শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫
২৯ চৈত্র ১৪৩১

নয়-ছয় থেকে বারো-নয় করা উচিত

মঞ্জুর হোসেন
আবদুর রহিম
প্রকাশিত
আবদুর রহিম
প্রকাশিত : ১৫ অক্টোবর, ২০২২ ১১:৩২

দুই বছরের করোনা মহামারির ধাক্কা কাটতে না কাটতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপরও বেশ চাপ সৃষ্টি করেছে। বেড়ে গেছে সব ধরনের পণ্যের দাম। মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। আগস্ট ও সেপ্টেম্বর দুই মাসেই মূল্যস্ফীতির পারদ ৯ শতাংশের ওপরে উঠেছে। অর্থনীতির অন্য সূচকগুলোও নিম্নমুখী। সাত মাস পর সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে গত সেপ্টেম্বরে।

এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা শুনিয়েছেন অর্থনীতির গবেষক বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা তো একটি বৈশ্বিক অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা আছে। অর্থনৈতিক-সামাজিক সবদিক থেকেই। বিশেষ করে করোনাভাইরাস-পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধটা আমার কাছে মনে হয় এখন বিশ্ব অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এর প্রভাব বাংলাদেশেও বেশ ভালোই পড়েছে। এ থেকে আমরা কমে মুক্ত হব- সেটাই এখন সবচেয়ে বড় অনিশ্চয়তা।’

বৃহস্পতিবার দৈনিক বাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এই অনিশ্চয়তার কথা বলেছেন মঞ্জুর হোসেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দৈনিক বাংলার বিজনেস এডিটর আবদুর রহিম হারমাছি

দুই বছরের বেশি সময়ের করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় কেমন চলছে বাংলাদেশের অর্থনীতি? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় প্রতিদিনই আশঙ্কার কথা বলছেন, অনিশ্চয়তার কথা বলছেন। খরচ কমানোর আহ্বান জানিয়ে দেশবাসীকে সতর্ক করছেন। আপনার কাছে সার্বিক পরিস্থিতি কেমন মনে হচ্ছে?

আমরা তো একটি বৈশ্বিক অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা আছে। অর্থনৈতিক-সামাজিক সবদিক থেকেই। বিশেষ করে করোনাভাইরাস-পরবর্তী ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধটা আমার কাছে মনে হয় সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর। বিশ্বের অর্থনীতির জন্য। এখানে রাশিয়া একদিকে, যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপ একদিকে হয়ে এমন একটি পর্যায়ে যাচ্ছে, যার ফলে দিন দিন সমস্যাগুলো বাড়ছে; নতুন নতুন সংকট তৈরি হচ্ছে। তাতে সারা বিশ্ব এর দ্বারা এফেক্টেড হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তো এ থেকে আমরা ব্যতিক্রম নই। কারণ একটা হচ্ছে, যে জ্বালানি তেলের উৎসগুলো অনেকটাই সেই সব দেশের ওপর নির্ভর করছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। আবার কিছুটা কমছে, আবার বাড়ছে। তেলের একটি অনিশ্চয়তা আছে।

দ্বিতীয়ত আছে খাদ্যসংকটের একটি বিষয়। যেহেতু আমাদের অনেক কিছুই আমদানি করতে হয়। তৃতীয়ত হচ্ছে, আমাদের রপ্তানির বড় বাজার হচ্ছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র। সেসব দেশে এখন মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়েছে; অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিচ্ছে। তারা হয়তো এখন তাদের কস্ট অব লিভিং কমাতে চাইবে। সেই ক্ষেত্রে আমাদের রপ্তানি কমে যেতে পারে। বিশ্বের অন্য দেশগুলোর অবস্থা যা, আমাদের অবস্থাও তা। তবে আমরা যেহেতু একটি উন্নয়নশীল দেশ, সেহেতু অভিঘাতটা আমাদের ওপর অনেক বেশি হবে অন্যান্য দেশের চাইতে।

এটি হচ্ছে মূলত প্রথম কথা; আর দ্বিতীয় কথা হচ্ছে যে আমরাও কিছুটা কৃচ্ছ্রসাধন করতে গিয়ে নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। জ্বালানি তেলকে সাশ্রয় করতে গিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়েছি। দেশের অনেক ধরনের সমস্যা হচ্ছে। উৎপাদনব্যবস্থা অনেকটা কমে গেছে। মানুষের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার যে অবস্থায় আমরা এসছিলাম গত কয়েক বছরে। বিদ্যুতে নিরবচ্ছিন্ন ছিলাম, সেখানে ব্যাঘাত ঘটেছে। এগুলো সবই কিন্তু দেশের উৎপাদনব্যবস্থার ওপর একটি প্রভাব ফেলছে। তাতে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি বা প্রবৃদ্ধি সেটার ওপর আঘাত আসছে।

সরকার চলতি অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরেছে। সেটি কি আদৌ অর্জন করা সম্ভব হবে?

এক কথায় বলতে গেলে বলতে হয়, বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে এই লক্ষ্য আসলে অর্জন করা খুবই কঠিন। বিশ্বব্যাংক বলেন বা আইএমএফ বলেন, তারা বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে প্রক্ষেপণ সেটা আগের থেকে কমিয়ে এনেছে। আমাদের ৭ শতাংশের বেশি হওয়ার কথা ছিল, এখন সবাই বলছে ৬ শতাংশ, এমনকি আরও কমও হতে পারে। এই সবকিছুর সঙ্গে যেটা সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য অ্যাডজাস্ট করেছে। এ ছাড়া অন্য যেসব জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে, তার ফলে দেশের মূল্যস্ফীতি একটা খারাপ পর্যায়ে আছে। সেটা আগস্টে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল, সেপ্টেম্বরে এটা ৯-এর ওপরে ৯ দশমিক ১ হয়েছে। কিন্তু যেটা আমরা অনেকবার বলেছি। আমাদের গবেষণায়ও দেখেছি যে, মূল্যস্ফীতি এটাকে বলি আমরা হেডলাইনি ইনফ্লেশন। এটা গড়, এটা সবার ওপর কিন্তু ইনফ্লেশনটা হয়। প্রত্যেক ক্যাটাগরির মানুষের ওপর ইনফ্লেশনের প্রভাব আলাদা। দরিদ্র শ্রেণির লোকদের ওপর মূল্যস্ফীতির প্রভাব কিন্তু অনেক বেশি। দরিদ্র মানুষ হয়তো ১২ শতাংশ ফিল করছে। আমি হয়তো ৯ শতাংশ করছি; আরেকজন হয়তো ৭ শতাংশ ফিল করছে। কারণ এটা কনজামশন বাস্কেটের ওপর নির্ভর করে আপনি কোন জিনিসগুলো খাচ্ছেন, সেই জিনিসগুলোর দাম কেমন বেড়েছে। সেই হিসাবে এক ধরনের আঘাত তো আছেই। দ্বিতীয় হচ্ছে যে করোনাভাইরাস-পরবর্তী যেই ধরনের রিকভারির কথা ছিল; যেভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর কথা ছিল। বিশেষ করে কর্মসংস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্য, সেগুলো কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রত্যাশা অনুযায়ী কর্মসংস্থান হচ্ছে না।

অর্থনীতির ব্যবসা-বাণিজ্য যেগুলোর মধ্যে আমরা একটি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। যেহেতু বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। সে ক্ষেত্রে আমদানি ব্যয় বেড়েছে; তা ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপরেও প্রভাব পড়েছে। তৃতীয় আরেকটি জিনিস আমাদের সবকিছুর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত দেশের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার, ডলারের মুদ্রা বিনিময় হার। ডলারের মুদ্রা বিনিময় হার একটি আশঙ্কাজনক পর্যায়ে চলে গেছে। এর ফলে মূল্যস্ফীতিতে একটি বড় প্রভাব পড়েছে। আমাদের আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। ডলারের যে ব্যবস্থাপনা, সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক যথেষ্ট সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে বলে দেখা যাচ্ছে। তারা আসলে সিদ্ধান্ত নিতে পারেছে না তারা কী করবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, যদিও পুরোপুরি মার্কেটের ওপর ছেড়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই বাংলাদেশের হাতে। যেহেতু আমাদের একটি বড় অংশ ফাটকাবাজারিতে লিপ্ত হয়ে যাই; আমাদের প্রতিষ্ঠানের ম্যাকানিজমগুলো এতটা শক্তিশালী না। সেদিক থেকে পুরোপুরি যদি আমরা মার্কেটের ওপর ছেড়ে দিই ফল আরও খারাপ হবে। কিন্তু যেটা হয়েছে, সেটা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেরা কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে পেরে ব্যাংকগুলোর ওপর নির্ভর করছিল। সেটা আরও খারাপ হয়েছে। তারা তিনটি রেট প্রপোজ করেছে। একটি রেমিটারদের জন্য, একটি এক্সপোর্টারদের জন্য আর একটি ইম্পোর্টারদের জন্য। আরও একটি আছে সাধারণ মানুষের জন্য। এখন এ ধরনের মাল্টিপোল এক্সচেঞ্জ রেট পৃথিবীতে আর কোথাও নেই। এ ছাড়া ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টে এটা আসলে ভালো ভূমিকা রাখে না। একটি বিনিময় হারে অবশ্যই আসতে হবে। আর এই সিদ্ধান্তটি বাংলাদেশ ব্যাংককে খুব স্ট্রংলি নিতে হবে।

এটা খুব দুঃখজনক হলেও সতি যে, বাংলাদেশ ব্যাংকে অতীতেও দেখা গেছে। পলিসি রেটখ্যাত সুদের হার ব্যাংকাররা সাজেস্ট করছে। তারপর এক্সচেঞ্জ রেট কীভাবে হবে সেটাও ব্যাংকাররা সাজেস্ট করছে। তারা হচ্ছে এন্ড ইউজার, আর এই ইউজারের ওপর যদি আমি ছেড়ে দিই পলিসি মেকিং তার ফলাফল কখনো ভালো হয় না। আমি আশা করব যে, বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সঠিক এবং শক্ত অবস্থান নেবে। যেটা সঠিক হওয়া দরকার, সেটাই নেয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন জন বিভিন্ন কথা বলবে। কিন্তু আমাদের একটি ইউনিফাইড এক্সচেঞ্জ রেট লাগবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক কি ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে সঠিক কাজটি করছে না? কেন্দ্রীয় ব্যাংক কি নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে?

আমি তো বললাম যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সক্ষমতার অভাব আছে। আমরা অনেক আগে থেকেই বলেছি যে, মুদ্রা সংকট যখন তৈরি হলো, বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে ব্যবস্থাপনা করে আসছে। বিশেষ করে ৪, ৫, ১০ বছর ধরে সেটা তো তারা মেইনটেইন করতে পারবে না। ক্রাইসিস না থাকলে এই ধরনের এক্সচেঞ্জ রেট ম্যানেজ করা যেতে পারে। এতদিন তো প্রায় ফিক্সড ছিল। আসলে এক্সচেঞ্জ রেট ম্যানেজ করার বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। অর্থনৈতিক ভিত্তিগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে সময়ে সময়ে ছাড় দেয়া দরকার ছিল। সেটা না করার ফলে যখন ক্রাইসিস দেখা গেল, রিজার্ভকে ধরে রাখার কথা এল, তখন এক্সচেঞ্জ রেটকে এই লেভেলের ডেপ্রিসিয়েট না করে তাদের উপায় ছিল না। এখন করার পরও দেখা গেল মার্কেটে বাংলাদেশ ব্যাংক যা রেট বলছে, সেই রেট ফলো হচ্ছে না। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারভাইজরি যে কন্ট্রোল ব্যাংকগুলোর ওপরে সেটার দুর্বলতা দেখা গেল। অনেক ব্যাংক বাড়তি মুনাফা করেছে এই এক্সচেঞ্জ রেট দিয়ে। ইভেন মানি এক্সচেঞ্জগুলোর ওপর কোনো কন্ট্রোল আছে বলে আমার মনে হয় না।

এটি অনেক দিনের পুঞ্জীভূত একটি সমস্য। একটি সংকটের মুখে তাদের পক্ষে এটি ব্যবস্থাপনা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। তার ফলে প্রপার এক্সচেঞ্জ রেট ম্যানেজমেন্ট করা, প্রপার মনিটরি পলিসি ফর্মুলেশনের জন্য যে সক্ষমতা দরকার সেটা নতুন করে তো আর এখন বিল্ডআপ করা যাবে না। এখন দরকার হচ্ছে তারা প্রয়োজনে যাদের কাছ থেকে সাজেশন নেয়া দরকার বা তাদের নিজেদের যে এক্সপার্টেজ আছে সেগুলো ডেভেলপ করে, আমি মনে করি সেন্ট্রাল ব্যাংকের নিজ যোগ্যতায় নিজে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। এটি ব্যাংকারদের ওপর একদমই ছেড়ে দেয়া উচিত না। তাতে করে হিতে বিপরীত হবে আসলে। আমরা এই মুহূর্তে দেখছি, ব্যবসায়ীদের চাপে হোক, যেকোনো কারণেই হোক, সুদের হার আসলে যেভাবে ফিক্স করে রাখা হয়েছে, সেটা আসলে কোনোভাবেই ডিজায়ারেবল না। বর্তমানে দেশের মূল্যস্ফীতির অবস্থা খারাপ। দিন দিন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমার সুদের হারকে ফিক্সড করে বিনিয়োগকে সুবিধা দিয়ে কার লাভ হবে।

জনগণ যখন খারাপ অবস্থায় থাকে, মূল্যস্ফীতি যখন বেশি থাকে, তখন এমপ্লয়মেন্ট রেটও বাড়তে থাকে। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে আসলে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ফিন্যান্স ডিভিশনের একটি ভূমিকা থাকা উচিত, এক্সপার্টদেরও ভূমিকা থাকা উচিত। এ ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে যে, আমাদের এক্সপার্টদের মধ্যে অপিনিয়নগুলো এত বিভেদমূলক এবং এতভাবে তারা দ্বিমত পোষণ করেন যে, তাদের মতামত নিয়েও যে সেন্ট্রাল ব্যাংক একটি নির্দিষ্ট পথে চলতে পারবে, সেটা নিয়েও সমস্য। তর পরও আমি মনে করি ডায়লগটা হওয়া উচিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত ডায়লগ করা, সেখান থেকে তারা যেটা ভালো মনে করে সেটা তারা নিতে পারে। নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা নির্দিষ্ট কোনো অর্থনীতিবিদের কথার ওপর সিদ্ধান্ত নেয়ার তো কোনো দরকার নেই।

সরকার বাজেটে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছে। সেটা কি সম্ভব বলে আপনি মনে করেন?

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম কোয়ার্টারটা (জুলাই-সেপ্টেম্বর) গেল। এই কোয়ার্টার দেখে বলা খুব কঠিন যে, বাংলাদেশে এই অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কী হবে। আমি মনে করি যে, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবির প্রক্ষেপণ আরও রিভিশন হবে। তারা ছয় মাস পর বলবে যে আরও কমে যাবে, নয় মাস পর বলতে পারে অন্য কথা। আমাদের এক কোয়ার্টার পার হয়েছে, সেটার ভিত্তিতে আমাদের বলা হয়েছে যে এই তিন মাসের মতো করে যদি আমরা চলতে পারি তাহলে বছর শেষে আমাদের প্রবৃদ্ধি হবে ৬ শতাংশের মতো। কিন্তু আমরা এই অবস্থায় চলতে পারব কি না, সেটা নির্ভর করছে অনেক কিছুর ওপর।

তবে আমি মনে করি, এই মুহূর্তে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কত হবে, সেটার দিকে বেশি মনোযোগ না দিয়ে মূল্যস্ফীতি কীভাবে আমরা সহনীয় রাখতে পারি, সেটা নিয়েই সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশি কাজ করা উচিত। আমার মনে হয়, এটাই এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বাজারে গেলে দেখতে পাই যে, জিনিসপত্রের মূল্য কীভাবে আকাশচুম্বী ধারণ করছে, সেদিক থেকে সরকারের অনেকগুলো করণীয় আছে। একটি হচ্ছে, মূল্যস্ফীতি কমানো বা সহনীয় করার জন্য পলিসিগত কিছু দ্রুত করা দরকার। সেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক যেগুলো নিয়েছে সুদের হার বাড়ানো, ইম্পোর্ট কিছুটা কমানো, এর বাইরে ফিসক্যাল কিছু মেজার আছে। যেমন- জনগণকে সহায়তা দেয়া। বর্তমানে এক কোটি লোককে ১৫ টাকা দরে চাল দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়ানো। যেটাকে আমরা বলি ফিসক্যাল ট্রান্সফার; এ ছাড়া ওপেন মার্কেট সেলস আরও বেশি পরিমাণে বাড়াতে হবে। টিসিবির মাধ্যমে যেটা দেয়া হয়, সেটা যথেষ্ট না। সেটা যদি আরও বেশি আকারে বাড়ানো হয়, তাহলে সাধারণ জনগণ আরও বেশি আকারে মূল্যস্ফীতির আঘাতটিকে সয়ে যেতে পারবে।

দ্বিতীয় পন্থা হচ্ছে- যাদের ফিক্সড সেলারি, তাদের কাছ থেকে কিন্তু দাবি আসা শুরু হয়েছে যেন তাদের বেতনটা বাড়ানো হয় এবং সেটা হয়তো করতে হতে পারে সামনে। যাদের একটি স্থির আয় আছে বা নিম্ন আয় আছে, তাদের পক্ষে কিন্তু মূল্যস্ফীতিকে মোকাবিলা করে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এই কাজগুলো করতে গেলে সরকারের কিন্তু ব্যয় বেড়ে যাবে। ব্যয় যদি বাড়ানো হয়, সে ক্ষেত্রে জিডিপি গ্রোথ হয়তো আরেকটু কম হতে পারে। সেটাও মন্দ হয় না। যদি আমাদের ৫ দশমিক ৫ শতাংশও প্রবৃদ্ধি হয়, তাহলেও ভালো বলে আমি মনে করি। একদিকে মূল্যস্ফীতি কমানোর পলিসিগত পদক্ষেপগুলো যথাযথ হওয়া দরকার, অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি যাতে সাধারণ জনগণকে বিপদে ফেলতে না পারে সরকারের দায়িত্ব সাধারণ জনগণকে সহায়তা দেয়া। সেটা পণ্য দিয়েও হতে পারে অথবা টাকা দিয়েও হতে পারে।

আরেকটি হচ্ছে যাদের সেলারি ফিক্সড তাদের সেলারি রিভাইস করতে হবে। সে ক্ষেত্রে সরকারের বাজেট বেড়ে যাবে। অন্যান্য খাতে ব্যয় কমাতে পারে। এটি একটি জটিল পরিস্থিতি, ম্যানেজ করার মতো, ব্যালান্স করার মতো ক্যাপাসিটি সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কতটুকু আছে আমরা জানি না। এতদিন আমাদের ম্যাক্রো ইকোনমিকস স্টাবিলিটি খুব ভালো ছিল। ব্যবস্থাপনায় কোনো সমস্যা হয়নি। আগে এ রকম কোনো বৈশ্বিক সংকটের মোকাবিলা আমরা করিনি। এই ধরনের সংকট মোকাবিলার জন্য সব ধরনের ব্যালান্স করে আমরা এগোতে পারি কি না। সেটা এখন দেখার বিষয়।


নির্বাচন কমিশন ঘোষণা দিয়েছে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। আগের মতো যদি দেশে হরতাল-অবরোধের মতো সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতি হয়, তাহলে এই সংকটের সময় অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কেমন হবে বলে আপনি মনে করেন?

সেই আশঙ্কা আছে। তবে বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় একটি রাজনৈতিক সমঝোতা দরকার। যাতে আমরা সবাই মিলে একভাবে সেটা মোকাবিলা করতে পারি। জনগণের যাতে ক্ষতি না হয়। জনগণের কল্যাণ যাতে ব্যাহত না হয়, সবার এ বিষয়ে একমত হওয়া উচিত। এমন কোনো রাজনৈতিক পদক্ষেপ এখন নেয়া ঠিক হবে না ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের’ মতো অবস্থা হয়। সেদিক থেকে সরকার এবং বিরোধী দল যারা আছে আমাদের আশা থাকবে তারা কিছু জাতীয় ইস্যুতে একমত হয়ে এই সময়টা পার করবেন, যাতে সব ধরনের একটি স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। কীভাবে এই সময়টা পার করা যায়, কারণ আমরা একটি বৈশ্বিক সংকটের মধ্যে আছি। আবার যদি দেশীয় সংকট তৈরি হয়, সেটা আমাদের অর্থনীতির জন্য খুব ক্ষতিকর হবে।

ডলারসংকট কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর কী করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?

আমি মনে করি এই সংকট কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত দেশের খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ, গবেষণা সংস্থাগুলোর মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া। কিন্তু আলোচনার বিষয়টি পুরোপুরি অনুপস্থিত। আলোচনা করতে তো অসুবিধা নেই। সিদ্ধান্ত আপনারাই নেন। আপনি আলোচনার টেবিলে সবাইকে নিয়ে আসেন। তাদের সঙ্গে আলোচন করেন। কারণ সংকটকালীন সময়টা সাধারণ সময় থেকে আলাদা। সুতরাং সেই সময়টাকে ম্যানেজ করতে হলে দূরদর্শিতার সঙ্গে করতে হবে।

আমাদের দেশে রাশিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের গভর্নরের মতো গভর্নর হয়তো নেই। আমাদের দেশে আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভের মতো গভর্নরের মতো গভর্নর হয়তো নেই। আমাদের যে রিসোর্স আছেন। সেন্ট্রাল ব্যাংকে যদি না থাকে বাইরে যারা আছেন তাদের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন। তাই বলে শুধু ব্যাংকারদের সঙ্গে আলোচনা করে নীতি সিদ্ধান্ত নেয়াটা যৌক্তিক না। পার্সোনালি যদি কারও সঙ্গে আলোচনা হয়ে থাকে সেটা যথেষ্ট নয়। মুক্ত আলোচনা হওয়া উচিত, আসলে দেশের অর্থনীতি কীভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে সে বিষয়ে। যেখানে মতপার্থক্য থাকবে, সেখানে পর্যালোচনা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

এটা হচ্ছে এক দিকের কথা। এর বাইরে আমরা যে সমস্যাগুলো দেখছি, আমাদের আমদানি বাড়ছে আবার কমছে- এগুলো নির্ভর করছে পশ্চিমা বিশ্বের অর্থনীতির ওপরে। আমরা একটিমাত্র পণ্য রপ্তানি করি, সেটাও পশ্চিমাদের সঙ্গে। পশ্চিমারা কিন্তু একটি যুদ্ধের মধ্যে আছে। সেটা হয়তো তারা সামাল দিতে পারবে। কিন্তু আমাদের অর্থনীতি ধসে যাবে যদি আমাদের রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। আমরা মার্কেট ডাইভারসিফিকেশন করতে পারিনি, প্রডাক্ট ডাইভারসিফিকেশন করতে পারিনি।

সামনের দিনগুলো কেমন হবে বলে আপনি মনে করেন?

সামনের দিনগুলো কেমন হবে, সেটা অনেকটাই নির্ভর করছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ওপরে। যুদ্ধ যদি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে চলে যায়, তাহলে তো কথাই নেই। খুবই অবস্থা খারাপ। আর এটা বর্তমান অবস্থায় যদি লিংগার করতে থাকে এবং সামনে শীত আসছে সামনে ইউরোপকে যদি রাশিয়া গ্যাস তেল বন্ধ করে দেয়, সেখানে ইউরোপে একটি সংকট তৈরি হতে পারে। এই সংকটের চাপ কিন্তু আমাদের দিকে লাগবে। পোশাক রপ্তানির একটি বড় মার্কেট ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। ওপেক বলছে, তেলের দাম কমিয়ে দেবে। তেলেন দাম বৃদ্ধির একটি সম্ভাবনা আছে। সবকিছু মিলিয়ে আমি খুব একটি আশাবাদী হওয়ার মতো অবস্থা দেখছি না।

আপনার কাছে শেষ প্রশ্ন। এই যে আপনি অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ, সংকট বা চাপের কথাগুলো বলছেন। এগুলো মোকাবিলা করতে এই মুহূর্তে আমাদের কী কী করা দরকার বলে আপনি মনে করেন?

আমাদের মূল্যস্ফীতি এখন ৯ শতাংশের ওপর। এ অবস্থায় বাজারে টাকার সরবরাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। আর সে ক্ষেত্রে নয়-ছয় সুদের হার থেকে আমাদের দ্রুত বেরিয়ে আসতে হবে। দুটিই বাড়াতে হবে। অর্থাৎ ব্যাংকঋণের সুদের হার যেটা এখন ৯ শতাংশ বেঁধে রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সেটা ১২ শতাংশে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। আর আমানতের সুদের হার যেটা ৬ শতাংশ আছে, সেটা ৯ শতাংশে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে আমি সরাসরি বলতে চাই, নয়-ছয় সুদের হার থেকে বারো-নয় সুদের হার বেঁধে দিতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরামর্শ বলেন আর দাবিই বলেন- এ বিষয়টি আমি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে জোরালোভাবে উপস্থাপন করছি।

এখানে একটি বিষয় আলোচনায় আসতে পারে যে, নয়-ছয় সুদের হার তো প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে করা হয়েছিল। কিন্তু মনে রাখতে হবে, তখনকার পেক্ষাপট আর এখনকার পেক্ষাপট একেবারেই আলাদা। তখন দেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ শতাংশের নিচে। আর এখন ৯ শতাংশের ওপর।

এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত বলে আমি মনে করি। প্রধানমন্ত্রীকে আগে বলা হয়েছিল সুদের হার নয়-ছয় থাকলে ভালো হবে। প্রধানমন্ত্রী তখন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু এখন যদি এটা বোঝানো যায় যে, এটা বাড়ালেও বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বরং বড় অংশে দেশের জন্য ভালো হবে। তাহলে নিশ্চয় সেটা উনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী তো এককভাবে সিদ্ধান্ত নেন না, ওনার বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বা যারা পলিসি মেকার আছেন, তাদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্তগুলো যাতে তথ্যনির্ভর হয়, তখন ওনাকে বোঝানো গেলে তাহলে ওনার পক্ষে হয়তো সিদ্ধান্ত ভালোভাবে দেয়া সম্ভব হবে। আমরা আশা করব, প্রধানমন্ত্রী হয়তো এ ধরনের একটি ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টের জায়গাটা চিন্তা করবেন এবং অবশ্যই একটা ভালো সিদ্ধান্ত নেবেন।

এখানে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আরও একটি অনুরোধ করব। এই কঠিন সংকট মোকাবিলার জন্য তিনি একটি হাই প্রোফাইল কমিটি তৈরি করবেন দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে। এটা মন্ত্রিপর্যায়ে হতে পারে, সচিব পর্যায়ে হতে পারে। অর্থনীতিবিদরা সেখানে থাকতে পারেন, ব্যবসায়ীরা থাকতে পারেন। এটি হয়তো ভালো কাজ করতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে হতে পারে। সেটা যদি হয় আরও ভালো হবে। সেই কমিটির পরামর্শে সংকট মোকাবিলায় সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রী বসতে পারেন। কারণ তারা অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে যদি দেশের অবস্থা খারাপ করে ফেলে তাহলে তো সমস্যা আরও বাড়বে। এই জায়গাগুলোতে তো কাজ আছেই। আমরা অর্থনীতিবিদরা তো শুধু বলতে পারি কী করতে হবে, দায়িত্বটা সরকারকেই নিতে হবে। সিদ্ধান্তটাও সরকারকেই নিতে হবে।


বিনিয়োগ সামিটকে সফল করতে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করা হবে: বিডা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বিশেষ প্রতিবেদক
    * ২০৩৩ সালের মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে বাজার দাঁড়াবে ২৩ বিলিয়ন ডলারে

বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের (বিডা) আয়োজনে চার দিনব্যাপী বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫ শেষ হলো গতকাল। বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, নেদারল্যান্ড, জার্মানি, ইউএইসহ রেকর্ডসংখ্যক ৪০টি দেশের খ্যাতনামা বিনিয়োগকারীরা এতে অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক নির্বাহী ও নীতি নির্ধারকরাও এতে অংশ নেন।

বিনিয়োগ সামিটের শেষ দিনে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডার হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট নাহিয়ান রহমান রচি বলেন, বিনিয়োগ সামিটকে পূর্ণাঙ্গভাবে সফল করতে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করা হবে। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

তিনি বলেন, বিনিয়োগ সামিটকে পূর্ণাঙ্গভাবে সফল করতে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। এ রোডম্যাপ ১৮ থেকে ২৪ মাসের। বিনিয়োগ সামিটে সেসব কোম্পানি ও ব্যক্তি বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, তাদের নিয়ে বিনিয়োগের একটি পাইপ লাইন তৈরি করা হবে।

পরবর্তীতে সেই পাইপ লাইনের তালিকা ধরে ফলোআপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। তখন আমরা তাদের কাছে জানতে চাইব। আপনারা তো বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। এখন কী অবস্থা? কোনো সমস্যা আছে কি না? বিনিয়োগের চূড়ান্ত রূপ দিতে আর কী কী সহায়তা লাগবে?

সংবাদ সম্মেলনে বিডার নির্বাহী সদস্য শাহ মোহাম্মদ মাহবুব ও বেজার মহাপরিচালক দয়ানন্দ দেবনাথ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে রচি জানান, তিনদিনের সম্মেলনে আমরা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের বিনিয়োগের মিশন-ভিশন ও কালচারাল বিষয় সম্পর্কে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছে। আজ সারা দিন আমরা আমাদের এফডিআই হিটম্যাপ অনুযায়ী চারটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকালে ডিজিটাল ইকোনমি, টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস, হেলথ কেয়ার এন্ড ফার্মা, অ্যাগ্রিকালচার ও এগ্রি প্রসেসিং, গ্রিন হাউজ ইম্পেক্ট, অ্যাগ্রিকালচার ইন্ডাস্ট্রিতে ফাইনান্সিং ইত্যাদি বিষয়ের ওপর বেশ আলাপ-আলোচনা হয়েছে।

এ ছাড়া কিছু ব্রেকআউট সেশন ছিল। এসব সেশনে বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরকে কী কী সম্ভাবনা আছে সেগুলো জানানোর পাশাপাশি স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে ম্যাসমেকিং তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো বিনিয়োগকারীদের ট্যাগ করে একটি বিনিয়োগ পাইপ লাইন তৈরি করা।

নাহিয়ান রহমান বলেন, বেশ কিছু এবারের বিনিয়োগ সামিটে ৪৫০জন বিদেশি বিনিয়োগকারী অংশগ্রহণ করেছেন। এখন পর্যন্ত হ্যাঙ্গার গ্রুপ ১৫০ মিলিয়ন, শপঅ্যাপ ১১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের চুক্তি করেছে। এ ছাড়া আরও অনেকেই বিনিয়োগের কমিটমেন্ট করেছে।

তিনি বলেন, আগে বিনিয়োগকারীরা যেসব সমস্যার কথা বলত, এখন তারা সংখ্যাটা কমিয়ে এনেছে। আমরাও বলি প্রতিবন্ধকতা আগের চেয়ে অনেক কমেছে। ইতোমধ্যে আপনারা দেখেছেন, কোরিয়ান ইপিজেডে সমস্যাটি কীভাবে সমাধান হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিডার নির্বাহী সদস্য শাহ মোহাম্মদ মাহবুব জানান, এবারের বিনিয়োগ সামিট অন্যবারের চেয়ে আলাদা। আগে শুধু সভা সেমিনারের মধ্যেই সীমাবদ্ধা ছিল। কিন্তু এবারের সামিটে সভা সেমিনারের পাশাপাশি বিটুবি, বিটুজি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনার সুযোগ রাখা হয়েছিল। বিনিয়োগকারীরা এদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগ সম্ভবনা, সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তারা তিনটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে জানতে চেয়েছে। বর্তমান সরকার চলে গেলে তারা এসব নীতি-পলিসি অব্যাহত রাখবেন কি না?

২০৩৩ সালের মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে বাজার দাঁড়াবে ২৩ বিলিয়ন ডলারে। এর আগে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট -২০২৫ এর এক সেশনে উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এ খাতটি শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে।

তাদের মতে, চিকিৎসা সামগ্রী ও উন্নত ডায়াগনস্টিক সরঞ্জামের ক্রমবর্ধমান চাহিদা থেকে ২০৩৩ সালের মধ্যে দেশের স্বাস্থ্য খাতের বাজারের পরিমাণ ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে।

গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট- ২০২৫’-এর ‘বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা বিনিয়োগের সম্ভাবনা উন্মুক্তকরণ’ শীর্ষক এক অধিবেশনে এই পূর্বাভাস দেন বিশেষজ্ঞরা।

সেশনটির বক্তা ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান। প্রাভা হেলথের প্রতিষ্ঠাতা, চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সিলভানা কাদের সিনহা ‘বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা বিনিয়োগের সম্ভাবনা উন্মুক্তকরণ’ শীর্ষক মূল বক্তৃতা প্রদান করেন।

সাইদুর রহমান তার বক্তৃতায় দেশের স্বাস্থ্য খাতের উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধির কথা তুলে ধরে বিনিয়োগকারীদের এখানে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘প্রত্যাশা করা হচ্ছে যে ২০৩৩ সালের মধ্যে দেশের স্বাস্থ্য খাতের বাজারের পরিমাণ ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে। এতে স্পষ্ট যে, দেশের স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।’

এদিকে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট- ২০২৫ এ গতকাল স্বাস্থ্য খাতে মোট চারটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।

হাসান মহিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস, দ্য এন্টারপ্রেনারস গ্রুপ এবং বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসির মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

হাসান মহিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসসের ম্যানেজিং পার্টনার হাসান ইমাম সিদ্দিকী, বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসির পরিচালক এহতিয়াজ করিম এবং দ্য এন্টারপ্রেনিউরস গ্রুপের মাইকেল জনাথন গেইল এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

হাসান মহিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস এবং দ্য এন্টারপ্রেনিউরস গ্রুপের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

হাসান মহিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের ম্যানেজিং পার্টনার হাসান ইমাম সিদ্দিকী এবং দ্য এন্টারপ্রেনিউরস গ্রুপের মাইকেল জোনাথন গেইল এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছেন।

হাসান মহিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস এবং জেপিজি ইনভেস্টমেন্টসের মধ্যে আরেকটি দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

হাসান মহিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের সিনিয়র পার্টনার শাহ মহিন উদ্দিন এবং জেপিজি ইনভেস্টমেন্টসের সিইও জেমস পন্ড এতে স্বাক্ষর করেছেন।

হাসান মহিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস, ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল এবং এন্টারপ্রেনিউরস গ্রুপের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।


ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে কোনো সমস্যা বোধ করছি না

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, ‘ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে কোনো সমস্যা বোধ করছি না। নিজস্ব সক্ষমতা ও রপ্তানির ক্ষেত্রে যোগাযোগের যেন কোনো ঘাটতি না পড়ে, সেজন্য সব ব্যবস্থা নিচ্ছি। আশা করছি, এ সমস্যা কাটিয়ে উঠব।’ ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে বাংলাদেশের কোনো সমস্যা হবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সম্প্রতি ভারত দিয়ে বাংলাদেশের পণ্য পরিবহনে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘হঠাৎ করেই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে ভারত। বুধবার অংশীজনদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে।’

যদিও সমস্যা কাটিয়ে উঠতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত বলেননি উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ‘কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে—সেটি এই মুহূর্তে শেয়ার করব না। যে প্রতিবন্ধকতাগুলো আছে, সেগুলো কিছু কাঠামোগত, কিছু আবার খরচের দিক থেকে; এসব বিষয়গুলো সমন্বয় করে সক্ষমতা বাড়ানো হবে।’

এ বিষয়ে ভারতকে কোনো চিঠি দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকার আপাতত এমন কিছু ভাবছে না।’

ভারতের ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধায় কী পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয় জানতে চাইলে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ৪০-৫০ হাজার টনের মতো পণ্য সড়কপথে ভারতের বিভিন্ন বন্দর, বিশেষ করে দিল্লি ও কলকাতার মাধ্যমে রপ্তানি হতো। এই পণ্যগুলো পরিবহনের জন্য নিজেদের সক্ষমতা বাড়িয়ে খুব তাড়াতাড়িই এ সমস্যার সমাধান করা হবে।’

এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক স্থগিতের বিষয়ে শেখ বশিরউদ্দিন বলেন, ‘এটি ভালো খবর। এর ফলে দেশের বাণিজ্যে স্থিরতা আসবে।’

উপদেষ্টা আরও জানান, গতকাল (বুধবার) যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) সঙ্গে অনলাইনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।

এ সময় শিগগিরই বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রে যাবে বলে জানান তিনি। বলেন, ‘সেখানে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা হবে।’

সূত্র: ইউএনবি


ঢাকার লেনদেন চলছে উত্থানে, চট্টগ্রামে পতন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ঢাকার পুঁজিবাজারে সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে লেনদেন চললেও, পতনের আভাস চট্টগ্রামের বাজারে; কমেছে সার্বিক সূচক।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) লেনদেনের প্রথমার্ধে বেড়েছে সবকটি সূচক। প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১৫ পয়েন্ট।

বাকি দুই সূচক শরীয়াভিত্তিক ডিএসইএস ৩ এবং বাছাইকৃত কোম্পানির ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ৪ পয়েন্ট।

দাম বেড়েছে লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির। ২০৯ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ৯৭ এবং অপরিবর্তিত আছে ৮৬ কোম্পানির।

ডিএসইতে প্রথম দুই ঘণ্টায় লেনদেন ২৭০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

ঢাকার সূচক বাড়লেও কমেছে চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ৩ পয়েন্ট।

তবে সূচক কমলেও দাম বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের। লেনদেনে অংশ নেয়া ১৩৪ কোম্পানির মধ্যে ৫৮ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ৫১ কোম্পানি এবং অপরিবর্তিত আছে ২৫ কোম্পানির শেয়ারের দাম।

লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় সিএসইতে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকার বেশি শেয়ার এবং ইউনিট ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে।


সিঙ্গাপুর থেকে ৫০ হাজার টন সিদ্ধ চাল কিনবে সরকার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

সিঙ্গাপুর থেকে ৫০ হাজার টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। প্রতি কেজি চালের দাম পড়বে ৫০ টাকা ৮১ পয়সা। আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এ চাল ক্রয়ে মোট ব্যয় হবে ২৫৪ কোটি ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।

গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বৈঠক সূত্র জানা গেছে, চাল আমদানির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে খাদ্য অধিদপ্তর থেকে চাল ক্রয়ের জন্য গত ১২ মার্চ আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে মোট ১২ সরবরাহকারী দরপত্র দলিল সংগ্রহ করলেও ৫টি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেয়।

এর মধ্যে সিঙ্গাপুরভিত্তিক মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড প্রতি টন চালের দাম ৪১৬.৪৪ ডলার উল্লেখ করায় দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির নাম সুপারিশ করে, যা উৎস দেশগুলোর গড় দর (৪৪৪.৯১ ডলার) অপেক্ষা ২৮.৪৭ ডলার কম।

এছাড়া মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেডের দেওয়া দর বাংলাদেশের বন্দর পর্যন্ত প্রতি টন ৪১৬.৪৪ ডলার, যা বাজার দর যাচাই কমিটির প্রাক্কলিত দরের চেয়ে কম। এ কারণে এই দর গ্রহণের জন্য দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সুপারিশ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হয়। কমিটির সদস্যরা প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে অনুমোদন দিয়েছে।

প্রতি টন ৪১৬.৪৪ ডলার হিসেবে ৫০ হাজার টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল ক্রয়ের জন্য প্রয়োজন হবে ২ কোটি ৮ লাখ ২২ হাজার ডলার। অর্থাৎ গত ২৭ মার্চ তারিখে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ডলারের বিনিময় হার প্রতি ডলার ১২২ টাকা (সম্ভাব্য) হিসেবে ২৫৪ কোটি ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকার প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে প্রতি কেজির দাম পড়বে ৫০ টাকা ৮১ পয়সা।

সূত্রটি জানিয়েছে, মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের জন্য ৬০:৪০ অনুপাতে কস্ট ইন্সুরেন্স ফ্রেইট-লাইনার আউট (সিআইএফ-এলও) টার্মে (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সিডি ভ্যাট ব্যতীত) প্রতি টন ৪১৬.৪৪ ডলার হিসেবে ২ কোটি ৮ লাখ ২২ হাজার ডলারে এই ৫০ হাজার টন (৫%) নন বাসমতি সিদ্ধ চাল কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে আন্তর্জাতিক উৎস হতে ৯ লাখ টন চাল আমদানির জন্য অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৪ লাখ ৫০ হাজার টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল এবং জি টু জি পদ্ধতিতে মিয়ানমার থেকে ১ লাখ টন, পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার টন ও ভিয়েতনাম থেকে ১ লাখ টন আতপ চালসহ মোট ৭ লাখ টন চাল ক্রয়ের চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে।


টিসিবির জন্য ২৮০ কোটি টাকার সয়াবিন ও মসুর কিনবে সরকার

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
    # ১ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন, ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনা হবে

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ফ্যামিলি কার্ডধারীদের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রির জন্য পৃথক দুটি দরপত্রের মাধ্যমে ১০ হাজার টন মসুর ডাল ও এক কোটি ২০ লাখ লিটার ভোজ্য তেল ক্রয় করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ-সংক্রান্ত দুটি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ২৮০ কোটি ১৪ লাখ ২০ হাজার টাকা।

মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১০ হাজার টন মসুর ডাল (৫০ কেজির বস্তায়) কেনার অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।

সূত্র জানায়, টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী এক কোটি পরিবারের নিকট ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনার জন্য স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৪টি দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। তার মধ্যে ৩টি দরপ্রস্তাব কারিগরিভাবে ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়।

দর প্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশে রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান শেখ অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিকে এই মসুর ডাল কেনার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। প্রতি কেজি ৯২.৭৫ টাকা হিসেবে ১০ হাজার টন মসুর ডাল ক্রয়ে ব্যয় হবে ৯২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মসুর ডাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৮৮ হাজার টন। এ পর্যন্ত ক্রয় চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৯৫০ টন।

সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অপর এক প্রস্তাবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।

জানা গেছে, টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের নিকট ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে ২ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ১ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল সরবরাহের জন্য মাত্র ১টি দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। দরপ্রস্তাবটি আর্থিক ও কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়।

দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশে রেসপনসিভ একমাত্র দরদাতা প্রতিষ্ঠান থাইল্যান্ডের লাইফ অ্যান্ড হেলথ থেকে এই ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রতি লিটার ১৫৬.১৬ টাকা হিসেবে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ে ব্যয় হবে ১৮৭ কোটি ৩৯ লাখ ২০ হাজার টাকা।

জানা গেছে, দরপত্রে ২ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল সরবরাহে জন্য চাহিদা থাকলেও প্রতিষ্ঠান ১ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল সরবরাহের আগ্রহ প্রকাশ করে। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ভোজ্য তেল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২৮ কোটি লিটার। এ পর্যন্ত ক্রয় করা হয়েছে ১৫ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার লিটার।


মার্কিন কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব জোরদারে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বিনিয়োগকারীদের প্রতিষ্ঠান ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের একটি প্রতিনিধিদল গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

এসময় তারা একটি ক্রমবর্ধমান বাংলাদেশ-মার্কিন অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিতে এবং দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক লাভজনক বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং এক্সেলারেট এনার্জির কৌশলগত উপদেষ্টা পিটার হাস। প্রতিনিধিদলে আরো ছিলেন মেটা, ভিসা, শেভরন, উবার, মেটলাইফ, মাস্টারকার্ড, বোয়িং এবং ইউএস সোয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিলের প্রতিনিধিরা। এক্সেলারেট এনার্জি ইউ.এস চেম্বার অব কমার্সের ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা হয়। মার্কিন কোম্পানিগুলো একটি ইতিবাচক এবং গঠনমূলক সম্পর্কের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে, যা একটি শক্তিশালী বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে উৎসাহিত করবে।

পিটার হাস বলেন, ‘মার্কিন কোম্পানিগুলোর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির পেছনে দীর্ঘমেয়াদী অঙ্গীকার রয়েছে-যেটি স্থিতিস্থাপকতা, উদ্যোক্তা মনোভাব এবং দীর্ঘমেয়াদী সমৃদ্ধির ওপর ভিত্তি করে।’

প্রতিনিধিদল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থনৈতিক সংস্কারের অবস্থানকে স্বাগত জানায়, যা বাণিজ্য ও অ-শুল্ক বাধা নিরসনে সহায়ক হবে।

নিশা দেশাই বিসওয়াল, যিনি আগে ডিএফসির ডেপুটি সিইও এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তিনি বাংলাদেশের মার্কিন বিনিয়োগকারীদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। প্রতিনিধিদল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করার প্রস্তাব দেয়, যাতে করে বাংলাদেশ বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা দূর করতে এবং আরো মার্কিন বিনিয়োগ আকর্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।

চলমান শুল্ক আলোচনা প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমেরিকান কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির কেন্দ্রে রয়েছে। আমরা চাই বাংলাদেশ যেন এই আলোচনাগুলোতে নিজেকে কার্যকরভাবে উপস্থাপন করতে পারে’।

অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের উন্নয়নে মার্কিন কোম্পানিগুলোর অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান এবং ব্যবসা পরিচালনার সুবিধা সম্প্রসারণে সব ধরনের সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন।


বাংলাদেশে আরও এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে এনডিবি

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বিশেষ প্রতিবেদক

ব্রিকস জোটের উদ্যোগে গঠিত নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) বাংলাদেশে আরও এক বিলিয়ন ডলার (প্রায় ১২ হাজার ২০০ কোটি টাকা) বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে বলে দাবি করেছেন বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, সংস্থাটি বাংলাদেশে ৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। সামনে আরও বড় বিনিয়োগ করবে। বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ প্রসঙ্গে বিডার চেয়ারম্যান জানান, তারা মূলত দুটি বিষয়ে জানতে চাচ্ছেন- বাংলাদেশে ব্যবসা করলে কী ধরনের সুবিধা পাওয়া যাবে এবং বর্তমানে ব্যবসায়ীরা যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন, সেগুলোর সমাধানে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, এবারের সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য সরাসরি বিনিয়োগ আনা নয়, বরং নেটওয়ার্কিংকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচক এখন অপ্রাসঙ্গিক। পৃথিবীর কোথাও শতভাগ সমস্যামুক্ত বাজার নেই। তবে বাংলাদেশে যেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলোর সমাধানে এক থেকে দুই বছরের মধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পালটা শুল্কের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, বৈশ্বিক সমস্যা। প্রধান উপদেষ্টা এরই মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছেন, যা আমরা প্রকাশ করেছি।’

এক চীনা কোম্পানি সাড়ে তিন বছর ঘুরেও লাইসেন্স না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, ‘এমন একটি ঘটনা আমরা শুনেছি। তবে প্রতিষ্ঠানটির নাম ও বিস্তারিত কারণ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জানানো হবে।’

তিনি আরও জানান, এনডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে এসে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং বাংলাদেশের প্রতি তাদের ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানিয়েছেন। সংস্থাটি বর্তমানে ওয়াসার সঙ্গে একটি প্রকল্পে কাজ করছে এবং ভবিষ্যতে বেসরকারি খাতেও ফান্ড দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

সোমবার শুরু হওয়া এই সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ ৪০টি দেশের বিনিয়োগকারীরা অংশ নিয়েছেন। এতে শীর্ষস্থানীয় করপোরেট ব্যক্তিত্বসহ অসংখ্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে।


গতি ফিরেছে দেশের অর্থনীতিতে

আপডেটেড ৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১৩:০৫
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
    অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৪.৪৮ শতাংশ

টানা তিন প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধির ধীরগতির পর অবশেষে কিছুটা গতি ফিরে এসেছে দেশের অর্থনীতিতে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক অর্থাৎ অক্টোবর-ডিসেম্বর মেয়াদে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

এর আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে শ্লথগতির কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ব্যাপকভাবে ভাটা লক্ষ করা গেছে। ওই সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৮১ শতাংশে নেমেছিল। পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় টানা তিন প্রান্তিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার পর গত অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে তা আবার বাড়ল।

গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) চলতি অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর এই তিন মাসের জিডিপির চিত্র প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, গত জানুয়ারি থেকে টানা তিন প্রান্তিক ধরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে কমেছে। তবে বছরের শেষ প্রান্তিকে তা বেড়েছে।

কৃষি, শিল্প ও সেবা এই তিন খাত দিয়ে জিডিপি প্রকাশ করা হয়। অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি হয়েছে কৃষি খাতে। এই খাতের প্রবৃদ্ধি মাত্র ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। এরপর সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং শিল্প খাতে ৭ দশমিক ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

বিবিএসের তথ্য অনুসারে, অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে দেশের ভেতরে স্থির মূল্যে ৮ লাখ ৮৬ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকার মূল্য সংযোজন হয়। আগের প্রান্তিকে ৮ লাখ ৪ হাজার ৯৪২ কোটি টাকার মূল্য সংযোজন হয়। এর মানে, অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে আগের প্রান্তিকের চেয়ে ৮২ হাজার কোটি টাকার বেশি মূল্য সংযোজন হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনীতি স্থিতিশীল হওয়া এবং কিছু খাতে কার্যক্রম বাড়ায় অর্থনীতির চাকা কিছুটা সচল হয়েছে। তবে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য কৃষি ও সেবা খাতে আরও কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।

মার্চে বেড়েছে মূল্যস্ফীতি

এদিকে গতকাল একই দিনে সদ্য সমাপ্ত মার্চ মাসের মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ চিত্র প্রকাশ করেছে বিবিএস। এতে দেখা গেছে, মার্চে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়ে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই সময় দেশে খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার কমলেও বেড়েছে খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি। খাদ্যে মূল্যস্ফীতি এখন ৯ থেকে ৮ শতাংশের ঘরে নেমেছে।

গত মার্চে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ হওয়ার মানে হলো, ২০২৪ সালের মার্চে যদি বিভিন্ন ধরনের পণ্য ও সেবা কিনে আপনার সংসারের খরচ চালাতে ১০০ টাকা খরচ হয়, তাহলে এ বছরের মার্চে একই পণ্য ও সেবা কিনে সংসার চালাতে খরচ লাগল ১০৯ টাকা ৩৫ পয়সা। প্রতি ১০০ টাকায় খরচ বেড়েছে ৯ টাকা ৩৫ পয়সা।

বিবিএসের তথ্য-উপাত্তে দেখা যাচ্ছে, মার্চে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। ফেব্রুয়ারিতে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ; মার্চে যা কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশে। ফেব্রুয়ারিতে দেশে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ; মার্চে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ।

কোথায় কত মূল্যস্ফীতি

মার্চে দেশে গ্রামাঞ্চলের মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। মার্চে গ্রামাঞ্চলে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ; ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ। গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের মার্চে যা ছিল শতকরা ৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ। মার্চে গ্রামাঞ্চলের খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি ছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৮১ ও ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল যথাক্রমে ৯ দশমিক ১৫ ও ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ২০২৪ সালের মার্চে যা ছিল যথাক্রমে ৯ দশমিক ৮৬ ও ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ।

মার্চে শহরাঞ্চলের মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ; ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ২০২৪ সালের মার্চে যা ছিল ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। মার্চে শহরাঞ্চলের খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে যথাক্রমে ৯ দশমিক ১৮ ও ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ৯ দশমিক ৪৭ ও ৯ দশমিক ২৭ শতাংশ। ২০২৪ সালের মার্চে যা ছিল যথাক্রমে ৯ দশমিক ৯৮ ও ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ।

মজুরি বৃদ্ধির হার কম

মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না মজুরি। বিবিএসের হিসাবে, গত মার্চে জাতীয় মজুরি হার হয় ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। এর মানে হলো, মজুরি যত বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি বেড়েছে জিনিসপত্রের দাম। গত ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে জাতীয় মজুরি হার কিছুটা বেড়েছে।

মজুরিনির্ভর বিশাল জনগোষ্ঠীর ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি পড়ে। গ্রাম-শহর নির্বিশেষে ১৪৫টি নিম্ন দক্ষতার পেশার মজুরির ওপর এই হিসাব করে থাকে বিবিএস। বিবিএস বলছে, দেশের প্রায় ৮৬ শতাংশ মানুষ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। এমন কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা ৬ কোটির মতো।


ফু-ওয়াং ফুডের কোটি কোটি টাকার হিসাবে অসংগতি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

ধীরে ধীরে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি ফু-ওয়াং ফুড লিমিটেড। একসময়ের ভালো ব্যবসা ও মুনাফা করা কোম্পানিটি এখন ধুঁকে ধুঁকে চলছে। টানা সাড়ে ৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে কোম্পানিটি লোকসানে রয়েছে। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন সময় বিনিয়োগকারীদের প্রলোভন দেখিয়ে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়িয়ে নেওয়া হয়। এতে কোটি কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন অনেক বিনিয়োগকারী। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মিয়া মামুনের বিরুদ্ধে রয়েছে অসংখ প্রতারণার অভিযোগ। এমন পরিস্থিতির মধ্যে কোম্পানির সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার কথা জানিয়েছেন নিরীক্ষক।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, ফু-ওয়াং ফুডের আর্থিক হিসাবে ৫৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকার স্থায়ী সম্পদ দেখানো হয়েছে। তবে ওই সম্পদের রেজিস্টার না থাকায়, সত্যতা যাচাই করা যায়নি। এছাড়া হিসাব মান অনুযায়ী, প্রতি ৩ থেকে ৫ বছর অন্তর সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন করা দরকার পড়লেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ২০১৫ সালের পরে আর করেনি। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আর্থিক হিসাবে ৯ কোটি ১৩ লাখ টাকার মজুদ পণ্য দেখিয়েছে। তবে কারখানা সরেজমিনে পরিদর্শনে অসঙ্গতি পেয়েছেন নিরীক্ষক। বিশেষ করে ৩৪০ আইটেমের মধ্যে ১০৪টি আইটেমের কাঁচামাল, বিক্রিযোগ্য পণ্য ও প্যাকিং জিনিসের ক্ষেত্রে অসঙ্গতি পাওয়া গেছে।

কাঁচামাল ক্রয়ের জন্য অগ্রিম ৩ কোটি ২১ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে বলে আর্থিক হিসাবে উল্লেখ করেছে ফু-ওয়াং ফুডস কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা পূর্বের বছরের। এ অর্থের বিষয়ে কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট সঠিক জবাব দিতে পারেনি নিরীক্ষককে। এমনকি কাঁচামাল সরবরাহকারীদের তালিকা নেই। যাতে ওই অগ্রিম অর্থের বিষয়টি অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, এই কোম্পানিটির ১০৭ কোটি ২২ লাখ টাকার ঋণাত্মক সংরক্ষিত মুনাফা (রিটেইন আর্নিংস) রয়েছে। এর মধ্যে ৯৯ লাখ টাকার লোকসান ইনকাম স্টেটমেন্টের পরিবর্তে রিটেইন আর্নিংসে সমন্বয় করা হয়েছিল। এই লোকসান যদি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ইনকাম স্টেটমেন্টে দেখানো হতো, তাহলে আলোচ্য বছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান কম হতো ৯ পয়সা, যা না করে ইপিএস বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে।

আর্থিক হিসাবে কাঁচামাল সরবরাহকারীরা কোম্পানির কাছে ১৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা পাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে নিরীক্ষক এ বিষয়ে সত্যতা যাচাইয়ে পাওনাদারদের চিঠি দিলেও ২৭ জনের মধ্যে ১১ জনের পাওনার বিষয়ে সত্যতা পেয়েছে। আর কোম্পানির হিসাবের সঙ্গে ২ কোটি ১৯ লাখ টাকার অসঙ্গতি পেয়েছে।

এদিকে আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কোম্পানিটি ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে টানা লোকসানে রয়েছে। ওই বছরে কোম্পানির কর পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছিল ২৫ কোটি সাড়ে ৭ লাখ টাকা। পরের বছরে কোম্পানির লোকসান হয় ৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। আর সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কোম্পানিটির নিট লোকসান হয়েছে ৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আর চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) কোম্পানির এরই মধ্যে নিট লোকসান হয়েছে ২ কোটি ২২ লাখ টাকা।

২০০০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ফু-ওয়াং ফুডের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১১০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এরমধ্যে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন শ্রেণির (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতীত) বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ৯২ দশমিক ১৫ শতাংশ। অর্থাৎ কোম্পানিটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।


ট্রাম্পের শুল্কে বিভ্রান্ত দেশের রপ্তানিকারকরা

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
    # বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা এখনো জানেন না, নতুন শুল্কহার বর্তমান শুল্কের সঙ্গে যোগ করা হবে, প্রতিস্থাপন করা হবে।

আগামী ৯ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কার্যকর হবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আদেশ। তবে অতিরিক্ত শুল্ক কার্যকরের পর বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা ঠিক কী পরিমাণ শুল্ক আরোপের মুখোমুখি হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা এখনো জানেন না, নতুন শুল্ক হার বর্তমান শুল্কের সঙ্গে যোগ করা হবে নাকি প্রতিস্থাপন করা হবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। তবে ওই আদেশে পণ্যভিত্তিক শুল্ক হারের তালিকা বা কাস্টমস গাইডেন্স দেওয়া হয়নি। এতে বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি খাতে এক ধরনের বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান শুল্কের বাইরে যদি ৩৭ শতাংশ শুল্ক যোগ করা হয়, তাহলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, বাংলাদেশের পোশাকের ওপর কার্যকর শুল্ক বর্তমান গড় ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪৮ দশমিক ৫৬ শতাংশে দাঁড়াবে। অর্থাৎ ঢাকা থেকে ১০০ ডলারের টি-শার্ট বা জিন্সের চালানে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরে আমদানি শুল্ক বাবদ প্রায় ৪৯ ডলার দিতে হবে, যা বর্তমানে মাত্র ১১ দশমিক ৫৬ ডলার।

দেশের অন্যতম বৃহৎ ডেনিম রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এম তানভীর বলেন, “আমরা সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। কারণ ট্রাম্পের আদেশে পরিষ্কারভাবে এটিকে ‘অতিরিক্ত’ শুল্ক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ৯ এপ্রিলের আগে আমরা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারব না।”

হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই আদেশের দ্বারা নির্ধারিত শুল্কের হারগুলো প্রযোজ্য অন্য কোনো শুল্ক, ফি, কর বা চার্জের অতিরিক্ত। তবে তারা দেশ বা পণ্য অনুসারে আর কিছু জানায়নি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখনো পরিষ্কার নই। এটি ৩৭ শতাংশ হতে পারে, কিংবা যদি বর্তমান মোস্ট ফেভারড নেশন (এমএফএন) হারের সঙ্গে যোগ করা হয় তাহলে ৫২ শতাংশেরও বেশি হতে পারে, যা বাংলাদেশের জন্য ইতোমধ্যে অনেক পণ্যে ১৫ শতাংশের ওপরে আছে।’

অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির জানান, তার প্রতিষ্ঠান এখনো ক্রেতাদের কাছ থেকে হালনাগাদ ট্যারিফের তথ্য পায়নি।

‘তবে বিভিন্ন সূত্র পরামর্শ দিয়েছে, বর্তমান হারকে প্রতিস্থাপন করে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হতে পারে, অথবা বর্তমান হারের সঙ্গে যোগ হতে পারে।’

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির প্রশাসক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি পোশাক ব্র্যান্ড ইতোমধ্যে জানিয়েছে, বাংলাদেশে নতুন শুল্ক ৪৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ হতে পারে।’

‘সেই ধারণার ওপর ভিত্তি করেই আমরা কৌশল প্রণয়ন করছি। আর নির্বাহী আদেশে স্পষ্টভাবে এটাকে বাড়তি শুল্ক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে,’ বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, শুল্ক সমন্বয় হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হলেও এর মূলে আছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমাগত বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে বৃহত্তর উদ্বেগ।

তার ভাষ্য, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি বাণিজ্য অর্থনীতি, যা আমদানির ওপর নির্ভর করে। এই পদক্ষেপ শুধু শুল্কের জন্য নয়, বরং তারা বাণিজ্য প্রবাহকে ওয়াশিংটনের অনুকূলে নিতে চায়।’

যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতিটি অন্যান্য শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশের ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে অনুমান করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বৈশ্বিক সোর্সিং কীভাবে পরিবর্তিত হতে পারে তার একটি ধারণা দিয়েছেন।

চীনের পোশাকের শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছাতে পারে, যেখানে ভিয়েতনামের শুল্ক ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে। ভারতের ৩৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ৪৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ, কম্বোডিয়ায় ৬০ দশমিক ৭ শতাংশ ও পাকিস্তানের ৪১ দশমিক ৪৬ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি বাজারের ৯ শতাংশ বাংলাদেশের দখলে। এ ছাড়া বাংলাদেশের মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় ২৪ শতাংশই হয় যুক্তরাষ্ট্রে।

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একক বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য। ২০২৪ সালে দেশটিতে ৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এতে চীন ও ভিয়েতনামের পরে তৃতীয় পোশাক সরবরাহকারী দেশ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। এ খাতে ৪০ লাখেরও বেশি শ্রমিক কাজ করেন এবং বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশেরও বেশি তৈরি পোশাক।

রপ্তানিকারক এবং নীতিনির্ধারকরা একমত যে, এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার এখনই সময়।

অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির বলেন, ‘আমাদের উৎপাদন সক্ষমতা ও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মতো অবস্থান রয়েছে। কিন্তু অন্য দেশগুলো যদি শুল্ক হার কমিয়ে দেয়, তাহলে আমরা দ্রুত বাজার হারাব।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং রপ্তানিকারকরা অবিলম্বে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন।

প্যাসিফিক জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এম তানভীর বলেন, ‘অন্যান্য দেশ এরই মধ্যে আলোচনা শুরু করেছে। আমাদেরও একই কাজ করতে হবে এবং তা দ্রুত করতে হবে। এখনো একটি কার্যকর ফলাফল খুঁজে বের করার সুযোগ আছে।’


ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ও রাজস্ব বাড়ানোর পরামর্শ আইএমএফের

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১৫:৩৪
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সফররত প্রতিনিধিদল।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে রোববার (৬ এপ্রিল) বৈঠক করে আইএমএফের প্রতিনিধিদল। বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। সচিবালয়ের অর্থ উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই বৈঠক হয়। আইএমএফের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন মিশন প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কাঙ্ক্ষিত হারে রাজস্ব আদায় না হওয়া প্রসঙ্গে আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশে কর জাল অনেক কম। এখানে লাখ লাখ শূন্য রিটার্ন দিয়ে থাকে। ভ্যাটের একক হার দেখতে চায় আইএমএফ। কিন্তু আমরা একেবারে একক ভ্যাট হারে যেতে পারব না।’

ঋণখেলাপি ও ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, খারাপ ঋণ কীভাবে কমাব, আইন সংশোধন- এসব নিয়ে কথা বলেছে আইএমএফ। তিনি বলেন, ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জুন মাসে দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের জন্য এই মিশন অর্থনীতির বিভিন্ন পর্যালোচনা করবে। মে-জুন মাসে তারা বাংলাদেশের অর্থনীতি পর্যালোচনা প্রতিবেদন নিয়ে বৈঠক করে ঋণের দুই কিস্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, শুল্ক-কর নিয়ে আইএমএফ জানতে চেয়েছে, কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াব কীভাবে? কর আদায় বাড়াব কীভাবে? এ ছাড়া করনীতি ও কর আদায়—এ দুটি বিভাগ আলাদা করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। সার্বিকভাবে বাজেট ঘাটতি কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, সেই বিষয়েও আইএমএফ জানতে চেয়েছে।

সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ে এবারের মিশন রাজস্ব পরিস্থিতি, কর-জিডিপি অনুপাত, বিদেশি মুদ্রার মজুত, বাজেট ঘাটতি—এসব বিষয় পর্যালোচনা করবে। সংস্কারের বিষয়ে বাংলাদেশ ভালো মনোভাব দেখিয়েছে বলে অর্থ উপদেষ্টা জানান।

বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সন্তোষ প্রকাশ করেছে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ওদের (আইএমএফ) মূল ফোকাস ট্যাক্স জিডিপি রেশিও বাড়ানো, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আর একটু স্থিতিশীল করা, বাজেটে ঘাটতি কমানো।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা ভ্যাটের হার সিঙ্গেল রেটে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছি। তবে ভ্যাট একবারে সিঙ্গেল রেটে নামিয়ে আনা সম্ভব নয়।

ভ্যাট সিঙ্গেল রেটে নামিয়ে আনার বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কী? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সিঙ্গেল রেটের বিষয়ে আমরা চেষ্টা করবো। তবে আমরা একবারে সিঙ্গেল রেটে পৌঁছাতে পারবো না।

আইএমএফ ঋণের কিস্তির বিষয়ে তিনি বলেন, দুই কিস্তির অর্থ একবারে দেবে। ওরা এখন রিভিউ করবে। আমরা ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও বাড়াবো কীভাবে, মাত্র ৭ শতাংশ আছে। তারপর আমাদের ট্যাক্স কালেকশন কীভাবে করবো। ট্যাক্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশন লিকেজ যেন না হয়।

বেসিকলি আইএমএফের কনসার্ন হলো রেভিনিউ জেনারেশন, আমাদের বাজেট সাইজ কত হবে, ডেফিসিট (ঘাটতি) কত হবে, এগুলো নিয়ে আপাতত কথা হয়েছে। আমার সঙ্গে ডিটেইল কথা হয়নি, এনবিআরের সঙ্গে কথা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা হবে লোন রেজুলেশন নিয়ে, বলেন অর্থ উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, সার্বিকভাবে ব্যাংকখাতের শৃঙ্খলা, খেলাপির ঋণ আদায়, এনবিআরের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও বাড়াবো কীভাবে, কোন কোন ক্ষেত্রে বাড়াবো এগুলো নিয়ে আমার সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। সবার সঙ্গে ওরা ইন্ডিভিজুয়ালি বসবে। তারপর আপনারা কয়দিন পরে জানতে পারবেন।

আইএমএফ ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ পাওয়ার বিষয়ে এর আগে আপনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। এখন আপনাদের অবস্থান কী? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা আশাবাদী। ওরা বলেছে দেখব। ওরা যাওয়ার পর ১৯ এপ্রিল আমি যাবো। তারপর মে-জুনের দিকে বৈঠক হবে। এই রিভিউয়ের ওপরই তাদের সুপারিশ।

চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ঋণের ক্ষেত্রে উনাদের মূল ফোকাস কী? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ট্যাক্স জিডিপি রেশিও বাড়ানো, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আর একটু স্থিতিশীল করা, তারপর বাজেটে ঘাটতি কমানো এগুলো মেইন ফোকাস।

বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে ওরা কী বলেছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ওরা বলেছে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন মোটামুটি স্থিতিশীল, গতিশীল, সঠিক পথে আছে। কিন্তু রিভিউ করার পর আর একটু দেখবে। ওরা বলেছে ওরা সন্তুষ্ট বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন স্থিতিশীল। তবে ওরা ডিটেইল জিনিসগুলো দেখবে।

কোন বিষয়গুলোতে কম্প্রোমাইজ করতে হবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি সোজাসুজি বলেছি আমাদের পক্ষ থেকে যা যা করার দরকার আমরা করতে চেষ্টা করছি। অলরেডি আমাদের গুড ইনটেনশন দেখিয়েছি। ওদের দিক থেকে ওদের গুড ইনটেনশন দেখাক। দেন উই এনগেজ। আমরা আলাপ করবো। হোপ এগ্রি।

ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কী? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলবো।

রাজস্ব খাতে কী করতে হবে, ওরা কী চায়? এমন প্রশ্নের উত্তরে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। আমাদের জিডিপি নেপালের চেয়ে অনেক বড়, ওরা বলে নেপালের থেকে তোমাদের অনেক কম। ওদের (নেপাল) ১২-১৩ শতাংশ। ভারতে প্রায় ১৭-১৮ শতাংশ।

ওরা বলছে, তোমাদের এটা (ট্যাক্স জিডিপি রেশিও কম) হওয়ার কারণ হয় নেট (আওতা) কম। লাখ লাখ লোক আছে যারা জিরো ট্যাক্সে রিটার্ন দেয়, তাদের আয় আছে কিন্তু তারা রিটার্ন দেয় না, বলেন অর্থ উপদেষ্টা।


দেশে রিজার্ভ বেড়ে ২৫.৬২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১৩:৫০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫.৬২ বিলিয়ন ডলারে। গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান এ তথ্য জানিয়েছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, চলতি মাসের ৬ তারিখ পর্যন্ত দেশের গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ২৫৬২৫.৩৮ মিলিয়ন বা ২ হাজার ৫৬২ কোটি ৫৩ লাখ ৮০ হাজার ডলার। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ এখন ২০৪৬০.৫২ মিলিয়ন বা ২ হাজার ৪৬ কোটি ৫ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার।

এর আগে মার্চ মাসের ২৭ তারিখ কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছিল, সেদিন পর্যন্ত দেশের গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ২৫৪৪০.৮৮ মিলিয়ন বা ২ হাজার ৫৪৪ কোটি ৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ এখন ২০২৯৬.৯৩ মিলিয়ন বা ২ হাজার ২৯ কোটি ৬৯ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার।

এদিকে গত মার্চ মাসে দেশে এসেছে ৩২৯ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। যা দেশের ইতিহাসে কোনে এক মাসে সর্বোচ্চ।


দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এল মার্চে

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

সব রেকর্ড ভেঙে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এক মাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে বিগত মার্চে। এই মাসের ৩১ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ৩২৯ কোটি বা ৩.২৯ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি। সে হিসেবে প্রতিদিন প্রায় ১১ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। ইতোপূর্বে এত রেমিট্যান্সপ্রবাহ আর কখনো দেখা যায়নি। গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ৩ বিলিয়ন (৩০০ কোটি) ডলারেরও বেশি। গত ডিসেম্বরে দেশে ২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আসে।

ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে প্রবাসীরা এবার প্রচুর পরিমাণে অর্থ বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে পাঠিয়েছেন। শুধু ২৭-৩১ মার্চ এ সময়ের মধ্যেই রেমিট্যান্স এসেছে ৩৪৫ মিলিয়ন ডলার। বৈধ চ্যানেলে অর্থ প্রেরণের কারণেই এবার রেমিট্যান্সে ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় এ বছর মার্চে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বেড়েছে ৬৪.৭০ শতাংশ। ২০২৪ সালের মার্চে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ১.৯৯ বিলিয়ন ডলার।

মার্চের আগে চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছিল ২.৬৪ বিলিয়ন ডলার, যা এতদিন ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সর্বোচ্চ ২.৬৪ বিলিয়ন রেমিট্যান্স এসেছিল। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, আগস্টে এসেছিল ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, নভেম্বর মাসে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরপরই বেড়ে যায় রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের গতি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দেশ থেকে অর্থপাচার কমেছে। একই সঙ্গে কমেছে হুন্ডি কারবারির দৌরাত্ম্যও। অন্যদিকে খোলা বাজারের মতোই ব্যাংকে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম পাওয়া যাচ্ছে। এসব কারণে প্রবাসীরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাছাড়া আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে আরও বেশি বেড়েছে রেমিট্যান্স আসার গতি।

২০২০ সালে করোনাকালে জুলাই মাসে ২ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এবার সেই রেকর্ড ভাঙে ২০২৪ সালের বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে। ২০২৪ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল প্রায় ২৬৪ কোটি ডলার। এবার মার্চ মাসে সেই রেকর্ড অতিক্রম করে নতুন ইতিহাস তৈরি হলো।


banner close