বলি আপনি তাদেরকে হেফাজত করুন, তাদেরকে শান্তিতে রাখুন। আমার বিশ্বাস একদিন সুবিচার হবেই।’
চিত্রনায়িকা ও চিকিৎসক মিষ্টি জান্নাত বলেন, ‘গাজা নিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করা ছাড়া আর কিছু করার নেই। গাজার সাথে আছি ভালোবাসা আর দোয়া নিয়ে। আল্লাহ তাদের সহায় হোন।’ চিত্রনায়িকা হুমায়রা সুবাহ বলেন, ‘গাজার অবস্থা প্রতিদিন আমার মন ভেঙে দেয়। মুসলমান হয়ে কিছু করতে না পারার অসহায়ত্বটা কেবল বাড়তেই থাকে। চোখের সামনে শিশুদের কান্না, মায়েদের আহাজারি সবকিছুই বুকের ভেতর কষ্টের পাহাড় জমায়। দোয়া ছাড়া তাদের জন্য কিছুই করতে পারছি না। আল্লাহ তাদেরকে রক্ষা করুন শান্তি ফিরিয়ে দিন।’
চিত্রনায়ক মামনুন ইমন নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘গাজা আজই শেষ হয়ে যাবে না। যতদিন এই দুনিয়া থাকবে ততদিন গাজা এ ফিলিস্তিনও থাকবে। কারণ এটি আল্লাহর কোরআনিক ওয়াদা এবং রাসূলের (সা.) ভাষায় ঘোষণা।’ ফেসবুকে দুটি আর্টওয়ার্ক এবং একটি ছবি দিয়ে তিনি তুলে ধরেছেন অসহায় ফিলিস্তিনিদের বর্তমান পরিস্থিতি। এরপর বিবেকের কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে ক্যাপশনে পূজা লিখেছেন, ‘এই ধ্বংসলীলার শেষ কবে প্রভু, যাদের হাত থেকে মাসুম বাচ্চাদেরও রেহাই নেই, এমন নিকৃষ্টদের আপনি ধ্বংস করে দেন প্রভু।’
এ ছাড়াও এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে নিজেদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে অনুভূতি শেয়ার করে পোষ্ট দিয়েছেন চিত্রনায়িকা পরীমনি, শবনম বুবলী, চিত্রনায়িকা আঁচল, কণ্ঠশিল্পী সৈয়দ অমি, অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান, চিত্রনায়িকা রিয়ানা পারভীন পলি, অভিনেত্রী আনিকা কবির শখ, চিত্রনায়িকা ক্যামেলিয়া নিশান, চিত্রনায়ক মুন্না খান, কণ্ঠশিল্পী শেখ সাদিসহ বহু শোবিজ তারকা।