বাংলাদেশের সিলেটের সন্তান ইকবাল আহমেদ ওবিই ডিবিএ এখন যুক্তরাজ্যের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের একজন। বাংলাদেশ থেকে চিংড়ি রপ্তানিতে শীর্ষে তিনি। একসঙ্গে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশে কাজ করে চলেছেন, অবদান রাখছেন অর্থনীতিকে শক্তিশালী করায়। সম্প্রতি তিনি দৈনিক বাংলার মুখোমুখি হয়েছিলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দৈনিক বাংলার সহকারী বার্তা সম্পাদক রাজিউল হাসান।
দৈনিক বাংলা: করোনা মহামারির ধাক্কার মধ্যেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। দুই ধাক্কায় বৈশ্বিক অর্থনীতি বিপর্যস্ত। এর সঙ্গে সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে যোগ হয়েছিল রাজনৈতিক টানাপোড়েন। ব্রেক্সিটের ধাক্কা তো আছেই। সব মিলিয়ে যুক্তরাজ্যে এখন ব্যবসায়িক অবস্থা কেমন যাচ্ছে?
ইকবাল আহমেদ: যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের জন্য প্রথম ধাক্কা ব্রেক্সিট। আমরা তো ইউরোপীয় ইউনিয়নের পুরো অংশকে এক ভূখণ্ড ভাবতাম। আমরা যুক্তরাজ্য থেকে এসব দেশে পণ্য রপ্তানি না, সরবরাহ করতাম। শুল্কমুক্ত এই বাজারের সুবিশালতার জন্য ইউরোপে অনেক ব্যবসাই সফল হয়েছে। কিন্তু ব্রেক্সিট ভয়াবহ ধাক্কা দিল। আমাদের পণ্যে আবগারি শুল্ক, মাশুল যোগ হলো। ফলে পণ্যের দাম বেড়ে গেল। মুখ থুবড়ে পড়ল অনেক ব্যবসা।
এই ধাক্কার মধ্যেই এল করোনা মহামারি। সব বন্ধ হয়ে গেল। তবে এ সময়ে অনলাইন বাজারটা বড় হলো। করোনার ধাক্কা সামাল দিতে যুক্তরাজ্যের সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে অনেক ব্যবসা রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আমাদের সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলেছে। আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। ব্যবসা সংকুচিত হচ্ছে।
দৈনিক বাংলা: অনেক বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শীত পর্যন্ত বা তার বেশি সময় দীর্ঘায়িত হবে। এতে বৈশ্বিক সংকট আরও ভয়াবহ হবে। এই সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাজ্যে কোনো প্রস্তুতি শুরু হয়েছে কি? সরকার কী ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে?
ইকবাল আহমেদ: যুদ্ধের কারণে বিশ্বের সব দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জ্বালানির দাম বেড়ে যাচ্ছে, তার প্রভাব পড়ছে নিত্যপণ্যে। কাজেই এই যুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হবে, অর্থনৈতিক বিপর্যয় তত বড় হবে। এই অবস্থায় ব্যবসা-বাণিজ্য অত্যন্ত ঝুঁকিতে রয়েছে। অবশ্য যুক্তরাজ্যের সরকার ব্যবস্থাও নিচ্ছে। সম্প্রতি ৪৫ বিলিয়ন পাউন্ডের প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন নতুন অর্থমন্ত্রী, যাকে মিনিবাজেট বলা হচ্ছে। এই প্যাকেজে যুক্তরাজ্যের ব্যবসাগুলোকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
দৈনিক বাংলা: আপনার প্রতিষ্ঠান সিমার্ক পিএলসি বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন বাজার থেকে মাছসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্য যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বাজারে সরবরাহ করে। কী ধরনের পণ্য আপনি আমদানি ও রপ্তানি করেন?
ইকবাল আহমেদ: চিংড়ি রপ্তানি করে আমরা স্বর্ণপদক, রৌপ্যপদকসহ অনেক স্বীকৃতি পেয়েছি। বাংলাদেশ থেকে আমরাই চিংড়ির সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক। ইউরোপের বাজারে প্রক্রিয়াজাতকৃত চিংড়ি সরবরাহ করি। ইউরোপের ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশনগুলো, এয়ারলাইন, রেস্তোরাঁসহ অনেকেই আমাদের গ্রাহক। বাংলাদেশ থেকে চিংড়ি ছাড়াও আমরা সবজিসহ আরও কিছু জিনিস রপ্তানি করি। ইউরোপের দেশগুলোসহ বিশ্বের ৭০টি দেশে পণ্য রপ্তানি করি আমরা।
ইউরোপের বাজারে আমরা কেবল মাছ আর হিমায়িত সবজিই সরবরাহ করি না। আমরা শিঙাড়া, সমুচা, পরোটা, ড্রাইকেকসহ নানা ধরনের স্ন্যাকসও বাংলাদেশ থেকে আমদানি করে সরবরাহ করি। ওয়ালমার্টের মতো প্রতিষ্ঠান আমাদের পণ্যের গ্রাহক।
বাংলাদেশ ছাড়াও অনেক দেশ থেকে আমরা পণ্য আমদানি করি। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, চীন, ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামসহ অনেক দেশ। যেমন ব্রাজিল থেকে আমরা পোল্ট্রি আমদানি করে ইংল্যান্ডে নিজেদের কারখানায় প্রক্রিয়াজাত করি। এর বাইরে যুক্তরাজ্যে আমাদের আরও কিছু ব্যবসা রয়েছে। যেমন আবাসন ব্যবসা, বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন ভাড়া ইত্যাদি। আমাদের হসপিটালিটি ডিভিশনের আওতায় হোটেল, রেস্তোরাঁ পরিচালিত হয়।
দৈনিক বাংলা: বিভিন্ন দেশ থেকে, বিশেষত বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে বৈশ্বিক চলমান অস্থিরতার কোনো প্রভাব পড়েছে কি?
ইকবাল আহমেদ: আমরা ডলারে পণ্য আমদানি করি। ডলারের বিপরীতে পাউন্ড দিনে দিনে দুর্বল হচ্ছে। এতে আমাদের আমদানি খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে পণ্যের দাম বাড়ছে। গ্রাহক বেশি দামে সে পণ্য কিনতে চাইছে না। ফলে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। খুব সহজ হিসাব এটা। এই অস্থিরতা যত দিন গড়াবে, তত বাড়বে। এভাবে চলতে থাকলে যুক্তরাজ্যেই অনেক ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়বে।
বাংলাদেশেও কিন্তু ডলারের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব প্রকট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আপাতদৃশ্যে মনে হচ্ছে, রপ্তানিকারকরা ডলারের দাম বাড়ায় লাভবান হচ্ছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারেও তো পণ্যের দাম বাড়ছে। আমদানিকারকরা বেশি দামে পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে দেশের বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া বাংলাদেশে রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি।
দৈনিক বাংলা: তাহলে এই পরিস্থিতির সমাধান কী?
ইকবাল আহমেদ: আমি দুবাইয়ের উদাহরণ দিতে পারি। তারা আর যা-ই হোক, ডলারের বিপরীতে তাদের মুদ্রার অবনমন ঠেকিয়ে রেখেছে। ফলে বৈশ্বিক বাজারের অস্থিরতার প্রভাব তাদের ওখানে সেভাবে পড়েনি। কাজেই যেভাবেই হোক, ডলারকে স্থিতিশীল রাখতে হবে। তাহলে দেশীয় বাজার স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হবে।
দৈনিক বাংলা: বাংলাদেশকে আরও ব্যবসাবান্ধব করতে হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে?
ইকবাল আহমেদ: বাংলাদেশ থেকে আমি চিংড়িসহ কিছু পণ্য আমদানি করি। গুণগতমানের উন্নয়ন ঘটানো গেলে আরও অনেক কিছু আমদানি করা যেত। বাংলাদেশে প্রচুর খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু সে তুলনায় গবেষণায় বিনিয়োগ কম। উৎপাদন কীভাবে হচ্ছে, সে ব্যাপারে নজরদারি কম। রাসায়নিক সার, কীটনাশক ব্যবহারে নজরদারি নেই। উদাহরণ দিই একটা। বাংলাদেশে কিন্তু প্রচুর আম হয়। কিন্তু সে আমের সিংহভাগ আমরা আমদানি করতে পারি না। আম কীভাবে উৎপাদন হচ্ছে, কীভাবে সংরক্ষণ হচ্ছে, তার কিন্তু নজরদারি নেই। ফলে আমের মান কেমন, সেটা নিশ্চিত করতে পারে না কেউ। এভাবে তো আর আমদানি হয় না। কাজেই উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি খাদ্যপণ্যের মানের দিকে নজর দিতে হবে।
বাংলাদেশের রপ্তানি খাত এখনো তৈরি পোশাকনির্ভর। এই খাত থেকেই সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় আসে। এভাবে একটা খাতের ওপর এতটা নির্ভরশীল থাকা ঝুঁকিপূর্ণ। বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে যেকোনো মুহূর্তে এই খাতে ধস নামলে বা আয় কমে গেলে বিপদ ঘটতে পারে। কাজেই অন্য খাতকেও রপ্তানিমুখী করতে হবে। কৃষিপণ্য রপ্তানি বাড়াতে হবে। সরকারকেই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে।
আরেকটা বিষয়। দেশে প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ আনতে হবে। বিদেশি প্রতিষ্ঠান যত বেশি দেশে আসবে, তত কর্মসংস্থান হবে, দেশে রপ্তানিবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হবে।
দৈনিক বাংলা: বাংলাদেশে এনআরবি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন আপনি। এ দেশে ব্যাংক করার পরিকল্পনা এল কী করে? উদ্যোক্তাদের একজোট করলেন কীভাবে?
ইকবাল আহমেদ: আমি বিদেশে থাকলেও মনটা সবসময় বাংলাদেশে থাকে। এ কারণে দেশের জন্য সবসময় কিছু না কিছু করতে চেয়েছি আমি। তারই অংশ হিসেবে একসময় ব্যাংকের কথা মাথায় এল। এতে বহুমাত্রিক লাভ। প্রথমত, প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে বিনিয়োগ করার সুযোগ পাবেন, দ্বিতীয়ত, দেশে কর্মসংস্থান হবে, তৃতীয়ত, এই ব্যাংক সফল হলে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে। এসব দিক বিবেচনায় আমি বাংলাদেশে এনআরবি ব্যাংক গড়ার পরিকল্পনা করি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত আমাকে অনেক উৎসাহ দিয়েছেন। নিজের আগ্রহ ও তাদের উৎসাহে আমি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, দুবাইসহ বিভিন্ন জায়গায় অবস্থানরত ৪৫ জন প্রবাসী বাংলাদেশি উদ্যোক্তাকে খুঁজে বের করি। এভাবেই আসলে শুরু।
আমি ব্যাংকটিকে আন্তর্জাতিক মানের ব্যাংক হিসেবে গড়তে চেয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে পরিস্থিতি ও সময়ের জন্য পারিনি।
দৈনিক বাংলা: বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে জড়িত থাকার কারণে আপনি এখানকার অবস্থা সম্পর্কে অবগত। সেই অভিজ্ঞতা থেকে দেশের ব্যাংক খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনাগুলো কী?
ইকবাল আহমেদ: বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের সম্ভাবনা প্রচুর। তবে নজরদারি বাড়াতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও বেশি সক্রিয় ও উদ্যোগী হতে হবে। যেসব ব্যাংক ভালো করছে না, সেগুলো চিহ্নিত করতে হবে। একটা ব্যাংক কতটা ভালো করবে অথবা কতটা লোকসানি হবে, তা নির্ভর করে আসলে পরিচালনা পর্ষদের নীতির ওপর। এখন ধরা যাক, একটা খারাপ লোককে জেনেশুনে ঋণ দিয়ে দিল একটা ব্যাংক। সে ঋণখেলাপি হয়ে গেল। এ ক্ষেত্রে লোকসান তো গুনতেই হবে। শুধু তা-ই নয়, বিপুল পরিমাণ ঋণখেলাপি এক সময় রাষ্ট্রের অর্থনীতিতেও চাপ তৈরি করে।
কাজেই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে কারা বসছেন, তাদের নীতি কী, এসব বিষয় পর্যালোচনা করতে হবে। কারণ ব্যাংক খাত যত শক্তিশালী হবে, অর্থনীতি তত জোর পাবে।
দৈনিক বাংলা: ব্যবসায়িক সাফল্যের জন্য ব্রিটিশ সরকার আপনাকে ওবিই ও ডিবিএ উপাধি দিয়েছে। এই উপাধিগুলো আসলে কী?
ইকবাল আহমেদ: ওবিই হচ্ছে অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এমপায়ার। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিশেষ অবদান রাখার জন্য এই উপাধি দেয়া হয় যুক্তরাজ্যে। যুক্তরাজ্যের শীর্ষ রপ্তানিকারক হয়েছি আমি। পাশাপাশি আমি যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ছিলাম। এসব কারণে ব্রিটিশ সরকার ওই উপাধি আমাকে দিয়েছে।
আর ডিবিএ হলো ডক্টর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। শিক্ষা ও ব্যবসা খাতে অবদান রাখার জন্য এই ডিগ্রি দেয়া হয়।
আমি যে শুধু যুক্তরাজ্যে ব্যবসা খাতে অবদান রাখার জন্য পুরস্কৃত হয়েছি, তা কিন্তু নয়। বাংলাদেশ সরকারও আমাকে বেশ কয়েকবার সেরা রপ্তানিকারক হিসেবে পুরস্কৃত করেছে।
দৈনিক বাংলা: অতি সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা গেলেন। বর্তমান রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে আপনার পরিচয় রয়েছে। এমনকি চট্টগ্রামে আপনার কারখানা উদ্বোধন করতে প্রিন্সেস অ্যান এসেছিলেন। এ বিষয়ে কিছু বলবেন কি?
ইকবাল আহমেদ: ব্রিটিশ রাজপরিবারের সঙ্গে আমার পরিচয় বেশ আগে থেকে। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে আমার বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে। রানির গার্ডেন পার্টিতে আমি পাঁচবার গিয়েছি। বর্তমান রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে আমার চারবার দেখা হয়েছে। আর প্রিন্সেস অ্যানের সঙ্গে তো অনেকবার হয়েছে। বর্তমান রাজার অর্গানাইজেশনের দুটি প্রকল্পে আমি সংশ্লিষ্ট। এর একটি ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের সহযোগিতা। এই প্রকল্পকে বলে মোজাইক। এতে আমি সক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট।
দৈনিক বাংলা: আপনি বেশ কিছু দাতব্য কাজেও জড়িত। সে কাজগুলো সম্পর্কে যদি বলতেন।
ইকবাল আহমেদ: আমি বিশেষ করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে কাজ করি। সিলেটে আমি স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছি। আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়ও গড়ার পরিকল্পনা আছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় হবে রুরাল ইউনিভার্সিটি। প্রত্যন্ত এলাকার ছেলেমেয়েরা বিশ্বমানের পড়ালেখা করার সুযোগ পাবে। ইংল্যান্ডে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি স্কলারশিপের ব্যবস্থা করেছি। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যে গৃহহীনদের মাথাগোঁজার ঠাঁই করে দেয়ার চেষ্টা করি আমি। বাংলাদেশ হার্ট ফাউন্ডেশন থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য খাতের যেখানে সুযোগ পেয়েছি, সেখানেই আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি।
দৈনিক বাংলা: এখন যারা উদ্যোক্তা হতে চান বা চেষ্টা করছেন, তাদের জন্য আপনার কী পরামর্শ?
ইকবাল আহমেদ: প্রথম কথা, পড়ালেখার কোনো বিকল্প নেই। আগে পড়ালেখা করতে হবে। তারপর কাজের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ছোট ও মাঝারি ধরনের প্রতিষ্ঠানে কাজ করলে বেশি ভালো। বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে গেলে সবকিছু শেখা যায় না। একটা গণ্ডির মধ্যে থেকে কাজ করতে হয়। ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানে সবদিকের সব কাজের বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়। অভিজ্ঞতা পরিপূর্ণ করে তারপর ব্যবসা শুরু করতে হবে। আরেকটা কথা, ব্যবসার ক্ষেত্রে সৃষ্টিশীল হতে হবে। বাংলাদেশে উদ্যোক্তা হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ এখন। এই সময়টাকে কাজে লাগাতে হবে।
দৈনিক বাংলা : সব উদ্যোক্তা প্রথম দফায়ই সফল হন না। বারবার চেষ্টার পরও বিফল হয়ে এক সময় হতাশ হয়ে পড়েন অনেকে। তাদের জন্য আপনার কী পরামর্শ?
ইকবাল আহমেদ: অনেক সময় অনেকের ক্ষেত্রে এমনটা হয়। এর জন্য কিছু বিষয় অন্যতম দায়ী। অনেকে আছেন, এক ব্যবসায় ভালো করতে না পেরে অন্য ব্যবসায় চলে যান। এভাবে সুইচ করতে থাকলে আপনি কোনো ব্যবসায়ই ভালো করতে পারবেন না। একটার পেছনে লেগে থাকতে হবে। যত ব্যর্থ হবেন, তত অভিজ্ঞতা হবে। আরেকটা কথা, যখন দেখা যাবে, কিছুতেই একা সফল হওয়া যাচ্ছে না, তখন অংশীদার জোগাড় করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বড় সুবিধা হলো, আমার মধ্যে যে চিন্তা, যে সৃজনশীলতা নেই, তা আমার অংশীদারের মধ্যে থাকতে পারে। কাজেই সাফল্যের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। একজন না পারলে, দুজন, দুজন না পারলে চারজনে মিলে উদ্যোগ নিতে হবে।
দৈনিক বাংলা: বাংলাদেশে আরও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে আর কী করতে হবে?
ইকবাল আহমেদ: সর্বপ্রথম তরুণ প্রজন্মকে ব্যবসায় আগ্রহী করতে হবে। চাকরির ওপর ব্যবসাকে জোর দিতে হবে। সরকারের দিক থেকেই এই বার্তাটা আসতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে জোরালো অবস্থান নিতে হবে। প্রশিক্ষণ, লাইসেন্স, ব্যাংক ঋণসহ সবকিছু আরও সহজ করতে হবে। ব্যাংক যদি আমাদের ঋণ না দিত, তাহলে আজ যতটুকুই এসেছি, তা কী আসতে পারতাম? কাজেই ব্যাংক খাতকে এখানে জোরালো অবস্থান নিতে হবে।
দৈনিক বাংলা: আপনাকে ধন্যবাদ।
ইকবাল আহমেদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।
সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় বেশিরভাগ কোম্পানির দাম বাড়লেও সূচকের দশা দোদুল্যমান।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বুধবার (১৬ এপ্রিল) লেনদেনের শুরুতে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচক শরীয়াভিত্তিক ডিএসইএসের অবস্থান শূন্যের নিচে এবং ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ কমেছে ১ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৯৯, কমেছে ১২৩ এবং অপরিবর্তিত আছে ৬৭ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
প্রথম দুই ঘণ্টায় ডিএসইতে ১৮০ কোটি টাকার ওপরে শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় সার্বিক সূচক কমেছে ২ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেয়া ১২৫ কোম্পানির মধ্যে ৫৭ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ৫২ কোম্পানি এবং দাম অপরিবর্তিত আছে ১৬ কোম্পানির।
সিএসইতে লেনদেনের প্রথমার্ধে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার ওপর শেয়ার এবং ইউনিট ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে।
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে লেনদেনের শুরুতেই পতনের মুখে পড়েছে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের পুঁজিবাজার, কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) রোববার (১৩ এপ্রিল) লেনদেনের প্রথম দুই ঘন্টায় প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৯ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচক শরীয়াভিত্তিক ডিএসইএস ১ এবং বাছাইকৃত কোম্পানির শেয়ার ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ কমেছে ৮ পয়েন্ট।
দাম কমেছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির। ১০৬ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ২০৯ কোম্পানি এবং দর অপরিবর্তিত আছে ৭৮ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
প্রথম দুই ঘন্টায় ঢাকার বাজারে মোট শেয়ার এবং ইউনিটের লেনদেন ছাড়িয়েছে ২০০ কোটি টাকা।
একইভাবে সূচকের পতন হয়েছে চট্টগ্রামের বাজারেও। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ৫ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেয়া ১২৭ কোম্পানির মধ্যে ৩৮ কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ৬৭ কোম্পানি এবং অপরিবর্তিত আছে ২২ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
প্রথম দুই ঘন্টায় সিএসইতে শেয়ার এবং ইউনিটের লেনদেন ৪ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে হতাশা কাটছে না। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে ৬২ কোটি ৬৩ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। গত অর্থ বছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ৬৭ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। এই হিসাবে জুলাই-মার্চ সময়ে গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে পাট খাতে রপ্তানি আয় কমেছে ৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
পাঁচ বছর আগে পাটের সুদিন ফিরে আসার হাতছানি দেখা দিয়েছিল; পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে প্রথমবারের মতো রপ্তানি ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে ১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। স্বাধীনতার পর ১৯৭২-৭৩ সালে দেশের মোট রপ্তানি আয়ে পাটের অবদান ছিল ৯৩ শতাংশ। বাকি ৩ শতাংশ ছিল অন্যান্য পণ্যের।
সেই চিত্র এখন পুরোটাই বিপরীত। ক্রমেই কমে আসে পাটের প্রাধান্য। গত সোমবার প্রকাশিত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুারোর (ইপিবি) প্রতিবেদন বলছে, গত মার্চ মাস পর্যন্ত অর্থাৎ চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) মোট রপ্তানিতে পাটের অবদান মাত্র ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ; গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের পুরো সময়ে (২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন) ছিল ১ দশমিক ৯২ শতাংশ।
বাংলাদেশের সোনালি আঁশ পাটের ‘সোনালি দিন’ ফিরিয়ে আনার কথা বলা হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। বিভিন্ন সরকারের সময়ে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। কিন্তু কাজের কাজ খুব একটা হয়নি। পাঁচ বছর আগে পাটের সুদিন ফিরে আসার হাতছানি দেখা দিয়েছিল; পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে প্রথমবারের মতো রপ্তানি ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে ১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। মোট রপ্তানিতে পাট খাতের অবদান ৩ শতাংশ ছাড়িয়েছিল।
কিন্তু এর পর ফের হোঁচট; কমতে থাকে রপ্তানির অঙ্ক। হতাশা দেখা দিয়েছে শুধু পাট ও পাটজাত পণ্যে। বাংলাদেশের সোনালি আঁশ পাটের ‘সোনালি দিন’ ফিরে আসার হাতছানি দেখা দিয়েছিল ২০২০-২১ অর্থ বছরে। ওই বছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ১১৬ কোটি ১৫ লাখ (১.১৬ বিলিয়ন) ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে রপ্তানি তালিকায় চামড়াকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল এই খাত। আগের অর্থ বছরের (২০১৯-২০) চেয়ে রপ্তানি বেড়েছিল ৩১ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
কিন্তু এর পর থেকে কমছেই; নেমে এসেছে ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলারের নিচে।
গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে ৮৫ কোটি ৫২ লাখ ডলার আয় হয়েছিল, যা ছিল আগের অর্থ বছরের চেয়ে ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ কম।
২০২২-২৩ অর্থ বছরে আয়ের অঙ্ক ছিল ৯১ কোটি ১৫ লাখ ডলার। আগের অর্থ বছরের চেয়ে কমেছিল ১৯ দশমিক ১৭ শতাংশ।
২০২১-২২ অর্থ বছরে এই খাত থেকে আয় হয়েছিল ১১২ কোটি ৭৬ লাখ (১.১২ বিলিয়ন) ডলার। আগের অর্থ বছরের চেয়ে কমেছিল ২ দশমিক ৯১ শতাংশ।
বছরের পর বছর লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) ২৫টি পাটকল ২০২০ সালের ১ জুলাই বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। সে কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো পাটকল এখন উৎপাদনে নেই; সরকারিভাবে পাট ও পাটজাত পণ্য এখন আর রপ্তানি হয় না। অথচ বন্ধ হওয়ার আগে বিজেএমসির পাটকলগুলো থেকে এ খাতের রপ্তানির ২০ শতাংশের মতো আসত।
বাংলাদেশ পাটপণ্য রপ্তানিকারক সমিতির (বিজেজিইএ) চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসাইন সোহেল বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে প্রায় সোয়া বিলিয়ন ডলার আয় হওয়ায় আমরা আশায় বুক বেঁধেছিলাম- আমাদের সোনালি আঁশ পাটের সুদিন হয়তো ফিরে আসতে শুরু করেছে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, সে আশায় গুড়েবালি।
‘কেনোদিনই আর সোনালী আঁশের সোনালি দিন ফিরে আসবে না। কেননা, প্রতি বছরই এই খাত থেকে রপ্তানি আয় কমছে। চলতি অর্থ বছরেও সেই নেতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সবাই আশা করেছিল, কোভিড-১৯ মহামারি পরিবেশের ক্ষেত্রে নতুন ভাবনার জন্ম দেওয়ায় পাটপণ্যের চাহিদা অনেক বেড়ে যাবে। এ খাতের সম্ভাবনাও দেখা দেবে নতুন করে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন দেশের ক্রেতারা পাটের পরিবর্তে কটন ও সিল্ক দিয়ে তৈরি পণ্য কিনছেন। পলি ফাইবারও ব্যবহার করছেন অনেকে। পাটজাত পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় এ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন ক্রেতারা।’
পহেলা বৈশাখের সঙ্গে ‘পান্তা ইলিশ’ কথাটি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। বাঙালির ঐতিহ্যবাহী খাবার বৈশাখের এই ‘পান্তা ইলিশ’। পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে চাহিদা বাড়ায় ঢাকার বাজারে ইলিশের দাম হয়েছে আকাশচুম্বী।
সাধারণত ইলিশের চাহিদা বাড়ায় কিছু ব্যবসায়ী বরফে মজুত করে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করেন। এ ছাড়া তাজা ইলিশের চাহিদা ও দাম আরও বেশি।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে শুক্কুর আলী গত ৩০ বছর ধরে ইলিশ বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে ইলিশের চাহিদা ও দাম দুটোই বাড়ে। আমার দোকানে এক থেকে দেড় কেজি ওজনের মজুত মাছ রয়েছে, যা আমরা এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি।’
শুক্কুর আলী আরও বলেন, ‘সাধারণত ক্রেতারা বরফে সংরক্ষণ করা ইলিশের চেয়ে তাজা মাছ কিনতে পছন্দ করেন। তবে এক কেজি থেকে দেড় কেজি ওজনের তাজা ইলিশ পাওয়া দুষ্কর। পাইকারি বাজারে পাওয়া গেলেও প্রতি কেজির দাম কমপক্ষে তিন হাজার টাকা, কিন্তু পাওয়া মুশকিল।’
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে বাজারে পাওয়া বেশির ভাগ তাজা ইলিশের ওজন ৪৫০ গ্রাম থেকে ৬৫০ গ্রামের মধ্যে। ৪৫০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের মাছ এক হাজার ৪০০ টাকা, ৫৫০ গ্রাম থেকে ৬৫০ গ্রাম ওজনের মাছ এক হাজার ৭০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ঢাকার বাজারগুলোতে ৩০০ গ্রাম থেকে ৪০০ গ্রাম ওজনের ছোট আকারের তাজা ইলিশ বেশি পাওয়া যায়, যার দাম ৮০০ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে।
রাজধানীর মহাখালী, উত্তর বাড্ডা কাঁচাবাজার, শাহজাদপুর ও কারওয়ানবাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৪৫০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায়। ৫৫০ গ্রাম থেকে ৬৫০ গ্রাম ওজনের মাছ ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা এবং এক কেজি কিংবা তার থেকে একটু বেশি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকায়।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট ও মিরপুর কাঁচাবাজার ঘুরে এই দাম লক্ষ্য করা গেছে।
এদিকে ফার্মগেটের একটি সুপারমার্কেটে দেখা গেছে, এক কেজি থেকে দেড় কেজি ওজনের তাজা ইলিশ প্রতি কেজি তিন হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পূর্ব রাজাবাজারের আবদুল কাদের ইলিশ কিনতে এসেছিলেন কারওয়ান বাজারে। প্রতি কেজি এক হাজার ৭০০ টাকা কেজি দরে ৬০০ গ্রাম ওজনের দুটি মাছ কেনেন তিনি।
আবদুল কাদের বলেন, ‘এই দামে ইলিশ কেনা একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য খুবই কষ্টসাধ্য। তবে সামনে পহেলা বৈশাখ, তাই পরিবারের জন্য এগুলো কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
বরিশালের পাইকারি বাজারে এক কেজি ও তার চেয়ে বেশি ওজনের মাছ মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে এক লাখ ৩০ হাজার টাকায়, প্রতি মণ (৪০ কেজি)। ৫০০ গ্রাম থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের মাছের দাম ছিল মণপ্রতি ৬০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা।
বরিশাল ফিশ হোলসেল মার্কেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল সালাম বলেন, ‘১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশের ছয়টি ইলিশ অভয়াশ্রমে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ আছে। ফলে ইলিশের দাম অনেক বেশি।’
বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের (বিডা) আয়োজনে চার দিনব্যাপী বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫ শেষ হলো গতকাল। বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, নেদারল্যান্ড, জার্মানি, ইউএইসহ রেকর্ডসংখ্যক ৪০টি দেশের খ্যাতনামা বিনিয়োগকারীরা এতে অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক নির্বাহী ও নীতি নির্ধারকরাও এতে অংশ নেন।
বিনিয়োগ সামিটের শেষ দিনে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডার হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট নাহিয়ান রহমান রচি বলেন, বিনিয়োগ সামিটকে পূর্ণাঙ্গভাবে সফল করতে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করা হবে। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, বিনিয়োগ সামিটকে পূর্ণাঙ্গভাবে সফল করতে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। এ রোডম্যাপ ১৮ থেকে ২৪ মাসের। বিনিয়োগ সামিটে সেসব কোম্পানি ও ব্যক্তি বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, তাদের নিয়ে বিনিয়োগের একটি পাইপ লাইন তৈরি করা হবে।
পরবর্তীতে সেই পাইপ লাইনের তালিকা ধরে ফলোআপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। তখন আমরা তাদের কাছে জানতে চাইব। আপনারা তো বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। এখন কী অবস্থা? কোনো সমস্যা আছে কি না? বিনিয়োগের চূড়ান্ত রূপ দিতে আর কী কী সহায়তা লাগবে?
সংবাদ সম্মেলনে বিডার নির্বাহী সদস্য শাহ মোহাম্মদ মাহবুব ও বেজার মহাপরিচালক দয়ানন্দ দেবনাথ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে রচি জানান, তিনদিনের সম্মেলনে আমরা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের বিনিয়োগের মিশন-ভিশন ও কালচারাল বিষয় সম্পর্কে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছে। আজ সারা দিন আমরা আমাদের এফডিআই হিটম্যাপ অনুযায়ী চারটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকালে ডিজিটাল ইকোনমি, টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস, হেলথ কেয়ার এন্ড ফার্মা, অ্যাগ্রিকালচার ও এগ্রি প্রসেসিং, গ্রিন হাউজ ইম্পেক্ট, অ্যাগ্রিকালচার ইন্ডাস্ট্রিতে ফাইনান্সিং ইত্যাদি বিষয়ের ওপর বেশ আলাপ-আলোচনা হয়েছে।
এ ছাড়া কিছু ব্রেকআউট সেশন ছিল। এসব সেশনে বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরকে কী কী সম্ভাবনা আছে সেগুলো জানানোর পাশাপাশি স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে ম্যাসমেকিং তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো বিনিয়োগকারীদের ট্যাগ করে একটি বিনিয়োগ পাইপ লাইন তৈরি করা।
নাহিয়ান রহমান বলেন, বেশ কিছু এবারের বিনিয়োগ সামিটে ৪৫০জন বিদেশি বিনিয়োগকারী অংশগ্রহণ করেছেন। এখন পর্যন্ত হ্যাঙ্গার গ্রুপ ১৫০ মিলিয়ন, শপঅ্যাপ ১১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের চুক্তি করেছে। এ ছাড়া আরও অনেকেই বিনিয়োগের কমিটমেন্ট করেছে।
তিনি বলেন, আগে বিনিয়োগকারীরা যেসব সমস্যার কথা বলত, এখন তারা সংখ্যাটা কমিয়ে এনেছে। আমরাও বলি প্রতিবন্ধকতা আগের চেয়ে অনেক কমেছে। ইতোমধ্যে আপনারা দেখেছেন, কোরিয়ান ইপিজেডে সমস্যাটি কীভাবে সমাধান হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিডার নির্বাহী সদস্য শাহ মোহাম্মদ মাহবুব জানান, এবারের বিনিয়োগ সামিট অন্যবারের চেয়ে আলাদা। আগে শুধু সভা সেমিনারের মধ্যেই সীমাবদ্ধা ছিল। কিন্তু এবারের সামিটে সভা সেমিনারের পাশাপাশি বিটুবি, বিটুজি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনার সুযোগ রাখা হয়েছিল। বিনিয়োগকারীরা এদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগ সম্ভবনা, সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তারা তিনটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে জানতে চেয়েছে। বর্তমান সরকার চলে গেলে তারা এসব নীতি-পলিসি অব্যাহত রাখবেন কি না?
২০৩৩ সালের মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে বাজার দাঁড়াবে ২৩ বিলিয়ন ডলারে। এর আগে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট -২০২৫ এর এক সেশনে উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এ খাতটি শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে।
তাদের মতে, চিকিৎসা সামগ্রী ও উন্নত ডায়াগনস্টিক সরঞ্জামের ক্রমবর্ধমান চাহিদা থেকে ২০৩৩ সালের মধ্যে দেশের স্বাস্থ্য খাতের বাজারের পরিমাণ ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে।
গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট- ২০২৫’-এর ‘বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা বিনিয়োগের সম্ভাবনা উন্মুক্তকরণ’ শীর্ষক এক অধিবেশনে এই পূর্বাভাস দেন বিশেষজ্ঞরা।
সেশনটির বক্তা ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান। প্রাভা হেলথের প্রতিষ্ঠাতা, চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সিলভানা কাদের সিনহা ‘বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা বিনিয়োগের সম্ভাবনা উন্মুক্তকরণ’ শীর্ষক মূল বক্তৃতা প্রদান করেন।
সাইদুর রহমান তার বক্তৃতায় দেশের স্বাস্থ্য খাতের উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধির কথা তুলে ধরে বিনিয়োগকারীদের এখানে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘প্রত্যাশা করা হচ্ছে যে ২০৩৩ সালের মধ্যে দেশের স্বাস্থ্য খাতের বাজারের পরিমাণ ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে। এতে স্পষ্ট যে, দেশের স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।’
এদিকে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট- ২০২৫ এ গতকাল স্বাস্থ্য খাতে মোট চারটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
হাসান মহিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস, দ্য এন্টারপ্রেনারস গ্রুপ এবং বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসির মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
হাসান মহিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসসের ম্যানেজিং পার্টনার হাসান ইমাম সিদ্দিকী, বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসির পরিচালক এহতিয়াজ করিম এবং দ্য এন্টারপ্রেনিউরস গ্রুপের মাইকেল জনাথন গেইল এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
হাসান মহিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস এবং দ্য এন্টারপ্রেনিউরস গ্রুপের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
হাসান মহিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের ম্যানেজিং পার্টনার হাসান ইমাম সিদ্দিকী এবং দ্য এন্টারপ্রেনিউরস গ্রুপের মাইকেল জোনাথন গেইল এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছেন।
হাসান মহিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস এবং জেপিজি ইনভেস্টমেন্টসের মধ্যে আরেকটি দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
হাসান মহিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের সিনিয়র পার্টনার শাহ মহিন উদ্দিন এবং জেপিজি ইনভেস্টমেন্টসের সিইও জেমস পন্ড এতে স্বাক্ষর করেছেন।
হাসান মহিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস, ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল এবং এন্টারপ্রেনিউরস গ্রুপের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, ‘ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে কোনো সমস্যা বোধ করছি না। নিজস্ব সক্ষমতা ও রপ্তানির ক্ষেত্রে যোগাযোগের যেন কোনো ঘাটতি না পড়ে, সেজন্য সব ব্যবস্থা নিচ্ছি। আশা করছি, এ সমস্যা কাটিয়ে উঠব।’ ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে বাংলাদেশের কোনো সমস্যা হবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সম্প্রতি ভারত দিয়ে বাংলাদেশের পণ্য পরিবহনে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘হঠাৎ করেই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে ভারত। বুধবার অংশীজনদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে।’
যদিও সমস্যা কাটিয়ে উঠতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত বলেননি উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে—সেটি এই মুহূর্তে শেয়ার করব না। যে প্রতিবন্ধকতাগুলো আছে, সেগুলো কিছু কাঠামোগত, কিছু আবার খরচের দিক থেকে; এসব বিষয়গুলো সমন্বয় করে সক্ষমতা বাড়ানো হবে।’
এ বিষয়ে ভারতকে কোনো চিঠি দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকার আপাতত এমন কিছু ভাবছে না।’
ভারতের ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধায় কী পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয় জানতে চাইলে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ৪০-৫০ হাজার টনের মতো পণ্য সড়কপথে ভারতের বিভিন্ন বন্দর, বিশেষ করে দিল্লি ও কলকাতার মাধ্যমে রপ্তানি হতো। এই পণ্যগুলো পরিবহনের জন্য নিজেদের সক্ষমতা বাড়িয়ে খুব তাড়াতাড়িই এ সমস্যার সমাধান করা হবে।’
এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক স্থগিতের বিষয়ে শেখ বশিরউদ্দিন বলেন, ‘এটি ভালো খবর। এর ফলে দেশের বাণিজ্যে স্থিরতা আসবে।’
উপদেষ্টা আরও জানান, গতকাল (বুধবার) যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) সঙ্গে অনলাইনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।
এ সময় শিগগিরই বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রে যাবে বলে জানান তিনি। বলেন, ‘সেখানে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা হবে।’
সূত্র: ইউএনবি
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ঢাকার পুঁজিবাজারে সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে লেনদেন চললেও, পতনের আভাস চট্টগ্রামের বাজারে; কমেছে সার্বিক সূচক।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) লেনদেনের প্রথমার্ধে বেড়েছে সবকটি সূচক। প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১৫ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচক শরীয়াভিত্তিক ডিএসইএস ৩ এবং বাছাইকৃত কোম্পানির ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ৪ পয়েন্ট।
দাম বেড়েছে লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির। ২০৯ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ৯৭ এবং অপরিবর্তিত আছে ৮৬ কোম্পানির।
ডিএসইতে প্রথম দুই ঘণ্টায় লেনদেন ২৭০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
ঢাকার সূচক বাড়লেও কমেছে চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ৩ পয়েন্ট।
তবে সূচক কমলেও দাম বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের। লেনদেনে অংশ নেয়া ১৩৪ কোম্পানির মধ্যে ৫৮ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর হারিয়েছে ৫১ কোম্পানি এবং অপরিবর্তিত আছে ২৫ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় সিএসইতে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকার বেশি শেয়ার এবং ইউনিট ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে।
সিঙ্গাপুর থেকে ৫০ হাজার টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। প্রতি কেজি চালের দাম পড়বে ৫০ টাকা ৮১ পয়সা। আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এ চাল ক্রয়ে মোট ব্যয় হবে ২৫৪ কোটি ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক সূত্র জানা গেছে, চাল আমদানির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে খাদ্য অধিদপ্তর থেকে চাল ক্রয়ের জন্য গত ১২ মার্চ আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে মোট ১২ সরবরাহকারী দরপত্র দলিল সংগ্রহ করলেও ৫টি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেয়।
এর মধ্যে সিঙ্গাপুরভিত্তিক মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড প্রতি টন চালের দাম ৪১৬.৪৪ ডলার উল্লেখ করায় দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির নাম সুপারিশ করে, যা উৎস দেশগুলোর গড় দর (৪৪৪.৯১ ডলার) অপেক্ষা ২৮.৪৭ ডলার কম।
এছাড়া মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেডের দেওয়া দর বাংলাদেশের বন্দর পর্যন্ত প্রতি টন ৪১৬.৪৪ ডলার, যা বাজার দর যাচাই কমিটির প্রাক্কলিত দরের চেয়ে কম। এ কারণে এই দর গ্রহণের জন্য দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সুপারিশ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হয়। কমিটির সদস্যরা প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে অনুমোদন দিয়েছে।
প্রতি টন ৪১৬.৪৪ ডলার হিসেবে ৫০ হাজার টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল ক্রয়ের জন্য প্রয়োজন হবে ২ কোটি ৮ লাখ ২২ হাজার ডলার। অর্থাৎ গত ২৭ মার্চ তারিখে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ডলারের বিনিময় হার প্রতি ডলার ১২২ টাকা (সম্ভাব্য) হিসেবে ২৫৪ কোটি ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকার প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে প্রতি কেজির দাম পড়বে ৫০ টাকা ৮১ পয়সা।
সূত্রটি জানিয়েছে, মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের জন্য ৬০:৪০ অনুপাতে কস্ট ইন্সুরেন্স ফ্রেইট-লাইনার আউট (সিআইএফ-এলও) টার্মে (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সিডি ভ্যাট ব্যতীত) প্রতি টন ৪১৬.৪৪ ডলার হিসেবে ২ কোটি ৮ লাখ ২২ হাজার ডলারে এই ৫০ হাজার টন (৫%) নন বাসমতি সিদ্ধ চাল কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে আন্তর্জাতিক উৎস হতে ৯ লাখ টন চাল আমদানির জন্য অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৪ লাখ ৫০ হাজার টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল এবং জি টু জি পদ্ধতিতে মিয়ানমার থেকে ১ লাখ টন, পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার টন ও ভিয়েতনাম থেকে ১ লাখ টন আতপ চালসহ মোট ৭ লাখ টন চাল ক্রয়ের চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ফ্যামিলি কার্ডধারীদের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রির জন্য পৃথক দুটি দরপত্রের মাধ্যমে ১০ হাজার টন মসুর ডাল ও এক কোটি ২০ লাখ লিটার ভোজ্য তেল ক্রয় করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ-সংক্রান্ত দুটি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ২৮০ কোটি ১৪ লাখ ২০ হাজার টাকা।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১০ হাজার টন মসুর ডাল (৫০ কেজির বস্তায়) কেনার অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
সূত্র জানায়, টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী এক কোটি পরিবারের নিকট ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনার জন্য স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৪টি দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। তার মধ্যে ৩টি দরপ্রস্তাব কারিগরিভাবে ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়।
দর প্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশে রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান শেখ অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিকে এই মসুর ডাল কেনার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। প্রতি কেজি ৯২.৭৫ টাকা হিসেবে ১০ হাজার টন মসুর ডাল ক্রয়ে ব্যয় হবে ৯২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মসুর ডাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৮৮ হাজার টন। এ পর্যন্ত ক্রয় চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৯৫০ টন।
সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অপর এক প্রস্তাবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
জানা গেছে, টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের নিকট ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে ২ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ১ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল সরবরাহের জন্য মাত্র ১টি দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। দরপ্রস্তাবটি আর্থিক ও কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়।
দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশে রেসপনসিভ একমাত্র দরদাতা প্রতিষ্ঠান থাইল্যান্ডের লাইফ অ্যান্ড হেলথ থেকে এই ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রতি লিটার ১৫৬.১৬ টাকা হিসেবে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ে ব্যয় হবে ১৮৭ কোটি ৩৯ লাখ ২০ হাজার টাকা।
জানা গেছে, দরপত্রে ২ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল সরবরাহে জন্য চাহিদা থাকলেও প্রতিষ্ঠান ১ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল সরবরাহের আগ্রহ প্রকাশ করে। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ভোজ্য তেল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২৮ কোটি লিটার। এ পর্যন্ত ক্রয় করা হয়েছে ১৫ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার লিটার।
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বিনিয়োগকারীদের প্রতিষ্ঠান ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের একটি প্রতিনিধিদল গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
এসময় তারা একটি ক্রমবর্ধমান বাংলাদেশ-মার্কিন অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিতে এবং দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক লাভজনক বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং এক্সেলারেট এনার্জির কৌশলগত উপদেষ্টা পিটার হাস। প্রতিনিধিদলে আরো ছিলেন মেটা, ভিসা, শেভরন, উবার, মেটলাইফ, মাস্টারকার্ড, বোয়িং এবং ইউএস সোয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিলের প্রতিনিধিরা। এক্সেলারেট এনার্জি ইউ.এস চেম্বার অব কমার্সের ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা হয়। মার্কিন কোম্পানিগুলো একটি ইতিবাচক এবং গঠনমূলক সম্পর্কের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে, যা একটি শক্তিশালী বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে উৎসাহিত করবে।
পিটার হাস বলেন, ‘মার্কিন কোম্পানিগুলোর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির পেছনে দীর্ঘমেয়াদী অঙ্গীকার রয়েছে-যেটি স্থিতিস্থাপকতা, উদ্যোক্তা মনোভাব এবং দীর্ঘমেয়াদী সমৃদ্ধির ওপর ভিত্তি করে।’
প্রতিনিধিদল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থনৈতিক সংস্কারের অবস্থানকে স্বাগত জানায়, যা বাণিজ্য ও অ-শুল্ক বাধা নিরসনে সহায়ক হবে।
নিশা দেশাই বিসওয়াল, যিনি আগে ডিএফসির ডেপুটি সিইও এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তিনি বাংলাদেশের মার্কিন বিনিয়োগকারীদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। প্রতিনিধিদল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করার প্রস্তাব দেয়, যাতে করে বাংলাদেশ বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা দূর করতে এবং আরো মার্কিন বিনিয়োগ আকর্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।
চলমান শুল্ক আলোচনা প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমেরিকান কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির কেন্দ্রে রয়েছে। আমরা চাই বাংলাদেশ যেন এই আলোচনাগুলোতে নিজেকে কার্যকরভাবে উপস্থাপন করতে পারে’।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের উন্নয়নে মার্কিন কোম্পানিগুলোর অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান এবং ব্যবসা পরিচালনার সুবিধা সম্প্রসারণে সব ধরনের সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন।
ব্রিকস জোটের উদ্যোগে গঠিত নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) বাংলাদেশে আরও এক বিলিয়ন ডলার (প্রায় ১২ হাজার ২০০ কোটি টাকা) বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে বলে দাবি করেছেন বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, সংস্থাটি বাংলাদেশে ৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। সামনে আরও বড় বিনিয়োগ করবে। বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ প্রসঙ্গে বিডার চেয়ারম্যান জানান, তারা মূলত দুটি বিষয়ে জানতে চাচ্ছেন- বাংলাদেশে ব্যবসা করলে কী ধরনের সুবিধা পাওয়া যাবে এবং বর্তমানে ব্যবসায়ীরা যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন, সেগুলোর সমাধানে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, এবারের সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য সরাসরি বিনিয়োগ আনা নয়, বরং নেটওয়ার্কিংকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচক এখন অপ্রাসঙ্গিক। পৃথিবীর কোথাও শতভাগ সমস্যামুক্ত বাজার নেই। তবে বাংলাদেশে যেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলোর সমাধানে এক থেকে দুই বছরের মধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পালটা শুল্কের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, বৈশ্বিক সমস্যা। প্রধান উপদেষ্টা এরই মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছেন, যা আমরা প্রকাশ করেছি।’
এক চীনা কোম্পানি সাড়ে তিন বছর ঘুরেও লাইসেন্স না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, ‘এমন একটি ঘটনা আমরা শুনেছি। তবে প্রতিষ্ঠানটির নাম ও বিস্তারিত কারণ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জানানো হবে।’
তিনি আরও জানান, এনডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে এসে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং বাংলাদেশের প্রতি তাদের ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানিয়েছেন। সংস্থাটি বর্তমানে ওয়াসার সঙ্গে একটি প্রকল্পে কাজ করছে এবং ভবিষ্যতে বেসরকারি খাতেও ফান্ড দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
সোমবার শুরু হওয়া এই সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ ৪০টি দেশের বিনিয়োগকারীরা অংশ নিয়েছেন। এতে শীর্ষস্থানীয় করপোরেট ব্যক্তিত্বসহ অসংখ্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে।
টানা তিন প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধির ধীরগতির পর অবশেষে কিছুটা গতি ফিরে এসেছে দেশের অর্থনীতিতে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক অর্থাৎ অক্টোবর-ডিসেম্বর মেয়াদে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
এর আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে শ্লথগতির কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ব্যাপকভাবে ভাটা লক্ষ করা গেছে। ওই সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৮১ শতাংশে নেমেছিল। পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় টানা তিন প্রান্তিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার পর গত অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে তা আবার বাড়ল।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) চলতি অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর এই তিন মাসের জিডিপির চিত্র প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, গত জানুয়ারি থেকে টানা তিন প্রান্তিক ধরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে কমেছে। তবে বছরের শেষ প্রান্তিকে তা বেড়েছে।
কৃষি, শিল্প ও সেবা এই তিন খাত দিয়ে জিডিপি প্রকাশ করা হয়। অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি হয়েছে কৃষি খাতে। এই খাতের প্রবৃদ্ধি মাত্র ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। এরপর সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং শিল্প খাতে ৭ দশমিক ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
বিবিএসের তথ্য অনুসারে, অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে দেশের ভেতরে স্থির মূল্যে ৮ লাখ ৮৬ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকার মূল্য সংযোজন হয়। আগের প্রান্তিকে ৮ লাখ ৪ হাজার ৯৪২ কোটি টাকার মূল্য সংযোজন হয়। এর মানে, অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে আগের প্রান্তিকের চেয়ে ৮২ হাজার কোটি টাকার বেশি মূল্য সংযোজন হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনীতি স্থিতিশীল হওয়া এবং কিছু খাতে কার্যক্রম বাড়ায় অর্থনীতির চাকা কিছুটা সচল হয়েছে। তবে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য কৃষি ও সেবা খাতে আরও কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।
মার্চে বেড়েছে মূল্যস্ফীতি
এদিকে গতকাল একই দিনে সদ্য সমাপ্ত মার্চ মাসের মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ চিত্র প্রকাশ করেছে বিবিএস। এতে দেখা গেছে, মার্চে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়ে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই সময় দেশে খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার কমলেও বেড়েছে খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি। খাদ্যে মূল্যস্ফীতি এখন ৯ থেকে ৮ শতাংশের ঘরে নেমেছে।
গত মার্চে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ হওয়ার মানে হলো, ২০২৪ সালের মার্চে যদি বিভিন্ন ধরনের পণ্য ও সেবা কিনে আপনার সংসারের খরচ চালাতে ১০০ টাকা খরচ হয়, তাহলে এ বছরের মার্চে একই পণ্য ও সেবা কিনে সংসার চালাতে খরচ লাগল ১০৯ টাকা ৩৫ পয়সা। প্রতি ১০০ টাকায় খরচ বেড়েছে ৯ টাকা ৩৫ পয়সা।
বিবিএসের তথ্য-উপাত্তে দেখা যাচ্ছে, মার্চে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। ফেব্রুয়ারিতে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ; মার্চে যা কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশে। ফেব্রুয়ারিতে দেশে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ; মার্চে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ।
কোথায় কত মূল্যস্ফীতি
মার্চে দেশে গ্রামাঞ্চলের মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। মার্চে গ্রামাঞ্চলে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ; ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ। গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের মার্চে যা ছিল শতকরা ৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ। মার্চে গ্রামাঞ্চলের খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি ছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৮১ ও ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল যথাক্রমে ৯ দশমিক ১৫ ও ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ২০২৪ সালের মার্চে যা ছিল যথাক্রমে ৯ দশমিক ৮৬ ও ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ।
মার্চে শহরাঞ্চলের মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ; ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ২০২৪ সালের মার্চে যা ছিল ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। মার্চে শহরাঞ্চলের খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে যথাক্রমে ৯ দশমিক ১৮ ও ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ৯ দশমিক ৪৭ ও ৯ দশমিক ২৭ শতাংশ। ২০২৪ সালের মার্চে যা ছিল যথাক্রমে ৯ দশমিক ৯৮ ও ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ।
মজুরি বৃদ্ধির হার কম
মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না মজুরি। বিবিএসের হিসাবে, গত মার্চে জাতীয় মজুরি হার হয় ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। এর মানে হলো, মজুরি যত বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি বেড়েছে জিনিসপত্রের দাম। গত ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে জাতীয় মজুরি হার কিছুটা বেড়েছে।
মজুরিনির্ভর বিশাল জনগোষ্ঠীর ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি পড়ে। গ্রাম-শহর নির্বিশেষে ১৪৫টি নিম্ন দক্ষতার পেশার মজুরির ওপর এই হিসাব করে থাকে বিবিএস। বিবিএস বলছে, দেশের প্রায় ৮৬ শতাংশ মানুষ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। এমন কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা ৬ কোটির মতো।
ধীরে ধীরে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি ফু-ওয়াং ফুড লিমিটেড। একসময়ের ভালো ব্যবসা ও মুনাফা করা কোম্পানিটি এখন ধুঁকে ধুঁকে চলছে। টানা সাড়ে ৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে কোম্পানিটি লোকসানে রয়েছে। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন সময় বিনিয়োগকারীদের প্রলোভন দেখিয়ে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়িয়ে নেওয়া হয়। এতে কোটি কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন অনেক বিনিয়োগকারী। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মিয়া মামুনের বিরুদ্ধে রয়েছে অসংখ প্রতারণার অভিযোগ। এমন পরিস্থিতির মধ্যে কোম্পানির সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার কথা জানিয়েছেন নিরীক্ষক।
নিরীক্ষক জানিয়েছেন, ফু-ওয়াং ফুডের আর্থিক হিসাবে ৫৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকার স্থায়ী সম্পদ দেখানো হয়েছে। তবে ওই সম্পদের রেজিস্টার না থাকায়, সত্যতা যাচাই করা যায়নি। এছাড়া হিসাব মান অনুযায়ী, প্রতি ৩ থেকে ৫ বছর অন্তর সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন করা দরকার পড়লেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ২০১৫ সালের পরে আর করেনি। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আর্থিক হিসাবে ৯ কোটি ১৩ লাখ টাকার মজুদ পণ্য দেখিয়েছে। তবে কারখানা সরেজমিনে পরিদর্শনে অসঙ্গতি পেয়েছেন নিরীক্ষক। বিশেষ করে ৩৪০ আইটেমের মধ্যে ১০৪টি আইটেমের কাঁচামাল, বিক্রিযোগ্য পণ্য ও প্যাকিং জিনিসের ক্ষেত্রে অসঙ্গতি পাওয়া গেছে।
কাঁচামাল ক্রয়ের জন্য অগ্রিম ৩ কোটি ২১ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে বলে আর্থিক হিসাবে উল্লেখ করেছে ফু-ওয়াং ফুডস কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা পূর্বের বছরের। এ অর্থের বিষয়ে কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট সঠিক জবাব দিতে পারেনি নিরীক্ষককে। এমনকি কাঁচামাল সরবরাহকারীদের তালিকা নেই। যাতে ওই অগ্রিম অর্থের বিষয়টি অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক।
নিরীক্ষক জানিয়েছেন, এই কোম্পানিটির ১০৭ কোটি ২২ লাখ টাকার ঋণাত্মক সংরক্ষিত মুনাফা (রিটেইন আর্নিংস) রয়েছে। এর মধ্যে ৯৯ লাখ টাকার লোকসান ইনকাম স্টেটমেন্টের পরিবর্তে রিটেইন আর্নিংসে সমন্বয় করা হয়েছিল। এই লোকসান যদি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ইনকাম স্টেটমেন্টে দেখানো হতো, তাহলে আলোচ্য বছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান কম হতো ৯ পয়সা, যা না করে ইপিএস বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে।
আর্থিক হিসাবে কাঁচামাল সরবরাহকারীরা কোম্পানির কাছে ১৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা পাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে নিরীক্ষক এ বিষয়ে সত্যতা যাচাইয়ে পাওনাদারদের চিঠি দিলেও ২৭ জনের মধ্যে ১১ জনের পাওনার বিষয়ে সত্যতা পেয়েছে। আর কোম্পানির হিসাবের সঙ্গে ২ কোটি ১৯ লাখ টাকার অসঙ্গতি পেয়েছে।
এদিকে আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কোম্পানিটি ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে টানা লোকসানে রয়েছে। ওই বছরে কোম্পানির কর পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছিল ২৫ কোটি সাড়ে ৭ লাখ টাকা। পরের বছরে কোম্পানির লোকসান হয় ৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। আর সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কোম্পানিটির নিট লোকসান হয়েছে ৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আর চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) কোম্পানির এরই মধ্যে নিট লোকসান হয়েছে ২ কোটি ২২ লাখ টাকা।
২০০০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ফু-ওয়াং ফুডের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১১০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এরমধ্যে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন শ্রেণির (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতীত) বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ৯২ দশমিক ১৫ শতাংশ। অর্থাৎ কোম্পানিটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।