সংকটকালে নয়-ছয় সুদের হার বহাল রাখা উচিত বলে মনে করেন বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি ও পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ। তিনি বলেন, ‘এই কঠিন সময়ে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়ালে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান টিকে থাকতে পারবে না। বন্ধ হয়ে যাবে। ব্যাংকিং খাতের প্রধান সমস্যা খেলাপি ঋণ আরও বেড়ে যাবে। তখন ব্যাংকগুলোও বিপদে পড়বে। তাই আমি মনে করি যে, এখন সবচেয়ে জরুরি হলো যারা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি, তাদের আমাদের একইভাবে দেখা উচিত। আর নতুন করে কেউ যাতে খেলাপি না হয় তাদের জন্য বর্তমান সুদের হার বহাল রাখা উচিত।’
গত বৃহস্পতিবার দৈনিক বাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে দেশের অন্যতম শীর্ষ পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ইভিন্স গ্রুপের কর্ণধার আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ সরকারের কাছে এ অনুরোধ করেছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দৈনিক বাংলার বিজনেস এডিটর আবদুর রহিম হারমাছি।
যুদ্ধের ধাক্কায় ওলোটপালট হয়ে যাওয়া বিশ্ব অর্থনীতিতে আগামী দিনগুলো কেমন যাবে? রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারা ধরে রাখা কী সম্ভব হবে? নাকি নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হবে। একজন ব্যবসায়ী নেতা পোশাক শিল্প খাতের একজন বড় উদ্যোক্তা হিসেবে আপনার বিশ্লেষণ জানতে চাই।
গত অর্থবছর ছিল করোনাভাইরাস থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর সময়। সব দেশই ভালো করেছে। গত বছর প্রায় সব দেশের অর্থনীতি ভালো ছিল। আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ অর্জিত হয়েছিল। গত অর্থবছর আমরা রপ্তানিতে যে ৩৫ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি দেখেছি, সেটার কারণ হচ্ছে কাঁচামালের দাম অনেক বেড়ে গিয়েছিল। রপ্তানিতে আসলে প্রকৃত প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ থেকে ১২ শতাংশ।
কিন্তু এখন সারা পৃথিবীতে ডলার ক্রাইসিস আছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পৃথিবীর প্রায় সব দেশে একটি বড় মূল্যস্ফীতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমেরিকাতে মূল্যস্ফীতি ৪০ বছরের মধ্যে বেশি। যুক্তরাজ্য, জার্মানি সব দেশে মূল্যস্ফীতি ৯ থেকে ১০ শতাংশের ঘরে। এর বড় কারণ হচ্ছে যুদ্ধ। সারা পৃথিবীর চাহিদার ৪০ শতাংশ খাদ্যশস্য সরবরাহ করত এই দুটি দেশ রাশিয়া-ইউক্রেন। এ ছাড়া ইউরোপ তেল এবং গ্যাসের জন্য নির্ভর করে রাশিয়া আর ইউক্রেনের ওপর। সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে মূল্যস্ফীতি হু হু করে বাড়ছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে।
যদিও আমি মনে করি যে, বাংলাদেশ অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো আছে। এটা সত্যি যে, আমাদের বৈদেশিক বিনিময় হারের ওপর চাপ এসেছে; যেহেতু আমাদের অনেক আমদানি করতে হয়। আমাদের তেল, গ্যাস, কাঁচামাল আবার কিছু খাদ্যশস্য আনতে হয়। কিন্তু আমাদের শক্তির দিক আছে। আমাদের শক্তি হচ্ছে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি। আমাদের শক্তি হচ্ছে আমাদের কৃষক ভাইরা আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা দিয়েছে।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি। আমাদের দেখতে হচ্ছে দেশি কোম্পানিগুলোর যাতে কোনো ক্ষতি না হয়। আবার রপ্তানি খাতে কারও চাকরি চলে না যায়। বড় বাধা এনার্জি ক্রাইসিস। সরকার চাইলেই কিন্তু বেশি দামে শক্তি কিনতে পারছে না। বাংলাদেশ কিন্তু নিজেই কিছু শক্তি উৎপাদন করে। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার যে সমস্যা বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর বিভিন্ন ভাবে তা ঠিক করার চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে একটি হচ্ছে দেশে অপ্রয়োজনীয় আমদানি কমানো হয়েছে। ফলমূল কম আসছে কসমেটিকস কম আসছে। এ বিষয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক এলসি মার্জিন করেছে ১০০ শতাংশ। আবার এনবিআর কর বসিয়েছে। এতে কাজ হয়েছে।
কিন্তু ডলারের বাজার তো স্থিতিশীল হচ্ছে না। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ কমছেই। এ অবস্থা আর কতদিন চলবে?
কিছু কিছু উন্নয়ন হচ্ছে। গত বছর আমাদের আমদানি হয়েছিল ৮৯ বিলিয়ন ডলার। রপ্তানি হয়েছিল ৫৩ বিলিয়ন ডলার। সেটা সবাইকে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল। সেই অবস্থার উন্নতি হয়েছে। গত মার্চ মাসে ৯ বিলিয়ন ডলারের আমদানি হয়েছিল। সেটা কমে সেপ্টেম্বরে ৫ বিলয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছে। ৫ মিলিয়ন ডলারের ওপর যেসব এলসি হচ্ছে, সেটা দরকার আছে, কি নেই সেটা দেখা হচ্ছে। তাতে কাজ হচ্ছে। কিন্তু রেমিট্যান্সটা একটু কমে গেছে। তবে রপ্তানিটা কিন্তু নির্ভর করে বিদেশের ওপরে। সেপ্টেম্বরে আমাদের ৭ দশমিক ৫ শতাংশ রপ্তানি কমেছিল। অক্টোবরেও প্রবৃদ্ধি একই পরিমাণ কমেছে। তবে সেপ্টেম্বরের চেয়ে কিন্তু সার্বিক রপ্তানি অক্টোবরে বেশি হয়েছে। সেপ্টেম্বরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার এসেছিল। অক্টোবরে এসেছে ৪ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। বেড়েছে প্রায় ৮ শতাংশ।
একইসঙ্গে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৪ মাসের (জুলাই-অক্টোবর) তথ্য যদি আমরা দেখি, তা হলেও কিন্তু ৭ শতাংশে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অর্থাৎ গত বছরের জুলাই-অক্টোবরের চেয়ে এই বছরের একই সময়ে পণ্য রপ্তানি থেকে ৭ শতাংশ বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছে। এটার কারণ হচ্ছে চায়না এখন আর কাপড় বানাতে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তারা গার্মেন্টসের ওয়ার্কার পাচ্ছে না। ভিয়েতনাম ইলেকট্রনিকস আইটেমের দিকে যাচ্ছে। অন্যদিকে বার্মার সমস্যা রাজনীতি। আফ্রিকায় সমস্যা কম্বোডিয়ায় শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। কাস্টমার ফোকাস করছে বাংলাদেশে যতটুকু তারা পারে। এখানে আমেরিকা-চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের সুফলও আমরা পাচ্ছি। এখানে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, গত অর্থবছরে কিন্তু আমরা আমাদের রপ্তানিতে একটা বড় উল্লম্ফন পেয়েছিলাম। সেই উল্লম্ফনের ওপর যদি এবার আমরা এই সংকটের সময়ে ১০ শতাংশও বেশি (প্রবৃদ্ধি) রপ্তানি করতে পারি, সেটাও একটা ভালো অর্জন বলে আমি মনে করি। আমার বিশ্বাস এটা আমরা পারব। কেননা, সামনে ২৫ ডিসেম্বরের বড়দিন আছে, সেটাকে ঘিরে নভেম্বর-ডিসেম্বরে পোশাক রপ্তানি বাড়বে।
তবে এ ক্ষেত্রে সরকারকে একটি কাজ কিন্তু করতেই হবে, সেটা হচ্ছে, যে করেই হোক আমাদের পোশাক কারখানায় এবং পোশাক শিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্পে (পশ্চাদসংযোগ শিল্প) নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হবে। এখানে আমি একটা কথা বলতে চাই, এজন্য কিন্তু বাইরে থেকে গ্যাস-এলএনজি বা বিদ্যুৎ আমদানি করতে হবে না। বাড়তি ডলার খরচ করতে হবে না। সরকারকেও বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হবে না। শুধু একটি সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই এটা করা সম্ভব। আমরা সরকারকে বারবার এই অনুরোধটা করছি। আশা করছি, সরকার সদয় বিবেচনা করবে।
বর্তমানে যা আছে সেটার ম্যানেজমেন্ট ঠিক করেই কিন্তু সরকার এই সংকট নিরসন করতে পারে। যেমন ধরেন- আমরা আমাদের বাংলাদেশ চেম্বার থেকে সরকারকে বলেছিলাম গাজীপুর, সাভার আর নারায়ণগঞ্জ- এই তিনটি জায়গায় আপনারা গ্যাস যদি নিরবচ্ছিন্ন রাখাতে পারেন, আপনি কিন্তু ৮০ শতাংশ সমস্যা সমাধান করতে পারবেন। কারণ আপনার বেশির ভাগ কারখানা কিন্তু এই জোনে। গাজীপুরে একটি প্ল্যান্ট আছে যেটা থেকে বিদ্যুৎ আসার কথা ২০০ মেগাওয়াট। সেখানে হয় মাত্র ৩০ কিলোওয়াট। এই গ্যাসগুলো যদি কারখানাগুলোকে দিয়ে দেয়া হয় তা হলে কিন্তু সব কারখানা চলবে। ব্যবস্থাপনা ঠিকভাবে করলে এটা ঠিক করা সম্ভব।
আমরা চাচ্ছি কীভাবে দেশের অর্থনীতি ধরে রাখা যায়। যাতে রপ্তানি ঠিক থাকে, চাকরি ঠিক থাকে, ডলারের দাম ঠিক থাকে। দেশ একটি স্ট্যাবল অবস্থায় থাকে। আমরা বুঝি সরকারের অনেক ধরনের সমস্যা আছে। সরকার চেষ্টা করছে। তবে ব্যবস্থাপনা করলে আরও ভালো চালানো সম্ভব।
যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির প্রধান দুই বাজার আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোতে রপ্তানি কমে যাবে বলে সবাই আশঙ্কা করছেন। আপনার বিবেচনায় প্রকৃত অবস্থা আসলে কেমন হবে?
এ কথা ঠিক যে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের পোশাকের প্রধান দুই বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় তারা পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছে। তাদের এখন খাদ্যের পেছনেই অনেক বেশি খরচ করতে হচ্ছে। সে কারণে আমাদের রপ্তানি আয় কমছে। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থা বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা করছে। এ অবস্থায় আগামী দিন আমাদের রপ্তানি আয়ে খুব ভালো খবর নেই। তবে খুব বেশি আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে আমি মনে করি। হাঁ, বিশ্ব প্রেক্ষাপটে আমাদের এবার প্রবৃদ্ধি কম হবে। তবে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি নিয়েই অর্থবছর শেষ হবে। কেননা, আমরা ইতিমধ্যে চীনের বাজার বেশ খানিকটা দখল করতে পেরেছি। ভিয়েতনাম-মিয়ানমারের কিছু অর্ডারও বাংলাদেশে আসছে। পাশের দেশ ভারতে আমাদের রপ্তানি বাড়ছে। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আমরা অতিপ্রয়োজনীয় কম দামি পোশাক বেশি রপ্তানি করি। বিশ্ব অর্থনীতির পরিস্থিতির অবস্থা যত খারাপই হোক না কেন, অতি প্রয়োজনীয় পোশাক কিন্তু সবার কিনতেই হবে। তাই সব মিলিয়ে আমি খুব বেশি চিন্তিত নই।
বড় চিন্তার বিষয়, সেটা হচ্ছে আমাদের রিজার্ভ কিন্তু দিন দিন কমে আসছে। এখন ৩৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এক বছর আগে ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার। রপ্তানি আয় এবং প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স- এই দুই সূচক এতদিন অর্থনীতিকে সামাল দিয়ে আসছিল, সেই দুই সূচকই কিন্তু ধাক্কা খেয়েছে। রপ্তানির চেয়ে রেমিট্যান্সে কিন্তু বেশি ধাক্কা লেগেছে। সে কারণেই কিন্তু রিজার্ভ কমছে। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, প্রচুর রেমিট্যান্স আসছে হুন্ডির মাধ্যমে। এখানে সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভালোভাবে নজর দেয়া উচিত। প্রবাসীদের একটি টাকাও যেন হুন্ডির মাধ্যমে না আসে, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে প্রণোদনার পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দিতে হবে। বৈধ পথে শতভাগ রেমিট্যান্স আনার ব্যবস্থা করতে হবে। আর রপ্তানির ইতিবাচক ধারা বজায় রাখতে গ্যাস-বিদ্যুতের কথা তো আমি আগেই বলেছি। বৈশ্বিক কারণে আমাদের অর্থনীতি যে সংকটের মধ্যে পড়েছে, তা কিন্তু রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের ইতিবাচক প্রবাহ ছাড়া মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। সেটাকে লক্ষ্য রেখেই এখন সরকারের সব পরিকল্পনা নিতে হবে।
জ্বালানিসংকট রপ্তানি খাতে কী ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। শীত মৌসুম আসছে। সরকার বলছে, এই নভেম্বরের মধ্যেই বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। সব মিলিয়ে আপনার কাছে কী মনে হচ্ছে?
আমাদের ক্রেতারা, কাস্টমার এখন একটু ভয় পাচ্ছে। যখন তারা শোনে আমাদের এনার্জি ক্রাইসিস আছে; আর এর কারণে আমাদের ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজগুলো উৎপাদন করতে পারছে না। যেটার কারণে আমরা সরকারের কাছে আবেদন করেছি। আপনারা এনার্জিটা কীভাবে ইন্ডাস্ট্রিকে দেয়া যায় সে-ব্যবস্থা করেন। আমার এ মুহূর্তে যা আছে সেটার ওপর ভিত্তি করে। তা হলে দেখা যাবে, ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজগুলো দাঁড়াতে পারবে। আর ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজগুলো যদি ঠিক থাকে তা হলে রপ্তানি কমবে না। নভেম্বর ও ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপে ক্রিসমাস সেলস খুব ভালো হয়। কিন্তু এবার একটু কম হচ্ছে বলে শুনছি। ওই দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি। এই ক্রিসমাসে কিন্তু বেশি বিক্রি হয় ফ্যাশন প্রডাক্টগুলো, সেটা এবার কম হচ্ছে। আমাদের কাছে অর্ডার আছে। কিছু অর্ডার ডেফার্ড হচ্ছে। কাস্টমার অর্ডার দিতে চায়। নতুন নতুন কাস্টমার হচ্ছে। আমাদের কাস্টমারকে কনফিডেন্স দিতে হবে যে, বাংলাদেশ এটা মিট করতে পারবে। বাংলাদেশ এটা ডেলিভারি করতে পারবে।
এক কথায় যদি বলতেন এবার রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হবে, না নেগেটিভ (ঋণাত্মক) প্রবৃদ্ধি হবে?
আমি আগেই বলেছি, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৪ মাস গেছে। এই ৪ মাসে পোশাক রপ্তানিতে সাড়ে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সার্বিক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ শতাংশের বেশি। তাই এটা আমি বলতে পারি, রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হবে সেটাতে কোনো সন্দেহ নেই। নেগেটিভ গ্রোথ গার্মেন্টস খাত থেকে হবে না। তবে এখানে একটি কথা কিন্তু আছে, যেটা আমি আগেও বলেছি, আবার বলছি- গার্মেন্টস খাতে কিন্তু এনার্জি দিতেই হবে। এই খাত কিন্তু ২৪ ঘণ্টা চলতে হয়। এটা ১২ ঘণ্টা চললে সাসটেইনেবল হয় না। টেক্সটাইল না চললে গার্মেন্টস কাপড় পাবে না। যেমন টি-শার্টের ৯০ শতাংশ কাপড় কিন্তু বাংলাদেশেই হয়। এর জন্য স্পিনিং, নিটিং ডাইং ২৪ ঘণ্টা চলতে হয়। আপনি যদি ওভেন দেখেন বা ডেনিম এগুলোর প্রবৃদ্ধি আছে। ডেনিমের ৬০ শতাংশ বাংলাদেশে তৈরি হয়। দেশে যদি ৫০ শতাংশ উৎপাদন না করতে পারে ইন্ডাস্ট্রি সিক (রুগ্ন) হয়ে যাবে। খেলাপি ঋণ বাড়বে। ব্যাংকগুলো বিপদে পড়বে। আবার গার্মেন্টসে অর্ডার থাকা সত্ত্বেও সেটা ফেল করবে। কাস্টমার বাংলাদেশের ওপর কনফিডেন্স হারাবে। এই অপরচুনিটি লস করাটা আমাদের জন্য দুঃখজনক হবে। সঙ্গে সঙ্গে যদি অর্ডার ফেল করে তা হলে আনএমপ্লয়মেন্ট শ্রমিকরা বেকার হবে। এখন দেশ এটা নিতে পারবে না। চাকরি কিন্তু এখন ধরে রাখতে হবে। আমাদের ফরেন কারেনসি যেহেতু এই খাত থেকে আসে, রিজার্ভ বাড়ে- তাই খুব ভেবেচিন্তে এই খাতটার দিকে তাকাতে হবে। তা হলে আমরা সংকট খুব সহজেই মোকাবিলা করতে পারব।
অনেক কিছু করার পর বাংলাদেশ ব্যাংক এখন ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। এতে কী বাজারে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে?
আমি আগেই বলেছি, নতুন গভর্নর সাবেহ বিচক্ষণতার সঙ্গে সব কিছু সামাল দেয়ার চেষ্টা করছেন। একটার পর এটা পদক্ষেপের কারণে কিন্তু আমদানি ব্যয় অনেক কমে এসেছে। আর আমদানি ব্যয় কমে এলে, ডলারের চাহিদা কমবে; বাজারও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তবে আবারও বলছি, রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের ইতিবাচক ধারা কিন্তু ধরে রাখতেই হবে।
আপনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কথা বলছিলেন। স্পর্শকাতর এই সূচকটির লাগাম টেনে ধরতে ব্যাংক ঋণ ও আমানতের সুদের হার যেটা বর্তমানে নয়-ছয় শতাংশ আছে, সেটা বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। বাংলাদেশ ব্যাংকও মনে হচ্ছে, সেটা করতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে রেপো সুদহার ৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ করেছে। সুদের হার বাড়ানোর বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
দেখেন, এই সংকটকালে কঠিন সময়ে এখন কিন্তু সব কোম্পানির খরচ অনেক বেড়ে গেছে। ছোট (ক্ষুদ্র) ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের মালিক প্রায় দেউলিয়ার পথে। আর বড়রা তাদের ফুল ক্যাপাসিটিতে অপারেট করতে পারছে না। কারণ মার্কেটে চাহিদা নেই। মানুষ আর কিনতে পারছে না। তাই সেলস কমে গেছে। এ অবস্থায় সুদের হার বাড়ালে তখন দেখা যাবে ইন্ডাস্ট্রি বা শিল্পকারখানাগুলো আর ভায়বেল হবে না। ঠিকে থাকবে না। সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা সুদের হার বাড়িয়ে আমাদের ব্যাংকিং খাতের প্রধান সমস্যা খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বাড়াব, না আমরা ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে চাপ না দিয়ে এই যে একটি ক্রাইসিস সময় যাচ্ছে, যেটা আরও ১ থেকে ২ বছর থাকবে। এটা গভীরভাবে সরকারের নীতিনির্ধারক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিবেচনা করতে হবে বলে আমি মনে করি।
আমার মনে হয়, এখন আর কোনো খরচ না বাড়ানোই ভালো হবে। আপনারা দেখেছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মত অর্গানাইজেশন যারা আমাদের সারাজীবন বলেছে বিদ্যুতের দাম বাড়াও, তারা এখন বলছে যে, এই মুহূর্তে বিদ্যুতের দাম আর বাড়াইও না। তারা বুঝতে পারছে বিদ্যুতের দাম যদি আর একটু বাড়ে করখানাগুলো বসে যাবে। তখন আর কোনো কিছুই কস্ট ইফেক্টিভ হবে না। দেশের মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাবে। তাই আমি মনে করি, সবচেয়ে জরুরি হলো যারা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি, তাদের আমাদের একভাবে দেখা উচিত। আর নতুন করে কেউ যাতে খেলাপি না হয় তাদের জন্য বর্তমান সুদের হার বহাল রাখা উচিত।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ব্যাংকমালিক, ব্যাংকার এবং আমাদের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে নয়-ছয় সুদের হার নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। তার সুফল কিন্তু আমরা পাচ্ছিলাম, দেশ পাচ্ছিল। মহামারি করোনার মধ্যেও দেশের অর্থনীতি সচল ছিল। আমার বিশ্বাস, সুদের হার বাড়ানো হবে, না বর্তমানে যা আছে, তাই থাকবে- সে বিষয়েও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি সুন্দর সিদ্ধান্ত নেবেন।
নির্বাচন কমিশন ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দেশে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে অর্থনীতির কী হবে? ব্যবসা-বাণিজ্যেরই বা কী হবে?
এটি তো বাংলাদেশের রাজনীতির একটি অংশ। প্রতি ৫ বছরেই হয়। এটি তো ভালো আমাদের বিরোধী দলরা সমাবেশ করছে। জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং হবে সেটিই স্বাভাবিক। তবে অতীতের মতো সংঘাতের রাজনীতি যেন না হয়, সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। এটি যেন ব্যবসা-বাণিজ্যে কোনো বাধা সৃষ্টি না করে, সেটিই মনে রাখতে হবে।
রাজনীতি করা সবার অধিকার। আমরা চাই একটি শান্তিপূর্ণ সুষ্ঠু পরিবেশ। সেটি থাকলেই ভালো, সরকারিদল-বিরোধীদল সবাই রাজনীতি করবে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের ওপর, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর একটু চোখ রাখবেন প্লিজ! বাস-টাসগুলো পুড়িয়ে দিয়েন না, আমরা আমাদের ব্যবসা করি, আপনারা আপনাদের রাজনীতি করেন। আসুন, সবাই মিলেমিশে দেশটিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাই।
শেষ কার্যদিবসে ঢাকার পুঁজিবাজারে লেনদেন চলছে উত্থানে, বেড়েছে প্রধান সূচক। অন্যদিকে বিগত দিনের মতো এখনো পতন থেকে বের হতে পারেনি চট্টগ্রামের বাজার।
লেনদেনের প্রথম দুই ঘন্টায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৮ পয়েন্ট।
এর বাইরে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) শরীয়াভিত্তিক সূচক ডিএসএসের উত্থান দশমিকের ঘরে থাকলেও ব্লু-চিপ শেয়ারের সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ২ পয়েন্ট।
সূচক কিছুটা বাড়লেও বিগত কয়েকদিনের টানা পতনে লেনদেন অনেকটাই কমে এসেছে। এতদিন প্রথমার্ধে লেনদেন ২০০ কোটি ছাড়িয়ে গেলেও, এদিন লেনদেন হয়েছে ১৫০ কোটিরও কম।
দাম বেড়েছে লেনদেন অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির। ১৬১ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ১৩২ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত আছে ৯৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
এদিকে এখনো পতন থেকে বের হতে পারেনি চট্টগ্রামের বাজার। লেনদেনের প্রথমার্ধে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক হারিয়েছে ৭৩ পয়েন্ট।
দাম কমেছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির। ৩৩ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ৬৬ কোম্পানির হয়েছে দরপতন, অপরিবর্তিত আছে ২৪ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
পুঁজিবাজারের প্রথম দুই ঘন্টায় সিএসইতে লেনদেন ছাড়িয়েছে ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
ঈদের পরও রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ে ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে। ৩১ মার্চ ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হয়েছে। এরপর চলতি এপ্রিল মাসের ১২ দিনে ব্যাংকিং চ্যানেলে ১০৫ কোটি (১.০৫ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
এর মধ্যে ১ থেকে ৫ এপ্রিল ৫ দিনে এসেছে ১১ কোটি ৯২ লাখ ডলার; প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ২ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। এই পাঁচ দিন ছিল সরকারি ছুটি। ঈদের পর ব্যাংক-বিমা, অফিস-আদালত শুরু হয় ৬ এপ্রিল থেকে। সে হিসাবে বলা যায়, এপ্রিল মাস শুরু হয়েছে আসলে ৬ এপ্রিল থেকেই।
বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার ১২ এপ্রিল পর্যন্ত রেমিট্যান্সের তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, ৬ থেকে ১২ এপ্রিল- এই সাত দিনেই (এক সপ্তাহ) ৯৩ কোটি ৩২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ১৩ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। টাকার হিসাবে যা ১ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা।
মাসের বাকি ১৮ দিনে (১৩ থেকে ৩০ এপ্রিল) এ হারে এলে মাস শেষে মোট রেমিট্যান্সের অঙ্ক গিয়ে দাঁড়াবে ৩৪৫ কোটি ২০ লাখ (৩.৪৫ বিলিয়ন) ডলার, যা হবে নতুন রেকর্ড।
গত মার্চ মাসে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ব্যাংকিং চ্যানেলে ৩২৯ কোটি (৩.২৯ বিলিয়ন) ডলার দেশে এসেছে, যা ছিল গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ৬৫ শতাংশ বেশি। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ১০ কোটি ৬১ আট লাখ ডলার।
অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে রেমিট্যান্স। প্রতিবারই দুই ঈদকে উপলক্ষ করে প্রবাসীরা দেশে বেশি রেমিট্যান্স পাঠান। তারপর কমে যায়; কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। ঈদের পরও সেই আগের গতিতেই বাড়ছে অর্থনীতির এই সূচক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি এপ্রিল মাসের প্রথম ১২ দিনে মোট ১০৫ কোটি ২৩ লাখ ৬০ হাজার ডলার (১.০৫ বিলিয়ন) পাঠিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা।
প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্সে প্রতি ডলারে ১২৩ টাকা টাকা দিচ্ছে এখন ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে টাকার অঙ্কে এই ১২ দিনে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ১ হাজার ৮০ কোটি টাকা।
সব মিলিয়ে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের নয় মাস ১২ দিনে (২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ১২ এপ্রিল) ২ হাজার ২৮৩ কোটি ৬৭ লাখ ৫০ হাজার (২২.৮৪ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
আগামী জুন মাসে কোরবানির ঈদ উদদযাপিত হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা আশা করছেন, ওই ঈদ ঘিরেও বেশি রেমিট্যান্স পাঠাবেন প্রবাসীরা। সব মিলিয়ে চলতি অর্থ বছরে মোট রেমিট্যান্সের অঙ্ক ২৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে; যা হবে আরেকটি রেকর্ড।
২০২৩-২৪ অর্থ বছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এসেছিল ২২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থ বছরে এসেছিল ২১ দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলার। ২০২০-২১ অর্থ বছরে আসে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার, যা ছিল অর্থ বছরের হিসাবে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স।
২০১৯-২০ অর্থ বছরে এসেছিল ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছর শুরু মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্সপ্রবাহ কিছুটা কমেছিল; এসেছিল ১৯১ কোটি ৩৭ কোটি (১.৯১ বিলিয়ন) ডলার। তার আগের তিন মাস অবশ্য ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি এসেছিল।
তবে তারপর থেকে প্রতি মাসেই ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স দেশে এসেছে; মার্চে এসেছি তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি। অর্থাৎ চলতি অর্থ বছরের নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) আট মাসেই (আগস্ট-মার্চ) ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এমনটি দেখা যায়নি।
২০২৫ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ (২.১৮ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৭ কোটি ৪ লাখ ডলার; টাকার অঙ্কে ছিল ৮৬০ কোটি টাকা।
গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ব্যাংকিং চ্যানেলে ২৬৪ কোটি (২.৬৪ বিলিয়ন) ডলার দেশে এসেছিল। টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৩২ হাজার ২০৮ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৮ কোটি ৫১ লাখ ডলার; টাকায় ছিল এক হাজার ৩৯ কোটি টাকা।
চলতি অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ (১.৯১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। দ্বিতীয় মাস আগস্টে তারা পাঠান ২২২ কোটি ৪১ লাখ (২.২২ বিলিয়ন) ডলার। তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে এসেছিল ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ (২.৪০ বিলিয়ন) ডলার।
চতুর্থ মাস অক্টোবরে আসে ২৩৯ কোটি ৫১ লাখ (২.৩৯ বিলিয়ন) ডলার। পঞ্চম মাস নভেম্বরে এসেছিল ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ (২ বিলিয়ন) ডলার।
প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও বাণিজ্য সম্ভাবনার সমন্বয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ইস্যু সমাধানের ব্যাপারে উচ্চ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টির সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত আছেন এবং আমরাও উপদেষ্টা পরিষদে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বারবার বৈঠক করছি।’
বুধবার সচিবালয়ে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ: চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা ও সরকারের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বাণিজ্য উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
মতবিনিময় সভায় বিএসআরএফ সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল হকের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ফসিহ উদ্দীন মাহতাব।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অধিকাংশ দেশের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছেন এবং বলেছেন, বিভিন্ন দেশ এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরো অনুকূল বাণিজ্য শর্ত নিয়ে আলোচনা করতে চাচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে চিঠি পাঠিয়ে বাংলাদেশে পাল্টা শুল্ক আরোপ তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এবং অর্থ উপদেষ্টা আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন।
তারা ইউএসটিআরসহ সংশ্লিষ্ট মার্কিন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং আরো নির্দিষ্ট কর্মপন্থা নির্ধারণ করবেন।
বশির বলেন, তাদের সফর শেষে তিনি নিজেও যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন এবং মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানান।
তিনি বলেন, ‘তখন আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সামনে আরো স্পষ্ট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করব এবং ইনশাআল্লাহ, প্রধান উপদেষ্টার দিকনির্দেশনায় দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও বাণিজ্য সম্ভাবনার সমন্বয়ে এই সমস্যার সমাধান করব।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ভুল অর্থনৈতিক নীতির দিকে যাব না।’
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে পশু খাদ্য ও সয়াবিন তেলের দাম এবং শুল্ক সঠিকভাবে পরিচালনার পাশাপাশি কিছু অবকাঠামো সুবিধার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যা পণ্যের প্রতিযোগিতা ও মান বাড়িয়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সহায়তা করবে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গতিশীল নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে ‘ইনসাফ’ প্রতিষ্ঠা করা।
তিনি বলেন, গত কয়েক মাসে সরকার ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করেছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের তথ্য অনুযায়ী সাধারণ মূল্যস্ফীতি ক্রমান্বয়ে কমছে এবং জুন-জুলাইয়ের মধ্যে তা ৬ শতাংশের কাছাকাছি নামবে।
এক প্রশ্নের জবাবে বশির বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল শুল্ক ও অশুল্ক কাঠামোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান জানবে এবং পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করবে।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ইউএসটিআরের কাছে চিঠি পাঠানোর পরও এখন পর্যন্ত তারা কোনো আনুষ্ঠানিক সাড়া পায়নি।
তবে তিনি আশাবাদী, যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে সরকার তাদের যুক্তি দিয়ে বুঝাতে সক্ষম হবে।
শেখ বশির বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা মোটেও উদ্বিগ্ন নন বরং আরো কিছু রপ্তানি আদেশ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, প্রতিযোগী বাজার চীন এখনও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ১শ’ শতাংশের বেশি শুল্কের সম্মুখীন।
তিনি আরো বলেন, দেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) শিল্পের মালিকরা আত্মবিশ্বাসী যে এর কোনও নেতিবাচক প্রভাব তাদের ওপর পড়বে না।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিবের বাংলাদেশ সফর প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে বশির বলেন, ‘আমি বারবার বলেছি, আমি বাণিজ্য সংযুক্তি চাই এবং দেশের বাণিজ্যিক ভিত্তিকে আরো বৈচিত্র্যময় ও বিস্তৃত করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘ভারত, চীন এবং পাকিস্তান এই তিন দেশের সঙ্গে বাণিজ্যে আমার কোনো সমস্যা নেই। তবে আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থ রক্ষা করা। আমরা নিজেদের স্বার্থে সবার সঙ্গে বাণিজ্য করব।’
ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার বিকল্প খুঁজছে না বরং বিষয়টি বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, এতে অতিরিক্ত ২ হাজার কোটি টাকার ‘ব্যবসায়িক খরচ’ যুক্ত হতে পারে, তবে এই বিষয়ে ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা তিনি পেয়েছেন। বিমানের কার্গো হ্যান্ডলিং উন্নত করার জন্য তিনি নতুন দায়িত্বে (বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা) কাজ করছেন।
বশির বলেন, সরকার যেমন বাজার বৈচিত্র্যকরণ ও সরবরাহ চেইন উন্নয়নের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে, তেমনি অতিরিক্ত খরচও শূন্য বা তার নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।
চালের দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আবহাওয়া অনুকলে থাকায় এবং ধানের সম্ভাব্য বাম্পার ফলনের কারণে চালের দাম স্থিতিশীল হবে বলে তিনি আশাবাদী।
ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বশির বলেন, সরকার দেশীয় উৎপাদন বাড়ানো এবং প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি করে ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে যাতে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয় এবং ব্যাংক ঋণ কমে আসে। তিনি বলেন, সরকারকে বর্তমানে ভোজ্যতেলের ওপর শুল্ক ছাড়ের জন্য প্রতি মাসে প্রায় ৫৫০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আশা করছি ভোজ্যতেলের দাম আবার স্থিতিশীল হবে, তবে সুনির্দিষ্টভাবে কখন হবে তা বলা যাচ্ছে না।’
সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় বেশিরভাগ কোম্পানির দাম বাড়লেও সূচকের দশা দোদুল্যমান।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বুধবার (১৬ এপ্রিল) লেনদেনের শুরুতে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচক শরীয়াভিত্তিক ডিএসইএসের অবস্থান শূন্যের নিচে এবং ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ কমেছে ১ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৯৯, কমেছে ১২৩ এবং অপরিবর্তিত আছে ৬৭ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
প্রথম দুই ঘণ্টায় ডিএসইতে ১৮০ কোটি টাকার ওপরে শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় সার্বিক সূচক কমেছে ২ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেয়া ১২৫ কোম্পানির মধ্যে ৫৭ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ৫২ কোম্পানি এবং দাম অপরিবর্তিত আছে ১৬ কোম্পানির।
সিএসইতে লেনদেনের প্রথমার্ধে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার ওপর শেয়ার এবং ইউনিট ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে।
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে লেনদেনের শুরুতেই পতনের মুখে পড়েছে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের পুঁজিবাজার, কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) রোববার (১৩ এপ্রিল) লেনদেনের প্রথম দুই ঘন্টায় প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৯ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচক শরীয়াভিত্তিক ডিএসইএস ১ এবং বাছাইকৃত কোম্পানির শেয়ার ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ কমেছে ৮ পয়েন্ট।
দাম কমেছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির। ১০৬ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ২০৯ কোম্পানি এবং দর অপরিবর্তিত আছে ৭৮ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
প্রথম দুই ঘন্টায় ঢাকার বাজারে মোট শেয়ার এবং ইউনিটের লেনদেন ছাড়িয়েছে ২০০ কোটি টাকা।
একইভাবে সূচকের পতন হয়েছে চট্টগ্রামের বাজারেও। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ৫ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেয়া ১২৭ কোম্পানির মধ্যে ৩৮ কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ৬৭ কোম্পানি এবং অপরিবর্তিত আছে ২২ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
প্রথম দুই ঘন্টায় সিএসইতে শেয়ার এবং ইউনিটের লেনদেন ৪ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে হতাশা কাটছে না। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে ৬২ কোটি ৬৩ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। গত অর্থ বছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ৬৭ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। এই হিসাবে জুলাই-মার্চ সময়ে গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে পাট খাতে রপ্তানি আয় কমেছে ৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
পাঁচ বছর আগে পাটের সুদিন ফিরে আসার হাতছানি দেখা দিয়েছিল; পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে প্রথমবারের মতো রপ্তানি ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে ১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। স্বাধীনতার পর ১৯৭২-৭৩ সালে দেশের মোট রপ্তানি আয়ে পাটের অবদান ছিল ৯৩ শতাংশ। বাকি ৩ শতাংশ ছিল অন্যান্য পণ্যের।
সেই চিত্র এখন পুরোটাই বিপরীত। ক্রমেই কমে আসে পাটের প্রাধান্য। গত সোমবার প্রকাশিত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুারোর (ইপিবি) প্রতিবেদন বলছে, গত মার্চ মাস পর্যন্ত অর্থাৎ চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) মোট রপ্তানিতে পাটের অবদান মাত্র ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ; গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের পুরো সময়ে (২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন) ছিল ১ দশমিক ৯২ শতাংশ।
বাংলাদেশের সোনালি আঁশ পাটের ‘সোনালি দিন’ ফিরিয়ে আনার কথা বলা হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। বিভিন্ন সরকারের সময়ে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। কিন্তু কাজের কাজ খুব একটা হয়নি। পাঁচ বছর আগে পাটের সুদিন ফিরে আসার হাতছানি দেখা দিয়েছিল; পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে প্রথমবারের মতো রপ্তানি ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে ১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। মোট রপ্তানিতে পাট খাতের অবদান ৩ শতাংশ ছাড়িয়েছিল।
কিন্তু এর পর ফের হোঁচট; কমতে থাকে রপ্তানির অঙ্ক। হতাশা দেখা দিয়েছে শুধু পাট ও পাটজাত পণ্যে। বাংলাদেশের সোনালি আঁশ পাটের ‘সোনালি দিন’ ফিরে আসার হাতছানি দেখা দিয়েছিল ২০২০-২১ অর্থ বছরে। ওই বছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ১১৬ কোটি ১৫ লাখ (১.১৬ বিলিয়ন) ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে রপ্তানি তালিকায় চামড়াকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল এই খাত। আগের অর্থ বছরের (২০১৯-২০) চেয়ে রপ্তানি বেড়েছিল ৩১ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
কিন্তু এর পর থেকে কমছেই; নেমে এসেছে ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলারের নিচে।
গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে ৮৫ কোটি ৫২ লাখ ডলার আয় হয়েছিল, যা ছিল আগের অর্থ বছরের চেয়ে ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ কম।
২০২২-২৩ অর্থ বছরে আয়ের অঙ্ক ছিল ৯১ কোটি ১৫ লাখ ডলার। আগের অর্থ বছরের চেয়ে কমেছিল ১৯ দশমিক ১৭ শতাংশ।
২০২১-২২ অর্থ বছরে এই খাত থেকে আয় হয়েছিল ১১২ কোটি ৭৬ লাখ (১.১২ বিলিয়ন) ডলার। আগের অর্থ বছরের চেয়ে কমেছিল ২ দশমিক ৯১ শতাংশ।
বছরের পর বছর লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) ২৫টি পাটকল ২০২০ সালের ১ জুলাই বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। সে কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো পাটকল এখন উৎপাদনে নেই; সরকারিভাবে পাট ও পাটজাত পণ্য এখন আর রপ্তানি হয় না। অথচ বন্ধ হওয়ার আগে বিজেএমসির পাটকলগুলো থেকে এ খাতের রপ্তানির ২০ শতাংশের মতো আসত।
বাংলাদেশ পাটপণ্য রপ্তানিকারক সমিতির (বিজেজিইএ) চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসাইন সোহেল বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে প্রায় সোয়া বিলিয়ন ডলার আয় হওয়ায় আমরা আশায় বুক বেঁধেছিলাম- আমাদের সোনালি আঁশ পাটের সুদিন হয়তো ফিরে আসতে শুরু করেছে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, সে আশায় গুড়েবালি।
‘কেনোদিনই আর সোনালী আঁশের সোনালি দিন ফিরে আসবে না। কেননা, প্রতি বছরই এই খাত থেকে রপ্তানি আয় কমছে। চলতি অর্থ বছরেও সেই নেতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সবাই আশা করেছিল, কোভিড-১৯ মহামারি পরিবেশের ক্ষেত্রে নতুন ভাবনার জন্ম দেওয়ায় পাটপণ্যের চাহিদা অনেক বেড়ে যাবে। এ খাতের সম্ভাবনাও দেখা দেবে নতুন করে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন দেশের ক্রেতারা পাটের পরিবর্তে কটন ও সিল্ক দিয়ে তৈরি পণ্য কিনছেন। পলি ফাইবারও ব্যবহার করছেন অনেকে। পাটজাত পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় এ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন ক্রেতারা।’
পহেলা বৈশাখের সঙ্গে ‘পান্তা ইলিশ’ কথাটি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। বাঙালির ঐতিহ্যবাহী খাবার বৈশাখের এই ‘পান্তা ইলিশ’। পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে চাহিদা বাড়ায় ঢাকার বাজারে ইলিশের দাম হয়েছে আকাশচুম্বী।
সাধারণত ইলিশের চাহিদা বাড়ায় কিছু ব্যবসায়ী বরফে মজুত করে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করেন। এ ছাড়া তাজা ইলিশের চাহিদা ও দাম আরও বেশি।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে শুক্কুর আলী গত ৩০ বছর ধরে ইলিশ বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে ইলিশের চাহিদা ও দাম দুটোই বাড়ে। আমার দোকানে এক থেকে দেড় কেজি ওজনের মজুত মাছ রয়েছে, যা আমরা এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি।’
শুক্কুর আলী আরও বলেন, ‘সাধারণত ক্রেতারা বরফে সংরক্ষণ করা ইলিশের চেয়ে তাজা মাছ কিনতে পছন্দ করেন। তবে এক কেজি থেকে দেড় কেজি ওজনের তাজা ইলিশ পাওয়া দুষ্কর। পাইকারি বাজারে পাওয়া গেলেও প্রতি কেজির দাম কমপক্ষে তিন হাজার টাকা, কিন্তু পাওয়া মুশকিল।’
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে বাজারে পাওয়া বেশির ভাগ তাজা ইলিশের ওজন ৪৫০ গ্রাম থেকে ৬৫০ গ্রামের মধ্যে। ৪৫০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের মাছ এক হাজার ৪০০ টাকা, ৫৫০ গ্রাম থেকে ৬৫০ গ্রাম ওজনের মাছ এক হাজার ৭০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ঢাকার বাজারগুলোতে ৩০০ গ্রাম থেকে ৪০০ গ্রাম ওজনের ছোট আকারের তাজা ইলিশ বেশি পাওয়া যায়, যার দাম ৮০০ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে।
রাজধানীর মহাখালী, উত্তর বাড্ডা কাঁচাবাজার, শাহজাদপুর ও কারওয়ানবাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৪৫০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায়। ৫৫০ গ্রাম থেকে ৬৫০ গ্রাম ওজনের মাছ ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা এবং এক কেজি কিংবা তার থেকে একটু বেশি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকায়।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট ও মিরপুর কাঁচাবাজার ঘুরে এই দাম লক্ষ্য করা গেছে।
এদিকে ফার্মগেটের একটি সুপারমার্কেটে দেখা গেছে, এক কেজি থেকে দেড় কেজি ওজনের তাজা ইলিশ প্রতি কেজি তিন হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পূর্ব রাজাবাজারের আবদুল কাদের ইলিশ কিনতে এসেছিলেন কারওয়ান বাজারে। প্রতি কেজি এক হাজার ৭০০ টাকা কেজি দরে ৬০০ গ্রাম ওজনের দুটি মাছ কেনেন তিনি।
আবদুল কাদের বলেন, ‘এই দামে ইলিশ কেনা একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য খুবই কষ্টসাধ্য। তবে সামনে পহেলা বৈশাখ, তাই পরিবারের জন্য এগুলো কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
বরিশালের পাইকারি বাজারে এক কেজি ও তার চেয়ে বেশি ওজনের মাছ মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে এক লাখ ৩০ হাজার টাকায়, প্রতি মণ (৪০ কেজি)। ৫০০ গ্রাম থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের মাছের দাম ছিল মণপ্রতি ৬০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা।
বরিশাল ফিশ হোলসেল মার্কেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল সালাম বলেন, ‘১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশের ছয়টি ইলিশ অভয়াশ্রমে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ আছে। ফলে ইলিশের দাম অনেক বেশি।’
বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের (বিডা) আয়োজনে চার দিনব্যাপী বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫ শেষ হলো গতকাল। বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, নেদারল্যান্ড, জার্মানি, ইউএইসহ রেকর্ডসংখ্যক ৪০টি দেশের খ্যাতনামা বিনিয়োগকারীরা এতে অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক নির্বাহী ও নীতি নির্ধারকরাও এতে অংশ নেন।
বিনিয়োগ সামিটের শেষ দিনে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডার হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট নাহিয়ান রহমান রচি বলেন, বিনিয়োগ সামিটকে পূর্ণাঙ্গভাবে সফল করতে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করা হবে। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, বিনিয়োগ সামিটকে পূর্ণাঙ্গভাবে সফল করতে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। এ রোডম্যাপ ১৮ থেকে ২৪ মাসের। বিনিয়োগ সামিটে সেসব কোম্পানি ও ব্যক্তি বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, তাদের নিয়ে বিনিয়োগের একটি পাইপ লাইন তৈরি করা হবে।
পরবর্তীতে সেই পাইপ লাইনের তালিকা ধরে ফলোআপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। তখন আমরা তাদের কাছে জানতে চাইব। আপনারা তো বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। এখন কী অবস্থা? কোনো সমস্যা আছে কি না? বিনিয়োগের চূড়ান্ত রূপ দিতে আর কী কী সহায়তা লাগবে?
সংবাদ সম্মেলনে বিডার নির্বাহী সদস্য শাহ মোহাম্মদ মাহবুব ও বেজার মহাপরিচালক দয়ানন্দ দেবনাথ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে রচি জানান, তিনদিনের সম্মেলনে আমরা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের বিনিয়োগের মিশন-ভিশন ও কালচারাল বিষয় সম্পর্কে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছে। আজ সারা দিন আমরা আমাদের এফডিআই হিটম্যাপ অনুযায়ী চারটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকালে ডিজিটাল ইকোনমি, টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস, হেলথ কেয়ার এন্ড ফার্মা, অ্যাগ্রিকালচার ও এগ্রি প্রসেসিং, গ্রিন হাউজ ইম্পেক্ট, অ্যাগ্রিকালচার ইন্ডাস্ট্রিতে ফাইনান্সিং ইত্যাদি বিষয়ের ওপর বেশ আলাপ-আলোচনা হয়েছে।
এ ছাড়া কিছু ব্রেকআউট সেশন ছিল। এসব সেশনে বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরকে কী কী সম্ভাবনা আছে সেগুলো জানানোর পাশাপাশি স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে ম্যাসমেকিং তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো বিনিয়োগকারীদের ট্যাগ করে একটি বিনিয়োগ পাইপ লাইন তৈরি করা।
নাহিয়ান রহমান বলেন, বেশ কিছু এবারের বিনিয়োগ সামিটে ৪৫০জন বিদেশি বিনিয়োগকারী অংশগ্রহণ করেছেন। এখন পর্যন্ত হ্যাঙ্গার গ্রুপ ১৫০ মিলিয়ন, শপঅ্যাপ ১১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের চুক্তি করেছে। এ ছাড়া আরও অনেকেই বিনিয়োগের কমিটমেন্ট করেছে।
তিনি বলেন, আগে বিনিয়োগকারীরা যেসব সমস্যার কথা বলত, এখন তারা সংখ্যাটা কমিয়ে এনেছে। আমরাও বলি প্রতিবন্ধকতা আগের চেয়ে অনেক কমেছে। ইতোমধ্যে আপনারা দেখেছেন, কোরিয়ান ইপিজেডে সমস্যাটি কীভাবে সমাধান হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিডার নির্বাহী সদস্য শাহ মোহাম্মদ মাহবুব জানান, এবারের বিনিয়োগ সামিট অন্যবারের চেয়ে আলাদা। আগে শুধু সভা সেমিনারের মধ্যেই সীমাবদ্ধা ছিল। কিন্তু এবারের সামিটে সভা সেমিনারের পাশাপাশি বিটুবি, বিটুজি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনার সুযোগ রাখা হয়েছিল। বিনিয়োগকারীরা এদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগ সম্ভবনা, সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তারা তিনটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে জানতে চেয়েছে। বর্তমান সরকার চলে গেলে তারা এসব নীতি-পলিসি অব্যাহত রাখবেন কি না?
২০৩৩ সালের মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে বাজার দাঁড়াবে ২৩ বিলিয়ন ডলারে। এর আগে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট -২০২৫ এর এক সেশনে উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এ খাতটি শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে।
তাদের মতে, চিকিৎসা সামগ্রী ও উন্নত ডায়াগনস্টিক সরঞ্জামের ক্রমবর্ধমান চাহিদা থেকে ২০৩৩ সালের মধ্যে দেশের স্বাস্থ্য খাতের বাজারের পরিমাণ ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে।
গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট- ২০২৫’-এর ‘বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা বিনিয়োগের সম্ভাবনা উন্মুক্তকরণ’ শীর্ষক এক অধিবেশনে এই পূর্বাভাস দেন বিশেষজ্ঞরা।
সেশনটির বক্তা ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান। প্রাভা হেলথের প্রতিষ্ঠাতা, চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সিলভানা কাদের সিনহা ‘বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা বিনিয়োগের সম্ভাবনা উন্মুক্তকরণ’ শীর্ষক মূল বক্তৃতা প্রদান করেন।
সাইদুর রহমান তার বক্তৃতায় দেশের স্বাস্থ্য খাতের উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধির কথা তুলে ধরে বিনিয়োগকারীদের এখানে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘প্রত্যাশা করা হচ্ছে যে ২০৩৩ সালের মধ্যে দেশের স্বাস্থ্য খাতের বাজারের পরিমাণ ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে। এতে স্পষ্ট যে, দেশের স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।’
এদিকে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট- ২০২৫ এ গতকাল স্বাস্থ্য খাতে মোট চারটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
হাসান মহিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস, দ্য এন্টারপ্রেনারস গ্রুপ এবং বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসির মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
হাসান মহিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসসের ম্যানেজিং পার্টনার হাসান ইমাম সিদ্দিকী, বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসির পরিচালক এহতিয়াজ করিম এবং দ্য এন্টারপ্রেনিউরস গ্রুপের মাইকেল জনাথন গেইল এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
হাসান মহিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস এবং দ্য এন্টারপ্রেনিউরস গ্রুপের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
হাসান মহিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের ম্যানেজিং পার্টনার হাসান ইমাম সিদ্দিকী এবং দ্য এন্টারপ্রেনিউরস গ্রুপের মাইকেল জোনাথন গেইল এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছেন।
হাসান মহিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস এবং জেপিজি ইনভেস্টমেন্টসের মধ্যে আরেকটি দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
হাসান মহিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের সিনিয়র পার্টনার শাহ মহিন উদ্দিন এবং জেপিজি ইনভেস্টমেন্টসের সিইও জেমস পন্ড এতে স্বাক্ষর করেছেন।
হাসান মহিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস, ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল এবং এন্টারপ্রেনিউরস গ্রুপের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, ‘ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে কোনো সমস্যা বোধ করছি না। নিজস্ব সক্ষমতা ও রপ্তানির ক্ষেত্রে যোগাযোগের যেন কোনো ঘাটতি না পড়ে, সেজন্য সব ব্যবস্থা নিচ্ছি। আশা করছি, এ সমস্যা কাটিয়ে উঠব।’ ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে বাংলাদেশের কোনো সমস্যা হবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সম্প্রতি ভারত দিয়ে বাংলাদেশের পণ্য পরিবহনে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘হঠাৎ করেই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে ভারত। বুধবার অংশীজনদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে।’
যদিও সমস্যা কাটিয়ে উঠতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত বলেননি উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে—সেটি এই মুহূর্তে শেয়ার করব না। যে প্রতিবন্ধকতাগুলো আছে, সেগুলো কিছু কাঠামোগত, কিছু আবার খরচের দিক থেকে; এসব বিষয়গুলো সমন্বয় করে সক্ষমতা বাড়ানো হবে।’
এ বিষয়ে ভারতকে কোনো চিঠি দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকার আপাতত এমন কিছু ভাবছে না।’
ভারতের ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধায় কী পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয় জানতে চাইলে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ৪০-৫০ হাজার টনের মতো পণ্য সড়কপথে ভারতের বিভিন্ন বন্দর, বিশেষ করে দিল্লি ও কলকাতার মাধ্যমে রপ্তানি হতো। এই পণ্যগুলো পরিবহনের জন্য নিজেদের সক্ষমতা বাড়িয়ে খুব তাড়াতাড়িই এ সমস্যার সমাধান করা হবে।’
এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক স্থগিতের বিষয়ে শেখ বশিরউদ্দিন বলেন, ‘এটি ভালো খবর। এর ফলে দেশের বাণিজ্যে স্থিরতা আসবে।’
উপদেষ্টা আরও জানান, গতকাল (বুধবার) যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) সঙ্গে অনলাইনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।
এ সময় শিগগিরই বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রে যাবে বলে জানান তিনি। বলেন, ‘সেখানে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা হবে।’
সূত্র: ইউএনবি
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ঢাকার পুঁজিবাজারে সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে লেনদেন চললেও, পতনের আভাস চট্টগ্রামের বাজারে; কমেছে সার্বিক সূচক।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) লেনদেনের প্রথমার্ধে বেড়েছে সবকটি সূচক। প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১৫ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচক শরীয়াভিত্তিক ডিএসইএস ৩ এবং বাছাইকৃত কোম্পানির ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ৪ পয়েন্ট।
দাম বেড়েছে লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির। ২০৯ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ৯৭ এবং অপরিবর্তিত আছে ৮৬ কোম্পানির।
ডিএসইতে প্রথম দুই ঘণ্টায় লেনদেন ২৭০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
ঢাকার সূচক বাড়লেও কমেছে চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ৩ পয়েন্ট।
তবে সূচক কমলেও দাম বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের। লেনদেনে অংশ নেয়া ১৩৪ কোম্পানির মধ্যে ৫৮ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ৫১ কোম্পানি এবং অপরিবর্তিত আছে ২৫ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় সিএসইতে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকার বেশি শেয়ার এবং ইউনিট ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে।
সিঙ্গাপুর থেকে ৫০ হাজার টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। প্রতি কেজি চালের দাম পড়বে ৫০ টাকা ৮১ পয়সা। আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এ চাল ক্রয়ে মোট ব্যয় হবে ২৫৪ কোটি ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক সূত্র জানা গেছে, চাল আমদানির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে খাদ্য অধিদপ্তর থেকে চাল ক্রয়ের জন্য গত ১২ মার্চ আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে মোট ১২ সরবরাহকারী দরপত্র দলিল সংগ্রহ করলেও ৫টি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেয়।
এর মধ্যে সিঙ্গাপুরভিত্তিক মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড প্রতি টন চালের দাম ৪১৬.৪৪ ডলার উল্লেখ করায় দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির নাম সুপারিশ করে, যা উৎস দেশগুলোর গড় দর (৪৪৪.৯১ ডলার) অপেক্ষা ২৮.৪৭ ডলার কম।
এছাড়া মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেডের দেওয়া দর বাংলাদেশের বন্দর পর্যন্ত প্রতি টন ৪১৬.৪৪ ডলার, যা বাজার দর যাচাই কমিটির প্রাক্কলিত দরের চেয়ে কম। এ কারণে এই দর গ্রহণের জন্য দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সুপারিশ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হয়। কমিটির সদস্যরা প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে অনুমোদন দিয়েছে।
প্রতি টন ৪১৬.৪৪ ডলার হিসেবে ৫০ হাজার টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল ক্রয়ের জন্য প্রয়োজন হবে ২ কোটি ৮ লাখ ২২ হাজার ডলার। অর্থাৎ গত ২৭ মার্চ তারিখে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ডলারের বিনিময় হার প্রতি ডলার ১২২ টাকা (সম্ভাব্য) হিসেবে ২৫৪ কোটি ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকার প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে প্রতি কেজির দাম পড়বে ৫০ টাকা ৮১ পয়সা।
সূত্রটি জানিয়েছে, মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের জন্য ৬০:৪০ অনুপাতে কস্ট ইন্সুরেন্স ফ্রেইট-লাইনার আউট (সিআইএফ-এলও) টার্মে (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সিডি ভ্যাট ব্যতীত) প্রতি টন ৪১৬.৪৪ ডলার হিসেবে ২ কোটি ৮ লাখ ২২ হাজার ডলারে এই ৫০ হাজার টন (৫%) নন বাসমতি সিদ্ধ চাল কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে আন্তর্জাতিক উৎস হতে ৯ লাখ টন চাল আমদানির জন্য অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৪ লাখ ৫০ হাজার টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল এবং জি টু জি পদ্ধতিতে মিয়ানমার থেকে ১ লাখ টন, পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার টন ও ভিয়েতনাম থেকে ১ লাখ টন আতপ চালসহ মোট ৭ লাখ টন চাল ক্রয়ের চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ফ্যামিলি কার্ডধারীদের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রির জন্য পৃথক দুটি দরপত্রের মাধ্যমে ১০ হাজার টন মসুর ডাল ও এক কোটি ২০ লাখ লিটার ভোজ্য তেল ক্রয় করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ-সংক্রান্ত দুটি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ২৮০ কোটি ১৪ লাখ ২০ হাজার টাকা।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১০ হাজার টন মসুর ডাল (৫০ কেজির বস্তায়) কেনার অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
সূত্র জানায়, টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী এক কোটি পরিবারের নিকট ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনার জন্য স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৪টি দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। তার মধ্যে ৩টি দরপ্রস্তাব কারিগরিভাবে ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়।
দর প্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশে রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান শেখ অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিকে এই মসুর ডাল কেনার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। প্রতি কেজি ৯২.৭৫ টাকা হিসেবে ১০ হাজার টন মসুর ডাল ক্রয়ে ব্যয় হবে ৯২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মসুর ডাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৮৮ হাজার টন। এ পর্যন্ত ক্রয় চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৯৫০ টন।
সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অপর এক প্রস্তাবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
জানা গেছে, টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের নিকট ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে ২ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ১ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল সরবরাহের জন্য মাত্র ১টি দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। দরপ্রস্তাবটি আর্থিক ও কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়।
দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশে রেসপনসিভ একমাত্র দরদাতা প্রতিষ্ঠান থাইল্যান্ডের লাইফ অ্যান্ড হেলথ থেকে এই ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রতি লিটার ১৫৬.১৬ টাকা হিসেবে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ে ব্যয় হবে ১৮৭ কোটি ৩৯ লাখ ২০ হাজার টাকা।
জানা গেছে, দরপত্রে ২ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল সরবরাহে জন্য চাহিদা থাকলেও প্রতিষ্ঠান ১ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল সরবরাহের আগ্রহ প্রকাশ করে। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ভোজ্য তেল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২৮ কোটি লিটার। এ পর্যন্ত ক্রয় করা হয়েছে ১৫ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার লিটার।
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বিনিয়োগকারীদের প্রতিষ্ঠান ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের একটি প্রতিনিধিদল গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
এসময় তারা একটি ক্রমবর্ধমান বাংলাদেশ-মার্কিন অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিতে এবং দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক লাভজনক বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং এক্সেলারেট এনার্জির কৌশলগত উপদেষ্টা পিটার হাস। প্রতিনিধিদলে আরো ছিলেন মেটা, ভিসা, শেভরন, উবার, মেটলাইফ, মাস্টারকার্ড, বোয়িং এবং ইউএস সোয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিলের প্রতিনিধিরা। এক্সেলারেট এনার্জি ইউ.এস চেম্বার অব কমার্সের ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা হয়। মার্কিন কোম্পানিগুলো একটি ইতিবাচক এবং গঠনমূলক সম্পর্কের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে, যা একটি শক্তিশালী বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে উৎসাহিত করবে।
পিটার হাস বলেন, ‘মার্কিন কোম্পানিগুলোর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির পেছনে দীর্ঘমেয়াদী অঙ্গীকার রয়েছে-যেটি স্থিতিস্থাপকতা, উদ্যোক্তা মনোভাব এবং দীর্ঘমেয়াদী সমৃদ্ধির ওপর ভিত্তি করে।’
প্রতিনিধিদল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থনৈতিক সংস্কারের অবস্থানকে স্বাগত জানায়, যা বাণিজ্য ও অ-শুল্ক বাধা নিরসনে সহায়ক হবে।
নিশা দেশাই বিসওয়াল, যিনি আগে ডিএফসির ডেপুটি সিইও এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তিনি বাংলাদেশের মার্কিন বিনিয়োগকারীদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। প্রতিনিধিদল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করার প্রস্তাব দেয়, যাতে করে বাংলাদেশ বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা দূর করতে এবং আরো মার্কিন বিনিয়োগ আকর্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।
চলমান শুল্ক আলোচনা প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমেরিকান কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির কেন্দ্রে রয়েছে। আমরা চাই বাংলাদেশ যেন এই আলোচনাগুলোতে নিজেকে কার্যকরভাবে উপস্থাপন করতে পারে’।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের উন্নয়নে মার্কিন কোম্পানিগুলোর অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান এবং ব্যবসা পরিচালনার সুবিধা সম্প্রসারণে সব ধরনের সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন।