কর সংক্রান্ত সেবা পেতে ঘুষ দিতে হয় বলে মনে করেন ৫৭ শতাংশের বেশি ব্যবসায়ী। যদিও গত বছর এ অভিযোগ ছিল ৪৭ দশমিক ৮ শতাংশ ব্যবসায়ীর। দেশে বছরের ব্যবধানে ব্যবসা পরিচালনায় ঘুষের কারবার আরও বেড়েছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) পরিচালিত এক্সিকিউটিভ ওপেনিয়ন সার্ভে- ইওএস প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
জরিপে তথ্য সংগ্রহ করা হয় গত এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে। এতে সেবা খাত, শিল্প ও কৃষি খাতের দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীরা তাদের মতামত দেন। ব্যবসা পরিচালনায় দুর্নীতি, আমলাদের অদক্ষতা, বিদেশি মুদ্রার বিনিময় হারের অস্থিতিশীলতা, মূল্যস্ফীতিসহ ১৭ ধরনের সমস্যার কথা তুলে ধরেন জরিপে অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীরা। ‘বাংলাদেশের ব্যবসা পরিবেশ এবং প্রক্রিয়া : অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য অ্যাজেন্ডা’ শিরোনামের এক সংলাপে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
রোববার রাজধানীর হোটেল ব্র্যাক ইনে এ আয়োজনে সরকারের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী নেতা ও দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা উপস্থিত ছিলেন। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন সংলাপ পরিচালনা করেন।
জরিপ পরিচালনতায় নেতৃত্ব দেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। প্রতিবেদনের বিস্তারিত তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ঘুষের প্রকৃত চিত্র হয়তো প্রতিবেদনে উঠে আসা তথ্যের চেয়ে বেশি। গত ৮ আগস্ট গঠিত অর্ন্তবর্তী সরকার সংস্কার এজেন্ডা নিয়েছে। গত সরকারের সময় ব্যবসা পরিবেশে লক্ষণীয় উন্নতি হয়নি। একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর হাতে ব্যবসা-বাণিজ্য কুক্ষিগত ছিল। বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা ছিল।’
তিনি জানান, ব্যবসা পরিচালনায় দুর্নীতি, আমলাদের অদক্ষতা, বিদেশি মুদ্রার বিনিময় হারের অস্থিতিশীলতা, মূল্যস্ফীতিসহ ১৭ ধরনের সমস্যার কথা তুলে ধরেন জরিপে অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীরা।
সিঙ্গাপুর থেকে ৫০ হাজার টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। প্রতি কেজি চালের দাম পড়বে ৫০ টাকা ৮১ পয়সা। আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এ চাল ক্রয়ে মোট ব্যয় হবে ২৫৪ কোটি ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক সূত্র জানা গেছে, চাল আমদানির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে খাদ্য অধিদপ্তর থেকে চাল ক্রয়ের জন্য গত ১২ মার্চ আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে মোট ১২ সরবরাহকারী দরপত্র দলিল সংগ্রহ করলেও ৫টি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেয়।
এর মধ্যে সিঙ্গাপুরভিত্তিক মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড প্রতি টন চালের দাম ৪১৬.৪৪ ডলার উল্লেখ করায় দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির নাম সুপারিশ করে, যা উৎস দেশগুলোর গড় দর (৪৪৪.৯১ ডলার) অপেক্ষা ২৮.৪৭ ডলার কম।
এছাড়া মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেডের দেওয়া দর বাংলাদেশের বন্দর পর্যন্ত প্রতি টন ৪১৬.৪৪ ডলার, যা বাজার দর যাচাই কমিটির প্রাক্কলিত দরের চেয়ে কম। এ কারণে এই দর গ্রহণের জন্য দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সুপারিশ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হয়। কমিটির সদস্যরা প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে অনুমোদন দিয়েছে।
প্রতি টন ৪১৬.৪৪ ডলার হিসেবে ৫০ হাজার টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল ক্রয়ের জন্য প্রয়োজন হবে ২ কোটি ৮ লাখ ২২ হাজার ডলার। অর্থাৎ গত ২৭ মার্চ তারিখে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ডলারের বিনিময় হার প্রতি ডলার ১২২ টাকা (সম্ভাব্য) হিসেবে ২৫৪ কোটি ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকার প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে প্রতি কেজির দাম পড়বে ৫০ টাকা ৮১ পয়সা।
সূত্রটি জানিয়েছে, মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের জন্য ৬০:৪০ অনুপাতে কস্ট ইন্সুরেন্স ফ্রেইট-লাইনার আউট (সিআইএফ-এলও) টার্মে (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সিডি ভ্যাট ব্যতীত) প্রতি টন ৪১৬.৪৪ ডলার হিসেবে ২ কোটি ৮ লাখ ২২ হাজার ডলারে এই ৫০ হাজার টন (৫%) নন বাসমতি সিদ্ধ চাল কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে আন্তর্জাতিক উৎস হতে ৯ লাখ টন চাল আমদানির জন্য অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৪ লাখ ৫০ হাজার টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল এবং জি টু জি পদ্ধতিতে মিয়ানমার থেকে ১ লাখ টন, পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার টন ও ভিয়েতনাম থেকে ১ লাখ টন আতপ চালসহ মোট ৭ লাখ টন চাল ক্রয়ের চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ফ্যামিলি কার্ডধারীদের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রির জন্য পৃথক দুটি দরপত্রের মাধ্যমে ১০ হাজার টন মসুর ডাল ও এক কোটি ২০ লাখ লিটার ভোজ্য তেল ক্রয় করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ-সংক্রান্ত দুটি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ২৮০ কোটি ১৪ লাখ ২০ হাজার টাকা।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১০ হাজার টন মসুর ডাল (৫০ কেজির বস্তায়) কেনার অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
সূত্র জানায়, টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী এক কোটি পরিবারের নিকট ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনার জন্য স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৪টি দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। তার মধ্যে ৩টি দরপ্রস্তাব কারিগরিভাবে ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়।
দর প্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশে রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান শেখ অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিকে এই মসুর ডাল কেনার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। প্রতি কেজি ৯২.৭৫ টাকা হিসেবে ১০ হাজার টন মসুর ডাল ক্রয়ে ব্যয় হবে ৯২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মসুর ডাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৮৮ হাজার টন। এ পর্যন্ত ক্রয় চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৯৫০ টন।
সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অপর এক প্রস্তাবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
জানা গেছে, টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের নিকট ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে ২ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ১ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল সরবরাহের জন্য মাত্র ১টি দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। দরপ্রস্তাবটি আর্থিক ও কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়।
দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশে রেসপনসিভ একমাত্র দরদাতা প্রতিষ্ঠান থাইল্যান্ডের লাইফ অ্যান্ড হেলথ থেকে এই ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রতি লিটার ১৫৬.১৬ টাকা হিসেবে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ে ব্যয় হবে ১৮৭ কোটি ৩৯ লাখ ২০ হাজার টাকা।
জানা গেছে, দরপত্রে ২ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল সরবরাহে জন্য চাহিদা থাকলেও প্রতিষ্ঠান ১ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল সরবরাহের আগ্রহ প্রকাশ করে। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ভোজ্য তেল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২৮ কোটি লিটার। এ পর্যন্ত ক্রয় করা হয়েছে ১৫ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার লিটার।
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বিনিয়োগকারীদের প্রতিষ্ঠান ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের একটি প্রতিনিধিদল গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
এসময় তারা একটি ক্রমবর্ধমান বাংলাদেশ-মার্কিন অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিতে এবং দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক লাভজনক বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং এক্সেলারেট এনার্জির কৌশলগত উপদেষ্টা পিটার হাস। প্রতিনিধিদলে আরো ছিলেন মেটা, ভিসা, শেভরন, উবার, মেটলাইফ, মাস্টারকার্ড, বোয়িং এবং ইউএস সোয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিলের প্রতিনিধিরা। এক্সেলারেট এনার্জি ইউ.এস চেম্বার অব কমার্সের ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা হয়। মার্কিন কোম্পানিগুলো একটি ইতিবাচক এবং গঠনমূলক সম্পর্কের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে, যা একটি শক্তিশালী বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে উৎসাহিত করবে।
পিটার হাস বলেন, ‘মার্কিন কোম্পানিগুলোর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির পেছনে দীর্ঘমেয়াদী অঙ্গীকার রয়েছে-যেটি স্থিতিস্থাপকতা, উদ্যোক্তা মনোভাব এবং দীর্ঘমেয়াদী সমৃদ্ধির ওপর ভিত্তি করে।’
প্রতিনিধিদল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থনৈতিক সংস্কারের অবস্থানকে স্বাগত জানায়, যা বাণিজ্য ও অ-শুল্ক বাধা নিরসনে সহায়ক হবে।
নিশা দেশাই বিসওয়াল, যিনি আগে ডিএফসির ডেপুটি সিইও এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তিনি বাংলাদেশের মার্কিন বিনিয়োগকারীদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। প্রতিনিধিদল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করার প্রস্তাব দেয়, যাতে করে বাংলাদেশ বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা দূর করতে এবং আরো মার্কিন বিনিয়োগ আকর্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।
চলমান শুল্ক আলোচনা প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমেরিকান কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির কেন্দ্রে রয়েছে। আমরা চাই বাংলাদেশ যেন এই আলোচনাগুলোতে নিজেকে কার্যকরভাবে উপস্থাপন করতে পারে’।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের উন্নয়নে মার্কিন কোম্পানিগুলোর অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান এবং ব্যবসা পরিচালনার সুবিধা সম্প্রসারণে সব ধরনের সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন।
ব্রিকস জোটের উদ্যোগে গঠিত নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) বাংলাদেশে আরও এক বিলিয়ন ডলার (প্রায় ১২ হাজার ২০০ কোটি টাকা) বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে বলে দাবি করেছেন বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, সংস্থাটি বাংলাদেশে ৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। সামনে আরও বড় বিনিয়োগ করবে। বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ প্রসঙ্গে বিডার চেয়ারম্যান জানান, তারা মূলত দুটি বিষয়ে জানতে চাচ্ছেন- বাংলাদেশে ব্যবসা করলে কী ধরনের সুবিধা পাওয়া যাবে এবং বর্তমানে ব্যবসায়ীরা যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন, সেগুলোর সমাধানে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, এবারের সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য সরাসরি বিনিয়োগ আনা নয়, বরং নেটওয়ার্কিংকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচক এখন অপ্রাসঙ্গিক। পৃথিবীর কোথাও শতভাগ সমস্যামুক্ত বাজার নেই। তবে বাংলাদেশে যেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলোর সমাধানে এক থেকে দুই বছরের মধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পালটা শুল্কের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, বৈশ্বিক সমস্যা। প্রধান উপদেষ্টা এরই মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছেন, যা আমরা প্রকাশ করেছি।’
এক চীনা কোম্পানি সাড়ে তিন বছর ঘুরেও লাইসেন্স না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, ‘এমন একটি ঘটনা আমরা শুনেছি। তবে প্রতিষ্ঠানটির নাম ও বিস্তারিত কারণ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জানানো হবে।’
তিনি আরও জানান, এনডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে এসে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং বাংলাদেশের প্রতি তাদের ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানিয়েছেন। সংস্থাটি বর্তমানে ওয়াসার সঙ্গে একটি প্রকল্পে কাজ করছে এবং ভবিষ্যতে বেসরকারি খাতেও ফান্ড দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
সোমবার শুরু হওয়া এই সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ ৪০টি দেশের বিনিয়োগকারীরা অংশ নিয়েছেন। এতে শীর্ষস্থানীয় করপোরেট ব্যক্তিত্বসহ অসংখ্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে।
টানা তিন প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধির ধীরগতির পর অবশেষে কিছুটা গতি ফিরে এসেছে দেশের অর্থনীতিতে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক অর্থাৎ অক্টোবর-ডিসেম্বর মেয়াদে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
এর আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে শ্লথগতির কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ব্যাপকভাবে ভাটা লক্ষ করা গেছে। ওই সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৮১ শতাংশে নেমেছিল। পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় টানা তিন প্রান্তিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার পর গত অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে তা আবার বাড়ল।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) চলতি অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর এই তিন মাসের জিডিপির চিত্র প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, গত জানুয়ারি থেকে টানা তিন প্রান্তিক ধরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে কমেছে। তবে বছরের শেষ প্রান্তিকে তা বেড়েছে।
কৃষি, শিল্প ও সেবা এই তিন খাত দিয়ে জিডিপি প্রকাশ করা হয়। অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি হয়েছে কৃষি খাতে। এই খাতের প্রবৃদ্ধি মাত্র ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। এরপর সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং শিল্প খাতে ৭ দশমিক ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
বিবিএসের তথ্য অনুসারে, অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে দেশের ভেতরে স্থির মূল্যে ৮ লাখ ৮৬ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকার মূল্য সংযোজন হয়। আগের প্রান্তিকে ৮ লাখ ৪ হাজার ৯৪২ কোটি টাকার মূল্য সংযোজন হয়। এর মানে, অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে আগের প্রান্তিকের চেয়ে ৮২ হাজার কোটি টাকার বেশি মূল্য সংযোজন হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনীতি স্থিতিশীল হওয়া এবং কিছু খাতে কার্যক্রম বাড়ায় অর্থনীতির চাকা কিছুটা সচল হয়েছে। তবে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য কৃষি ও সেবা খাতে আরও কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।
মার্চে বেড়েছে মূল্যস্ফীতি
এদিকে গতকাল একই দিনে সদ্য সমাপ্ত মার্চ মাসের মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ চিত্র প্রকাশ করেছে বিবিএস। এতে দেখা গেছে, মার্চে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়ে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই সময় দেশে খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার কমলেও বেড়েছে খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি। খাদ্যে মূল্যস্ফীতি এখন ৯ থেকে ৮ শতাংশের ঘরে নেমেছে।
গত মার্চে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ হওয়ার মানে হলো, ২০২৪ সালের মার্চে যদি বিভিন্ন ধরনের পণ্য ও সেবা কিনে আপনার সংসারের খরচ চালাতে ১০০ টাকা খরচ হয়, তাহলে এ বছরের মার্চে একই পণ্য ও সেবা কিনে সংসার চালাতে খরচ লাগল ১০৯ টাকা ৩৫ পয়সা। প্রতি ১০০ টাকায় খরচ বেড়েছে ৯ টাকা ৩৫ পয়সা।
বিবিএসের তথ্য-উপাত্তে দেখা যাচ্ছে, মার্চে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। ফেব্রুয়ারিতে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ; মার্চে যা কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশে। ফেব্রুয়ারিতে দেশে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ; মার্চে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ।
কোথায় কত মূল্যস্ফীতি
মার্চে দেশে গ্রামাঞ্চলের মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। মার্চে গ্রামাঞ্চলে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ; ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ। গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের মার্চে যা ছিল শতকরা ৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ। মার্চে গ্রামাঞ্চলের খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি ছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৮১ ও ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল যথাক্রমে ৯ দশমিক ১৫ ও ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ২০২৪ সালের মার্চে যা ছিল যথাক্রমে ৯ দশমিক ৮৬ ও ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ।
মার্চে শহরাঞ্চলের মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ; ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ২০২৪ সালের মার্চে যা ছিল ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। মার্চে শহরাঞ্চলের খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে যথাক্রমে ৯ দশমিক ১৮ ও ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ৯ দশমিক ৪৭ ও ৯ দশমিক ২৭ শতাংশ। ২০২৪ সালের মার্চে যা ছিল যথাক্রমে ৯ দশমিক ৯৮ ও ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ।
মজুরি বৃদ্ধির হার কম
মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না মজুরি। বিবিএসের হিসাবে, গত মার্চে জাতীয় মজুরি হার হয় ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। এর মানে হলো, মজুরি যত বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি বেড়েছে জিনিসপত্রের দাম। গত ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে জাতীয় মজুরি হার কিছুটা বেড়েছে।
মজুরিনির্ভর বিশাল জনগোষ্ঠীর ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি পড়ে। গ্রাম-শহর নির্বিশেষে ১৪৫টি নিম্ন দক্ষতার পেশার মজুরির ওপর এই হিসাব করে থাকে বিবিএস। বিবিএস বলছে, দেশের প্রায় ৮৬ শতাংশ মানুষ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। এমন কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা ৬ কোটির মতো।
ধীরে ধীরে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি ফু-ওয়াং ফুড লিমিটেড। একসময়ের ভালো ব্যবসা ও মুনাফা করা কোম্পানিটি এখন ধুঁকে ধুঁকে চলছে। টানা সাড়ে ৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে কোম্পানিটি লোকসানে রয়েছে। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন সময় বিনিয়োগকারীদের প্রলোভন দেখিয়ে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়িয়ে নেওয়া হয়। এতে কোটি কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন অনেক বিনিয়োগকারী। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মিয়া মামুনের বিরুদ্ধে রয়েছে অসংখ প্রতারণার অভিযোগ। এমন পরিস্থিতির মধ্যে কোম্পানির সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার কথা জানিয়েছেন নিরীক্ষক।
নিরীক্ষক জানিয়েছেন, ফু-ওয়াং ফুডের আর্থিক হিসাবে ৫৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকার স্থায়ী সম্পদ দেখানো হয়েছে। তবে ওই সম্পদের রেজিস্টার না থাকায়, সত্যতা যাচাই করা যায়নি। এছাড়া হিসাব মান অনুযায়ী, প্রতি ৩ থেকে ৫ বছর অন্তর সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন করা দরকার পড়লেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ২০১৫ সালের পরে আর করেনি। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আর্থিক হিসাবে ৯ কোটি ১৩ লাখ টাকার মজুদ পণ্য দেখিয়েছে। তবে কারখানা সরেজমিনে পরিদর্শনে অসঙ্গতি পেয়েছেন নিরীক্ষক। বিশেষ করে ৩৪০ আইটেমের মধ্যে ১০৪টি আইটেমের কাঁচামাল, বিক্রিযোগ্য পণ্য ও প্যাকিং জিনিসের ক্ষেত্রে অসঙ্গতি পাওয়া গেছে।
কাঁচামাল ক্রয়ের জন্য অগ্রিম ৩ কোটি ২১ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে বলে আর্থিক হিসাবে উল্লেখ করেছে ফু-ওয়াং ফুডস কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা পূর্বের বছরের। এ অর্থের বিষয়ে কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট সঠিক জবাব দিতে পারেনি নিরীক্ষককে। এমনকি কাঁচামাল সরবরাহকারীদের তালিকা নেই। যাতে ওই অগ্রিম অর্থের বিষয়টি অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক।
নিরীক্ষক জানিয়েছেন, এই কোম্পানিটির ১০৭ কোটি ২২ লাখ টাকার ঋণাত্মক সংরক্ষিত মুনাফা (রিটেইন আর্নিংস) রয়েছে। এর মধ্যে ৯৯ লাখ টাকার লোকসান ইনকাম স্টেটমেন্টের পরিবর্তে রিটেইন আর্নিংসে সমন্বয় করা হয়েছিল। এই লোকসান যদি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ইনকাম স্টেটমেন্টে দেখানো হতো, তাহলে আলোচ্য বছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান কম হতো ৯ পয়সা, যা না করে ইপিএস বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে।
আর্থিক হিসাবে কাঁচামাল সরবরাহকারীরা কোম্পানির কাছে ১৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা পাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে নিরীক্ষক এ বিষয়ে সত্যতা যাচাইয়ে পাওনাদারদের চিঠি দিলেও ২৭ জনের মধ্যে ১১ জনের পাওনার বিষয়ে সত্যতা পেয়েছে। আর কোম্পানির হিসাবের সঙ্গে ২ কোটি ১৯ লাখ টাকার অসঙ্গতি পেয়েছে।
এদিকে আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কোম্পানিটি ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে টানা লোকসানে রয়েছে। ওই বছরে কোম্পানির কর পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছিল ২৫ কোটি সাড়ে ৭ লাখ টাকা। পরের বছরে কোম্পানির লোকসান হয় ৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। আর সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কোম্পানিটির নিট লোকসান হয়েছে ৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আর চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) কোম্পানির এরই মধ্যে নিট লোকসান হয়েছে ২ কোটি ২২ লাখ টাকা।
২০০০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ফু-ওয়াং ফুডের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১১০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এরমধ্যে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন শ্রেণির (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতীত) বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ৯২ দশমিক ১৫ শতাংশ। অর্থাৎ কোম্পানিটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
আগামী ৯ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কার্যকর হবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আদেশ। তবে অতিরিক্ত শুল্ক কার্যকরের পর বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা ঠিক কী পরিমাণ শুল্ক আরোপের মুখোমুখি হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা এখনো জানেন না, নতুন শুল্ক হার বর্তমান শুল্কের সঙ্গে যোগ করা হবে নাকি প্রতিস্থাপন করা হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। তবে ওই আদেশে পণ্যভিত্তিক শুল্ক হারের তালিকা বা কাস্টমস গাইডেন্স দেওয়া হয়নি। এতে বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি খাতে এক ধরনের বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান শুল্কের বাইরে যদি ৩৭ শতাংশ শুল্ক যোগ করা হয়, তাহলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, বাংলাদেশের পোশাকের ওপর কার্যকর শুল্ক বর্তমান গড় ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪৮ দশমিক ৫৬ শতাংশে দাঁড়াবে। অর্থাৎ ঢাকা থেকে ১০০ ডলারের টি-শার্ট বা জিন্সের চালানে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরে আমদানি শুল্ক বাবদ প্রায় ৪৯ ডলার দিতে হবে, যা বর্তমানে মাত্র ১১ দশমিক ৫৬ ডলার।
দেশের অন্যতম বৃহৎ ডেনিম রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এম তানভীর বলেন, “আমরা সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। কারণ ট্রাম্পের আদেশে পরিষ্কারভাবে এটিকে ‘অতিরিক্ত’ শুল্ক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ৯ এপ্রিলের আগে আমরা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারব না।”
হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই আদেশের দ্বারা নির্ধারিত শুল্কের হারগুলো প্রযোজ্য অন্য কোনো শুল্ক, ফি, কর বা চার্জের অতিরিক্ত। তবে তারা দেশ বা পণ্য অনুসারে আর কিছু জানায়নি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখনো পরিষ্কার নই। এটি ৩৭ শতাংশ হতে পারে, কিংবা যদি বর্তমান মোস্ট ফেভারড নেশন (এমএফএন) হারের সঙ্গে যোগ করা হয় তাহলে ৫২ শতাংশেরও বেশি হতে পারে, যা বাংলাদেশের জন্য ইতোমধ্যে অনেক পণ্যে ১৫ শতাংশের ওপরে আছে।’
অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির জানান, তার প্রতিষ্ঠান এখনো ক্রেতাদের কাছ থেকে হালনাগাদ ট্যারিফের তথ্য পায়নি।
‘তবে বিভিন্ন সূত্র পরামর্শ দিয়েছে, বর্তমান হারকে প্রতিস্থাপন করে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হতে পারে, অথবা বর্তমান হারের সঙ্গে যোগ হতে পারে।’
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির প্রশাসক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি পোশাক ব্র্যান্ড ইতোমধ্যে জানিয়েছে, বাংলাদেশে নতুন শুল্ক ৪৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ হতে পারে।’
‘সেই ধারণার ওপর ভিত্তি করেই আমরা কৌশল প্রণয়ন করছি। আর নির্বাহী আদেশে স্পষ্টভাবে এটাকে বাড়তি শুল্ক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে,’ বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, শুল্ক সমন্বয় হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হলেও এর মূলে আছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমাগত বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে বৃহত্তর উদ্বেগ।
তার ভাষ্য, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি বাণিজ্য অর্থনীতি, যা আমদানির ওপর নির্ভর করে। এই পদক্ষেপ শুধু শুল্কের জন্য নয়, বরং তারা বাণিজ্য প্রবাহকে ওয়াশিংটনের অনুকূলে নিতে চায়।’
যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতিটি অন্যান্য শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশের ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে অনুমান করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বৈশ্বিক সোর্সিং কীভাবে পরিবর্তিত হতে পারে তার একটি ধারণা দিয়েছেন।
চীনের পোশাকের শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছাতে পারে, যেখানে ভিয়েতনামের শুল্ক ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে। ভারতের ৩৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ৪৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ, কম্বোডিয়ায় ৬০ দশমিক ৭ শতাংশ ও পাকিস্তানের ৪১ দশমিক ৪৬ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি বাজারের ৯ শতাংশ বাংলাদেশের দখলে। এ ছাড়া বাংলাদেশের মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় ২৪ শতাংশই হয় যুক্তরাষ্ট্রে।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একক বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য। ২০২৪ সালে দেশটিতে ৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এতে চীন ও ভিয়েতনামের পরে তৃতীয় পোশাক সরবরাহকারী দেশ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। এ খাতে ৪০ লাখেরও বেশি শ্রমিক কাজ করেন এবং বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশেরও বেশি তৈরি পোশাক।
রপ্তানিকারক এবং নীতিনির্ধারকরা একমত যে, এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার এখনই সময়।
অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির বলেন, ‘আমাদের উৎপাদন সক্ষমতা ও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মতো অবস্থান রয়েছে। কিন্তু অন্য দেশগুলো যদি শুল্ক হার কমিয়ে দেয়, তাহলে আমরা দ্রুত বাজার হারাব।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং রপ্তানিকারকরা অবিলম্বে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্যাসিফিক জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এম তানভীর বলেন, ‘অন্যান্য দেশ এরই মধ্যে আলোচনা শুরু করেছে। আমাদেরও একই কাজ করতে হবে এবং তা দ্রুত করতে হবে। এখনো একটি কার্যকর ফলাফল খুঁজে বের করার সুযোগ আছে।’
রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সফররত প্রতিনিধিদল।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে রোববার (৬ এপ্রিল) বৈঠক করে আইএমএফের প্রতিনিধিদল। বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। সচিবালয়ের অর্থ উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই বৈঠক হয়। আইএমএফের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন মিশন প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কাঙ্ক্ষিত হারে রাজস্ব আদায় না হওয়া প্রসঙ্গে আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশে কর জাল অনেক কম। এখানে লাখ লাখ শূন্য রিটার্ন দিয়ে থাকে। ভ্যাটের একক হার দেখতে চায় আইএমএফ। কিন্তু আমরা একেবারে একক ভ্যাট হারে যেতে পারব না।’
ঋণখেলাপি ও ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, খারাপ ঋণ কীভাবে কমাব, আইন সংশোধন- এসব নিয়ে কথা বলেছে আইএমএফ। তিনি বলেন, ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জুন মাসে দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের জন্য এই মিশন অর্থনীতির বিভিন্ন পর্যালোচনা করবে। মে-জুন মাসে তারা বাংলাদেশের অর্থনীতি পর্যালোচনা প্রতিবেদন নিয়ে বৈঠক করে ঋণের দুই কিস্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, শুল্ক-কর নিয়ে আইএমএফ জানতে চেয়েছে, কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াব কীভাবে? কর আদায় বাড়াব কীভাবে? এ ছাড়া করনীতি ও কর আদায়—এ দুটি বিভাগ আলাদা করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। সার্বিকভাবে বাজেট ঘাটতি কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, সেই বিষয়েও আইএমএফ জানতে চেয়েছে।
সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ে এবারের মিশন রাজস্ব পরিস্থিতি, কর-জিডিপি অনুপাত, বিদেশি মুদ্রার মজুত, বাজেট ঘাটতি—এসব বিষয় পর্যালোচনা করবে। সংস্কারের বিষয়ে বাংলাদেশ ভালো মনোভাব দেখিয়েছে বলে অর্থ উপদেষ্টা জানান।
বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সন্তোষ প্রকাশ করেছে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ওদের (আইএমএফ) মূল ফোকাস ট্যাক্স জিডিপি রেশিও বাড়ানো, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আর একটু স্থিতিশীল করা, বাজেটে ঘাটতি কমানো।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা ভ্যাটের হার সিঙ্গেল রেটে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছি। তবে ভ্যাট একবারে সিঙ্গেল রেটে নামিয়ে আনা সম্ভব নয়।
ভ্যাট সিঙ্গেল রেটে নামিয়ে আনার বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কী? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সিঙ্গেল রেটের বিষয়ে আমরা চেষ্টা করবো। তবে আমরা একবারে সিঙ্গেল রেটে পৌঁছাতে পারবো না।
আইএমএফ ঋণের কিস্তির বিষয়ে তিনি বলেন, দুই কিস্তির অর্থ একবারে দেবে। ওরা এখন রিভিউ করবে। আমরা ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও বাড়াবো কীভাবে, মাত্র ৭ শতাংশ আছে। তারপর আমাদের ট্যাক্স কালেকশন কীভাবে করবো। ট্যাক্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশন লিকেজ যেন না হয়।
বেসিকলি আইএমএফের কনসার্ন হলো রেভিনিউ জেনারেশন, আমাদের বাজেট সাইজ কত হবে, ডেফিসিট (ঘাটতি) কত হবে, এগুলো নিয়ে আপাতত কথা হয়েছে। আমার সঙ্গে ডিটেইল কথা হয়নি, এনবিআরের সঙ্গে কথা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা হবে লোন রেজুলেশন নিয়ে, বলেন অর্থ উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, সার্বিকভাবে ব্যাংকখাতের শৃঙ্খলা, খেলাপির ঋণ আদায়, এনবিআরের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও বাড়াবো কীভাবে, কোন কোন ক্ষেত্রে বাড়াবো এগুলো নিয়ে আমার সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। সবার সঙ্গে ওরা ইন্ডিভিজুয়ালি বসবে। তারপর আপনারা কয়দিন পরে জানতে পারবেন।
আইএমএফ ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ পাওয়ার বিষয়ে এর আগে আপনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। এখন আপনাদের অবস্থান কী? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা আশাবাদী। ওরা বলেছে দেখব। ওরা যাওয়ার পর ১৯ এপ্রিল আমি যাবো। তারপর মে-জুনের দিকে বৈঠক হবে। এই রিভিউয়ের ওপরই তাদের সুপারিশ।
চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ঋণের ক্ষেত্রে উনাদের মূল ফোকাস কী? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ট্যাক্স জিডিপি রেশিও বাড়ানো, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আর একটু স্থিতিশীল করা, তারপর বাজেটে ঘাটতি কমানো এগুলো মেইন ফোকাস।
বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে ওরা কী বলেছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ওরা বলেছে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন মোটামুটি স্থিতিশীল, গতিশীল, সঠিক পথে আছে। কিন্তু রিভিউ করার পর আর একটু দেখবে। ওরা বলেছে ওরা সন্তুষ্ট বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন স্থিতিশীল। তবে ওরা ডিটেইল জিনিসগুলো দেখবে।
কোন বিষয়গুলোতে কম্প্রোমাইজ করতে হবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি সোজাসুজি বলেছি আমাদের পক্ষ থেকে যা যা করার দরকার আমরা করতে চেষ্টা করছি। অলরেডি আমাদের গুড ইনটেনশন দেখিয়েছি। ওদের দিক থেকে ওদের গুড ইনটেনশন দেখাক। দেন উই এনগেজ। আমরা আলাপ করবো। হোপ এগ্রি।
ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কী? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলবো।
রাজস্ব খাতে কী করতে হবে, ওরা কী চায়? এমন প্রশ্নের উত্তরে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। আমাদের জিডিপি নেপালের চেয়ে অনেক বড়, ওরা বলে নেপালের থেকে তোমাদের অনেক কম। ওদের (নেপাল) ১২-১৩ শতাংশ। ভারতে প্রায় ১৭-১৮ শতাংশ।
ওরা বলছে, তোমাদের এটা (ট্যাক্স জিডিপি রেশিও কম) হওয়ার কারণ হয় নেট (আওতা) কম। লাখ লাখ লোক আছে যারা জিরো ট্যাক্সে রিটার্ন দেয়, তাদের আয় আছে কিন্তু তারা রিটার্ন দেয় না, বলেন অর্থ উপদেষ্টা।
দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫.৬২ বিলিয়ন ডলারে। গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান এ তথ্য জানিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, চলতি মাসের ৬ তারিখ পর্যন্ত দেশের গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ২৫৬২৫.৩৮ মিলিয়ন বা ২ হাজার ৫৬২ কোটি ৫৩ লাখ ৮০ হাজার ডলার। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ এখন ২০৪৬০.৫২ মিলিয়ন বা ২ হাজার ৪৬ কোটি ৫ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার।
এর আগে মার্চ মাসের ২৭ তারিখ কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছিল, সেদিন পর্যন্ত দেশের গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ২৫৪৪০.৮৮ মিলিয়ন বা ২ হাজার ৫৪৪ কোটি ৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ এখন ২০২৯৬.৯৩ মিলিয়ন বা ২ হাজার ২৯ কোটি ৬৯ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার।
এদিকে গত মার্চ মাসে দেশে এসেছে ৩২৯ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। যা দেশের ইতিহাসে কোনে এক মাসে সর্বোচ্চ।
সব রেকর্ড ভেঙে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এক মাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে বিগত মার্চে। এই মাসের ৩১ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ৩২৯ কোটি বা ৩.২৯ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি। সে হিসেবে প্রতিদিন প্রায় ১১ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। ইতোপূর্বে এত রেমিট্যান্সপ্রবাহ আর কখনো দেখা যায়নি। গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ৩ বিলিয়ন (৩০০ কোটি) ডলারেরও বেশি। গত ডিসেম্বরে দেশে ২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আসে।
ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে প্রবাসীরা এবার প্রচুর পরিমাণে অর্থ বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে পাঠিয়েছেন। শুধু ২৭-৩১ মার্চ এ সময়ের মধ্যেই রেমিট্যান্স এসেছে ৩৪৫ মিলিয়ন ডলার। বৈধ চ্যানেলে অর্থ প্রেরণের কারণেই এবার রেমিট্যান্সে ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় এ বছর মার্চে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বেড়েছে ৬৪.৭০ শতাংশ। ২০২৪ সালের মার্চে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ১.৯৯ বিলিয়ন ডলার।
মার্চের আগে চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছিল ২.৬৪ বিলিয়ন ডলার, যা এতদিন ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সর্বোচ্চ ২.৬৪ বিলিয়ন রেমিট্যান্স এসেছিল। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, আগস্টে এসেছিল ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, নভেম্বর মাসে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরপরই বেড়ে যায় রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের গতি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দেশ থেকে অর্থপাচার কমেছে। একই সঙ্গে কমেছে হুন্ডি কারবারির দৌরাত্ম্যও। অন্যদিকে খোলা বাজারের মতোই ব্যাংকে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম পাওয়া যাচ্ছে। এসব কারণে প্রবাসীরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাছাড়া আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে আরও বেশি বেড়েছে রেমিট্যান্স আসার গতি।
২০২০ সালে করোনাকালে জুলাই মাসে ২ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এবার সেই রেকর্ড ভাঙে ২০২৪ সালের বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে। ২০২৪ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল প্রায় ২৬৪ কোটি ডলার। এবার মার্চ মাসে সেই রেকর্ড অতিক্রম করে নতুন ইতিহাস তৈরি হলো।
রাজধানী ঢাকায় চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫ শুরু হচ্ছে আজ সোমবার। এতে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ ৪০টি দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রায় ৬ শতাধিক দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী এ সম্মেলনে অংশ নেবেন বলে সরকার আশা করছে। এ সম্মেলন একক কোনো ভেন্যুতে নয় বরং বিভিন্ন স্থান, ভেন্যু এবং নানা অনুষ্ঠানের সমন্বয়ে হবে।
গতকাল রোববার রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এ-সংক্রান্ত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এ তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি জানান, ৭ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত চার দিনব্যাপী সম্মেলনে আয়োজক বাংলাদেশসহ অর্ধশতাধিক দেশের সাড়ে ৫ শতাধিক শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করবেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের সামনে চার দিনব্যাপী এই সম্মেলনের কর্মসূচি তুলে ধরেন।
প্রথম দিন: সম্মেলনের প্রথম দিন দুটি ট্র্যাকে অনুষ্ঠানটি হবে। প্রথম ট্র্যাকে ৬০ জনের বেশি বিদেশি বিনিয়োগকারীকে নিয়ে একটি স্পেশাল ফ্লাইট চট্টগ্রাম যাবে। সেখান থেকে কোরিয়ান ইপিজেড ও মিরসরাইয়ে স্পেশাল ইকোনমিক জোন পরিদর্শন শেষে রাতে ফিরে আসবেন তারা।
চট্টগ্রাম যাওয়া এসব উদ্যোক্তারা সেখানে একটি ফ্যাক্টরি স্থাপন করার ব্যাপারে বিস্তারিত জানবেন এবং তথ্য সংগ্রহ করবেন। তাদের জন্য কোনো ধরনের সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি করা সম্ভব তা তারা সরেজমিনে দেখবেন।
একই দিনে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে স্টার্টআপ কানেক্ট নামে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানসূচি রয়েছে। সেখানে যেসব আরলি সেটজ স্টার্টআপ এবং ভেঞ্চার বিনিয়োগকারী আসছেন তাদের মধ্যে ম্যাচ মেকিং ইভেন্ট, নেটওয়ার্কিং ও প্যানেল হবে। সারা দিন স্টার্টআপ ইভেন্টকে ফোকাস করা হবে।
দ্বিতীয় দিন: আশিক মাহমুদ জানান, এ দিন শুরুতে বিনিয়োগকারীরা নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের জাপানি ইকোনমিক জোন সরেজমিনে পরিদর্শন করবেন। তারা সেখানকার ফ্যাক্টরির মালিকদের সঙ্গে কথা বলে কী ধরনের কর্মকাণ্ড হচ্ছে তা বুঝে তাদের বিনিয়োগের জন্য কতটুকু সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তা দেখবেন।
দ্বিতীয় ধাপে বিশ্বব্যাংক ও আইএলও’র সঙ্গে কিছু অ্যানগেজমেন্ট আছে। তাদের এফডিআই রিলেটেড কিছু ব্যাপারে আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যতে বিনিয়োগের জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায় সে ব্যাপারে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।
তৃতীয় দিন: সম্মেলনের তৃতীয় দিন (বুধবার) উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠান চলবে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিনিয়োগ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এ সময় উপস্থিত থাকবেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা, নীতিনির্ধারক ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা। এছাড়া সারা দিনই একাধিক প্যারালাল অনুষ্ঠান চলবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্য থেকে পাঁচ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা পুরস্কার দেওয়া হবে। একই সঙ্গে কয়েকজন বিদেশি বিনিয়োগকারী বক্তব্য দেবেন। পরে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ইয়ুথ এন্টারপ্রেনারশিপ মেলার আয়োজন থাকবে। সেখানে আরলি স্টেজ কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা হবে।
দ্বিতীয় ধাপে রিনিউয়েবল এনার্জি নিয়ে কথা হবে। বেশ কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে। তারা বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিলে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।
আশিক মাহমুদ আরও বলেন, সম্মেলন অনুষ্ঠানটি ফেসবুক ও ইউটিউবে প্রচারিত হবে। এ ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ইন্টারভিউ নিতে মিডিয়া কর্নার থাকবে বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি অপূর্ব জাহাঙ্গীর।
নাসার সঙ্গে চুক্তির সম্ভাবনা
বিনিয়োগ সম্মেলনে নাসার সঙ্গে চুক্তি হতে পারে বলে জানান বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী পরিচালক চৌধুরী আশিক মাহমুদ। সম্মেলনে অনেকগুলো সমঝোতা স্মারক সই হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিভিন্ন বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে। আইএলওর সঙ্গে শ্রম বিষয়ে একটা দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই করার চিন্তা করছি। আমরা নাসার সঙ্গে একটি চুক্তি সই করার কথা চিন্তা করছি। বেসমারিক মহাকাশ অনুসন্ধান নিয়ে এই চুক্তি সই হতে পারে। চুক্তি সই হওয়ার পর আমরা এর বিস্তারিত জানাতে পারব।
সম্মাননা পুরস্কার পাবেন ৫ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান
আশিক মাহমুদ জানান, এবারের বিনিয়োগ সম্মেলনে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্য থেকে পাঁচ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা পুরস্কার দেওয়া হবে। তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, যাদের সম্মাননা পুরস্কার দেওয়া হবে তাদের মধ্যে রয়েছেন একজন স্থানীয় বিনিয়োগকারী, একজন বিদেশি বিনিয়োগকারী, এনভায়রনমেন্টাল, সোশ্যাল অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (ইএসজি) সংশ্লিষ্ট এক সংস্থা এবং নতুন কিছু উদ্ভাবনের জন্য একটি কোম্পানিকে পুরস্কৃত করা হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশে বছরের পর বছর কাজ করছেন এমন একজন বিদেশি বিনিয়োগকারীকে সম্মাননা পুরস্কারের পাশাপাশি অনারারি সিটিজেনশিপ অফার করা হবে।
ঈদের দীর্ঘ ছুটি শেষে পুরোদমে চালু হওয়া পুঁজিবাজারে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসের লেনদেনে পতনের মুখে পড়েছে ঢাকার বাজার, সামান্য উত্থান হয়েছে চট্টগ্রামে।
রবিবার (৬ এপ্রিল) লেনদেনের শুরু থেকেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) পতন হতে থাকে সূচকের। লেনদেন শেষে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৩ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচকের মধ্যে শরীয়া ভিত্তিক ডিএসইএস কমলেও বেড়েছে বাছাইকৃত ভালো কোম্পানির ব্লু-চিপ সূচক। ডিএস-৩০ এ সারাদিনের লেনদেনে ১৪ পয়েন্ট উত্থান হয়েছে।
প্রথমদিন লেনদেনে অংশ নিয়েছে ৩৯৩টি কোম্পানি, যার মধ্যে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম ছিল নিম্নমুখী। ১০১টি কোম্পানির দাম বৃদ্ধির বিপরীতে দাম কমেছে ২৬২ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত আছে ৩০ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ক্যাটাগরির হিসাবে তিন ক্যাটাগরি- এ, বি এবং জেডে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ কোম্পানিই সুবিধা করতে পারেনি লেনদেনে।
তবে ভালো অবস্থানে রয়েছে মিউচুয়াল ফান্ড। লেনদেন হওয়া ৩৬ মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দাম বেড়েছে ৩৩টির, কমেছে ২টির। তবে অপরিবর্তিত আছে এক কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ঢাকার পুঁজিবাজারে ব্লক মার্কেটে মোট ১৮টি কোম্পানির ১০ কোটি ৬৬ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি হয়েছে। বিচ হ্যাচারি লিমিটেড সর্বোচ্চ ৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে।
সারাদিনে ডিএসইতে মোট ৪১৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, ঈদের ছুটির আগে শেষ কর্মদিবস ২৭ মার্চে এই পরিমাণ ছিল ৩১৫ কোটি টাকা।
লেনদেন বাড়ার কারণ হিসেবে ব্রোকারেজ হাউসগুলো বলছে, সূচক কমতে থাকায় দিনের শুরু থেকেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বিক্রির ঝোঁক ছিলো। অতিরিক্ত শেয়ার বিক্রির কারণে লেনদেন বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু এটি বাজারের জন্য ভালো কোনো বার্তা নয়।
ডিএসইতে পতনের দিনে ৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ দাম বেড়ে শীর্ষ শেয়ারে জায়গা করে নিয়েছে বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড। দিনের শুরুতে শেয়ারপ্রতি ৯৮ টাকায় লেনদেন শুরু হলেও দিন শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়ে হয়েছে ১০৮.৮০ টাকা।
অন্যদিকে, ৯ দশমিক ২৭ শতাংশ দাম হারিয়ে তলানিতে বিচ হ্যাচারি লিমিটেড। ১০৭ টাকা শেয়ারপ্রতি দর নিয়ে লেনদেনে শুরু করলেও দিন শেষে বিচ হ্যচারি প্রতিটি শেয়ারের দাম কমে হয়েছে ৯৯.৮০ টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকের সামান্য উত্থান হয়েছে। সারাদিনের লেনদেনে সিএসই'র সার্বিক সূচক বেড়েছে ৩ পয়েন্ট।
তবে সূচক বাড়লেও সিএসইতে দাম কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির। লেনদেনে অংশ নেয়া ১৭৯টি কোম্পানির মধ্যে ৭০টি কোম্পানির শেয়ারের দরবৃদ্ধির বিপরীতে দরপতন হয়েছে ৮৪ টির। তবে দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ২৫টি কোম্পানির।
সিএসইতে সারাদিনে মোট ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, সর্বশেষ কার্যদিবস ২৭ মার্চে যা ছিল ৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে ১০ শতাংশ দাম বেড়ে ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও শীর্ষে আছে বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড।
অন্যদিকে ১০ শতাংশ দাম হারিয়ে তলানিতে নেমে এসেছে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
দেশের অর্থনীতি সংকটের চক্রে আটকে গেছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে পুঁজিবাজারে। মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী, সুদের হার চড়া, উৎপাদন খরচ বেড়েছে আর বিনিয়োগকারীদের আস্থা টলোমলো। এসব কারণে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেশির ভাগ কোম্পানি মুনাফায় চাপের মুখে পড়েছে, অনেক কোম্পানি লাভ থেকে লোকসানে চলে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সামষ্টিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে না পারলে পুঁজিবাজারের দুরবস্থা কাটবে না।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ১৬৭টি কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) মাত্র ৬৮টি কোম্পানির মুনাফা বেড়েছে, যা মোট কোম্পানির ৪০ শতাংশ। অপরদিকে ৯৮টি কোম্পানি বা ৬০ শতাংশ মুনাফায় নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি কোম্পানি মুনাফা থেকে সরাসরি লোকসানে চলে গেছে, আর ৩৭টি কোম্পানির লোকসানের পরিমাণ আরও বেড়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সভাপতি রূপালী হক চৌধুরী বলেন, ‘সব খাতের ব্যবসা খারাপ করছে, বিশেষ করে স্টিল, সিমেন্টসহ অন্য ছোট শিল্প খাতগুলোর অবস্থা আরও খারাপ।’ তবে আইনশৃঙ্খলা ঠিক থাকলে ও মানুষের আস্থা ফিরে এলে ব্যবসার পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি করবে। এতে কোম্পানিগুলোর মুনাফা বাড়বে বলে মনে করছেন তিনি।
এদিকে ৬৮টি কোম্পানির মুনাফা বাড়লেও এগুলোর প্রবৃদ্ধির হার খুব বেশি নয়। মাত্র দুটি কোম্পানির মুনাফা ১০০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। আরেকটি কোম্পানি ৫০০ শতাংশের বেশি মুনাফা করেছে। ৩০০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫টি কোম্পানির, ২০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে দুটি কোম্পানির, ১০০ শতাংশের ঘরে রয়েছে ১১টি, ৫০ শতাংশের বেশি মুনাফা করেছে আরও ১১টি কোম্পানি। মুনাফা বৃদ্ধির দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে শার্প ইন্ডাস্ট্রিজ, যার মুনাফা ১৩৬৭ শতাংশ বেড়েছে। এরপর জেএমআই সিরিঞ্জ ১০৪০ শতাংশ, ইফাদ অটোজ ৭৩৩ শতাংশ, ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোড ৪০০ শতাংশ এবং মতিন স্পিনিং ও ডমিনেজ স্টিল ৩৫০ শতাংশ মুনাফা করেছে।
অন্যদিকে ৪৬টি কোম্পানির মুনাফা কমেছে, যদিও তারা এখনো লোকসানে পড়েনি। তবে ১৫টি কোম্পানি আগের ছয় মাসে মুনাফায় থাকলেও এবার লোকসানে পড়েছে। এ তালিকায় রয়েছে ওরিয়ন ফার্মা, বারাকা পতেঙ্গা, ইনফরমেশন সার্ভিসেস, সি পার্ল, ইনটেক, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, জেমিনি সি ফুড, সাফকো স্পিনিং, এভিন্স টেক্সটাইল, মেঘনা সিমেন্ট, আমরা টেকনোলোজিস, ইস্টার্ন কেব্ল, বসুন্ধরা পেপার, দেশবন্ধু পলিমার ও এনার্জি প্যাক।
লোকসান আরও বেড়েছে এমন কোম্পানির সংখ্যা ৩৭টি। ২০২৩ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে তারা লোকসান করলেও ২০২৪ সালের একই সময়ে সেই লোকসানের মাত্রা আরও বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি লোকসানে পড়েছে আনলিমা ইয়ার্ন, যার লোকসান ১৯৫০ শতাংশ বেড়েছে। এরপর রয়েছে সিলভা ফার্মা ২৫৮ শতাংশ, পেনিনসুলা ২৫৫ শতাংশ, ঢাকা ডাইং ২৩২ শতাংশ ও বিবিএস কেব্লস ২২৩ শতাংশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সুদের উচ্চ হার এবং মূল্যস্ফীতির কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে, যা কোম্পানিগুলোর মুনাফায় সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ডিএসই পরিচালক রিচার্ড ডি রোজারিও বলেছেন, অধিকাংশ কোম্পানি ব্যাংকঋণের ওপর নির্ভরশীল। ফলে সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় তাদের জন্য চাপ আরও বেড়েছে।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক মনে করেন, পুঁজিবাজার কাঠামোগত দুর্বলতায় ভুগছে। ভালো কোম্পানি বাজারে না এলে এবং বাজারের গভীরতা না বাড়লে এ সংকট কাটবে না।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম শেয়ারবাজারের আর্থিক প্রতিবেদনগুলোর স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি মনে করেন, বাজারের কাঠামোগত ত্রুটি সংশোধন করা জরুরি, না হলে আস্থার সংকট থাকবে।
বিএসইসির একজন নির্বাহী পরিচালক বলেন, কোম্পানিগুলোর মুনাফা তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভরশীল। তবে মূল্যস্ফীতি ও সুদের হার কমলে সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। পুঁজিবাজারকে চাঙা করতে প্রয়োজন কাঠামোগত সংস্কার, আস্থা পুনরুদ্ধার ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের পুঁজিবাজারে সংকটের কারণ মূলত অর্থনৈতিক অস্থিরতা, মূল্যস্ফীতি, চড়া সুদের হার, কাঠামোগত দুর্বলতা এবং বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে এলে এবং সুদের হার ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এলে কোম্পানিগুলোর ব্যবসা পুনরুদ্ধার হতে পারে। তবে এর জন্য কার্যকর নীতিগত সহায়তা ও বাজারকাঠামোর উন্নতি প্রয়োজন।