‘ম্যাজিক্যাল নাইট’ নামে কনসার্টে গান গাইতে ঢাকায় এসেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী অনুপম রায়। আজ রাতে তিনি ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) গান পরিবেশন করবেন। দুই বাংলায় তার বিপুল ভক্ত আছে। রাতে ভক্তদের মুখোমুখি হওয়ার আগে কথা বলেছেন গণমাধ্যমের সঙ্গে।
দুই বাংলার শিল্পীরা একসঙ্গে মঞ্চে উঠবেন। কেমন লাগছে?
এটা একটা দারুণ উদ্যোগ। সচরাচর খুব কম হয়। এই উদ্যোগ যারা নিয়েছেন মানে ট্রিপল টাইম কমিউনিকেশনকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের সঙ্গে অর্ণব, মেঘদল এবং কলকাতার তালপাতাই সেপাইও গাইবে। এটা অবশ্যই আমাদের জন্য আনন্দের। আমরা চেষ্টা করব আমাদের সেরাটুকু দিয়ে উপস্থিত দর্শকদের রাতটা আনন্দময় করার।
বাংলাদেশে গান গাইতে আসতে পেরে কেমন লাগে?
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাংলাদেশ আমার ভীষণ প্রিয়। আমার কাছে যখনই বাংলাদেশে আসার বা গান গাওয়ার আমন্ত্রণ আসে, আমি সবার আগে সেটা প্রায়োরিটি দিই। চেষ্টা করি যে সময়ে আসার কথা বলা হয়েছে সে সময় সব কাজ ফেলে এখানে আসার। বলতে পারেন কনফার্ম হওয়ার পর থেকে আমি সুটকেস গোছানো শুরু করি। কবে যাব কবে যাব ভেবে অস্থির হয়ে পড়ি। বাংলাদেশ নিয়ে যতবার ভাবি, চিন্তা করি, ততবারই নস্টালজিক হয়ে পড়ি। যতবার ডাক আসে ততবারই মনে হয় আরেকবার সুযোগটা পাচ্ছি এই মাটিতে পা রাখার। এখানকার শিল্প, এখানকার সাহিত্য বরবারই আমাদের মোটিভেট করেছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ আমার ভীষণ প্রিয় জায়গা।
এবারের কনসার্টের যখন অফার গেল আপনার কাছে, তখন কী ভেবে রাজি হয়ে গেলেন?
দেখুন, প্রথমত বাংলাদেশ শুনলেই আমি একবাক্যে রাজি। বাকিটা আমার ম্যানেজমেন্ট টিম দেখে। তারা একবার সবুজ সংকেত দিলেই আমাকে আর কেউ আটকাতে পারবে না!
এ রকম আগ্রহের পেছনের কারণ কী?
এখানকার মানুষ এবং খাওয়াদাওয়া। মানুষগুলো অসাধারণ। আর আপনাদের আতিথেয়তা মুগ্ধ হওয়ার মতো।
কোন খাবারটা আপনার পছন্দ বেশি?
এখন তো বলতে গেলে কেমন শোনাবে। সংকোচ বোধ করছি। নিভৃতে বলা ভালো। শুধু একটা খাবারের নাম বলি, এখানকার কাচ্চি বিরিয়ানির স্বাদ মুখে লেগে থাকে।
কনসার্টে কী ধরনের গান করার পরিকল্পনা আছে?
দেখুন, আমি এখন অবধি যত গান তৈরি করেছি, এর মধ্যে আড়াই শর ওপরে গান প্রকাশ পেয়েছে। তৈরি হয়ে আছে আরও সাড়ে তিন শ গান। সব গান তো আর শোনানো যাবে না। হয়তো এক বা দেড় ঘণ্টা সময় পাব। এই সময়ে আর কয়টা গানইবা শোনাতে পারব, বলুন। হয় কী, আমরা যেসব গান তৈরি করি, এর মধ্যে কিছু গান খুব আদর পায়, আবার কিছু গান আদর পায় না, মানে হিট হয় না। চেষ্টা করব মানুষ যেগুলো শুনতে চায় সেগুলো করার, পাশাপাশি কিছু আদর না পাওয়া গানও গাওয়ার ইচ্ছা আছে।
ভক্তদের জন্য কোনো সারপ্রাইজ আছে?
আমি জানি না আমি নিজে কী সারপ্রাইজ হতে চলেছি।
আপনি বাংলাদেশে এসেছেন, এটা জানার পর ভক্তরা কোনো বার্তা দিচ্ছে কি না?
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক মেসেজ এসেছে। অনেক অনুরোধ এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা করার অনুরোধ। অনুষ্ঠান নিয়েও নানা রকম কিছু জানতে চাইছে। অনুষ্ঠানে কীভাবে উপস্থিত থাকতে পারবে সেসব জানতে চাইছে।
আপনি দুই বাংলাতেই সমান জনপ্রিয়। দুই বাংলার সংগীত নিয়ে কোনো ভাবনা আছে কি না?
ইন্টারনেটসহ নানা ধরনের যোগাযোগের কারণে দুই বাংলা একেবারে এক হয়ে গেছে। এখানকার গান ওখানকার শ্রোতারা এবং ওখানকার গান এখানকার শ্রোতারা সহজেই শুনতে পারছেন। নতুন শিল্পীদের গান সহজেই পৌঁছে যাচ্ছে। সেদিক থেকে ভাবলে অবশ্যই আমার এ দেশের সংগীত নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে। সে রকম সুযোগ হলে তো করবই।
বাংলাদেশ নিয়ে তো আলাপ হলো, কলকাতার মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আপনার কাছে কিছু জানতে চাই?
কলকাতার মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি ঠিক জায়গাতেই আছে। কোভিডের দুই বছর পৃথিবীর যা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেটা ওখানেও হয়েছে। তা সত্ত্বেও নতুন ট্যালেন্ট উঠে আসছে, নতুন গান তৈরি হচ্ছে। আমার নিজের কথা যদি বলি, কদিন আগে কৌশিক গাঙ্গুলির পরিচালনায় ‘অর্ধাঙ্গিনী’ নামে একটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেখানে আমার তৈরি ‘আলাদা আলাদা’ শিরোনামের একটা গান ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছে। সুতরাং এখন নতুন গান তৈরি হচ্ছে এবং ইন্ডাস্ট্রি ঠিক জায়গাতেই আছে।
বাংলাদেশের কোনো শিল্পীর গান শোনা হয় কি?
অবশ্যই শোনা হয়। কাকে রেখে কার কথা বলব। এটা আসলেই খুব সমস্যার প্রশ্ন। একজনের নাম বললে আরেকজন অখুশি হতে পারেন। যেমন মাইলসের গান আমার সংগীতশিল্পী হিসেবে তৈরি হওয়ার পেছনে অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে। আমি কৃতজ্ঞ অর্ণবের কাছে। আমাদের দারুণ সম্পর্ক। জেমস ভাইয়ের কথা বলতেই হবে। বাচ্চু ভাইয়ের (আইয়ুব বাচ্চু) কথা না বললেই নয়। আমার একেবারে শুরুর দিকে যখন প্রথমবার বাংলাদেশে আসি, তখন তিনি একজন সিনিয়র শিল্পী হিসেবে দারুণ সাপোর্ট দিয়েছেন আমাদের। পাশে থেকেছেন। এটা আমাদের জন্য অন্য রকম প্রাপ্তি। তার কথা খুব মনে পড়ে।