শরীফ নাসরুল্লাহ
‘হাউস অব দ্য ড্রাগন’ শুরু হলো আগস্টে। এর মধ্যে ছয়টি পর্ব শেষ। প্রথম মৌসুমের আরও চার পর্ব বাকি। ‘গেম অব থ্রোনস’-এর মতো সাড়া না ফেললেও আগ্রহ কম নেই দর্শকের। প্রথম পর্ব প্রচার করতে গিয়ে সার্ভার ক্র্যাশ হয়ে গিয়েছিল এইচবিও ম্যাক্স-এর। দ্বিতীয় মৌসুমের সবুজ সংকেত দিয়েছে এইচবিও। প্রকাশিত হতে পারে ২০২৩ কী ২০২৪ সালে। তিন থেকে চারটি মৌসুম হতে পারে। তার মানে আগামী গোটা কয়েক বছর থাকছে ‘হাউস অব দ্য ড্রাগন’ ঝড়। ড্রাগনভক্তদের একটু আঁটসাঁট হয়ে বসতেই হয়।
কী এই ‘হাউস অব দ্য ড্রাগন’
মার্কিন লেখক জর্জ আর আর মার্টিন বিভিন্ন রাজপরিবারের সিংহাসন কাড়াকাড়ির গল্প নিয়ে লিখেছেন সিরিজ উপন্যাস ‘আ সংস অব আইস অ্যান্ড ফায়ার’। সেই সিরিজে তিনি কাল্পনিক এক এলাকার বিভিন্ন রাজ্যের লড়াই নিয়ে একের পর এক উপন্যাস লিখে গেছেন।
মার্টিনের এই উপন্যাস নিয়ে এইচবিও শুরু করল টিভি সিরিজ। উপন্যাসের প্রথম পর্ব ‘আ গেম অব থ্রোনস’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৬ সালে। আর ২০১১ সালে একই নামে তৈরি হয় টিভি সিরিজ। উপন্যাসের জনপ্রিয়তা শুধু মার্কিন মুলুকে আটকে থাকলেও সিরিজ দিয়ে মার্টিনের এই রাজাদের লড়াই জনপ্রিয়তা পায় সারা বিশ্বে। ২০১১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত টানা ৮ বছর ‘গেম অব থ্রোনস’ তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় টিভি সিরিজের বেশির ভাগ রেকর্ড।
এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে এইচবিও মার্টিনের পুরো সিরিজগুলো নিয়ে পরিকল্পনা করে একটা ফ্রাঞ্চাইজি তৈরির। যার নাম দেয়া হয়েছে ‘গেম অব থ্রোনস’ রাজত্ব, বাংলায় যাকে বলা যায় ‘মুকুটের লড়াই’। এই ফ্রাঞ্চাইজির দ্বিতীয় পর্ব তৈরি হলো পাগলাটে এক রাজবংশ নিয়ে। যাদের মূল অস্ত্র ‘আগুনমুখো ড্রাগন’।
ততদিনে মাধ্যম হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ওটিটি। এইচবিও তাই এবার শুধু টিভিতে সীমাবদ্ধ রাখেনি। সিরিজটি নিয়ে এল তাদের ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এইচবিও ম্যাক্সে। এবার তারা গল্প বলতে লাগল ‘গেম অব থ্রোনস’-এর ২০০ বছর আগের টারগারিয়ান নামে এক রাজ পরিবারের রাজত্ব নিয়ে।
এটুকু সবার জানা যে, ‘হাউস অব দ্য ড্রাগন’ হলো ‘গেম অব থ্রোনস’-এর প্রিকুয়েল। টারগারিয়ান সাম্রাজ্যের পাগলামি, অযাচার আর উপকথা নিয়ে তৈরি এই সিরিজের কাহিনি। যেখানে ‘গেম অব থ্রোনস’-এ দেখা মেলে টারগারিয়ান পরিবারের ছোট ইতিহাস। কেবল ‘ড্রাগন মাদার’ ডায়েনিরিস টারগারিয়ানই বেঁচে থাকেন। তার বাবার সাম্রাজ্যকে শেষ পর্যন্ত নিজের করায়ত্ত করেন। কিন্তু তার মর্মান্তিক মৃত্যু হয় তারই প্রেমিক জন স্নোর হাতে। কিন্তু সাদা চুল আর আগুনমুখো ড্রাগনের অধিকারী এই টারগারিয়ান পরিবারের কী ছিল ইতিহাস? এ প্রশ্নের উত্তরই মিলছে ‘হাউস অব দ্য ড্রাগন’-এ।
টারগারিয়ান রাজপরিবারের যখন ক্ষমতার রমরমা চলছে, তখন তাদের একটাই উদ্দেশ্য ছিল, ‘খুন’ আর ‘দখল’। এই দখলদারির পেছনে মূল শক্তি হিসেবে কাজ করত ‘ড্রাগন’। তাদের পরিবারের স্লোগানই ছিল ‘আগুন ও রক্ত’। টারগারিয়ান পরিবার উঠে এসেছে ভ্যালিরিয়া থেকে। একে একে তারা দখল করে নেয় পুরো ওয়েস্টারাস ‘জর্জ আর আর মার্টিনের কাল্পনিক সাতরাজ্য’।
এই সিরিজ কি সত্য ঘটনা অবলম্বনে?
মুকুটের লড়াইয়ের এই কাহিনি মার্টিনের কল্পনা হলেও তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছেন সত্য ঘটনা দিয়ে। সান দিয়াগো কমি-কন ২০২২-এ এক সাক্ষাৎকারে মার্টিন বলেন, ‘আমি ইতিহাস থেকে অনুপ্রেরণা পাই। সেখান থেকে বিভিন্ন উপাদান নিই। তারপর সেগুলোকে আজকের মতো করে সাজাই।’ তাহলে কোন যুদ্ধ থেকে তিনি অনুপ্রাণিত? মার্কিন গণমাধ্যমগুলো ঘেঁটে জানা গেছে, ইংল্যান্ডের দুই হাউস ইয়র্ক ও ল্যাঙ্কেস্টারের মধ্যে চলা ‘দ্য ওয়ার অব দ্য রোজেজ’ দিয়ে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন মার্টিন। এমনকি ইয়র্ক-এর সূত্র ধরে ‘গেম অব থ্রোনস’-এর একটি হাউসের নাম দেয়া হয় স্টার্ক আর ল্যাঙ্কেস্টারের নামে ল্যানিস্টার।
শুধু একটি যুদ্ধই নয়, আরও নানা জায়গা থেকে উপাদান সংগ্রহ করে মার্টিন সাজিয়েছেন উপন্যাসগুলো। যেমন ‘গেম অব থ্রোনস’-এ রেড ওয়েডিং নামে বিয়ের অনুষ্ঠানে স্টার্ক পরিবারের সদস্যদের কচুকাটা করা হয়। মার্টিন এই ঘটনাটি নিয়েছেন ‘দ্য ম্যাসাকার অব গ্লেঙ্কো’ থেকে। স্কটল্যান্ডে ১৬৯২ সালে এই ঘটনা ঘটে।
‘হাউস অব ড্রাগন-এর গল্প একটা মাৎস্যন্যায় যুগের গল্প। অযাচার আর অনাচারে ভরা ছিল যে সময়। মার্টিন কোথা থেকে এর অনুপ্রেরণা পেয়েছেন? যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসভিত্তিক বিনোদন ওয়েবসাইট ‘কলিডর’ বলছে, ইংল্যান্ডে বারো শ শতাব্দীতে ঘটা গৃহযুদ্ধ থেকে এই গল্পের অনুপ্রেরণা নিয়েছেন। যেখানে কেন্দ্রে ছিলেন কিং হেনরি প্রথম ও তার মেয়ে মাতিলডা। ‘হাউস অব দ্য ড্রাগন’-এও কেন্দ্রীয় চরিত্রে দেখা গেছে রায়েনিরা টারগারিয়ান আর তার বাবা কিং ভাইসেরিস প্রথমকে।
টারগারিয়ান রাজপরিবার
কিং ভাইসেরিস প্রথম: ওয়েস্টেরসের বর্তমান রাজা।
রাজকুমারী রায়েনিরা: ভাইসেরিসের প্রথম স্ত্রীর মেয়ে। তার বাবা তাকে উত্তরসূরি করার পক্ষপাতী। কিন্তু আরও অনেক উত্তরসূরি ক্ষমতা নেয়ার প্রতিযোগিতার লড়াইয়ে।
রাজকুমার আয়েগন দ্বিতীয়: ভাইসেরিসের প্রথম ছেলে। রায়েনিরার সৎভাই। তিনিও উত্তরসূরি হওয়ার দৌড়ে আছেন।
রাজকুমার ডায়েমন: ভাইসেরিসের ভাই, রায়েনিরার চাচা। ডায়েমনকে বলা হয়েছে টিপিক্যাল ‘হ্যামলেট’ হিসেবে। যে সব সময়ই রাজকুমার থাকে, কিন্তু কখনো রাজা হতে পারে না।
অ্যালিসেন্ট হাইটাওয়ার: ভাইসেরিসের দ্বিতীয় স্ত্রী ও রায়েনিরার সৎমা। তিনি আয়েগন দ্বিতীয়র মা।
এ ছাড়া অনেক টারগারিয়ান আছেন এবং টারগারিয়ান পরিবারসংশ্লিষ্ট লোক আছেন, যারা এই বিশাল কাল্পনিক জগতের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।
ড্রাগন পরিচিতি
ড্রাগন: সাইরাক্স (হলুদ ড্রাগন), বাহক: রাজকুমারী রায়েনিরা
ক্যারাক্সেস (লাল ড্রাগন), ডায়েমন টারগারিয়ান
মেলেয়িস (পিংক ড্রাগন), রায়েনিস টারগারিয়ান
ভাগর (ব্রোঞ্জ ড্রাগন), আয়েমন্ড টারগারিয়ান
সিসমোক (সিলভার ড্রাগন), লায়েনর ভেলারিয়ন
সানফির (সোনালি ড্রাগন), আয়েগন দ্বিতীয়
ড্রিমফির (সিলভার-ব্লু ড্রাগন), হিলায়েনা
ভারম্যাক্স (ছোট ড্রাগন), জ্যাকায়েরিস
অ্যারাক্স (ছোট সাদা ড্রাগন), লুকেরিস
টাইরাক্সেস (ছোট ড্রাগন), জফরি
মর্নিং (পিংক ড্রাগন), রায়েনা টারগারিয়ান
মুনড্যান্সার (সবুজ ড্রাগন), বায়েলা টারগারিয়ান
গুলিয়ে যায় যেন!
‘হাউস অব দ্য ড্রাগন’-এ বেশি কিছু নাম শোনা যায়, যা মনে হতে পারে একই রকম! এগুলো হলো আয়েগন, আয়েগর, আয়েমন, আয়েমন্ড, আয়েনিস, রায়েনিস, রায়েনা, রায়েলা, রায়েগার, রায়েগাল ইত্যাদি।
টারগারিয়ান পরিবার মানেই পাগলাটে মানুষ আর ড্রাগনের গল্প। সিরিজটির সপ্তম পর্ব দেখা যাবে আগামী ২ অক্টোবর। প্রথম মৌসুম শেষ হবে ২৩ অক্টোবর। এরপরই অপেক্ষা দ্বিতীয় মৌসুমের।