কার্ডের মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রার লেনদেন অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কার্ডের মাধ্যমে ৫৫৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা লেনদেন হয়েছে। এই অঙ্ক গত বছরের ফেব্রুয়ারির চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি; ২০২২ সালের একই মাসে কার্ডের মাধ্যমে ২৫৬ কোটি ২০ লাখ টাকার বিদেশি মুদ্রা লেনদেন হয়েছিল।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। তাতে দেখা যায়, প্রায় প্রতিমাসেই বাড়ছে কার্ডের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনের পরিমাণ। তবে জানুয়ারির চেয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে লেনদেন কিছুটা কমেছে। জানুয়ারি মাসে লেনদেন হয়েছিল ৬২০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আর তার আগের মাস ডিসেম্বরে হয়েছিল ৬৩৯ কোটি টাকা।
প্রায় দুই বছর ধরে দেশে ডলারের সংকট চলছে। রোববার আন্তব্যাংক লেনদেনে প্রতি ডলারের সর্বোচ্চ দর ছিল ১০৭ টাকা। আর সর্বনিম্ন দর ছিল ১০৬ টাকা ৮৫ পয়সা। দুই বছর আগে এই ডলারের দর ছিল ৮৫ টাকা ৭০ পয়সা। খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলারের দর বেড়ে ১২০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এখন ১১৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, ভ্রমণ, চিকিৎসা, শিক্ষা ও ব্যবসার কাজে অনেকেই বিদেশে কার্ডের মাধ্যমে ডলার নিয়ে যাচ্ছেন। সে কারণে কার্ডের মাধ্যমে ডলারের লেনদেন বেড়েছে। গ্রাহকদের কাছে নগদ ও কার্ডে- দুইভাবেই ডলার বিক্রি করে ব্যাংকগুলো। এতদিন নগদের চেয়ে কার্ডে ডলার নেয়ার খরচ ছিল কম।
দেশে অনেক আগেই ক্রেডিট কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের অনুমোদন দেয়া হয়। আর ২০২০ সালের জুনে ব্যাংকগুলোকে গ্রাহকদের হিসাবের বিপরীতে আন্তর্জাতিক ডেবিট কার্ড ইস্যুর অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ বিষয়ে বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে বিদেশে ভ্রমণ বেড়েছে। কোভিডের কারণে মাঝে বন্ধই ছিল বলা যায়। এখন আগের মতোই মানুষজন ভ্রমণ, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কারণে বিদেশে যাচ্ছেন। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবহার বাড়ছে। আর এর ব্যবহার নগদের বদলে কার্ডে বেশি হচ্ছে। এ ছাড়া সামনে ঈদ। ফলে লেনদেন আরও বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘বাইরের দেশে এখন অনেকেই নগদ মুদ্রা ব্যবহার করতে চান না। ফলে আগের চেয়ে কার্ডের মাধ্যমে মুদ্রার লেনদেন বেড়ে গেছে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, বাংলাদেশি একজন নাগরিক ভ্রমণের জন্য বছরে ১২ হাজার ডলার সঙ্গে নিতে পারবে। চিকিৎসার জন্য অনুমতি ছাড়া ১০ হাজার ডলার এবং শিক্ষার জন্য গ্রেড ১২-এর নিচে বাইরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যত লাগবে তত নিতে পারবে।
আগামী ৯ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কার্যকর হবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আদেশ। তবে অতিরিক্ত শুল্ক কার্যকরের পর বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা ঠিক কী পরিমাণ শুল্ক আরোপের মুখোমুখি হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা এখনো জানেন না, নতুন শুল্ক হার বর্তমান শুল্কের সঙ্গে যোগ করা হবে নাকি প্রতিস্থাপন করা হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। তবে ওই আদেশে পণ্যভিত্তিক শুল্ক হারের তালিকা বা কাস্টমস গাইডেন্স দেওয়া হয়নি। এতে বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি খাতে এক ধরনের বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান শুল্কের বাইরে যদি ৩৭ শতাংশ শুল্ক যোগ করা হয়, তাহলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, বাংলাদেশের পোশাকের ওপর কার্যকর শুল্ক বর্তমান গড় ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪৮ দশমিক ৫৬ শতাংশে দাঁড়াবে। অর্থাৎ ঢাকা থেকে ১০০ ডলারের টি-শার্ট বা জিন্সের চালানে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরে আমদানি শুল্ক বাবদ প্রায় ৪৯ ডলার দিতে হবে, যা বর্তমানে মাত্র ১১ দশমিক ৫৬ ডলার।
দেশের অন্যতম বৃহৎ ডেনিম রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এম তানভীর বলেন, “আমরা সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। কারণ ট্রাম্পের আদেশে পরিষ্কারভাবে এটিকে ‘অতিরিক্ত’ শুল্ক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ৯ এপ্রিলের আগে আমরা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারব না।”
হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই আদেশের দ্বারা নির্ধারিত শুল্কের হারগুলো প্রযোজ্য অন্য কোনো শুল্ক, ফি, কর বা চার্জের অতিরিক্ত। তবে তারা দেশ বা পণ্য অনুসারে আর কিছু জানায়নি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখনো পরিষ্কার নই। এটি ৩৭ শতাংশ হতে পারে, কিংবা যদি বর্তমান মোস্ট ফেভারড নেশন (এমএফএন) হারের সঙ্গে যোগ করা হয় তাহলে ৫২ শতাংশেরও বেশি হতে পারে, যা বাংলাদেশের জন্য ইতোমধ্যে অনেক পণ্যে ১৫ শতাংশের ওপরে আছে।’
অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির জানান, তার প্রতিষ্ঠান এখনো ক্রেতাদের কাছ থেকে হালনাগাদ ট্যারিফের তথ্য পায়নি।
‘তবে বিভিন্ন সূত্র পরামর্শ দিয়েছে, বর্তমান হারকে প্রতিস্থাপন করে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হতে পারে, অথবা বর্তমান হারের সঙ্গে যোগ হতে পারে।’
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির প্রশাসক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি পোশাক ব্র্যান্ড ইতোমধ্যে জানিয়েছে, বাংলাদেশে নতুন শুল্ক ৪৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ হতে পারে।’
‘সেই ধারণার ওপর ভিত্তি করেই আমরা কৌশল প্রণয়ন করছি। আর নির্বাহী আদেশে স্পষ্টভাবে এটাকে বাড়তি শুল্ক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে,’ বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, শুল্ক সমন্বয় হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হলেও এর মূলে আছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমাগত বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে বৃহত্তর উদ্বেগ।
তার ভাষ্য, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি বাণিজ্য অর্থনীতি, যা আমদানির ওপর নির্ভর করে। এই পদক্ষেপ শুধু শুল্কের জন্য নয়, বরং তারা বাণিজ্য প্রবাহকে ওয়াশিংটনের অনুকূলে নিতে চায়।’
যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতিটি অন্যান্য শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশের ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে অনুমান করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বৈশ্বিক সোর্সিং কীভাবে পরিবর্তিত হতে পারে তার একটি ধারণা দিয়েছেন।
চীনের পোশাকের শুল্ক ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছাতে পারে, যেখানে ভিয়েতনামের শুল্ক ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে। ভারতের ৩৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ৪৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ, কম্বোডিয়ায় ৬০ দশমিক ৭ শতাংশ ও পাকিস্তানের ৪১ দশমিক ৪৬ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি বাজারের ৯ শতাংশ বাংলাদেশের দখলে। এ ছাড়া বাংলাদেশের মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় ২৪ শতাংশই হয় যুক্তরাষ্ট্রে।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একক বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য। ২০২৪ সালে দেশটিতে ৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এতে চীন ও ভিয়েতনামের পরে তৃতীয় পোশাক সরবরাহকারী দেশ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। এ খাতে ৪০ লাখেরও বেশি শ্রমিক কাজ করেন এবং বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশেরও বেশি তৈরি পোশাক।
রপ্তানিকারক এবং নীতিনির্ধারকরা একমত যে, এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার এখনই সময়।
অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির বলেন, ‘আমাদের উৎপাদন সক্ষমতা ও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মতো অবস্থান রয়েছে। কিন্তু অন্য দেশগুলো যদি শুল্ক হার কমিয়ে দেয়, তাহলে আমরা দ্রুত বাজার হারাব।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং রপ্তানিকারকরা অবিলম্বে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্যাসিফিক জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এম তানভীর বলেন, ‘অন্যান্য দেশ এরই মধ্যে আলোচনা শুরু করেছে। আমাদেরও একই কাজ করতে হবে এবং তা দ্রুত করতে হবে। এখনো একটি কার্যকর ফলাফল খুঁজে বের করার সুযোগ আছে।’
রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সফররত প্রতিনিধিদল।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে রোববার (৬ এপ্রিল) বৈঠক করে আইএমএফের প্রতিনিধিদল। বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। সচিবালয়ের অর্থ উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই বৈঠক হয়। আইএমএফের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন মিশন প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কাঙ্ক্ষিত হারে রাজস্ব আদায় না হওয়া প্রসঙ্গে আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশে কর জাল অনেক কম। এখানে লাখ লাখ শূন্য রিটার্ন দিয়ে থাকে। ভ্যাটের একক হার দেখতে চায় আইএমএফ। কিন্তু আমরা একেবারে একক ভ্যাট হারে যেতে পারব না।’
ঋণখেলাপি ও ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, খারাপ ঋণ কীভাবে কমাব, আইন সংশোধন- এসব নিয়ে কথা বলেছে আইএমএফ। তিনি বলেন, ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জুন মাসে দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের জন্য এই মিশন অর্থনীতির বিভিন্ন পর্যালোচনা করবে। মে-জুন মাসে তারা বাংলাদেশের অর্থনীতি পর্যালোচনা প্রতিবেদন নিয়ে বৈঠক করে ঋণের দুই কিস্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, শুল্ক-কর নিয়ে আইএমএফ জানতে চেয়েছে, কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াব কীভাবে? কর আদায় বাড়াব কীভাবে? এ ছাড়া করনীতি ও কর আদায়—এ দুটি বিভাগ আলাদা করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। সার্বিকভাবে বাজেট ঘাটতি কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, সেই বিষয়েও আইএমএফ জানতে চেয়েছে।
সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ে এবারের মিশন রাজস্ব পরিস্থিতি, কর-জিডিপি অনুপাত, বিদেশি মুদ্রার মজুত, বাজেট ঘাটতি—এসব বিষয় পর্যালোচনা করবে। সংস্কারের বিষয়ে বাংলাদেশ ভালো মনোভাব দেখিয়েছে বলে অর্থ উপদেষ্টা জানান।
বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সন্তোষ প্রকাশ করেছে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ওদের (আইএমএফ) মূল ফোকাস ট্যাক্স জিডিপি রেশিও বাড়ানো, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আর একটু স্থিতিশীল করা, বাজেটে ঘাটতি কমানো।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা ভ্যাটের হার সিঙ্গেল রেটে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছি। তবে ভ্যাট একবারে সিঙ্গেল রেটে নামিয়ে আনা সম্ভব নয়।
ভ্যাট সিঙ্গেল রেটে নামিয়ে আনার বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কী? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সিঙ্গেল রেটের বিষয়ে আমরা চেষ্টা করবো। তবে আমরা একবারে সিঙ্গেল রেটে পৌঁছাতে পারবো না।
আইএমএফ ঋণের কিস্তির বিষয়ে তিনি বলেন, দুই কিস্তির অর্থ একবারে দেবে। ওরা এখন রিভিউ করবে। আমরা ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও বাড়াবো কীভাবে, মাত্র ৭ শতাংশ আছে। তারপর আমাদের ট্যাক্স কালেকশন কীভাবে করবো। ট্যাক্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশন লিকেজ যেন না হয়।
বেসিকলি আইএমএফের কনসার্ন হলো রেভিনিউ জেনারেশন, আমাদের বাজেট সাইজ কত হবে, ডেফিসিট (ঘাটতি) কত হবে, এগুলো নিয়ে আপাতত কথা হয়েছে। আমার সঙ্গে ডিটেইল কথা হয়নি, এনবিআরের সঙ্গে কথা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা হবে লোন রেজুলেশন নিয়ে, বলেন অর্থ উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, সার্বিকভাবে ব্যাংকখাতের শৃঙ্খলা, খেলাপির ঋণ আদায়, এনবিআরের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও বাড়াবো কীভাবে, কোন কোন ক্ষেত্রে বাড়াবো এগুলো নিয়ে আমার সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। সবার সঙ্গে ওরা ইন্ডিভিজুয়ালি বসবে। তারপর আপনারা কয়দিন পরে জানতে পারবেন।
আইএমএফ ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ পাওয়ার বিষয়ে এর আগে আপনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। এখন আপনাদের অবস্থান কী? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা আশাবাদী। ওরা বলেছে দেখব। ওরা যাওয়ার পর ১৯ এপ্রিল আমি যাবো। তারপর মে-জুনের দিকে বৈঠক হবে। এই রিভিউয়ের ওপরই তাদের সুপারিশ।
চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ঋণের ক্ষেত্রে উনাদের মূল ফোকাস কী? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ট্যাক্স জিডিপি রেশিও বাড়ানো, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আর একটু স্থিতিশীল করা, তারপর বাজেটে ঘাটতি কমানো এগুলো মেইন ফোকাস।
বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে ওরা কী বলেছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ওরা বলেছে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন মোটামুটি স্থিতিশীল, গতিশীল, সঠিক পথে আছে। কিন্তু রিভিউ করার পর আর একটু দেখবে। ওরা বলেছে ওরা সন্তুষ্ট বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন স্থিতিশীল। তবে ওরা ডিটেইল জিনিসগুলো দেখবে।
কোন বিষয়গুলোতে কম্প্রোমাইজ করতে হবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি সোজাসুজি বলেছি আমাদের পক্ষ থেকে যা যা করার দরকার আমরা করতে চেষ্টা করছি। অলরেডি আমাদের গুড ইনটেনশন দেখিয়েছি। ওদের দিক থেকে ওদের গুড ইনটেনশন দেখাক। দেন উই এনগেজ। আমরা আলাপ করবো। হোপ এগ্রি।
ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কী? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলবো।
রাজস্ব খাতে কী করতে হবে, ওরা কী চায়? এমন প্রশ্নের উত্তরে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। আমাদের জিডিপি নেপালের চেয়ে অনেক বড়, ওরা বলে নেপালের থেকে তোমাদের অনেক কম। ওদের (নেপাল) ১২-১৩ শতাংশ। ভারতে প্রায় ১৭-১৮ শতাংশ।
ওরা বলছে, তোমাদের এটা (ট্যাক্স জিডিপি রেশিও কম) হওয়ার কারণ হয় নেট (আওতা) কম। লাখ লাখ লোক আছে যারা জিরো ট্যাক্সে রিটার্ন দেয়, তাদের আয় আছে কিন্তু তারা রিটার্ন দেয় না, বলেন অর্থ উপদেষ্টা।
দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫.৬২ বিলিয়ন ডলারে। গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান এ তথ্য জানিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, চলতি মাসের ৬ তারিখ পর্যন্ত দেশের গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ২৫৬২৫.৩৮ মিলিয়ন বা ২ হাজার ৫৬২ কোটি ৫৩ লাখ ৮০ হাজার ডলার। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ এখন ২০৪৬০.৫২ মিলিয়ন বা ২ হাজার ৪৬ কোটি ৫ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার।
এর আগে মার্চ মাসের ২৭ তারিখ কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছিল, সেদিন পর্যন্ত দেশের গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ২৫৪৪০.৮৮ মিলিয়ন বা ২ হাজার ৫৪৪ কোটি ৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ এখন ২০২৯৬.৯৩ মিলিয়ন বা ২ হাজার ২৯ কোটি ৬৯ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার।
এদিকে গত মার্চ মাসে দেশে এসেছে ৩২৯ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। যা দেশের ইতিহাসে কোনে এক মাসে সর্বোচ্চ।
সব রেকর্ড ভেঙে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এক মাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে বিগত মার্চে। এই মাসের ৩১ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ৩২৯ কোটি বা ৩.২৯ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি। সে হিসেবে প্রতিদিন প্রায় ১১ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। ইতোপূর্বে এত রেমিট্যান্সপ্রবাহ আর কখনো দেখা যায়নি। গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ৩ বিলিয়ন (৩০০ কোটি) ডলারেরও বেশি। গত ডিসেম্বরে দেশে ২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আসে।
ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে প্রবাসীরা এবার প্রচুর পরিমাণে অর্থ বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে পাঠিয়েছেন। শুধু ২৭-৩১ মার্চ এ সময়ের মধ্যেই রেমিট্যান্স এসেছে ৩৪৫ মিলিয়ন ডলার। বৈধ চ্যানেলে অর্থ প্রেরণের কারণেই এবার রেমিট্যান্সে ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় এ বছর মার্চে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বেড়েছে ৬৪.৭০ শতাংশ। ২০২৪ সালের মার্চে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ১.৯৯ বিলিয়ন ডলার।
মার্চের আগে চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছিল ২.৬৪ বিলিয়ন ডলার, যা এতদিন ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সর্বোচ্চ ২.৬৪ বিলিয়ন রেমিট্যান্স এসেছিল। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, আগস্টে এসেছিল ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, নভেম্বর মাসে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরপরই বেড়ে যায় রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের গতি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দেশ থেকে অর্থপাচার কমেছে। একই সঙ্গে কমেছে হুন্ডি কারবারির দৌরাত্ম্যও। অন্যদিকে খোলা বাজারের মতোই ব্যাংকে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম পাওয়া যাচ্ছে। এসব কারণে প্রবাসীরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাছাড়া আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে আরও বেশি বেড়েছে রেমিট্যান্স আসার গতি।
২০২০ সালে করোনাকালে জুলাই মাসে ২ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এবার সেই রেকর্ড ভাঙে ২০২৪ সালের বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে। ২০২৪ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল প্রায় ২৬৪ কোটি ডলার। এবার মার্চ মাসে সেই রেকর্ড অতিক্রম করে নতুন ইতিহাস তৈরি হলো।
রাজধানী ঢাকায় চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫ শুরু হচ্ছে আজ সোমবার। এতে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ ৪০টি দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রায় ৬ শতাধিক দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী এ সম্মেলনে অংশ নেবেন বলে সরকার আশা করছে। এ সম্মেলন একক কোনো ভেন্যুতে নয় বরং বিভিন্ন স্থান, ভেন্যু এবং নানা অনুষ্ঠানের সমন্বয়ে হবে।
গতকাল রোববার রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এ-সংক্রান্ত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এ তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি জানান, ৭ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত চার দিনব্যাপী সম্মেলনে আয়োজক বাংলাদেশসহ অর্ধশতাধিক দেশের সাড়ে ৫ শতাধিক শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করবেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের সামনে চার দিনব্যাপী এই সম্মেলনের কর্মসূচি তুলে ধরেন।
প্রথম দিন: সম্মেলনের প্রথম দিন দুটি ট্র্যাকে অনুষ্ঠানটি হবে। প্রথম ট্র্যাকে ৬০ জনের বেশি বিদেশি বিনিয়োগকারীকে নিয়ে একটি স্পেশাল ফ্লাইট চট্টগ্রাম যাবে। সেখান থেকে কোরিয়ান ইপিজেড ও মিরসরাইয়ে স্পেশাল ইকোনমিক জোন পরিদর্শন শেষে রাতে ফিরে আসবেন তারা।
চট্টগ্রাম যাওয়া এসব উদ্যোক্তারা সেখানে একটি ফ্যাক্টরি স্থাপন করার ব্যাপারে বিস্তারিত জানবেন এবং তথ্য সংগ্রহ করবেন। তাদের জন্য কোনো ধরনের সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি করা সম্ভব তা তারা সরেজমিনে দেখবেন।
একই দিনে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে স্টার্টআপ কানেক্ট নামে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানসূচি রয়েছে। সেখানে যেসব আরলি সেটজ স্টার্টআপ এবং ভেঞ্চার বিনিয়োগকারী আসছেন তাদের মধ্যে ম্যাচ মেকিং ইভেন্ট, নেটওয়ার্কিং ও প্যানেল হবে। সারা দিন স্টার্টআপ ইভেন্টকে ফোকাস করা হবে।
দ্বিতীয় দিন: আশিক মাহমুদ জানান, এ দিন শুরুতে বিনিয়োগকারীরা নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের জাপানি ইকোনমিক জোন সরেজমিনে পরিদর্শন করবেন। তারা সেখানকার ফ্যাক্টরির মালিকদের সঙ্গে কথা বলে কী ধরনের কর্মকাণ্ড হচ্ছে তা বুঝে তাদের বিনিয়োগের জন্য কতটুকু সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তা দেখবেন।
দ্বিতীয় ধাপে বিশ্বব্যাংক ও আইএলও’র সঙ্গে কিছু অ্যানগেজমেন্ট আছে। তাদের এফডিআই রিলেটেড কিছু ব্যাপারে আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যতে বিনিয়োগের জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায় সে ব্যাপারে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।
তৃতীয় দিন: সম্মেলনের তৃতীয় দিন (বুধবার) উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠান চলবে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিনিয়োগ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এ সময় উপস্থিত থাকবেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা, নীতিনির্ধারক ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা। এছাড়া সারা দিনই একাধিক প্যারালাল অনুষ্ঠান চলবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্য থেকে পাঁচ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা পুরস্কার দেওয়া হবে। একই সঙ্গে কয়েকজন বিদেশি বিনিয়োগকারী বক্তব্য দেবেন। পরে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ইয়ুথ এন্টারপ্রেনারশিপ মেলার আয়োজন থাকবে। সেখানে আরলি স্টেজ কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা হবে।
দ্বিতীয় ধাপে রিনিউয়েবল এনার্জি নিয়ে কথা হবে। বেশ কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে। তারা বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিলে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।
আশিক মাহমুদ আরও বলেন, সম্মেলন অনুষ্ঠানটি ফেসবুক ও ইউটিউবে প্রচারিত হবে। এ ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ইন্টারভিউ নিতে মিডিয়া কর্নার থাকবে বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি অপূর্ব জাহাঙ্গীর।
নাসার সঙ্গে চুক্তির সম্ভাবনা
বিনিয়োগ সম্মেলনে নাসার সঙ্গে চুক্তি হতে পারে বলে জানান বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী পরিচালক চৌধুরী আশিক মাহমুদ। সম্মেলনে অনেকগুলো সমঝোতা স্মারক সই হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিভিন্ন বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে। আইএলওর সঙ্গে শ্রম বিষয়ে একটা দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই করার চিন্তা করছি। আমরা নাসার সঙ্গে একটি চুক্তি সই করার কথা চিন্তা করছি। বেসমারিক মহাকাশ অনুসন্ধান নিয়ে এই চুক্তি সই হতে পারে। চুক্তি সই হওয়ার পর আমরা এর বিস্তারিত জানাতে পারব।
সম্মাননা পুরস্কার পাবেন ৫ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান
আশিক মাহমুদ জানান, এবারের বিনিয়োগ সম্মেলনে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্য থেকে পাঁচ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা পুরস্কার দেওয়া হবে। তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, যাদের সম্মাননা পুরস্কার দেওয়া হবে তাদের মধ্যে রয়েছেন একজন স্থানীয় বিনিয়োগকারী, একজন বিদেশি বিনিয়োগকারী, এনভায়রনমেন্টাল, সোশ্যাল অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (ইএসজি) সংশ্লিষ্ট এক সংস্থা এবং নতুন কিছু উদ্ভাবনের জন্য একটি কোম্পানিকে পুরস্কৃত করা হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশে বছরের পর বছর কাজ করছেন এমন একজন বিদেশি বিনিয়োগকারীকে সম্মাননা পুরস্কারের পাশাপাশি অনারারি সিটিজেনশিপ অফার করা হবে।
ঈদের দীর্ঘ ছুটি শেষে পুরোদমে চালু হওয়া পুঁজিবাজারে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসের লেনদেনে পতনের মুখে পড়েছে ঢাকার বাজার, সামান্য উত্থান হয়েছে চট্টগ্রামে।
রবিবার (৬ এপ্রিল) লেনদেনের শুরু থেকেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) পতন হতে থাকে সূচকের। লেনদেন শেষে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৩ পয়েন্ট।
বাকি দুই সূচকের মধ্যে শরীয়া ভিত্তিক ডিএসইএস কমলেও বেড়েছে বাছাইকৃত ভালো কোম্পানির ব্লু-চিপ সূচক। ডিএস-৩০ এ সারাদিনের লেনদেনে ১৪ পয়েন্ট উত্থান হয়েছে।
প্রথমদিন লেনদেনে অংশ নিয়েছে ৩৯৩টি কোম্পানি, যার মধ্যে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম ছিল নিম্নমুখী। ১০১টি কোম্পানির দাম বৃদ্ধির বিপরীতে দাম কমেছে ২৬২ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত আছে ৩০ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ক্যাটাগরির হিসাবে তিন ক্যাটাগরি- এ, বি এবং জেডে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ কোম্পানিই সুবিধা করতে পারেনি লেনদেনে।
তবে ভালো অবস্থানে রয়েছে মিউচুয়াল ফান্ড। লেনদেন হওয়া ৩৬ মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দাম বেড়েছে ৩৩টির, কমেছে ২টির। তবে অপরিবর্তিত আছে এক কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ঢাকার পুঁজিবাজারে ব্লক মার্কেটে মোট ১৮টি কোম্পানির ১০ কোটি ৬৬ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি হয়েছে। বিচ হ্যাচারি লিমিটেড সর্বোচ্চ ৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে।
সারাদিনে ডিএসইতে মোট ৪১৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, ঈদের ছুটির আগে শেষ কর্মদিবস ২৭ মার্চে এই পরিমাণ ছিল ৩১৫ কোটি টাকা।
লেনদেন বাড়ার কারণ হিসেবে ব্রোকারেজ হাউসগুলো বলছে, সূচক কমতে থাকায় দিনের শুরু থেকেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বিক্রির ঝোঁক ছিলো। অতিরিক্ত শেয়ার বিক্রির কারণে লেনদেন বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু এটি বাজারের জন্য ভালো কোনো বার্তা নয়।
ডিএসইতে পতনের দিনে ৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ দাম বেড়ে শীর্ষ শেয়ারে জায়গা করে নিয়েছে বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড। দিনের শুরুতে শেয়ারপ্রতি ৯৮ টাকায় লেনদেন শুরু হলেও দিন শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়ে হয়েছে ১০৮.৮০ টাকা।
অন্যদিকে, ৯ দশমিক ২৭ শতাংশ দাম হারিয়ে তলানিতে বিচ হ্যাচারি লিমিটেড। ১০৭ টাকা শেয়ারপ্রতি দর নিয়ে লেনদেনে শুরু করলেও দিন শেষে বিচ হ্যচারি প্রতিটি শেয়ারের দাম কমে হয়েছে ৯৯.৮০ টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকের সামান্য উত্থান হয়েছে। সারাদিনের লেনদেনে সিএসই'র সার্বিক সূচক বেড়েছে ৩ পয়েন্ট।
তবে সূচক বাড়লেও সিএসইতে দাম কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির। লেনদেনে অংশ নেয়া ১৭৯টি কোম্পানির মধ্যে ৭০টি কোম্পানির শেয়ারের দরবৃদ্ধির বিপরীতে দরপতন হয়েছে ৮৪ টির। তবে দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ২৫টি কোম্পানির।
সিএসইতে সারাদিনে মোট ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, সর্বশেষ কার্যদিবস ২৭ মার্চে যা ছিল ৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে ১০ শতাংশ দাম বেড়ে ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও শীর্ষে আছে বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড।
অন্যদিকে ১০ শতাংশ দাম হারিয়ে তলানিতে নেমে এসেছে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
দেশের অর্থনীতি সংকটের চক্রে আটকে গেছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে পুঁজিবাজারে। মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী, সুদের হার চড়া, উৎপাদন খরচ বেড়েছে আর বিনিয়োগকারীদের আস্থা টলোমলো। এসব কারণে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেশির ভাগ কোম্পানি মুনাফায় চাপের মুখে পড়েছে, অনেক কোম্পানি লাভ থেকে লোকসানে চলে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সামষ্টিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে না পারলে পুঁজিবাজারের দুরবস্থা কাটবে না।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ১৬৭টি কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) মাত্র ৬৮টি কোম্পানির মুনাফা বেড়েছে, যা মোট কোম্পানির ৪০ শতাংশ। অপরদিকে ৯৮টি কোম্পানি বা ৬০ শতাংশ মুনাফায় নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি কোম্পানি মুনাফা থেকে সরাসরি লোকসানে চলে গেছে, আর ৩৭টি কোম্পানির লোকসানের পরিমাণ আরও বেড়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সভাপতি রূপালী হক চৌধুরী বলেন, ‘সব খাতের ব্যবসা খারাপ করছে, বিশেষ করে স্টিল, সিমেন্টসহ অন্য ছোট শিল্প খাতগুলোর অবস্থা আরও খারাপ।’ তবে আইনশৃঙ্খলা ঠিক থাকলে ও মানুষের আস্থা ফিরে এলে ব্যবসার পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি করবে। এতে কোম্পানিগুলোর মুনাফা বাড়বে বলে মনে করছেন তিনি।
এদিকে ৬৮টি কোম্পানির মুনাফা বাড়লেও এগুলোর প্রবৃদ্ধির হার খুব বেশি নয়। মাত্র দুটি কোম্পানির মুনাফা ১০০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। আরেকটি কোম্পানি ৫০০ শতাংশের বেশি মুনাফা করেছে। ৩০০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫টি কোম্পানির, ২০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে দুটি কোম্পানির, ১০০ শতাংশের ঘরে রয়েছে ১১টি, ৫০ শতাংশের বেশি মুনাফা করেছে আরও ১১টি কোম্পানি। মুনাফা বৃদ্ধির দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে শার্প ইন্ডাস্ট্রিজ, যার মুনাফা ১৩৬৭ শতাংশ বেড়েছে। এরপর জেএমআই সিরিঞ্জ ১০৪০ শতাংশ, ইফাদ অটোজ ৭৩৩ শতাংশ, ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোড ৪০০ শতাংশ এবং মতিন স্পিনিং ও ডমিনেজ স্টিল ৩৫০ শতাংশ মুনাফা করেছে।
অন্যদিকে ৪৬টি কোম্পানির মুনাফা কমেছে, যদিও তারা এখনো লোকসানে পড়েনি। তবে ১৫টি কোম্পানি আগের ছয় মাসে মুনাফায় থাকলেও এবার লোকসানে পড়েছে। এ তালিকায় রয়েছে ওরিয়ন ফার্মা, বারাকা পতেঙ্গা, ইনফরমেশন সার্ভিসেস, সি পার্ল, ইনটেক, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, জেমিনি সি ফুড, সাফকো স্পিনিং, এভিন্স টেক্সটাইল, মেঘনা সিমেন্ট, আমরা টেকনোলোজিস, ইস্টার্ন কেব্ল, বসুন্ধরা পেপার, দেশবন্ধু পলিমার ও এনার্জি প্যাক।
লোকসান আরও বেড়েছে এমন কোম্পানির সংখ্যা ৩৭টি। ২০২৩ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে তারা লোকসান করলেও ২০২৪ সালের একই সময়ে সেই লোকসানের মাত্রা আরও বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি লোকসানে পড়েছে আনলিমা ইয়ার্ন, যার লোকসান ১৯৫০ শতাংশ বেড়েছে। এরপর রয়েছে সিলভা ফার্মা ২৫৮ শতাংশ, পেনিনসুলা ২৫৫ শতাংশ, ঢাকা ডাইং ২৩২ শতাংশ ও বিবিএস কেব্লস ২২৩ শতাংশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সুদের উচ্চ হার এবং মূল্যস্ফীতির কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে, যা কোম্পানিগুলোর মুনাফায় সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ডিএসই পরিচালক রিচার্ড ডি রোজারিও বলেছেন, অধিকাংশ কোম্পানি ব্যাংকঋণের ওপর নির্ভরশীল। ফলে সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় তাদের জন্য চাপ আরও বেড়েছে।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক মনে করেন, পুঁজিবাজার কাঠামোগত দুর্বলতায় ভুগছে। ভালো কোম্পানি বাজারে না এলে এবং বাজারের গভীরতা না বাড়লে এ সংকট কাটবে না।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম শেয়ারবাজারের আর্থিক প্রতিবেদনগুলোর স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি মনে করেন, বাজারের কাঠামোগত ত্রুটি সংশোধন করা জরুরি, না হলে আস্থার সংকট থাকবে।
বিএসইসির একজন নির্বাহী পরিচালক বলেন, কোম্পানিগুলোর মুনাফা তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভরশীল। তবে মূল্যস্ফীতি ও সুদের হার কমলে সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। পুঁজিবাজারকে চাঙা করতে প্রয়োজন কাঠামোগত সংস্কার, আস্থা পুনরুদ্ধার ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের পুঁজিবাজারে সংকটের কারণ মূলত অর্থনৈতিক অস্থিরতা, মূল্যস্ফীতি, চড়া সুদের হার, কাঠামোগত দুর্বলতা এবং বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে এলে এবং সুদের হার ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এলে কোম্পানিগুলোর ব্যবসা পুনরুদ্ধার হতে পারে। তবে এর জন্য কার্যকর নীতিগত সহায়তা ও বাজারকাঠামোর উন্নতি প্রয়োজন।
বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক, আর এই পণ্যের বড় গন্তব্য হলো যুক্তরাষ্ট্র। ফলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক হার বাংলাদেশের জন্য মাথাব্যথার কারণ হওয়াটা স্বাভাবিকই।
কিন্তু সেই মাথাব্যথাটা আরও বাড়ে, যখন সেই বাজারে বাংলাদেশের অন্য প্রতিযোগীদের ওপর শুল্ক হারে বিভিন্নতা থাকে। যদি বাংলাদেশের চেয়ে শুল্ক হার বেশি হয়, তাহলে নতুন সুযোগ তৈরি হয়। যেমন চীনের ওপর বেশি শুল্ক ধার্য করায় বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা খুশি হয়েছিলেন গত জানুয়ারিতেই।
চীন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষ দেশ। তাদের ওপর বাড়তি শুল্কের পর বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক আমদানি গিয়েছিল বেড়ে। বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা পালে হাওয়া দেখছিলেন। কিন্তু সেখানে বজ্রাঘাত এল বুধবার; যখন ট্রাম্প শতাধিক দেশের জন্য পাল্টা শুল্ক আরোপ করলেন বিভিন্ন হারে।
তাতে চীনের পাশাপাশি ভিয়েতনামের পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক ধরা হলেও বাংলাদেশের চেয়ে শুল্ক কম ধরা হয়েছে ভারতের। আর এতেই চিন্তিত হয়ে পড়েছেন বাংলাদেশের শীর্ষ রপ্তানিকারকদের একজন ইভিন্স গ্রুপের কর্ণধার, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ। কারণ তিনি দেখছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে এখন বাংলাদেশকে টপকে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে ভারতের। পারভেজ বলেন, এমনিতেই গত বছর থেকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্য বায়ারদের কাছ থেকে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছিলেন তারা। এখন যোগ হলো শুল্ক। আর এতে ভারতের সুবিধা নেওয়ার সুযোগ তৈরি হলো।
ভারতে রপ্তানিকারকদের সংস্থা ফিকোর মহাপরিচালক অজয় সাহা বলেছেন, ‘আমরা নিঃসন্দেহে ক্ষতিগ্রস্ত হবো। তবে অন্য অনেক দেশের তুলনায় আমরা কিছুটা ভালো অবস্থায় আছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীন ও ভিয়েতনামের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। তার ঠিক এক ধাপ নিচে অর্থাৎ চতুর্থ স্থানে রয়েছে ভারত।
গত বছর বাংলাদেশ থেকে ৭৩৪ কোটি (৭.৩৪ বিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। একই বাজারে ভারতের রপ্তানি ছিল ৪৬৯ কোটি (৪.৬৯ বিলিয়ন) ডলার। গত বছর ভারতের রপ্তানি তার আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৫ শতাংশ বেশি হয়েছিল। ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যে সম্পূরক শুল্ক বসিয়েছেন ২৬ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে যে তিনি খাতির করেছেন, তাও অকপটে জানিয়েছেন।
ট্রাম্প বলেছেন, “নরেন্দ্র মোদী আমার বন্ধু। সবে তিনি আমেরিকা থেকে দেশে ফিরেছেন। কিন্তু আমি তাকে বলেছি, আপনি আমার খুবই ভালো বন্ধু হতে পারেন, কিন্তু আপনি আমাদের সঙ্গে ঠিক ব্যবহার করছেন না। ভারত আমাদের পণ্যে ৫২ শতাংশ শুল্ক বসায়, আমরা ২৬ শতাংশ বসালাম।”
ভারতের পণ্যের ওপর আগে যুক্তরাষ্ট্রে আড়াই শতাংশ শুল্ক বসানো ছিল। এখন তার সঙ্গে ২৬ শতাংশ যোগ হলে সব মিলিয়ে দাঁড়াবে ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ।
কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আগেই শুল্ক ছিল ১৫ শতাংশ; তার সঙ্গে এখন ট্রাম্প যোগ করলেন ৩৭ শতাংশ। ফলে দুই মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য ঢোকাতে ৫২ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। অর্থাৎ ১০০ ডলারের পণ্য রপ্তানি করলে ৫২ ডলার শুল্ক দিতে হবে।
এটা ভারতের প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকরা বাংলাদেশের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে ভারতের দিকে চলে যাবে বলে আশঙ্কা জাগছে দেশের পোশাক ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
এর আগে চীনের পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধির কারণে যে সুযোগ বাংলাদেশ নিয়েছিল, এখন তেমনই সুযোগ নিতে চাইবে ভারতের ব্যবসায়ীরা।
পারভেজ বলেন, “আমাদের সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে গেছে। তালগোল পাকিয়ে গেছে সবকিছু। কী হবে, কিছুই বুঝতে পারছি না।
“এটা তো নিশ্চিত যে এই শুল্ক আমাদের রপ্তানির ওপর বড় প্রভাব ফেলবে। এখন কতটা পড়বে, তা নিয়েই আতঙ্কিত আমরা।”
তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা যেমন আতঙ্কিত, তেমননি বাংলাদেশ সরকারেরও শঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কারণ বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য হচ্ছে এই তৈরি পোশাক। সঙ্কটের মধ্যে এই খাতই ডলারের জোগানের বড় উৎস।
বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ে ৮০ শতাংশের বেশি অবদান তৈরি পোশাক খাতের। মোট রপ্তানি আয়ের ২০ শতাংশের মতো আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। সেখানেও বড় অবদান তৈরি পোশাকের।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৭ হাজার ৯২৬ কোটি (৭৯.২৬ বিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি হয়েছিল। এই বাজারে শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হচ্ছে- চীন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, মেক্সিকো, হন্ডুরাস, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ও দক্ষিণ কোরিয়া।
বাংলাদেশের পরের স্থানে থাকা ভারতের গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি ছিল ৪৬৯ কোটি (৪.৬৯ বিলিয়ন) ডলারের। তাদের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ট্রাম্প ভারতের ওপর ২৬ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন। আগের আড়াই শতাংশ যোগ করলেও প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় তাদের ওপর আরোপিত শুল্ক কম। আবার দেশটির সরকার তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ চালু করেছে বলে ভারতে ক্রয়াদেশ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
২০২০-২১ থেকে ২০২৩-২৪ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ছিল ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার দেশ। ২০২৩-২৪ সালে ৭ হাজার ৭৫০ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য ভারত রপ্তানি করেছে। ভারত থেকে তৈরি পোশাক ছাড়াও ওষুধ, টেলিকম যন্ত্রাংশ, দামি ও মাঝারি দামের পাথর, পেট্রোলিয়াম পদার্থ, সোনা ও অন্য ধাতু, লোহা-ইস্পাতের মতো পণ্য বেশি রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে।
ট্রাম্পের শুল্কের বড় প্রভাব পড়লেও এখনই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানিতে ধস নামবে বলে মনে করেন না বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ।
তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই নীতি টেকসই হবে কি না, সেটা নিশ্চিত নয়। কারণ, বাড়তি শুল্কের চাপ শেষ পর্যন্ত তাদের ভোক্তার ওপর পড়বে। ফলে তাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হবে।”
তবে পারভেজ বলেন, “এই অতিরিক্ত শুল্কের চাপে মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের প্রথমেই পোশাকের দাম কমানোর ওপর চাপ দিতে পারে। এখন যে ক্রয়াদেশ আছে, সেগুলোর দামও কমাতে বলতে পারে। ফলে সম্মিলিতভাবে সেই চাপ সামাল দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে।”
বেসরকারি খাতের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত কৌশল নির্ধারণ করতে সরকারকে পরামর্শ দেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ‘পারস্পরিক শুল্ক’ নীতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) হোয়াইট হাউস থেকে প্রকাশিত তালিকা অনুসারে, মার্কিন সরকার দাবি করেছে, বাংলাদেশ কার্যকরভাবে আমেরিকান পণ্যে ৭৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। জবাবে, মার্কিন বাজারে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশে ৩৭ শতাংশ ‘ছাড়প্রাপ্ত পারস্পরিক শুল্ক’ আরোপ করা হবে।
আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে ট্রাম্প এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন। মার্কিন পণ্য রফতানির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশ যে ব্যাপক বাধা তৈরি করে রেখেছে, সেই ‘অন্যায় বাণিজ্য চর্চা’ প্রতিরোধেই ট্রাম্প প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতিতে সব আমদানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্কের একটি ভিত্তিরেখা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, যেসব দেশ—মার্কিন প্রশাসনের ভাষায়—মুদ্রার অপব্যবহার, সুরক্ষাবাদ কিংবা অন্যান্য অ-শুল্ক বাধা তৈরি করে রেখেছে, তাদের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্যহারে উচ্চমাত্রায় শুল্ক আরোপ করা হবে।
আকস্মিক এই শুল্কারোপে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। কারণ বাংলাদেশের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানির ওপর নির্ভরশীল, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত। এককভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রফতানি গন্তব্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
এতে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা কিছুটা কমে আসবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিল্পখাত সংশ্লিষ্টরা। একইসাথে ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোর ওপরও এই শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
ভারতীয় পণ্যে ২৬ শতাংশ পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, দেশটিতে মার্কিন পণ্য রফতানিতে ৫২ শতাংশ বাধা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর পাকিস্তানের ওপর ২৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে মার্কিন প্রশাসন। তাদের দাবি, পাকিস্তানি বাজারে মার্কিন পণ্যের জন্য ৫৮ শতাংশ বাণিজ্য বাধা রয়েছে।
গেল কয়েক দশক ধরে একপাক্ষিক এই বাণিজ্য সম্পর্ক চলে আসছে, যা অনেক আগেই সংশোধন করা উচিত ছিল বলে দাবি করেছে হোয়াইট হাউস। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, এতে দেশগুলো থেকে পাল্টা পদক্ষেপ আসতে পারে এবং মার্কিন ব্যবসা ও পরিবারগুলোতে খরচ বেড়ে যেতে পারে।
পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন বিমসটেকের সকল সদস্য রাষ্ট্রকে বাণিজ্য সংক্রান্ত ছয়টি মৌলিক চুক্তির সময়মত চূড়ান্তকরণ নিশ্চিত করতে পূর্ণ সহযোগিতা প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন।
ব্যাংককে ২৫তম বিমসটেক সিনিয়র কর্মকর্তাদের সভায় পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, ‘আমাদের অঞ্চলের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য এফটিএ বাস্তবায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ কথা বলা হয়েছে।
জসিম উদ্দিন এসওএম-এ ৫ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
ছয়টি অমীমাংসিত চুক্তি হলো, বিমসটেক মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলের কাঠামো চুক্তির পণ্য, উৎপত্তির নিয়ম, শুল্ক বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তা, বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি এবং প্রক্রিয়া, বাণিজ্য সুবিধা, বিনিয়োগ এবং পরিষেবায় বাণিজ্য।
সভায় জসিম উদ্দিন ‘ব্লু অর্থনীতিসহ বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি বিবৃতি প্রদান করেন, যার জন্য বাংলাদেশ নেতৃত্ব দিচ্ছে।
আগামী ৪ এপ্রিল ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের আগে বিমসটেক এসওএম-এর ২৫তম অধিবেশন শুরু হয়।
বৈঠকে বিমসটেক সেন্টার ফর ওয়েদার অ্যান্ড ক্লাইমেট এবং বিমসটেক সেন্টার অব এক্সিলেন্স অন ট্রপিক্যাল মেডিসিনসহ বিমসটেক সেন্টার সম্পর্কিত ফলাফল বিবেচনা করা হয়।
আগামীকাল অনুষ্ঠেয় বিশতম বিমসটেক মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের খসড়া অস্থায়ী এজেন্ডা এবং খসড়া প্রতিবেদন নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আলোচনাও চূড়ান্ত করেছেন।
বৈঠকে ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের খসড়া অস্থায়ী এজেন্ডা এবং খসড়া ঘোষণাও চূড়ান্ত করা হয়।
বাংলাদেশ ঢাকায় বিমসটেকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ২৬তম সম্মেলনের আয়োজন করবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুক্রবার ব্যাংককে ষষ্ঠ বিমসটেক রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিবেন।
রমজান মাস ও ঈদকে কেন্দ্র করে চলতি মাসে দেশে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে। ফলে মার্চ মাস শেষ হওয়ার আগেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে।
বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, দেশের মোট রিজার্ভ ২৫ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
রমজান মাস ও ঈদকে কেন্দ্র করে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্চ মাসের প্রথম ২৬ দিনে ২ দশকি ৯৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা দেশের ইতিহাসে যেকোনো মাসের জন্য সর্বোচ্চ।
তবে ব্যালেন্স অফ পেমেন্টস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম-৬) এর অধীনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর পদ্ধতি অনুসারে, বাংলাদেশের নেট রিজার্ভ বর্তমানে ২০ দশকি ২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
পছন্দের ওএলইডি টিভি কেনার মাধ্যমে ক্রেতাদের ঈদ আনন্দ দ্বিগুণ করতে সম্প্রতি রাজধানীর গুলশান ২ -এ অবস্থিত র্যাংগস ইমার্টে বিশেষ ওএলইডি ফেয়ার আয়োজনে যুক্ত হয়েছে স্যামসাং। গত ২০ মার্চ শুরু হওয়া ফেয়ারটি চলবে আগামী ১ এপ্রিল পর্যন্ত। আজ র্যাংগস ইমার্টে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাং মিন জাং; ডিরেক্টর অ্যান্ড হেড অব বিজনেস শাহরিয়ার বিন লুৎফর এবং প্রোডাক্ট প্ল্যানিংয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. শরিফুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে র্যাংগস ইমার্টের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিভিশনাল ডিরেক্টর ইয়ামিন শরীফ চৌধুরী, হেড অব বিজনেস মো. রাশেদুল ইসলাম; হেড অব প্রোডাক্ট রায়হান আহমেদ এবং হেড অব সেলস গোলাম আজম খান।
ঈদের আনন্দে অনেকেই তাদের হোম এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেম আপগ্রেড করতে চান। ওএলইডি টিভি ফেয়ারে সে সুযোগই পাচ্ছেন ক্রেতারা। এ ফেয়ার থেকে তারা আকর্ষণীয় প্রমোশনাল অফারে স্যামসাংয়ের গ্লেয়ার-ফ্রি ডিসপ্লে, শতভাগ কালার ভলিউম ও ক্রিস্টাল-ক্লিয়ার ভিজ্যুয়ালের অত্যাধুনিক ওএলইডি টিভি কিনতে পারবেন। ক্রেতাদের জন্য সেরা বিনোদন অভিজ্ঞতা নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ স্যামসাং, এ ফেয়ার আয়োজন ব্র্যান্ডটির সে অঙ্গীকারেরই প্রতিফলন।
ফেয়ারের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো, র্যাংগস ইমার্টের যে কোনো আউটলেট থেকে নির্দিষ্ট ওএলইডি টিভি কিনলে সাথে বিনামূল্যে একটি সাউন্ডবার পাবেন ক্রেতারা, যা তাদের ওএলইডি টিভির অসাধারণ ভিজ্যুয়াল অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করবে। এছাড়াও, ক্রেতাদের জন্য থাকছে র্যাফেল ড্র-তে অংশ নেওয়ার সুযোগ। র্যাফেল ড্র -এর মাধ্যমে ফেয়ার শেষে তিনজন ভাগ্যবান বিজয়ী নির্বাচন করা হবে। গ্র্যান্ড প্রাইজ হিসেবে বিজয়ীরা পাবেন স্যামসাং ৬৫-ইঞ্চি ওএলইডি টিভিসহ দুর্দান্ত সব উপহার!
অনুষ্ঠানে স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স বাংলাদেশের ডিরেক্টর ও হেড অব বিজনেস শাহরিয়ার বিন লুৎফর বলেন,
“স্যামসাং সবসময় দেশজুড়ে এর ক্রেতাদের জন্য সেরা প্রযুক্তি নিয়ে নিয়ে আসতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সমৃদ্ধ সিনেম্যাটিক অভিজ্ঞতা নিশ্চিতে আমাদের ওএলইডি টিভিতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। পাশাপাশি, এর গ্লেয়ার-ফ্রি প্রযুক্তি নিরবচ্ছিন্ন বিনোদন গ্রহণের অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করবে। ঈদের আনন্দে আমরা ওএলইডি প্রযুক্তিকে আরও সহজলভ্য করতে চাই, যেন আমাদের ক্রেতারা তাদের পরিবারের সঙ্গে দুর্দান্ত ভিজ্যুয়াল অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে পারেন।”
র্যাংগস ইমার্টের ডিভিশনাল ডিরেক্টর ইয়ামিন শরীফ চৌধুরী বলেন, “র্যাংগস ইমার্ট সবসময় আধুনিক প্রযুক্তি ও মানুষের লাইফস্টাইলের উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ব্র্যান্ডগুলোর সাথে কাজ করে। এ ফেয়ারের মাধ্যমে আমরা ক্রেতাদের জন্য শপিং অভিজ্ঞতাকে আরও উপভোগ্য করে তুলতে চাই। একইসাথে, তারা যেন সেরা অফার ও রিওয়ার্ড উপভোগ করতে পারবেন। আমাদের লক্ষ্য, ইলেক্ট্রনিকস পণ্য কেনার ক্ষেত্রে র্যাংগস ইমার্টকে দেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য শপিং গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।”
করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ টাকা করা ও সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।
পাশাপাশি আমদানি পর্যায়ে উৎপাদনকারীদের জন্য আগাম কর ধাপে ধাপে বিলুপ্তি ও বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের জন্য আগাম কর হ্রাস করার প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি।
গতকাল মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভবনে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব প্রস্তাব দেয় সংগঠনটি।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ করা উচিত। ব্যক্তির সর্বোচ্চ কর কমানো উচিত। করজাল বাড়ানোর জন্য এনবিআরের পদক্ষেপ নিতে হবে।
এসময় বাণিজ্যিক আমদানিতে আগাম কর কমানো, ভ্যাটের একক হার করার প্রস্তাব দেন তিনি।
সংগঠনটির অন্যান্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- অটোমেটেড করপোরেট কর রিটার্ন চালু, ব্যবসায়ীদের ওপর থেকে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র (পিএসআর) সংগ্রহে বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার করা, ভ্যাট ব্যবস্থা ডিজিটাল করতে ওয়েবসাইটের পাশাপাশি একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি ও তা ব্যবসায়ীদের জন্য বাধ্যতামূলক করা ও একক মূসকহার বা ভ্যাট হার ১০ শতাংশ করা।
তাসকীন আহমেদ বলেন, করপোরেট কর রিটার্ন প্রদানে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি না থাকায় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ম্যানুয়ালি রিটার্ন জমা দেয়। ম্যানুয়াল বা হাতে লেখা রিটার্ন সময়সাপেক্ষ, জটিল ও ত্রুটিপূর্ণ হয়। এসব উল্লেখ করে দ্রুত করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অটোমেটেড করপোরেট কর রিটার্ন চালুর করা প্রয়োজন।
প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ব্যক্তির কর বেশি হওয়া উচিত। কোম্পানির কম হওয়া উচিত। এবার ব্যক্তির কর ৩০ শতাংশ হবে। এটাকে আরও বাড়ানো উচিত। ভারতেও বেশি। উন্নত দেশে ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ। এটাকে কমানো ঠিক হবে না। বাড়াতে হবে। নইলে বৈষম্য কমবে না। উন্নত দেশে ব্যক্তির কর বেশি হওয়ায় বৈষম্য কম। এটা ঠিক তারা বেশি কর দিয়ে বেশি সেবা পান। আমাদেরও সেবা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে মানুষ হাতে কম টাকা রাখবে।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের তীব্র প্রতিরোধে ভ্যাটের একক হার হয়নি। তারাই এখন ভুগছে। সবাই একমত হলে, হার কিছুটা কমিয়ে হলেও একক হারে যাওয়া উচিত। আপনাদের এফবিসিসিআইকে প্রস্তাব দিতে বলেন। দরকার হলে আমরা, ব্যবসায়ীদের জন্য সফটওয়্যারও করে দেব। যত ঝগড়া ভ্যাটের অনেক হারের কারণে।
এছাড়া বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন আলু কেনার ক্ষেত্রে ১ শতাংশ এআইটি হ্রাস করা, কোল্ড স্টোরেজের বিভিন্ন দ্রব্যাদি ক্রয়ের ক্ষেত্রে ভ্যাট ও এআইটি প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে।
বাংলাদেশ ক্রপ প্রোটেকশন অ্যাসোসিয়েশন কীটনাশক, ছত্রাকনাশক, আগাছানাশক, মশার কয়েল, অ্যারোসেল, রিপিলেন্ট আমদানিতে কর হার কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) কৃষিজ পণ্য সরবরাহের বিপরীতে উৎসে কর কর্তনে অব্যাহতি, বিক্রয়ের উপর ন্যূনতম আয়কর ০.৬০ বাতিল করা, মূসকের আদর্শ হার হ্রাস করার প্রস্তাব দিয়েছে।
শ্রিম্প হ্যাচারি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এসপিএফ বাগদা ও ভেনামি চিংড়ি আমদানিতে অগ্রিম আয়কর ও আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।
বাংলাদেশ পেইন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন রঙ ও রঙ জাতীয় পণ্যকে অত্যাবশকীয় পণ্য হিসাবে বিবেচনা করে স্থানীয় ভাবে উৎপাদনের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে।
অ্যাগ্রিকালচারাল মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ অর্জিত লভ্যাংশে উপর প্রস্তাবিত করপোরেট কর হ্রাস করে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ ফিনিশড লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন স্থানীয় বাজার থেকে চামড়া সংগ্রহ কালে অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে।