২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে অষ্টম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কিনবে সরকার। আজ মঙ্গলবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান এসব তথ্য জানিয়েছেন।
সচিব বলেন, ‘শিল্প মন্ত্রণালয়ের একটা প্রস্তাব ছিল রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির। এই প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছে। এর ক্রয়মূল্য ৯৫ কোটি ৭০ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা। প্রতি মেট্রিক টনের মূল্য ২৭১.৫০ মার্কিন ডলার। এর পূর্বমূল্য ছিল ২৮৪.১৭ মার্কিন ডলার। সুপারিশ করা দরদাতা সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফার্টিগ্লোব ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড। এটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)।’
আগামী মে মাস থেকে ডিম-মুরগি উৎপাদন বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে দেশের প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। খামার বন্ধ রেখে এই কর্মসূচি পালনের হুমকি দিয়েছে তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে সংগঠনটি।
সংগঠনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, যতক্ষণ না সরকার সিন্ডিকেট ভাঙতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে, ততক্ষণ আমাদের এই কর্মসূচি চলবে।
সভাপতির সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রমজান ও ঈদ উপলক্ষে প্রান্তিক খামারিরা প্রতিদিন ২০ লাখ কেজি মুরগি উৎপাদন করেছে। প্রতি কেজিতে ৩০ টাকা ধরে এক মাসে লোকসান হয়েছে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা। দৈনিক ৪ কোটি ডিম উৎপাদনের মধ্যে প্রান্তিক খামারিরা ৩ কোটি ডিম উৎপাদন করে। প্রতি ডিমে ২ টাকা করে লোকসানে, দুই মাসে ডিমে লোকসান হয়েছে ৩৬০ কোটি টাকা। মোট দুই মাসে ডিম ও মুরগির খাতে লোকসান দাঁড়িয়েছে ১২৬০ কোটি টাকা।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতিদিন শত শত খামার বন্ধ হচ্ছে। একসময় এই খাত ছিল দেশের অন্যতম কর্মসংস্থানের উৎস, অথচ আজ তা ধ্বংসের পথে। সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর নীরবতায় কিছু করপোরেট কোম্পানি পুরো পোলট্রি শিল্প দখলের ষড়যন্ত্রে নেমেছে। তারা শুধু ফিড, বাচ্চা ও ওষুধ নয়- ডিম ও মুরগির বাজারও নিয়ন্ত্রণ করছে।
বিপিএ আরও জানায়, ঈদের আগে ২৮–৩০ টাকায় উৎপাদিত বাচ্চা করপোরেট কোম্পানিগুলো ৭০–৮০ টাকায় বিক্রি করে। এখন সেই বাচ্চাই ৩০–৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার উৎপাদন খরচ ১৬০–১৭০ টাকা, অথচ করপোরেটরা বাজারে বিক্রি করছে ১২০–১২৫ টাকায়। লোকসান গুনছে খামারিরা। খামারিদের সংগঠনটি বলছে, ‘ডিমের উৎপাদন খরচ ১০–১০.৫০ টাকা, অথচ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮–৮.৫০ টাকায়। বাজার মূলত করপোরেটের হাতে; তারা দাম নির্ধারণ করে- খামারিদের বাধ্য করা হয় মানতে।’
সূর্যমুখী চাষে বদলে গেছে গোটা এলাকার দৃশ্যপট। সরিষা ও সয়াবিন চাষের পাশাপাশি বিকল্প ফসল হিসেবে সূর্যমুখী চাষের দিকে ঝুঁকছেন বরিশালের কৃষকরা। ফলন ভালো হওয়ায় সূর্যমুখী থেকে ভালো ফলনে লাভবান হওয়ার আশা করছেন কৃষকরা।
সয়াবিনের বিকল্প তেল উৎপাদনের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষকরা। সেই সঙ্গে সয়াবিন তেলের তুলনায় কম কোলেস্টেরল এবং সহজেই চাষ উপযোগী হওয়ায় সূর্যমুখী আবাদ অনেকটাই লাভজনক। তা ছাড়া মাঠে আবাদের পাশাপাশি বাড়ির আঙিনায় ও পতিত জমিতেও চাষ করা যায় এই তেল বীজ জাতীয় ফসল।
বাবুগঞ্জ উপজেলার কৃষক মো. কালাম জানান, ১০ জন কৃষক মিলে দুই একর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। এই জমিতে এর আগে সরিষা আবাদ হতো। এ বছর সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে।
কৃষক লিটু বলেন, তেল ফসল সূর্যমুখী সংরক্ষণে বরিশালে কোনো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা নেই। এ জাতীয় সফল উৎপাদন করে কৃষক অনেক সময় অল্প দামে বিক্রি করে দেন। যদি সংরক্ষণ করা যেত, তাহলে অফ সিজনে বেশি দামে বিক্রি করে কৃষক লাভবান হতে পারতেন।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের কর্মকর্তা নাহিদ বিন রফিক বলেন, সূর্যমুখী ফুলের সৌন্দর্য যেমন মানুষের মন আকৃষ্ট করে তেমনি তার বীজ থেকে উৎপন্ন তেলও অত্যন্ত লাভজনক। বিশেষ করে খাবার তেলের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সূর্যমুখী চাষের মাধ্যমে চাষিরা সাফল্য পাচ্ছেন।
এদিকে সূর্যমুখী চাষসহ তৈল জাতীয় ফসল উৎপাদনে সার বীজ এবং পরামর্শ দিয়ে কৃষকের পাশে থাকার কথা জানালেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. রেজাউল হাসান। তিনি বলেন, বরিশালে প্রতিবছরই তেল ফসল উৎপাদন বাড়ছে। যাতে করে আমদানি-নির্ভতা অনেকটাই কমে আসবে। দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা অনেকটাই এর থেকে পূরণ হবে।
বরিশাল জেলায় এ বছর সূর্যমুখী চাষে ১ হাজার কৃষকের মাঝে প্রণোদনা দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। জেলায় ২৯৭ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে সূর্যমুখী।
আম নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন সিন্ডিকেট তৈরি করে দাম বাড়াতে না পারে সে জন্য আগাম সতর্কবার্তা দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুস শহীদ। তিনি বলেছেন, এ বছর রাজশাহী এলাকায় আমের উৎপাদন কম হয়েছে। তাই কৃষকরা যাতে ন্যায্যমূল্য পান এবং ভোক্তারা সাধ্যের মধ্যে আম কিনে খেতে পারেন, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এ সময় প্রতিবেশী ভারতসহ চীন, রাশিয়া ও বেলারুশ- এই চারটি দেশ রাজশাহীর সুমিষ্ট আম নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলেও জানান তিনি।
আজ শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার করমপুর গ্রামে আমের বাগান পরিদর্শন ও আমচাষিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেছেন, ‘দ্রুতই চীনের একটি প্রতিনিধিদল রাজশাহীর আম দেখতে আসবে। এই দলটির সঙ্গে ঠিকমতো কথা বলে, আমের সঠিক মূল্য নির্ধারণের জন্য কিছু কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে যেন খুব বেশি পার্থক্য না হয়, সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। রাশিয়া, বেলারুশ, চীন, জাপান ও ভারত আম নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা চেষ্টা করছি বেশি পরিমাণ আম রপ্তানির।
কৃষিমন্ত্রী জানান, আম রপ্তানির জন্য ২৫০ থেকে ৩০০ কৃষককে সহায়তা করা হয়েছে। রপ্তানির জন্য রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম গ্রেডিং শেড এবং ট্রিটমেন্ট প্লান্ট করা হচ্ছে।
বাগান পরিদর্শনের সময় কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এবার আমের উৎপাদন কম হয়েছে। তাই আম নিয়ে সিন্ডিকেট হতে পারে। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। কৃষক যেন সঠিক মূল্য পান, সেটাই লক্ষ্য। সিন্ডিকেট আমরা হতে দেব না। কিন্তু সিন্ডিকেট যারা করে, সব সমাজেই তাদের সম্পর্ক আছে।’
সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের বেশি বেশি লেখার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বেশি করে লেখেন। বেশি করে কথা বলেন।’
সংরক্ষণের অভাবে প্রচুর আম নষ্ট হওয়ার ব্যাপারে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আম পচনশীল পণ্য। একটা পার্সেন্টেজ আম নষ্ট হবেই। আমরাও চাই আম কিছু সময়ের জন্য সংরক্ষণ করতে। অন্যান্য কৃষিজাত পণ্যও সংরক্ষণ করতে চাই। সে জন্য দেশের ৮ বিভাগে ৮টি কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ করতে চাই। তবে এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, অনেক টাকার দরকার। আমরা দেশি-বিদেশি সহযোগিতায় এটা করতে চাই।’
এর আগে মন্ত্রী গোদাগাড়ীর বিজয়নগর এলাকায় পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তিতে ধান চাষ পরিদর্শন করেন। এরপর সোনাদীঘি গ্রামের কৃষক রাতুলের ফার্মে মাটিবিহীন চারা উৎপাদন, ই-ফার্মিং, ভার্মি কম্পোস্ট, বসতবাড়িতে বাগান ও কৃষি ক্ষেত পরিদর্শন করেন। এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিশ্বব্যাংকের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মাইকেল জন ওয়েবস্টের ও কোকাকোলা বাংলাদেশ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জু-উন নাহার চৌধুরী, গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, চালের যে পুষ্টিগুণ থাকে অতিরিক্ত ছাঁটাই ও পলিশ করার কারণে নষ্ট হয়ে যায়। এতে চাল চকচকে হলেও কার্বোহাইড্রেট ছাড়া কিছুই থাকে না। তাই চাল ছাঁটাইয়ের সময় রাইস মিলে পলিশ বন্ধে আইন করা হয়েছে। আগামী আমন মৌসুম থেকেই এই আইন কার্যকর করা হবে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বোরো সংগ্রহ অভিযান-২০২৪ উপলক্ষ্যে নওগাঁ সার্কিট হাউসে জেলার খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অতিরিক্ত চাল ছাঁটাই ও পলিশের কারণে ১৬ থেকে ২০ লাখ মেট্রিক টন চাল নষ্ট হয়ে যায়। এই আইন কার্যকর হলে সেখান থেকে আমরা রক্ষা পাব। এতে করে উৎপাদন খরচ কমে যাওয়ায় ভোক্তারা কম দামে চাল ক্রয় করতে পারবেন। পলিশ বিহীন চাল ভোক্তাদের আকৃষ্ট করবে।’
বস্তায় ধানের দাম ও জাত লেখার বিষয়ে সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, এ বিষয়ে কাজ শুরু হয়েছে। বাজারে বস্তার গায়ে দাম ও জাত আসতে শুরু করেছে। মিল মালিকদের কাছে ধানের জাতের নমুনাসহ নাম ও উৎপাদিত চাল কেমন হবে তার নমুনা পাঠানো হয়েছে। মিল গেটের চালের দাম বস্তায় লেখা থাকলে খুচরা ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর বিষয়ে মিল মালিকদের দোষারোপ করতে পারবে না।
চলতি বোরো মৌসুমে খাদ্যগুদামে ধান-চাল সংগ্রহের বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারি খাদ্য গুদামে ধান দিতে গিয়ে কৃষক বা মিল মালিকদের কেউ যাতে হয়রানি না হয় সেটা নিশ্চিত করা হবে। হয়রানির অভিযোগ পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে সকল কারণে ধান সংগ্রহ সফল হয় না সেগুলোকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আশা করা যায় এ বছর চালের ন্যায় ধান সংগ্রহও সফল হবে।
নওগাঁর জেলা প্রশাসক গোলাম মওলার সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক, রাজশাহীর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক জহুরুল ইসলাম খান, নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তানভীর রহমান, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, জেলা অটোমেটিক রাইস মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুল ইসলাম বাবু, জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদারসহ খাদ্য বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।