বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট ২০২৪

ডেনমার্কের ১৩০ কোটি মার্কিন ডলারের উইন্ড এনার্জি প্রকল্প প্রস্তাব

প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা
প্রকাশিত
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা
প্রকাশিত : ১২ জুলাই, ২০২৩ ২৩:০০

১৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী অঞ্চলে বাতাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ অনুযায়ী, নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে বিশ্বের নেতৃস্থানীয় গ্রিন ফিল্ড বিনিয়োগ ও নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান কোপেনহেগেন ইনফ্রাস্টাকচার পার্টনারস (সিআইপি) এবং কোপেনহেগেন অফশোর পার্টনারস (সিওপি) বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রতীর দূরবর্তী ‘অফশোর উইন্ড এনার্জি’ প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে বিনিয়োগের প্রস্তাব করেছে, যার মূল্য ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার। প্রাথমিকভাবে এই প্রকল্পের ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা থাকবে।

এই অফশোর উইন্ড প্রকল্পটি হবে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার ও ‘নীল অর্থনীতি’ উন্নয়নের জন্য একটি অনন্য সুযোগ।

সম্প্রতি ডেনমার্কের উন্নয়ন সহযোগিতা ও বৈশ্বিক জলবায়ুনীতিবিষয়ক মন্ত্রী ড্যান ইয়োগেনসন, তার ঢাকা সফরে সবুজ, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে কাজ করার ব্যাপারে সম্মতি প্রকাশ করেন। এ সময় দুপক্ষই বাংলাদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণ সহজতর করতে ড্যানিশ বিনিয়োগের ওপর গুরুত্ব দেন। এদিকে ডেনমার্ক নবায়নযোগ্য শক্তি, সমুদ্রভিত্তিক ও নীল অর্থনীতি খাতে সহায়তার বিষয়ে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করে।

প্রাথমিক গবেষণা অনুযায়ী, প্রকল্পটির নির্মাণকাজের সময়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হাজারও চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া প্রকল্পটির প্রথম ৩০ বছরের পরিচালনাকালেও বেশ কিছু পূর্ণকালীন পদে চাকরির সুযোগ তৈরি হবে।

এই প্রকল্পের প্রস্তাবনায় স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান (আইপিপি) সামিট গ্ৰুপকে কনসোর্টিয়ামে নিয়েছে সিআইপি এবং সিওপি।


পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে

ফাইল ছবি
আপডেটেড ২২ আগস্ট, ২০২৪ ১২:৪৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো

পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে অনেকটাই ভারতের ওপর নির্ভর বাংলাদেশ। ভারত কোনো কারণে রপ্তানি বন্ধ করলে কিংবা দেশে কোনো সংকট তৈরি হলেই বাড়ে পেঁয়াজের দাম। চলতি বছর ভরা মৌসুমেও দেশে পেঁয়াজের দাম ছিল চড়া। এখনো এক শ টাকার বেশি দামে পেঁয়াজ কিনে খেতে হচ্ছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকার পতনের পর থেকে ভারতের পাশাপাশি পাকিস্তান, চীন, থাইল্যান্ড এবং মিসর থেকে দেশে পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে বাজারে। দেশে ভোগ্যপণ্যের দ্বিতীয় বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম।

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে বড় ব্যবসায়ীরা এলসি খোলা বন্ধ করে দিলে ছোট আমদানিকারকরা পাকিস্তান, চীন, থাইল্যান্ড এবং মিশর থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি (ঋণপত্র) খোলেন। ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর পরই ওইসব দেশের পেঁয়াজের চালান চট্টগ্রাম বন্দরে চলে আসে। এরই মধ্যে বন্দর থেকে খালাস নিয়ে আমদানিকারকরা এসব পেঁয়াজ বাজারে ছেড়েছেন। তাতেই কমতে শুরু করেছে দাম। খাতুনগঞ্জের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত কমেছে পেঁয়াজের দাম।

খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে বর্তমানে ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৯২ টাকা, চায়না পেঁয়াজ ৫৫, মিসর থেকে আসা পেঁয়াজ ৭০ এবং পাকিস্তান থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে

দেশে ভোগ্যপণ্যের দ্বিতীয় বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই। এ বাজার থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারসহ আশপাশের জেলা-উপজেলায় ভোগ্যপণ্য সরবরাহ করা হয়। পাইকারি এ বাজারে দাম বাড়লে এর প্রভাব পড়ে চট্টগ্রামজুড়ে। তবে বাড়লে যত দ্রুত প্রভাব খুচরা বাজারে পড়ে, কমলে ধীরে ধীরে প্রভাব পড়ে বলে জানান পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই এলাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারে বিভিন্ন দেশের পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে। আবার বিগত সময়ে চোরাইপথে আসা ভারতীয় পেঁয়াজের জোগানও রয়েছে। খাতুনগঞ্জের মেসার্স আবদুল মাবুদ সওদাগরের পরিচালক নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভারত থেকে বৈধ উপায়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ। এখন পাকিস্তান, মিশর, চায়না থেকে পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে। যে কারণে এখন বাজারে সংকট নেই। দামও কমছে। অন্তত আগামী দুই মাস বাজারে পেঁয়াজের সংকট হবে না।

কাস্টম সূত্র বলছে, চলতি মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা ২ হাজার ৮৩২ টন পেঁয়াজ শুল্কায়ন ও খালাস হয়েছে। এর মধ্যে পাকিস্তান থেকে আসা ১ হাজার ৯৩৩ টন, চায়না থেকে ৫৮০ টন, মিশর থেকে ৩১৪ টন এবং থাইল্যান্ড থেকে আসা ৫ টন পেঁয়াজ রয়েছে।


ব্যাংকিং খাতে জরুরি সংস্কার চান ব্যবসায়ীরা

প্রতীকী ছবি
আপডেটেড ২১ আগস্ট, ২০২৪ ১২:৩৯
নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্যবসার নামে ব্যাংক থেকে অর্থ লুটপাটকারীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, ব্যবসার নাম করে যারা লুটপাটে জড়িয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে ব্যবসায়ী সমাজ সহযোগিতা করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এমন মনোভাবের কথা জানায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলমের নেতৃত্বাধীন একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল। মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যালয়ে গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সোয়া একটা পর্যন্ত প্রতিনিধিদলটি গভর্নরের সঙ্গে কথা বলে।

ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিদলে ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ, বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল প্রমুখ।

গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে আবদুল আউয়াল মিন্টু সাংবাদিকদের বলেন, ‘যারা অন্যায়ভাবে সম্পদ লুট করেছে, অন্যায়ভাবে সম্পদ অর্জন করেছে এবং ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ফেরত দেয়নি, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে গভর্নরকে অনুরোধ করেছি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ভালো ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারবে না।’

গভর্নরের কাছে ব্যাংক ঋণের কিস্তি ৩ থেকে ৬ মাস বাড়ানোর দাবি করেছেন বলে জানান এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, ‘আমরা ঋণের কিস্তির সময়সীমা ৩ থেকে ৬ মাস বাড়ানোর কথা বলেছি। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তারপরও সময় না বাড়লে অনেক ব্যবসায়ী ঋণখেলাপি হয়ে যাবে।’

এফবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, ‘জ্বালানি ও নিত্যপণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছি। এ বিষয়ে গভর্নর সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছেন।’ এ ছাড়া গত ১ থেকে ২ মাসে শিল্পকারখানার ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বেতন-ভাতা পরিশোধে ব্যবসায়ীদের নমনীয় সুদে ঋণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ডলারের বিনিময় হারের কারণে লোকসানে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। এটা নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা গভর্নরকে বলেছি।’ তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ী সমাজ অর্থনীতির পক্ষে। সরকারের যেকোনো ভালো পদক্ষেপে তারা সহায়তা করবেন।

বিগত সরকারের সময়ে ভুল তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে যেসব নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল, সেগুলো পুনর্বিবেচনার কথা বলেছেন ব্যবসায়ীরা। এই বিষয়টি জানিয়ে মোহাম্মদ হাতেম সাংবাদিকদের বলেন, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে আমদানি-রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া ভুল তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে রপ্তানি প্রণোদনা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব বিষয় পুনর্বিবেচনা করা দরকার।

মোহাম্মদ হাতেম আরও বলেন, ‘গভর্নরের সঙ্গে সভায় আমরা ব্যাংকিং খাতের সংস্কারে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। সংস্কার খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া সুদহার কমানোর বিষয়ে কথা হয়েছে। সে জন্য গভর্নর ৬ থেকে ৭ মাস সময় চেয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমলে তিনি সুদহার কমানোর বিষয়ে কাজ করবেন।’


বৈশ্বিক কনটেইনার পরিবহন সূচকে চট্টগ্রাম বন্দর ৬৭তম

ফাইল ছবি
আপডেটেড ২০ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০৩
নিজস্ব প্রতিবেদক

কনটেইনার পরিবহন ও সংরক্ষণ পরিসংখ্যানে চট্টগ্রাম বন্দর শীর্ষ ১০০ বন্দরের মধ্যে ৬৭তম স্থান অধিকার করেছে। লন্ডনভিত্তিক শিপিং মিডিয়া আউটলেট লয়েডস লিস্টের সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনে ২০২৩ সালের পারফরম্যান্স অনুযায়ী এই সূচক প্রকাশ করা হয়েছে।

২০২৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দর ৩০,৫০,৭৯৩ টিইইউ (টোয়েন্টি-ফুট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিট) কনটেইনার পরিবহন ও সংরক্ষণ করেছে, যা ২০২২ সালে পরিবহন ও সংরক্ষণ করা ৩১,৪২,৫০৪ টিইইউ থেকে সামান্য কম।

এই সময়কালে বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কনটেইনার পরিবহন ও সংরক্ষণ ৯১,৭১১ টিইইউ কমেছে। এর আগেও চট্টগ্রাম বন্দর ২০২৩ সালের শীর্ষ ১০০ বন্দরের তালিকায় ৬৭তম স্থানে ছিল।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, ২০২৩ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়, যার ফলে বাংলাদেশে মার্কিন ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পায়। এর প্রতিক্রিয়ায় সরকার বিলাসবহুল পণ্যের আমদানির ওপর কঠোর নিয়মাবলি আরোপ করে। ফলে আমদানিকারকরা লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হন, যা সেই বছরে বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে হ্রাস ঘটায়।

বন্দর কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন যে, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন বন্দরে একই ধরনের প্রবণতা দেখা গেছে, যা কনটেইনারের পরিমাণ কমলেও চট্টগ্রাম বন্দরের সূচক নিচে নামাতে পারেনি। তারা আরও জানান, বৈশ্বিক মন্দা না থাকলে কম পরিবহন ও সংরক্ষণের কারণে বন্দরের সূচকে আরও নিচে নেমে যেত।

লয়েডস লিস্টের তথ্য অনুযায়ী, চীনের সাংহাই বন্দর শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। ২০২৩ সালে ৪৯,১৫৮,৩০০ টিইইউ পরিবহন ও সংরক্ষণ করেছে সাংহাই বন্দর। আর তার পরেই রয়েছে সিঙ্গাপুর বন্দর, যা ৩৯,০১০,০০০ টিইইউ পরিবহন ও সংরক্ষণ করেছে।

চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশের মোট সমুদ্র বাণিজ্যের ৯২% এবং কনটেইনার ট্রাফিকের ৯৮% পরিচালনা করে। তবে, বন্দরের মাধ্যমে পরিবাহিত মোট কার্গোর মধ্যে কনটেইনারের পরিমাণ মাত্র ২৭%, বাকি ৭৩% বাল্ক ক্যারিয়ার এবং ট্যাঙ্কারের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়।

লয়েডস লিস্টে বন্দরের র‌্যাংকিং সময়ের সঙ্গে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি করেছে বন্দরটি। বন্দরটি ২০১০ সালে এটি ৮৮তম স্থানে ছিল, ২০১১ সালে ৮৯তম, ২০১২ সালে ৯০তম, ২০১৩ সালে ৮৬তম, ২০১৪ সালে ৮৭তম, ২০১৫ সালে ৭৬তম, ২০১৬ সালে ৭১তম, ২০১৭ সালে ৭০তম, ২০১৮ সালে ৬৪তম, ২০১৯ সালে ৫৮তম এবং ২০২০ সালে ৬৭তম স্থানে ছিল।

২০২১ সালে চট্টগ্রাম বন্দর তিন ধাপ এগিয়ে ৬৪তম স্থানে উঠে আসে, এরপর ২০২২ এবং ২০২৩ সালে আবারও ৬৭তম স্থানে ফিরে আসে।


ডিএসইর চেয়ারম্যান হাফিজ মো. হাসানের পদত্যাগ

হাফিজ মো. হাসান। ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান হাফিজ মো. হাসান পদত্যাগ করেছেন। গতকাল রোববার রাতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. মোহসীন চৌধুরীর কাছে তিনি পদত্যাগ পত্র জমা দেন। একই সঙ্গে তিনি পদত্যাগ পত্রের একটি কপি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত এমডিসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়েছেন।

বিএসইসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহসীন চৌধুরী হাফিজ মো. হাসান বাবুর পদত্যাগের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আর ডিএসই কার্যালয়ে যাননি মো. হাসান। এর মধ্যে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) পক্ষ থেকে সংস্থাটির চেয়ারম্যান হাফিজ মো. হাসানের পদত্যাগসহ ডিএসইর পর্ষদ পুনর্গঠনের দাবি তোলা হয়। ওই দাবির পর তাৎক্ষণিকভাবে উদ্যোগ নেওয়া না হলেও অবশেষে গতকাল তিনি পদত্যাগ পত্র জমা দেন।

২০২৩ সালের মার্চ মাসে ডিএসইর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন হাফিজ মো. হাসান। দায়িত্ব গ্রহণকালে তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পদত্যাগ করা পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে শেয়ার বাজারে পরিচিত ছিলেন তিনি।


দেশের বাজারে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দাম উঠল স্বর্ণের

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের বাজারে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দাম উঠল স্বর্ণের। সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৯০৪ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ২২ হাজার ৯৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামীকাল সোমবার থেকে নতুন দাম কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।

স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের (পাকা স্বর্ণ) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাম বাড়ানো হয়েছে। আজ রোববার বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৈঠকে নতুন করে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরবর্তীতে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

নতুন মূল্য অনুযায়ী, সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৯০৪ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৯৮৫ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৭৭৬ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ১৭ হাজার ৩৯৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৩৭৯ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৬২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৯৭১ টাকা বাড়িয়ে ৮৩ হাজার ১৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর আগে গত ১৫ জুলাই সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ১৯০ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ২০ হাজার ৮১ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ১৩১ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ১৪ হাজার ৬২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ১৮ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ৯৬৮ টাকা বাড়িয়ে ৯৮ হাজার ২৪৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি স্বর্ণের দাম ৮৫ টাকা বাড়িয়ে ৮১ হাজার ২২৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আজ রোববার পর্যন্ত এ দামেই স্বর্ণ বিক্রি হয়েছে।

স্বর্ণের দাম বাড়ানো হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ১০০ টাকা, ২১ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ১ হাজার ৭১৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি রুপার দাম ১ হাজার ২৮৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।


সিন্ডিকেট বন্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে বলেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাজারে সিন্ডিকেট বন্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। আজ রোববার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।

সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে কী ভূমিকা রাখবেন জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, রাজধানীর কারওয়ান বাজারেই একটা পণ্য চারবার হাতবদল হয়। এগুলো প্রিজামপটিভ মানি, এত টাকায় বিক্রি করলে এত টাকা পাওয়া যাবে। এভাবে টাকা আদায় করা হয়। এগুলো বন্ধ করতে হবে। চাঁদাবাজি হয়। একটা ট্রাক ঢাকা পর্যন্ত আসতে সাত হাজার টাকা লাগে, কেউ একজন আমাকে বলেছিল।

তবে এটা কিন্তু বাণিজ্য কিংবা অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নয়। এটা যাদের দায়িত্ব তাদের সঙ্গে কথা বলব-বলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর অনেকে আত্মগোপনে গেছেন। নতুন করে চাঁদাবাজ তৈরি হবে না, সেই নিশ্চয়তা কী? সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমার কাছে অনেক প্রতিবেদন আসছে। চাল কিনবে চাতাল থেকে, এক গ্রুপ নিয়ে চলে গেছে, আরেক গ্রুপ এসে আবার চাঁদা দাবি করেছে। তখন আমি বলেছি তাৎক্ষণিকভাবে ডেপুটি কমিশনারকে বলো খোঁজ-খবর নিতে যাতে ভালো ব্যবসায়ীরা বাধাপ্রাপ্ত না হন। আমি জানি এক গোষ্ঠী গেলে নতুন আরেক গোষ্ঠী আসবে।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (টিসিবি) কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে সালেহউদ্দিন বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে খোলাবাজারে কিছু বিক্রি করতে হবে। তবে সবকিছু একদিনে প্রত্যাশা করা যাবে না-এমন মন্তব্য করে এই উপদেষ্টা বলেন, হঠাৎ করে সবকিছু বন্ধ করে দিলে লোকজন ভুক্তভোগী হবেন। এ সময়ে এক কর্মকর্তা বলেন, নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে টিসিবির ডিস্ট্রিবিউশন স্থগিত আছে। পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এটা চালু করা হবে।

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার সজাগ: দ্রব্যমূল্যের বিষয়টি উৎপাদন ও সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল। উৎপাদন ভালো হলে সরবরাহ বাড়বে আর দ্রব্যমূল্য কমে আসবে। ফলে এ সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে সহায়ক পরিবেশ রাখার চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, দেশে কোনো পণ্যের উৎপাদন কম হলে যতটা সম্ভব আমদানি করতে হবে। সাধারণ মানুষ যেন চাপে না পড়ে, তা নিশ্চিত করা হবে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে করণীয় বিষয়ে সরকার সজাগ আছে।

আজ রোববার দুপুরে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে কী পদক্ষেপ নেবেন- জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, দ্রব্যমূল্যের বিষয়টি উৎপাদন ও সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল। এর সঙ্গে বাণিজ্যের সম্পর্ক আছে। ফলে এ রিলেটেড বিষয়গুলোতে সহায়ক পরিবেশ রাখার চেষ্টা করা হবে। আমদানিসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের বিষয়ে আমরা যথেষ্ট সজাগ আছি। আমাদের সহকর্মীরা কাজ করছেন।

আমদানিনির্ভর পণ্য নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আমদানির ওপর নির্ভরশীল সেটা জানি। আমদানির যে মূল্যস্ফীতি সে বিষয়ে আমরা সজাগ আছি। যতটুকু সম্ভব আমাদের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আমদানি করতে হবে। যেন বাজার, ভোক্তা ও সাধারণ মানুষের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে। এখন যে চাপটা রয়েছে সেটাও যেন কমে আসে সে চেষ্টা থাকবে। অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, অর্থনীতির বড় স্তম্ভ হচ্ছে বাণিজ্য। দেশীয় ও বৈদেশিক বাণিজ্য দুটি মিলেই। যতটা সম্ভব, দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের সহায়ক পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করা হবে। দুর্নীতি যেন না হয়, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে। মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে বাণিজ্যের বড় ভূমিকা আছে। ফলে এসব ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দূর করার চেষ্টা করা হবে।

তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের সমস্যাগুলোর মধ্যে শুধু খাদ্যদ্রব্য নয়, বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্যাগুলোও আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি। এটি যত দ্রুত পারি করবো। এজন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত সব সংস্থার সঙ্গে বসবো। কারণ, তাদের সহযোগিতা লাগবে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও এডিবির যতগুলো প্রকল্প আছে সেগুলোর মধ্যে যৌক্তিক প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম আমরা বন্ধ করিনি। তারা বলেছেন, আমরা বললে তারা কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, চলমান যেসব প্রকল্প যৌক্তিক, সেগুলো চালিয়ে নেওয়ার বিষয়ে কথা হয়েছে। একই সঙ্গে পাইপলাইনে যেসব প্রকল্প আছে বা ভবিষ্যতে আরও যেসব প্রকল্প নেওয়া হবে, সেখানে তারা সহায়তা করবে। তারা ইতিবাচক। এডিবি ও বিশ্ব ব্যাংক আমাদের সহায়তা করবে।

রিজার্ভ বাড়ানোর বিষয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, রিজার্ভ নিয়ে কথা বলার জন্য গভর্নর আছে। আমরা বেশি গভীরে যাইনি। তারা (এডিবি) এবং আইএমএফ বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলবে। আমরা অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সমন্বয় করে কাজ করব।

এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে এ উপদেষ্টা বলেন, অনেক বড় একটা বিষয়। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের অনেক শর্ত আছে, সেসব বিষয় আমাদের কাছে দৃষ্টিগোচর হয়েছে। শুধু অর্থ মন্ত্রণালয় নয়, এর সঙ্গে এনবিআরসহ অন্যদেরও সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে। সরকারি চাকরিজীবীদের রেশনিং চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমার কাছে সরকারি ও বেসরকারি সাধারণ মানুষ সবাই সমান। প্রত্যেকে যেন একটা সুন্দর জীবন যাপন করতে পারে। আমি সেদিন চাল, ডাল, ডিমসহ পাঁচ খাদ্য নিয়ে আলোচনা করেছি। এগুলো নিয়ে আমরা সজাগ, এগুলো আমরা করব। এটি যেন সমান হারে সরকারি-বেসরকারি সবাই পায় সেটি নিশ্চিত করব।


জনশক্তি রপ্তানিতে সুসময়

জুলাই মাসে প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৭১,৪৪১ জনে দাঁড়িয়েছে
ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১৮ আগস্ট, ২০২৪ ১১:৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক

সারা দেশে ব্যাপক অস্থিরতা থাকা সত্ত্বেও জনশক্তি রপ্তানি আগের মাসের তুলনায় জুলাই মাসে প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৭১,৪৪১ জনে দাঁড়িয়েছে। তবে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যমতে, এই হার গত ৩৩ মাসের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন।

শ্রমশক্তি রপ্তানিকারকেরা আশা করছেন যে, দেশব্যাপী অস্থিরতা বিশেষ করে কোটা-সংস্কারের প্রতিবাদে আন্দোলনের ফলে এই খাতে সম্পূর্ণ প্রভাব আগামী দুই মাসের মধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠবে। এর কারণ শ্রমিকদের মাইগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সাধারণত দুই মাসের বেশি সময় লাগে।

চলতি বছরের জুনে বাংলাদেশ ৫৫,০৪৫ কর্মী বিদেশে পাঠিয়েছে। পরবর্তীতে মালয়েশিয়া বিদেশি শ্রমিকদের দেশটিতে প্রবেশাধিকার বন্ধ রাখে; যা এখনো বহাল রয়েছে। এদিকে শ্রমশক্তি রপ্তানি গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় ৪৩ শতাংশ কমেছে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, জুলাই মাসে যারা গিয়েছে তাদের প্রসেসটা হয়েছে মে-জুন মাসে কিংবা তারও আগে। তাই গত মাসে কেমন প্রসেস হয়েছে তা চলতি মাস কিংবা পরের মাসে বোঝা যাবে। তাই কর্মী যাওয়ার চলমান ফ্লো কন্টিনিউ করবে সেটা এখনই বলা যাবে না।

আলী হায়দার আরও বলেন, ‘সৌদি এখনো আমাদের সবচেয়ে বড় বাজার। ট্রেডিশনালা মার্কেটগুলো ধরে রাখার পাশাপাশি নতুন মার্কেটে আরও বেশি সুযোগ উন্মুক্ত করার চেষ্টা চালাতে হবে।’

জুলাই মাসে সৌদি আরব বাংলাদেশ থেকে ৪৭,৮৬৭ জন কর্মী নিয়েছে; যা একক দেশ হিসেবে সর্বোচ্চ। এর পরের তালিকায় রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, কাতার ও কুয়েত। এদের মধ্যে বেশির ভাগ শ্রমিক নির্মাণ শিল্পে কাজ করতে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ সৌদি আরবে সার্ভিস সেক্টর কিংবা গৃহস্থালি কাজেও যুক্ত হচ্ছেন।

চলতি বছরের মে মাসের শুরুতে সৌদি আরবে শ্রমশক্তি রপ্তানির সংখ্যা ছিল মাত্র ৩০ হাজার জন। কারণ বিএমইটি রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে সত্যায়িত না থাকা একক ভিসাধারীদের বিরুদ্ধে দুই সপ্তাহ ধরে ছাড়পত্র দেয়নি। মূলত সৌদি আরবে বাংলাদেশি শ্রমিকদের বেকারত্ব রোধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যের ট্র্যাডিশনাল শ্রমবাজারের পাশাপাশি ইউরোপের কিছু দেশ ক্রমাগত বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিচ্ছে। যদিও সেটি সংখ্যায় অল্প। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে গত মাসে ক্রোয়েশিয়ায় ৩৯২ জন, সাইপ্রাসে ১৪২ জন, পর্তুগালে ১৩৭ জন, রোমানিয়ায় ২৫৮ জন, সার্বিয়ায় ১৩১ জন এবং যুক্তরাজ্যে ২৫১ জন গিয়েছেন।

শ্রমশক্তি রপ্তানিকারকেরা ইউরোপে দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এই বিষয়ে বায়রার সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, ‘এই মুহূর্তে সৌদি আরবে নির্মাণ শ্রমিকের চাহিদা ভাল। তবে সাম্প্রতিক অস্থিরতার জন্য প্রসেসিং করতে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে। আশা করি সামনে পরিস্থিতি আরেও নরমাল হলে কর্মী যাওয়ার ফ্লো দ্রুত হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার যদি দুই এক মাসের মধ্যে না খোলে তাহলে এই বছর গত দুই বছরের ন্যয় ১০ লাখের বেশি কর্মী পাঠানোর টার্গেট পূরণ হবে না।’

অভিযুক্ত রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার বড় ধরণের অভিযোগের মাধ্যমে মালয়েশিয়া ইতোমধ্যে গত ১ জুন থেকে শ্রমবাজার বন্ধ করে দিয়েছে। মালয়েশিয়ান কর্তৃপক্ষ মাত্র ১০০টি বেসরকারি এবং একটি সরকারি নিয়োগকারী সংস্থাকে কর্মী পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে প্রাইভেট এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে 'সিন্ডিকেট' তৈরির অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আগামী মাসের মধ্যে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। যেখানে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরায় চালু করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

যদিও বাংলাদেশ কোভিড-পূর্ববর্তী সময়কালে প্রতি মাসে ৬০ থেকে ৭০ হাজার জনশক্তি রপ্তানি করতো। তবে কোভিড-পরবর্তী সময়ে এই সংখ্যা বেড়ে ১ লাখেরও বেশি পৌঁছায়।

এদিকে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের কারণে প্রবাসীরা কিছু সময়ের জন্য টাকা পাঠাতে না পারায় জুলাই মাসে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন; অর্থাৎ ১.৯০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এছাড়া তৎকালীন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের অংশ হিসেবে প্রবাসীদের মধ্যে ‘নো রেমিট্যান্স’ প্রচারণা ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে সর্বনিম্ন প্রবাসী আয় ছিল ১ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার।

জুলাই মাসে অবশ্য রেমিট্যান্স প্রাপ্তি গত বছরের তুলনায় ৩.২ শতাংশ কম ছিল। কারণ দেশজুড়ে পাঁচ দিনের ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের কারণে অভিবাসী শ্রমিকদের বাড়িতে পাঠানো অর্থ ব্যাঙ্কগুলি সংগ্রহ করতে পারেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই মাসে রেমিট্যান্স প্রাপ্তি ছিল ১.৯৭ বিলিয়ন।


সপ্তাহের ব্যবধানেও কমেনি চাল-পেঁয়াজের দাম

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে এখনো অস্বস্তি কাটেনি বাজারে। সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। চালেও স্বস্তি ফেরেনি। আজ শুক্রবার (১৬ আগস্ট) সকালে রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

প্রতি কেজি ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। যা আগে চেয়ে ১০ টাকা বেশি। তবে ভারত থেকে আমদানি করা কিছু পেঁয়াজ এখনো ১০০ থেকে ১১০ টাকায় কেনা যাচ্ছে। সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হলেও চালের দাম কমেনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় চালের দাম কেজিপ্রতি ২-৪ টাকা বেড়েছিল, এখনো তেমনই রয়েছে।

ঢাকার আরও কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চালের চড়া দাম এখনো একই অবস্থায় রয়েছে। মিনিকেট ৭০ থেকে ৭২ টাকা, নাজিরশাইল ৭০ টাকা ৭৫, পাইজাম ৫৮ টাকা থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা আগের চেয়ে ৪ থেকে ৫ টাকা বাড়তি। মোটা চাল স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৫৬ টাকায়।

একটি রাইস এজেন্সির কর্মকর্তা জানান, ছাত্রদের আন্দোলনের সময় পরিবহন বন্ধ থাকায় মোকামে প্রতি বস্তায় চালের দাম ২০০ টাকা বেড়েছে। এরপর তা এখনো কমেনি। প্রধান এ খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় সীমিত আয়ের মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। সবচেয়ে বেশি নাজেহাল দরিদ্র মানুষেরা।

একজন ক্রেতা বলেন, সবজির দাম কমেছে, ডিম-মুরগিরও কমেছে। কিন্তু চালের দাম কমেনা। আসলে সিন্ডিকেট করে একবার দাম বাড়ালে আর কমানো হয় না। ছোট ব্যবসায়ীরা বলছেন, পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা তথা মিল ও পাইকারি পর্যায়ে তদারকি করলে জিনিসপত্রের দাম কমতে পারে।

রামপুরা বাজারের একজন চাল বিক্রেতা বলেন, এখন পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক। পণ্য আনা-নেওয়ায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবু কোনো কারণ ছাড়াই মিলাররা চালের দর বাড়িয়েছেন। সরকার মিলগুলোতে তদারকি করলে দাম কমে আসবে।

চাল-পেঁয়াজে অস্বস্তি থাকলেও গত এক সপ্তাহ ধরে বাজারে সবজির দাম কিছুটা কমছে। সর্বনিম্ন ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পেঁপে, ১৫-২০ দিন আগে পেঁপের কেজি ছিল ৭০ টাকা।

একইভাবে পটল, ঢ্যাঁড়স, চিচিঙ্গা কেনা যাচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। এতদিন এসব সবজির দাম ছিল ৭০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত।

বাজারে সর্বোচ্চ ৭০ টাকা দেখা গেছে বরবটি, বেগুন ও শসার কেজি। সপ্তাহ তিনেক আগেও এসব সবজির কেজি ১৫০ টাকা ছুঁয়েছিল। কাঁচা মরিচের কেজি কোথাও ২০০ আবার কোথাও ২৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক কেজি ওজনের ইলিশ কিনতে ক্রেতাদের এখন গুনতে হচ্ছে কমবেশি দেড় হাজার টাকা। এছাড়া আধা কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায়।


৯ ব্যাংককে নগদ অর্থ সহায়তা কমাল বাংলাদেশ ব্যাংক

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংকসহ ৯ ব্যাংককে দেওয়া নগদ অর্থ সহায়তা কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নয়টি ব্যাংক হলো: ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক এবং আইসিবি ব্যাংক।

এই ৯ ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে টাকার সংকটে ভুগছে। সে হিসেবে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ তারল্য সহায়তা কাজে লাগিয়ে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালিয়েছে। গত ১২ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক অন্য ব্যাংকগুলোকে এই ৯ ব্যাংকের এক কোটি টাকার বেশি চেক গ্রহণ না করার নির্দেশ দেয়। ওইসব ব্যাংকের আমানতকারী ও ঋণগ্রহীতারা সেখান থেকে এক কোটি টাকার বেশি তুলতে পারবেন না।

তবে যে ব্যাংক চেক ইস্যু করেছে সেখান থেকে এক কোটি টাকার বেশি তোলা যাবে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশেষ তারল্য সহায়তার বোঝা কমাতে এ উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি জানান, ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক প্রমিসরি নোটের বিপরীতে রুগণ ব্যাংকগুলোকে বিশেষ অর্থ সহায়তা দেয়। এর মাধ্যমে এক পক্ষ লিখিতভাবে অন্য পক্ষকে টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। টাকার অভাবে নয় ব্যাংকের বেশিরভাগই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চলতি হিসাবের ঘাটতিতে ভুগছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত ১২ মে পর্যন্ত আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক ছাড়া বাকি সাত ব্যাংকের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআরআর (ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও) হিসাবে মোট ৩০ হাজার ২০২ কোটি টাকা ঘাটতি আছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু এসব ব্যাংকের আমানতকারী ও ঋণগ্রহীতারা বড় অঙ্কের টাকা তুলতে পারবেন না, তাই তাদের নগদ টাকার সহায়তা কম লাগবে। জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সহায়তায় বেসরকারি ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নগদ টাকা পাচ্ছে।

এসব ব্যাংককে কেন তারল্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে তা জানতে চাইলে আব্দুর রউফ তালুকদার কয়েক মাস আগে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এটা গভর্নরের বিবেচনার ভিত্তিতে করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের চার দিন পর গত ৯ আগস্ট পদত্যাগ করেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিন শীর্ষ বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নির্দেশনার কথা জানিয়েছেন।

এই ব্যাংকগুলোর টাকার সংকট কেন?

২০২২ সালের মাঝামাঝি ইসলামী ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণে অনিয়ম ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকসহ অন্য ব্যাংকগুলো ৯ প্রতিষ্ঠানকে বড় অঙ্কের ঋণ দিয়েছে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান আবেদনপত্রে জাল ঠিকানা দিলেও ঋণগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এ প্রেক্ষাপটে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইসলামী ব্যাংকে আবার পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয়। প্রথমবারের মতো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকেও পর্যবেক্ষক পাঠায়। সে সময় শুধু ওই ব্যাংকগুলোই নয়, অন্যান্য দুর্বল ও কেলেঙ্কারিতে আক্রান্ত ব্যাংকগুলোও বিপুল পরিমাণ টাকা তুলে নেওয়ার চাপে পড়ে। এ কারণে সেসব ব্যাংকের তীব্র তারল্য সংকট দেখা দেয়।

২০২২ সাল থেকে নয় ব্যাংকের বেশিরভাগই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তাদের অ্যাকাউন্টে সিআরআর ও এসএলআর (বিধিবদ্ধ তারল্য অনুপাত) ঘাটতিতে আছে। ২০২২ ও ২০২৩ সালের শেষে তাদের উদ্বৃত্তপত্র সাজানোর জন্য ব্যাংকগুলো বেশিরভাগই ‘শেষ অবলম্বন’ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জরুরিভিত্তিতে টাকা নিয়েছিল। এটি বিরল ঘটনা। এ সুবিধার মাধ্যমে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আট দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে পারে। তবে বাস্তবে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো সুদ নিতে বা দিতে পারে না। তারা আমানত বিনিয়োগ থেকে পাওয়া ‘মুনাফা’ ভাগ করে। অনিয়মসহ নানা কারণে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে দুর্বল থাকলেও পরিচালকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে ন্যাশনাল ব্যাংক দুর্বল হয়ে পড়ে। এসব ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থ সহায়তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা সমালোচনা করে আসছেন।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর গভর্নর হওয়ার আগে বলেন, ’তারল্য সহায়তা দেওয়ার আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা পর্যালোচনা করা। প্রয়োজনে পরিচালনা পর্ষদের সংস্কার করা। ‘বাংলাদেশ ব্যাংক এভাবে জনগণের অর্থ অপচয় করতে পারে না’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থা যদি রুগ্ন ব্যাংকগুলোকে উদ্ধার করতে চায় তাহলে সবার আগে আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে।’ মূলত জবাবদিহিতার অভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক ওইসব ব্যাংককে টাকা দেওয়া অব্যাহত রেখেছে বলেও মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। ‘এটা সমাধান নয়। এসব ব্যাংককে উদ্ধারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্থায়ী সমাধান বের করতে হবে।


অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ নিয়ে যা বলছে বিশ্ব গণমাধ্যম

প্রতীকী ছবি
আপডেটেড ১৩ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০৫
বাণিজ্য ডেস্ক

কোভিডের সময় থেকেই বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি কমতে শুরু করে। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে তেলের দাম বেড়ে যাওয়া এবং ডলার-সংকটের কারণে অর্থনীতি আরেক দফা ধাক্কা খায়। এই বাস্তবতায় ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর অর্থনীতি যখন স্থিতিশীল হতে শুরু করে, তখন গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সরকারের পতন হলো।

দেশে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিতে এখন কী করা দরকার, সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দিচ্ছে। সেই সঙ্গে শেখ হাসিনার পতনের কারণসমূহও তুলে ধরছে গণমাধ্যমগুলো। তারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মূল কারণ হিসেবে তরুণদের বেকারত্বকেই চিহ্নিত করেছে। এ ছাড়া কাঠামোগত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কথাও জানিয়েছে তারা। নতুন সরকারের কী করণীয়, সে বিষয়েও বিদেশি গণমাধ্যমগুলো মোটামুটি একই সুরে কথা বলেছে।

জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের সংবাদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে তরুণদের এই অভ্যুত্থানের মূল কারণ হলো বেকারত্ব। প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক তরুণ কর্মবাজারে প্রবেশ করছেন; যদিও শিক্ষার নিম্নমান ও প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাবে তরুণদের কর্মক্ষমতা কম। এই বাস্তবতায় তরুণেরা নিজেদের বঞ্চিত ও প্রতারিত বোধ করতেন; সেখান থেকেই অভ্যুত্থানের প্রেরণা।

বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় অর্ধেকের বয়স ৩০-এর নিচে। বিষয়টি এত দিন জনসংখ্যাগত সুবিধা হিসেবে বিবেচিত হতো। কিন্তু বিশ্লেষকরা এখন বলছেন, উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান না হলে এই সুবিধা অভিশাপে পরিণত হতে পারে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ঠিক সেটাই হয়েছে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সি তরুণদের বেকারত্বের হার ছিল ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ। এই বাস্তবতায় দেশের তরুণদের এই অভ্যুত্থান বলে কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করেন।

অর্থনীতিবিদরা অনেক দিন ধরেই বলে আসছেন, গত দেড় দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি হলেও কর্মসংস্থান সেভাবে হয়নি। তাদের ভাষ্যমতে, এটা হলো কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি। তাই বিদ্যমান বাস্তবতায় মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের সবচেয়ে বড় কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম হবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। তা না হলে বঞ্চনা ও প্রতারিত হওয়ার বোধ তরুণদের বুকের মধ্যে আগের মতোই ধিকিধিকি জ্বলবে।

ডয়চে ভেলে বলছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো মূল্যস্ফীতি। দেড় বছর ধরে দেশে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে। বলা যায়, দুই বছর ধরে দেশের মানুষের ক্ষোভের মূল কারণ হলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি। বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক তা যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে পারেনি।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কলকারখানা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম এখনো পুরোপুরি চালু হয়নি। ডয়চে ভেলে মনে করছে, এই মুহূর্তে ইউনূস সরকারের মূল লক্ষ্য হলো, অর্থনীতি পুনরায় পুরোপুরি সচল করা। তারা বিশেষ করে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের কথা বলেছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে তৈরি পোশাকের ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন। তবে অনতিবিলম্বে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হলে এই খাতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে না।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অর্থনীতি পুনরায় সচল করার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে যেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলো নিরসনে কাঠামোগত সংস্কারে হাত দিতে হবে। যেমন নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, দুর্নীতি দূরীকরণ, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা, কর ও শুল্কনীতির সংস্কার ইত্যাদি। এসব সমস্যার সমাধানে সরকারের উচিত হবে একাধিক বিশেষজ্ঞ প্যানেল তৈরি করা। এসব শুরু করতে দেরি করা যাবে না, সেটাই হলো বড় চ্যালেঞ্জ।

ইকোনমিক টাইমস বলছে, ২০১১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ শতাংশের ওপরে। এই সময়ে মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৬ সালের পর মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশের নিচে নেমে আসে। এরপর ২০২০ সালে শুরু হয় কোভিড-১৯ মহামারি। ওই সময় রপ্তানি কমে যায়।

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আরেকবার ধাক্কা খায় বাংলাদেশের অর্থনীতি। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চূড়ান্ত প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের নিচে থাকবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের কষ্ট বেড়েছে। দেশীয় মুদ্রা টাকার অবমূল্যায়নের কারণে মার্কিন ডলারের নিরিখে জনগণের মাথাপিছু আয় কমে গেছে। সেই সঙ্গে উচ্চ বেকারত্বের কারণে তরুণদের মধ্যে যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দানা বেঁধে ওঠে, তা-ই শেষমেশ হাসিনার পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায় বলে মনে করে ইকোনমিক টাইমস।

ইকোনমিক টাইমস আরও বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। গত ১৫ বছরে অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন হলেও এ দেশের অর্থনীতির বহুমুখীকরণ হয়নি।

মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো চায়না প্লাস ওয়ান কৌশল গ্রহণ করেছে। অর্থাৎ তারা চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়ার পক্ষপাতি। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আকর্ষণীয় গন্তব্য হতে পারে বলে অনেকেই ধারণা করছিলেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃত করে আল-জাজিরা জানায়, বাস্তবতা হলো, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বাংলাদেশের বিষয়ে বিনিয়োগকারীরা ভিন্ন চিন্তা করতে পারেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে সবার আগে দরকার হলো আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার।

কর্মসংস্থানের বিষয়টি আল-জাজিরাও উল্লেখ করেছে। তারা বলেছে, বাংলাদেশের এক-চতুর্থাংশ মানুষের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছর। গত দুই দশকে এই দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য হারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঠিকই; কিন্তু বৈষম্যও বেড়েছে অনেক বেশি। এ ছাড়া ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সি জনগোষ্ঠীর প্রায় ৪০ শতাংশ কোনো কাজে, প্রশিক্ষণে বা শিক্ষায় নেই।

এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যেই বৈশ্বিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা এসঅ্যান্ডপি বাংলাদেশের ঋণমান অবনমন করেছে। মূলত অর্থনীতির বহিঃস্থ খাতের দুর্বলতার কারণে তারা ঋণমান অবনমন করে।

এসঅ্যান্ডপি আরও বলেছে, গত জুন মাসের শেষে বাংলাদেশের বৈদেশিক রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২১ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। এই পরিমাণ রিজার্ভ দিয়ে দেশের তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যেতে পারে। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জুলাই মাসে যে সহিংসতা দেখা দেয়, তার রাশ টানতে সরকার কারফিউ জারি করে ইন্টারনেট বন্ধ রাখে। এর প্রভাবে দেশের রিজার্ভ কমতে পারে বলে মনে করে এসঅ্যান্ডপি। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রপ্তানি আয় কমতে পারে। অর্থনীতিবিদেরা বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় বিশ্ববাণিজ্যে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে।


পাঁচ মাস পর প্রধান সূচক ৬ হাজার পয়েন্ট ছাড়াল

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১২ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০৪
নিজস্ব প্রতিবেদক

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ গ্রহণের পর প্রথম কার্যদিবসে গতকাল দেশের পুঁজিবাজারে সূচকের বড় উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স পাঁচ মাস পর এদিন ৬ হাজার পয়েন্টের ঘরে পৌঁছেছে। একই সঙ্গে এক্সচেঞ্জটির লেনদেন দীর্ঘ ২৩ মাস পরে ২ হাজার কোটি টাকার ঘর অতিক্রম করেছে। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বেশির ভাগ সিকিউরিটিজের দর বাড়ার পাশাপাশি মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়ছে। একই সঙ্গে বেড়েছে এক্সচেঞ্জটির লেনদেনের পরিমাণ।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে দেশ ছেড়ে চলে যান। হাসিনা সরকারের পতনের পর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। এ সরকারের অধীনে গতকাল পুঁজিবাজারে প্রথম লেনদেন হয়েছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, পুঁজিবাজারে গতকাল লেনদেন শুরু হয় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দর বৃদ্ধির মাধ্যমে। এতে লেনদেনের শুরুতেই ডিএসইর প্রধান সূচক প্রায় ২০০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দর বাড়ার কারণে একপর্যায়ে ডিএসইএক্স ২৯১ পয়েন্ট পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। কিন্তু পরবর্তী সময় এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের বিক্রির চাপে সূচক কমতে থাকে। ফলে দর বাড়ার তালিকা থেকে একের পর এক প্রতিষ্ঠান কমার তালিকায় চলে আসে। মাত্রাতিরিক্ত বিক্রির চাপে একপর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচকটি ৪৯ পয়েন্ট কমে যায়। তবে লেনদেনের শেষ দিকে বাজারে আবার ক্রেতার উপস্থিতি বৃদ্ধি পায়। ফলে মূল্যসূচক ঊর্ধ্বমুখী ধারায় লেনদেন শেষ হয়।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ১৭৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর বৃদ্ধির তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দর কমেছে ২০৭টি প্রতিষ্ঠানের। আর ২০টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৩৬টি ব্যাংকের মধ্যে এদিন ২৮টির দর বেড়েছে, কমেছে ৫টির।

বেশির ভাগ ব্যাংকের শেয়ার দাম বাড়ার কারণে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৯১ পয়েন্ট বেড়ে গতকাল ৬ হাজার ১৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে সূচকটি পাঁচ মাস পর বা চলতি বছরের ১২ মার্চের পর ৬ হাজার পয়েন্টের ঘরে পৌঁছাল। এদিন সূচকটির উত্থানে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে ইসলামী ব্যাংক, গ্রামীণফোন, ব্র্যাক ব্যাংক, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ এবং রবি আজিয়াটার শেয়ার। এক্সচেঞ্জটির অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের কার্যদিবসের তুলনায় ১০ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৮৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের কার্যদিবসের তুলনায় ৫১ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৮৪ পয়েন্টে উঠে এসেছে।

ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ১০ কোটি ৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১ হাজার ৬০৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ৪০৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে প্রায় ২৩ মাসের মধ্যে গতকাল সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে এক্সচেঞ্জটিতে। এর আগে ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর এক্সচেঞ্জটির লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৩২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। গতকাল ডিএসইর লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে গ্রামীণফোনের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৩৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর ৬২ কোটি ৯০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ৬০ কোটি ৮০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক।

অন্যদিকে সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই এদিন ৪৮৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ২৮২ পয়েন্টে। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৯৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৯৪টির দর বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ৮৬টির এবং ১৫টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৩০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।


এক সপ্তাহের মধ্যে দ্রব্যমূল্য কমানোর আল্টিমেটাম

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দ্রব্যমূল্য জনসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ১৩ দপ্তর ও সংস্থাকে আল্টিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এসব দপ্তর ও সংস্থার কর্মকর্তাদের পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

আজ রোববার (১১ আগস্ট) জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক বিন ইয়ামিন মোল্লা এ আল্টিমেটাম দেন।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বাজার তদারকিসহ সচেতনতামূলক কার্যক্রমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ের লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

সভায় বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, আমরা এতদিন নানা ধরনের অন্যায়, অনিয়মের সঙ্গে ছিলাম। এখন আমাদের শপথ করতে হবে আমরা আর দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অন্যায়, সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজি, দখলদারি করবো না। এটা আমাদের মনে ধারণ করতে হবে। তারপর রাষ্ট্র সংস্কার করতে হবে। তা না হলে আমাদের এত আত্মত্যাগ, এত জীবন, এত কান্না, বিপ্লব বৃথা হয়ে যাবে।

এ সময় তিনি বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেন। সেগুলো হলো-

১. বিপ্লবী ছাত্র জনতা টিম করে প্রতিটি শহর, জেলা, উপজেলা, পাড়া, মহল্লায় বাজার মনিটরিং করাবে। তবে তারা কাউকে জরিমানা করতে পারবে না। আইন নিজের হাতে তোলা যাবে না।

২. প্রতিটি জেলা-উপজেলায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মতবিনিময় সভার আয়োজন করা।

৩. প্রতিটি বিক্রেতার নিত্যপণ্য ক্রয়ের রশিদ রাখা।

৪. প্রতিটি দোকানে মূল্য তালিকা টাঙানো।

৫. কেউ বাজার, রাস্তা, দোকান দখল করে ব্যবসা করলে তাকে উৎখাত করা।

৬. রাস্তায় চাঁদাবাজি বন্ধ করা। সেটি প্রতিরোধ করা।

৭. প্রতিটি এলাকাভিত্তিক মূল্য তালিকা দেওয়া। যাতে কেউ বেশি দাম নিতে না পারে।

৮. ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জনবল বাড়ানো।

৯. দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি বন্ধ করা।

এ সময় তিনি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মতো প্রতিটি সেবাখাতের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করার আহ্বান জানান।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও উপ-পরিচালক আতিয়া সুলতানার সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিতি ছিলেন- জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণা) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন, কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মিজানুর রহমান, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ অনেকে।


প্রাণ ফিরল পুঁজিবাজারে

সমাপ্ত সপ্তাহে বাজার মূলধন বেড়েছে ৯০ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বরেণ্য অর্থনীতিবিদ এবং শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে। শুক্রবার (৯ আগস্ট) প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্য উপদেষ্টাদের দপ্তর বণ্টন করা হয়েছে। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে পুঁজিবাজার। ফলে দীর্ঘ মন্দা কাটিয়ে বর্তমান পুঁজিবাজার বাধাহীন গতিতে ছুটে চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের উভয় পুঁজিবাজারে বিদায়ী সপ্তাহে (৫ থেকে ৮ আগস্ট) সূচকের রেকর্ড উত্থানে লেনদেন হয়েছে। একই সঙ্গে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে বাজার মূলধন বেড়েছে ৯০ হাজার ৯৩২ কোটি ৫ টাকা। তবে আলোচ্য সময়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) টাকার পরিমাণে লেনদেন বাড়লেও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) কমেছে।

ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় এ তথ্য জানা গেছে।

বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ৩৩৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৩৯৪ কোটি ৬০ লাখ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ৯৪৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৩ হাজার ৯১৩ কোটি ৮ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৩৬৮ কোটি ১০ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ৫০ হাজার ৫৪৫ কোটি ২ লাখ টাকা।

সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫৯০.৮৭ পয়েন্ট বা ১১.০৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯২৪ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ২৩১.৮৮ পয়েন্ট বা ১২.২০ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ১৩২ পয়েন্টে, ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১০৯.৫৩ পয়েন্ট বা ৯.৪০ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ২৭৪ পয়েন্টে এবং ডিএসএমইএক্স সূচক ৭৪.৪৭ পয়েন্ট বা ৪.৯০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৪৬ পয়েন্টে।

গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯৭টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৩৩৯টির, দর কমেছে ১১টির ও দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৭টির। আর লেনদেন হয়নি ১৬টির।

অন্য পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে ২৬০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৩৯৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন কমেছে ১৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

গেল সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ২৭ হাজার ২৫২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৮৬ হাজার ৮৩৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ৪০ হাজার ৩৮৭ কোটি ৩ লাখ টাকা কমেছে।

সপ্তাহটিতে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১ হাজার ৬৮০.৫২ পয়েন্ট বা ১১.১১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৭৯৯ পয়েন্টে। সিএসইর অন্য সূচকগুলোর মধ্যে সিএসই-৩০ সূচক ১২.১৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৩৬৯ পয়েন্টে, সিএসসিএক্স ১১.১৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ১৩২ পয়েন্টে, সিএসআই সূচক ৮.৫০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৬ পয়েন্টে এবং এসইএসএমইএক্স ২.১৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১১৪ পয়েন্টে।

গত সপ্তাহে সিএসইতে মোট ৩২৩টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ২৫৬টির, দর কমেছে ৫৮টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৯টির শেয়ার ও ইউনিট দর।


banner close